ঢাকায় পাঁচ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা-সরকারের মরণ এসে গেছে, ওষুধে কাজ হবে না : ফখরুল

ন্ত্রিসভায় রদবদল করে সরকার বাঁচার শেষ চেষ্টা করছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, 'আল্লাহ যখন সময় শেষ করে দেন তখন কি আর ওষুধে কাজ হয়? সরকারের মরণ এসে গেছে, এখন ওষুধে আর কাজ হবে না।'গতকাল সোমবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।


সমাবেশ থেকে তিনি পাঁচ দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচিও ঘোষণা করেন। ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) ভাগ, সাদেক হোসেন খোকার ওপর হামলা এবং হরতালে গ্রেপ্তার হওয়া দলীয় নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে এ কর্মসূচি দেওয়া হয়। কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী ৮ থেকে ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর থানায় থানায় জনসভা, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করবে বিএনপি। শেষ দিনে ঢাকার বাইরেও গণসংযোগ, প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ করবে দলটি।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আওয়ামী লীগের প্রধানই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। এখন আমরা কর্মসূচি দিলেই বলেন যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমাও করেছেন আপনারা, তাদের রক্ষাও করছেন আপনারা।'
সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে : বিএনপি নেতা বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। কারণ সংবিধানে স্পষ্ট লেখা আছে, স্থানীয় সরকার পর্যায়ে কোনো অনির্বাচিত প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এই সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে একদিন প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সব মন্ত্রীকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
বিএনপিতে যত মুক্তিযোদ্ধা আছেন, আওয়ামী লীগে নেই : বিএনপির চেয়ারপারসনকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এক বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের মানুষ মনে করেছিল আওয়ামী লীগে অন্তত একজন ভদ্র মানুষ আছেন। কিন্তু গতকাল দেশবাসীর কাছে তাঁর আসল চেহারা বের হয়ে গেছে। তিনি বলেন, 'সৈয়দ আশরাফ বিএনপিকে যুদ্ধাপরাধীদের দল বলেছেন। আমি জবাবে বলতে চাই, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। তিনি নিজে রণাঙ্গনে লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছেন। বিএনপিতে যত মুক্তিযোদ্ধা আছেন, তাঁর দল আওয়ামী লীগে তত মুক্তিযোদ্ধা নেই। বরং যুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের নেতারা কলকাতায় ঘুরে বেড়িয়েছেন আর যুদ্ধ করেছেন বিএনপি নেতারা।' তিনি আরো বলেন, 'আমরা আগেও বলেছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরাও চাই। কিন্তু সেটা হতে হবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক মানের; মানবাধিকার লঙ্ঘন করে নয়।'
গওহর ভারতের স্বার্থে কথা বলছেন : প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী সম্পর্কে মির্জা আলমগীর বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় আসার আগে তাঁর নাম কখনো শুনিনি। তিনি ভারতের নাগরিক, ভারতের স্বার্থেই কথা বলছেন। এই গওহর রিজভী বলেছেন, টিপাইমুখ বাঁধ হলে বাংলাদেশের উপকার হবে।
একজন প্রধানমন্ত্রী দিয়ে হবে না, দুজন লাগবে : ঢাকা ভাগের উদাহরণ টেনে ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন_ঢাকায় জনসংখ্যা বেড়ে গেছে। এই জনগণের সেবার মান বৃদ্ধির জন্যই ডিসিসিকে দুই ভাগ করা হয়েছে। তাহলে তো প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাও ভাগ করতে হবে। কারণ বাংলাদেশে মানুষ অনেক বেড়ে গেছে। এখন আর একজন প্রধানমন্ত্রী দিয়ে হবে না। দুজন প্রধানমন্ত্রী লাগবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, 'খোকা ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া যায় না। খোকা ভাইয়ের ওপর এই আক্রমণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আক্রমণ। শেখ হাসিনা, আপনি আমার ভাইয়ের রক্তে হাত রাঙিয়েছেন। তাই ঢাকা একীভূত না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলতেই থাকবে।'
মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, আবদুল্লাহ আল নোমান, শামসুজ্জামান দুদু, আমানউল্লাহ আমান, রিজভী আহমেদ, ফজলুল হক মিলন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, জাফরুল হাসান, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, শিরিন সুলতানা, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ।
প্রমাণ হলো মন্ত্রীরা দুর্নীতিবাজ : এদিকে গতকাল সকালে এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মন্ত্রীদের পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে তাঁরা দুর্নীতিবাজ। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক এরই মধ্যে সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছে।
তারেক রহমানের ৪৭তম জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল ওই বৈঠকের আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিবাদী দল। তারা সে রকমই আচরণ করছে। হরতালের সময় সাবেক মেয়রকে টেনেহিঁচড়ে আটক করেছে। এমনকি পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাঁকে আক্রমণ করে আহত করেছে। পুলিশ হরতাল চলাকালে নেতা-কর্মীদের রশি দিয়ে বেঁধে রেখেছে। আর সরকারদলীয় লোকজন তাঁদের পিটিয়েছে।
খালেদা জিয়া ঘোমটা খুলে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় নেমেছেন_আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন মন্তব্যের জবাবে ফখরুল ইসলাম তাঁকে সংযতভাবে কথা বলার জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৫ চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে টাকা খরচ করে বিমানে করে বিদেশে পাঠানো হয়। যারা পাঠিয়েছিল তাদের বিচার করা হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বেয়াইকেও একই অপরাধে বিচার করা হবে।
তারেক রহমানকে এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত নেতা হিসেবে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, জনপ্রিয়তাই তাঁর কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারেক রহমানের পৃথিবীর কোথাও কোনো টাকা নেই। সেই সঙ্গে পাচারেরও প্রমাণ নেই।
কৃষক দলের সভাপতি শামসুজ্জামান খান দুদুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক জাফরুল হাসান প্রমুখ।
চেয়ারে বসে সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব হবে না_ব্যারিস্টার রফিক : অন্যদিকে ডিসিসি বিভক্তির প্রতিবাদে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে 'আমরা বাংলাদেশি' নামের একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, বিএনপি অফিসের সামনে চেয়ারে বসে বসে এ সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব হবে না। ঘরে বসে কিংবা সভা-সেমিনারের মাধ্যমে প্রতিবাদ করার দিন শেষ। যতক্ষণ পর্যন্ত এ সরকার নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বিএনপি নেতা খায়রুল কবীর খোকন, আবদুস সালাম, বিএফইউজের একাংশের সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.