কারবালার শিক্ষা by শাহীন হাসনাত

হররমের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা। এই দিনে অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে কারবালায় মর্মান্তিকভাবে শাহাদাতবরণ করেন। বিশ্বের মুসলমানদের কাছে দিনটি একদিকে যেমন শোকের, তেমনি অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার চেতনায় উজ্জ্বল।


ইসলামের ইতিহাসে কারবালার এই শোকাবহ ঘটনার আগেও এ দিনে নানা তাৎপর্যময় ঘটনা ঘটেছে। ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন, সঙ্গী-সাথিসহ হজরত ইমাম হোসাইনের (রা.) শাহাদাতবরণের এই মর্মান্তিক ঘটনা ছাড়া এ দিনে অনেক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে বলে হাদিস শরিফে উলেল্গখ রয়েছে। প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) এদিনে পৃথিবীতে আগমন করেন এবং এদিনই তার তওবা কবুল হয়। এই ১০ মহররম তারিখে হজরত নূহর (আ.) নৌকা মহাপল্গাবন থেকে রক্ষা পায়। এর বাইরেও এ মহিমময় দিনে আরও অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার উলেল্গখ রয়েছে ইসলামের ইতিহাসে। হাদিস শরিফে আছে, মহররম মাসের ১০ তারিখেই কেয়ামত সংঘটিত হবে।
ইসলামের ইতিহাসে ১০ মহররম তারিখটির নানা গুরুত্ব ও তাৎপর্য থাকলেও কারবালায় ঘটে যাওয়া সর্বশেষ মর্মান্তিক ঘটনার স্মরণেই বর্তমান দুনিয়ার মুসলমানরা দিনটি পালন করে থাকেন। মুসলমানরা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে এই দিনে রোজা পালন করেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, হজরত মুয়াবিয়ার (রা.) মৃত্যুর পর তার ছেলে ইয়াজিদ অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেন এবং এ জন্য ষড়যন্ত্র ও শক্তি ব্যবহারের পথ বেছে নেন। ইতিহাসে এ ধরনের উদাহরণ বিরল। অবরুদ্ধ অসহায় নারী ও শিশুদের পানি পর্যন্ত পান করতে দেয়নি ইয়াজিদ বাহিনী। বিষাক্ত তীরের আঘাতে নিজ কোলে থাকা শিশুপুত্রের মৃত্যুর পর আহত অবস্থায় অসীম সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে শহীদ হন হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)। আশুরার এই ঐতিহাসিক ঘটনার মূল চেতনা হচ্ছে ক্ষমতার লোভ, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য চক্রান্ত ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই। বর্তমান দুনিয়ায় আশুরার এই শিক্ষা খুবই প্রাসঙ্গিক। অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থান এবং ত্যাগের যে শিক্ষা কারবালার ঘটনা মানবজাতিকে দিয়েছে, তা আজকের দুনিয়ার অন্যায় ও অবিচার দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.