ফারুক খান বিমান ও জিএম কাদের বাণিজ্যমন্ত্রী-সামনে আরও চমক by শাহেদ চৌধুরী ও শরীফুল ইসলাম
তিন মন্ত্রীকে তাদের দফতর থেকে সরিয়ে দিয়ে দফতর পুনর্বণ্টনের পর মন্ত্রিসভায় আরও রদবদল ও সম্প্রসারণের আভাস পাওয়া গেছে। মন্ত্রিসভায় আরও চমক আসছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অচিরেই মন্ত্রিপরিষদে রদবদলের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে জানা গেছে। নতুন দুই মন্ত্রীকে তাদের দফতর দেওয়া হয়েছে। গতকাল গণভবনে নবনিযুক্ত মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে প্রসঙ্গক্রমে প্রধানমন্ত্রী জানান,
মন্ত্রিসভা নিয়ে চমকের পালা কেবল শুরু হয়েছে। তিনি এখনও চমকের বাক্সই খোলেননি। সরকারের গতি আরও বাড়াতে এ চমক দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতে বলেন তিনি। সোমবার
মন্ত্রিসভায় রদবদল করা হয়েছে। নতুন দুই মন্ত্রীর দফতর বণ্টন এবং পুরনো তিন মন্ত্রীর দফতর পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। এর মধ্যে ওবায়দুল কাদের যোগাযোগ এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন এবং বিমানমন্ত্রী জিএম কাদেরকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান পেয়েছেন নবগঠিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
আরও চমকের কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার মিয়ানমার সফরে যাওয়ার আগে মন্ত্রিসভায় রদবদল ও সম্প্রসারণ নিয়ে আরও চমকের কথা বলেছেন। নবনিযুক্ত যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী তাদের উদ্দেশে বলেন, দেশে ফিরে আসার পর তিনি মন্ত্রিসভা নিয়ে নতুন চমক দেখাবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় মন্ত্রিসভার রদবদল ও সম্প্রসারণ নিয়ে রোববার রাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত টক শো অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন। মিয়ানমার থেকে ইন্দোনেশিয়া সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে আগামী ১০ ডিসেম্বর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এরপরই তিনি মন্ত্রিসভায় আরেক দফা রদবদল এবং সম্প্রসারণের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
নতুন দুই মন্ত্রীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মঙ্গলবার পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সরকারি ছুটি। এর পরের দিন বুধবার সচিবালয়ে গিয়ে অফিসে বসুন। পুরোদমে দাফতরিক কাজকর্ম শুরু করুন।' এ সময় তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের মন্ত্রণালয়ের গুরুত্ব নিয়েও কথা বলেন।
সৈয়দ আবুল হোসেনকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে তিনি কিছুটা অখুশিও হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণ করছেন। অথচ এ সংক্রান্ত কোনো মন্ত্রণালয় নেই। এ ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
দুই মন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে অন্যদের মধ্যে হুইপ আ স ম ফিরোজ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর, ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমসহ যুক্তরাজ্য ও কানাডা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তিনমন্ত্রীর দফতর বদল
সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে আলোচিত ও সমালোচিত তিন মন্ত্রীকে গতকাল তাদের মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়। দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া মন্ত্রীরা হলেন_ যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এবং বিমানমন্ত্রী জিএম কাদের। এর মধ্যে সৈয়দ আবুল হোসেনকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন এবং জিএম কাদেরকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ তিন মন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে গতকাল সচিবালয়সহ আওয়ামী লীগ অফিসে দিনভর নানা আলোচনা চলে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ নিয়ে চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ শুরু করেছেন। এ অবস্থায় সরকার ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক নেতা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগমন্ত্রীর বিরোধ প্রকট রূপ নিয়েছে। এ অবস্থায় তিনি যোগাযোগমন্ত্রী থাকলে পদ্মা সেতুতে কোনো ধরনের ঋণ না দেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছে বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনাই সৈয়দ আবুল হোসেনের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটিয়েছে।
সৈয়দ আবুল হোসেন বেশ কিছু দিন ধরে দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনাসহ নানা ইস্যুতেও সমালোচিত হয়ে আসছেন। এ নিয়ে সরকারের ভেতরে ও বাইরে বিরূপ প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের আগে বিভিন্ন সড়ক ও রাস্তাঘাট সংস্কারের ব্যর্থতা নিয়ে সরকারি দলের এমপিরাও সংসদের ভেতরে-বাইরে তার ব্যাপক সমালোচনা করেন। এ সময় বিরোধী দলসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। অনেকেই যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবি তোলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানের বিরুদ্ধে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ নানা ইস্যুতে অহেতুক বেফাঁস কথা বলার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে 'কম খাওয়ার পরামর্শ' দিয়ে তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন। এ অবস্থায় বিরোধী দলের পক্ষ থেকে তার পদত্যাগের দাবি করা হয়।
বেশ কিছুদিন ধরে বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সমালোচিত হয়ে আসছেন বিমানমন্ত্রী জিএম কাদের। তার সঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থাগুলোর নীতিনির্ধারকদের বনিবনা হচ্ছিল না। তিনি মন্ত্রণালয়ের কেউ তার নির্দেশ বাস্তবায়ন করে না বলে ঘোষণা দিয়ে নিজের ব্যর্থতা জানিয়ে দিয়েছিলেন।
এ অবস্থায় আলোচিত তিন মন্ত্রীর দফতর বণ্টন করা হয়েছে। তবে এ নিয়ে তারা খুব একটা অখুশি নন। তারা দফতর বণ্টন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন। গতকাল তারা সচিবালয়সহ তাদের অধীন দফতরে গিয়ে পুরনো সহকর্মীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসেছেন। একই সঙ্গে এ তিন মন্ত্রী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তাদের নতুন দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বলে জানিয়েছেন।
সৈয়দ আবুল হোসেনকে গতকাল খানিকটা মনভার অবস্থায় দেখা গেছে। তবে তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দায়িত্ব তিনি আন্তরিকভাবে পালন করবেন। লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান দফতর বদলের বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন। তার কথা, এ পরিবর্তন গণতান্ত্রিক সরকারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রায় একই মন্তব্য করেন জিএম কাদের।
যোগাযোগে কাদের, সুরঞ্জিত রেলে
গতকাল এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদেরকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তারা গতকাল নতুন দফতরে যাননি। বুধবার নবনিযুক্ত দুই মন্ত্রী তাদের নিজ নিজ দফতরে যাবেন।
আওয়ামী লীগের এই দুই শীর্ষ নেতা ২৮ নভেম্বর মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেও তাদের দফতর বণ্টন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। এ জটিলতা নিরসনে রোববার রেলপথ বিভাগকে আলাদা মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ভেঙে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় করা হয়েছে।
এদিকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর ওবায়দুল কাদের ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গতকাল জাতীয় সংসদে মিডিয়া সেন্টারে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাদাভাবে মতবিনিময়কালে বলেছেন, তারা দূরান্বয়ী বড় স্বপ্ন দেখাতে চান না। বাস্তব অবস্থার মধ্যে থেকে রেল ও সড়ক যোগাযোগ খাতে জনদুর্ভোগ কমানোই তাদের লক্ষ্য। মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও আগের মতোই সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করার কথাও জানান দু'জনে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, হাতে সময় আছে মাত্র দু'বছর। এ সময়ে তিনি দূরের কোনো স্বপ্ন দেখাতে চান না। বাস্তব অবস্থার মধ্যে থেকে জনদুর্ভোগ কমাতে চান। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করাটাই টার্গেট।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, সময়মতো ট্রেন ছাড়া এবং রেলওয়েকে লাভজনক করাই তার এ মুহূর্তের প্রধান লক্ষ্য। রেলওয়ের বেদখল জায়গা উদ্ধারে আইন সংস্কারেরও ঘোষণা দেন তিনি।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ৩২ সদস্যের মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার পর এবার নিয়ে তৃতীয় দফায় সম্প্রসারণ করা হয়েছে। প্রথম দফায় শপথগ্রহণের ১৮ দিনের মাথায় ২০০৯ সালের ২৪ জানুয়ারি ছয়জন প্রতিমন্ত্রী অন্তর্ভুক্ত হলে মন্ত্রিসভার সদস্য দাঁড়ায় ৩৮ জনে। ২০০৯ সালের ৩১ জুলাই একজন মন্ত্রী ও পাঁচজন প্রতিমন্ত্রীর নিয়োগের পর এ সংখ্যা ৪৪ জনে গিয়ে দাঁড়ায়।
দু'বছর তিন মাস ২৭ দিনের মাথায় ২৮ নভেম্বর সম্প্রসারণের পর মন্ত্রিসভার আকার হয়েছে ৪৬ জনে। তাদের মধ্যে ২৮ জন পূর্ণ মন্ত্রী এবং ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ পদত্যাগ করেছেন। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীর সংখ্যা ছিল ৬০। বর্তমান মন্ত্রিসভায় উপমন্ত্রী নেই।
বর্তমান মন্ত্রিসভা গঠনের এক বছরের মাথায় মন্ত্রিসভায় রদবদলের গুঞ্জন শুরু হয়; কিন্তু এ রদবদলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও প্রায় দেড় বছর। এ সময়ের মধ্যে কয়েকজন মন্ত্রী নানা ইস্যুতে সমালোচিত হন। অকারণে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ অবস্থায় মন্ত্রিসভায় রদবদল ও সম্প্রসারণ হয়েছে। এর ফলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণসহ সরকারে আরও গতি আসবে বলে অনেকেই মনে করছেন।
এদিকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরিয়ে দেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী জনতার পক্ষে রোকেয়া প্রাচী।
গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনি এ ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে তিনি নিরাপদ সড়ক তৈরির সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে অনুরোধ জানান।
মন্ত্রিসভায় রদবদল করা হয়েছে। নতুন দুই মন্ত্রীর দফতর বণ্টন এবং পুরনো তিন মন্ত্রীর দফতর পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। এর মধ্যে ওবায়দুল কাদের যোগাযোগ এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন এবং বিমানমন্ত্রী জিএম কাদেরকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান পেয়েছেন নবগঠিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
আরও চমকের কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার মিয়ানমার সফরে যাওয়ার আগে মন্ত্রিসভায় রদবদল ও সম্প্রসারণ নিয়ে আরও চমকের কথা বলেছেন। নবনিযুক্ত যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী তাদের উদ্দেশে বলেন, দেশে ফিরে আসার পর তিনি মন্ত্রিসভা নিয়ে নতুন চমক দেখাবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় মন্ত্রিসভার রদবদল ও সম্প্রসারণ নিয়ে রোববার রাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত টক শো অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন। মিয়ানমার থেকে ইন্দোনেশিয়া সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে আগামী ১০ ডিসেম্বর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এরপরই তিনি মন্ত্রিসভায় আরেক দফা রদবদল এবং সম্প্রসারণের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
নতুন দুই মন্ত্রীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মঙ্গলবার পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সরকারি ছুটি। এর পরের দিন বুধবার সচিবালয়ে গিয়ে অফিসে বসুন। পুরোদমে দাফতরিক কাজকর্ম শুরু করুন।' এ সময় তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের মন্ত্রণালয়ের গুরুত্ব নিয়েও কথা বলেন।
সৈয়দ আবুল হোসেনকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে তিনি কিছুটা অখুশিও হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণ করছেন। অথচ এ সংক্রান্ত কোনো মন্ত্রণালয় নেই। এ ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
দুই মন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে অন্যদের মধ্যে হুইপ আ স ম ফিরোজ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর, ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমসহ যুক্তরাজ্য ও কানাডা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তিনমন্ত্রীর দফতর বদল
সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে আলোচিত ও সমালোচিত তিন মন্ত্রীকে গতকাল তাদের মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়। দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া মন্ত্রীরা হলেন_ যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এবং বিমানমন্ত্রী জিএম কাদের। এর মধ্যে সৈয়দ আবুল হোসেনকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন এবং জিএম কাদেরকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ তিন মন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে গতকাল সচিবালয়সহ আওয়ামী লীগ অফিসে দিনভর নানা আলোচনা চলে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ নিয়ে চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ শুরু করেছেন। এ অবস্থায় সরকার ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক নেতা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগমন্ত্রীর বিরোধ প্রকট রূপ নিয়েছে। এ অবস্থায় তিনি যোগাযোগমন্ত্রী থাকলে পদ্মা সেতুতে কোনো ধরনের ঋণ না দেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছে বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনাই সৈয়দ আবুল হোসেনের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটিয়েছে।
সৈয়দ আবুল হোসেন বেশ কিছু দিন ধরে দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনাসহ নানা ইস্যুতেও সমালোচিত হয়ে আসছেন। এ নিয়ে সরকারের ভেতরে ও বাইরে বিরূপ প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের আগে বিভিন্ন সড়ক ও রাস্তাঘাট সংস্কারের ব্যর্থতা নিয়ে সরকারি দলের এমপিরাও সংসদের ভেতরে-বাইরে তার ব্যাপক সমালোচনা করেন। এ সময় বিরোধী দলসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। অনেকেই যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবি তোলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানের বিরুদ্ধে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ নানা ইস্যুতে অহেতুক বেফাঁস কথা বলার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে 'কম খাওয়ার পরামর্শ' দিয়ে তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন। এ অবস্থায় বিরোধী দলের পক্ষ থেকে তার পদত্যাগের দাবি করা হয়।
বেশ কিছুদিন ধরে বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সমালোচিত হয়ে আসছেন বিমানমন্ত্রী জিএম কাদের। তার সঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থাগুলোর নীতিনির্ধারকদের বনিবনা হচ্ছিল না। তিনি মন্ত্রণালয়ের কেউ তার নির্দেশ বাস্তবায়ন করে না বলে ঘোষণা দিয়ে নিজের ব্যর্থতা জানিয়ে দিয়েছিলেন।
এ অবস্থায় আলোচিত তিন মন্ত্রীর দফতর বণ্টন করা হয়েছে। তবে এ নিয়ে তারা খুব একটা অখুশি নন। তারা দফতর বণ্টন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন। গতকাল তারা সচিবালয়সহ তাদের অধীন দফতরে গিয়ে পুরনো সহকর্মীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসেছেন। একই সঙ্গে এ তিন মন্ত্রী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তাদের নতুন দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বলে জানিয়েছেন।
সৈয়দ আবুল হোসেনকে গতকাল খানিকটা মনভার অবস্থায় দেখা গেছে। তবে তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দায়িত্ব তিনি আন্তরিকভাবে পালন করবেন। লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান দফতর বদলের বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন। তার কথা, এ পরিবর্তন গণতান্ত্রিক সরকারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রায় একই মন্তব্য করেন জিএম কাদের।
যোগাযোগে কাদের, সুরঞ্জিত রেলে
গতকাল এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদেরকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তারা গতকাল নতুন দফতরে যাননি। বুধবার নবনিযুক্ত দুই মন্ত্রী তাদের নিজ নিজ দফতরে যাবেন।
আওয়ামী লীগের এই দুই শীর্ষ নেতা ২৮ নভেম্বর মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেও তাদের দফতর বণ্টন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। এ জটিলতা নিরসনে রোববার রেলপথ বিভাগকে আলাদা মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ভেঙে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় করা হয়েছে।
এদিকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর ওবায়দুল কাদের ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গতকাল জাতীয় সংসদে মিডিয়া সেন্টারে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাদাভাবে মতবিনিময়কালে বলেছেন, তারা দূরান্বয়ী বড় স্বপ্ন দেখাতে চান না। বাস্তব অবস্থার মধ্যে থেকে রেল ও সড়ক যোগাযোগ খাতে জনদুর্ভোগ কমানোই তাদের লক্ষ্য। মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও আগের মতোই সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করার কথাও জানান দু'জনে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, হাতে সময় আছে মাত্র দু'বছর। এ সময়ে তিনি দূরের কোনো স্বপ্ন দেখাতে চান না। বাস্তব অবস্থার মধ্যে থেকে জনদুর্ভোগ কমাতে চান। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করাটাই টার্গেট।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, সময়মতো ট্রেন ছাড়া এবং রেলওয়েকে লাভজনক করাই তার এ মুহূর্তের প্রধান লক্ষ্য। রেলওয়ের বেদখল জায়গা উদ্ধারে আইন সংস্কারেরও ঘোষণা দেন তিনি।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ৩২ সদস্যের মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার পর এবার নিয়ে তৃতীয় দফায় সম্প্রসারণ করা হয়েছে। প্রথম দফায় শপথগ্রহণের ১৮ দিনের মাথায় ২০০৯ সালের ২৪ জানুয়ারি ছয়জন প্রতিমন্ত্রী অন্তর্ভুক্ত হলে মন্ত্রিসভার সদস্য দাঁড়ায় ৩৮ জনে। ২০০৯ সালের ৩১ জুলাই একজন মন্ত্রী ও পাঁচজন প্রতিমন্ত্রীর নিয়োগের পর এ সংখ্যা ৪৪ জনে গিয়ে দাঁড়ায়।
দু'বছর তিন মাস ২৭ দিনের মাথায় ২৮ নভেম্বর সম্প্রসারণের পর মন্ত্রিসভার আকার হয়েছে ৪৬ জনে। তাদের মধ্যে ২৮ জন পূর্ণ মন্ত্রী এবং ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ পদত্যাগ করেছেন। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীর সংখ্যা ছিল ৬০। বর্তমান মন্ত্রিসভায় উপমন্ত্রী নেই।
বর্তমান মন্ত্রিসভা গঠনের এক বছরের মাথায় মন্ত্রিসভায় রদবদলের গুঞ্জন শুরু হয়; কিন্তু এ রদবদলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও প্রায় দেড় বছর। এ সময়ের মধ্যে কয়েকজন মন্ত্রী নানা ইস্যুতে সমালোচিত হন। অকারণে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ অবস্থায় মন্ত্রিসভায় রদবদল ও সম্প্রসারণ হয়েছে। এর ফলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণসহ সরকারে আরও গতি আসবে বলে অনেকেই মনে করছেন।
এদিকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরিয়ে দেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী জনতার পক্ষে রোকেয়া প্রাচী।
গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনি এ ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে তিনি নিরাপদ সড়ক তৈরির সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে অনুরোধ জানান।
No comments