বিজয়ের ৪০ বছরঃ বিদেশি সহযোদ্ধা ইন্দিরা গান্ধী দুঃসময়ের বন্ধু by সোহরাব হাসান
৪ এপ্রিল ১৯৭১। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর সরকারি বাসভবনে অপেক্ষা করছেন একজন দর্শনার্থীর। তিনি আর কেউ নন, আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় প্রধান নেতা তাজউদ্দীন আহমদ। সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেন বিএসএফের প্রধান রুস্তমজি। শুরুতেই তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে ভারতের সহযোগিতা চান।
জবাবে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘সহযোগিতা দিতে হলে তো আপনাদের সরকার গঠন করতে হবে।’ তাজউদ্দীনের জবাব, ‘আমরা সরকার গঠন করব।’ এই বৈঠকেই তাঁকে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানি বাহিনী আটক করেছে। তখন পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার খবরটি গোপন রেখেছিল। এরপর তাজউদ্দীন আহমদ ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, তিনি প্রধানমন্ত্রী। ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার বৈদ্যনাথতলায় সরকার আনুষ্ঠানিক শপথ নেয়।
এরপর দীর্ঘ নয় মাস বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে সফল করতে অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যে বিদেশি রাষ্ট্রনেতা সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তিনি ইন্দিরা গান্ধী। তখন শক্তিশালী আমেরিকা ও চীন ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। তিনি প্রথমে সরাসরি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে না জড়িয়ে বাংলাদেশে দখলদার বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন ও শরণার্থী সমস্যাটি বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরেন। বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে ইউরোপ ও আমেরিকায় ঝটিকা সফর করেন।
২৭ মার্চ প্রথম ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় এক প্রস্তাবে অবিলম্বে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানায়। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী ধীরে চলো নীতি ও কূটনৈতিক কৌশলের পক্ষপাতী ছিলেন। আগস্টে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি সই করেন। ইন্দিরা গান্ধী শীত পর্যন্ত যুদ্ধ ঠেকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। কেননা সে সময়ে চীনা বাহিনীর পক্ষে সীমান্তে অভিযান চালানো সম্ভব হবে না।
যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ইন্দিরা গান্ধী মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে ঠাট্টা করে বলেছিলেন, ‘মি. প্রেসিডেন্ট, আমি ওয়াশিংটনের আবহাওয়া নিয়ে আলোচনা করতে আসিনি। এসেছি সাড়ে সাত কোটি মানুষের ন্যায়সংগত সংগ্রাম এবং এক কোটি শরণার্থীর দুঃখ-দুর্দশার কথা বলতে।’
অক্টোবর-নভেম্বর মাসজুড়ে ভারতীয় বাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিবাহিনী বিভিন্ন রণক্ষেত্রে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করতে থাকে। আত্মরক্ষার শেষ চেষ্টা হিসেবে পাকিস্তান ৩ ডিসেম্বর ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ভারত তার পাল্টা জবাব দেয়।
৬ ডিসেম্বর ইন্দিরা গান্ধী লোকসভায় ঘোষণা দেন, ‘আমি এই হাউসকে আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, কালক্রমে আরও অনেক দেশ স্বীকৃতি দেবে।’
একই দিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে লেখা চিঠিতে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘আমার কোনো সন্দেহ নেই, যুদ্ধে এবং জীবন উৎসর্গে এই সহযাত্রা মহৎ আদর্শের প্রতি এবং দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক বন্ধুত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করবে।’ এটাই ছিল বাংলাদেশের জন্য কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রথম স্বীকৃতি। দ্বিতীয় স্বীকৃতি দেয় ভুটান।
১৬ ডিসেম্বর দখলদার বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল নিয়াজি ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেন।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্বাসনকাজেও ইন্দিরা গান্ধীর সরকার সহযোগিতা করেছে।
ইন্দিরা গান্ধী তাঁর দেশে নকশাল দমন কিংবা বিরোধী দলের প্রতি কঠোর আচরণের কারণে বিতর্কিত হতে পারেন, কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন দুঃসময়ের বন্ধু।
এরপর দীর্ঘ নয় মাস বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে সফল করতে অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যে বিদেশি রাষ্ট্রনেতা সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তিনি ইন্দিরা গান্ধী। তখন শক্তিশালী আমেরিকা ও চীন ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। তিনি প্রথমে সরাসরি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে না জড়িয়ে বাংলাদেশে দখলদার বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন ও শরণার্থী সমস্যাটি বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরেন। বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে ইউরোপ ও আমেরিকায় ঝটিকা সফর করেন।
২৭ মার্চ প্রথম ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় এক প্রস্তাবে অবিলম্বে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানায়। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী ধীরে চলো নীতি ও কূটনৈতিক কৌশলের পক্ষপাতী ছিলেন। আগস্টে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি সই করেন। ইন্দিরা গান্ধী শীত পর্যন্ত যুদ্ধ ঠেকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। কেননা সে সময়ে চীনা বাহিনীর পক্ষে সীমান্তে অভিযান চালানো সম্ভব হবে না।
যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ইন্দিরা গান্ধী মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে ঠাট্টা করে বলেছিলেন, ‘মি. প্রেসিডেন্ট, আমি ওয়াশিংটনের আবহাওয়া নিয়ে আলোচনা করতে আসিনি। এসেছি সাড়ে সাত কোটি মানুষের ন্যায়সংগত সংগ্রাম এবং এক কোটি শরণার্থীর দুঃখ-দুর্দশার কথা বলতে।’
অক্টোবর-নভেম্বর মাসজুড়ে ভারতীয় বাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিবাহিনী বিভিন্ন রণক্ষেত্রে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করতে থাকে। আত্মরক্ষার শেষ চেষ্টা হিসেবে পাকিস্তান ৩ ডিসেম্বর ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ভারত তার পাল্টা জবাব দেয়।
৬ ডিসেম্বর ইন্দিরা গান্ধী লোকসভায় ঘোষণা দেন, ‘আমি এই হাউসকে আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, কালক্রমে আরও অনেক দেশ স্বীকৃতি দেবে।’
একই দিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে লেখা চিঠিতে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘আমার কোনো সন্দেহ নেই, যুদ্ধে এবং জীবন উৎসর্গে এই সহযাত্রা মহৎ আদর্শের প্রতি এবং দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক বন্ধুত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করবে।’ এটাই ছিল বাংলাদেশের জন্য কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রথম স্বীকৃতি। দ্বিতীয় স্বীকৃতি দেয় ভুটান।
১৬ ডিসেম্বর দখলদার বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল নিয়াজি ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেন।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্বাসনকাজেও ইন্দিরা গান্ধীর সরকার সহযোগিতা করেছে।
ইন্দিরা গান্ধী তাঁর দেশে নকশাল দমন কিংবা বিরোধী দলের প্রতি কঠোর আচরণের কারণে বিতর্কিত হতে পারেন, কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন দুঃসময়ের বন্ধু।
No comments