কাদেরের অগ্রাধিকার পদ্মা সেতু, সুরঞ্জিতের রেলের লাভ

ড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্তৃত্ব থেকে রেলওয়েকে বের করে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তকে সরকারের সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন নবগঠিত মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সেই সঙ্গে রেলওয়ের বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারসহ একে লাভজনক খাতে পরিণত করার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন তিনি।অন্যদিকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করেছেন।


সময় কম হলেও পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন প্রকল্প গুরুত্বসহকারে দেখার কথা জানিয়েছেন তিনি।রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর গতকাল সোমবার বিকেলে জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, 'বিশ্বের সব দেশেই রেল লাভজনক। শুধু বাংলাদেশেই রেল লোকসানে। কিন্তু কেন? সেটাই বড় প্রশ্ন। এর জন্য দায়ী কালো বিড়ালটা আমি বের করে আনতে চাই।' তিনি রেলকে আধুনিকায়নের জন্য এ-সংক্রান্ত আইন ও বিধি সংশোধন এবং বেদখল হয়ে যাওয়া রেলের জায়গা উদ্ধারের ঘোষণা দেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সুরঞ্জিত বলেন, সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে ছাড়াও অনেক ফোরামে কথা বলার সুযোগ রয়েছে। আর মন্ত্রী হলেও কথা বলার অধিকার রয়েছে। তাই সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা বন্ধ হবে না। বিরোধী দল এ সমালোচনা করলে আরো ভালো হয়। তিনি আরো বলেন, 'গঠনমূলক সমালোচনা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে উৎসাহিত করে। আর প্রধানমন্ত্রী এই সমালোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেন বলেই তিনি আমাকে মন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন।'
সাম্প্রতিক রদবদলের পর মন্ত্রিসভায় আরো কোনো সংযোজন-বিয়োজনের প্রয়োজন আছে কি না_এমন প্রশ্নের জবাবে সুরঞ্জিত সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, 'এখন যেটি হলো সেটির মধ্যে কি কোনো সিগন্যাল দেখতে পাননি? একটি গণতান্ত্রিক সরকার যা করে বর্তমান সরকারও তাই করেছে।'
রেলকে পুনরুজ্জীবিত করার পদক্ষেপ সম্পর্কে নতুন মন্ত্রী বলেন, 'আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নিতে চাই। এর মধ্যে প্রথম সময়মতো ট্রেন ছাড়া ও গন্তব্যে পেঁৗছানো নিশ্চিত করা, ট্রেনকে পরিচ্ছন্ন রাখা, ই-টিকিট চালু, রেল লাইন সম্প্রসারণ, শাটল ট্রেন চালুর মাধ্যমে রাজধানীর সঙ্গে পাশের জেলাগুলোর সঙ্গে সহজ রেল যোগাযোগ স্থাপন ও বেদখলে থাকা রেলের জমি উদ্ধার করে তা কাজে লাগানো। মিটারগেজ লাইনকে ব্রডগেজ এবং ব্রডগেজকে ইলেকট্রিক লাইনে উন্নীত করার উদ্যোগ গ্রহণ।' এসব কাজের জন্য খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে না বলে তিনি জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রেল যোগাযোগের সফলতা ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রেলের বিকল্প একমাত্র রেল। এর মাধ্যমে সাধারণ জনগণের সহজ ও সুলভে যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহন সম্ভব। প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা এই যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু বিগত সময়ে এই রেল ধ্বংসের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে সড়ককেই বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই অবস্থান থেকে সরে আসতে চায়। তিনি বলেন, 'আমার দায়িত্ব হবে রেলের প্রতি দাতা সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করা। তাদের বাংলাদেশের রেলের গুরুত্ব বোঝানো। এরপর রেলের উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।' তিনি বলেন, বিভিন্ন দাতা সংস্থা যেমন বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি তাদের সব টাকা সড়কে দেয়, রেলে দেয় না। এখন এ অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
রেলমন্ত্রী নিজের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে বলেন, 'সময় আছে দুই বছর। সব পারব, এমন নয়। প্রধানমন্ত্রী যে বিশ্বাস নিয়ে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। যতটুকু সম্ভব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করব।' নতুন এ মন্ত্রণালয়ের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে, সেই সম্ভাবনাকে তিনি কাজে লাগাবেন বলে জানান।
গতকাল সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নতুন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সময় যদিও কম, তবুও চ্যালেঞ্জ হিসেবে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছি। সবার সহযোগিতায় এ দায়িত্ব পালন করতে চাই। আমার সর্বোচ্চ মেধা, শ্রম দিয়ে কাজ করে মানুষের আস্থা অর্জন করতে চাই। ইনশা আল্লাহ সফল হব।'
এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'জনগণ কাজ চায়, কথা নয়। কথা বলার দিন শেষ। এখন ভালো কাজ করার সময়।' আগামীকাল বুধবার দপ্তরে বসে কাজ শুরু করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'ঢেউ না থাকলে নদী কিসের? ঢেউয়ের মধ্যে সাঁতার কাটাই চ্যালেঞ্জ। আর কোনো চ্যালেঞ্জই অনতিক্রমযোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে দায়িত্ব দিয়েছেন, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তা পালন করে যাব।'
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অব্যাহত ব্যর্থতার পর বর্তমান সরকারের প্রায় তিন বছরের মাথায় এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.