হিলারির অসন্তোষে চটেছে ইসরায়েল
ইসরায়েল সরকারের 'অগণতান্ত্রিক' আচরণ এবং দেশটির নারীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের উদ্বেগের প্রতিক্রিয়ায় বেজায় চটেছে তেলআবিব। গত শনিবার ওয়াশিংটনে হিলারির করা মন্তব্যকে 'সম্পূর্ণভাবে অতিরঞ্জিত' বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী ইউভাল স্তেইনিৎজ। আরো কয়েকজন ইসরায়েলি মন্ত্রীও তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন। তবে বিরোধীরা হিলারির মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন।
গত শনিবার ওয়াশিংটনে সাবান ফোরামের সমাপনী অধিবেশনে হিলারি ইসরায়েলের বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) বিদেশি অর্থসহায়তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করেন। পাশাপাশি দেশটির কোনো কোনো অঞ্চলে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের ব্যাপারেও নিজের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর মতে, এ সব বিষয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। এ নিয়ে ইসরায়েলের বর্তমান মধ্য-ডানপন্থী জোট সরকারের একাধিক মন্ত্রী তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তবে বিরোধীরা হিলারির বক্তব্যকে স্বাগত জানান। সাবান ফোরামের সমাপনী ওই অধিবেশনে ইসরায়েলের উপপ্রধানমন্ত্রী দ্যান মেরিদর ও বিরোধী নেতা জিপি লিভনি উপস্থিত ছিলেন।
রুদ্ধদ্বার ওই অধিবেশনে হিলারির দেওয়া ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসরায়েলের অধিকাংশ পত্রপত্রিকা পরদিন রবিবার এ খবর প্রকাশ করে। তবে তারা কিভাবে হিলারির মন্তব্য সংগ্রহ করেছে, সে ব্যাপারে নিশ্চুপ ছিল সংবাদমাধ্যমগুলো। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে হিলারির মন্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
ইসরায়েলের ইয়েদিওৎ আহারোনৎ জানায়, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের দক্ষিণপন্থী আইনপ্রণেতাদের প্রস্তাবিত একাধিক বিলকে 'গণতন্ত্রের পরিপন্থী' বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন হিলারি। ইসরায়েলের কোনো কোনো অঞ্চলে বাসে নারীদের আসন নির্দিষ্ট করে দেওয়াকে তিনি 'রোজা পার্কের জামানার' সঙ্গে তুলনা করেন। প্রসঙ্গত, গত শতকের পঞ্চাশের দশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাসে শ্বেতাঙ্গদের জন্য নির্দিষ্ট আসনে কৃষ্ণাঙ্গদের বসতে দেওয়া হতো না। এর প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন রোজা পার্ক।
সম্প্রতি ইসরায়েলি সরকারের প্রস্তাবিত একাধিক বিলের বিপক্ষে সরব হয়েছে দেশটির একাধিক বামপন্থী গোষ্ঠী। বামপন্থীদের দাবি, ইসরায়েলের দখলদারির বিরুদ্ধে যারা সরব, যারা মনে করে সরকারের আগ্রাসী আচরণের ফলে ফিলিস্তিনি জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, মূলত তাদেরই নিয়ন্ত্রণ করতে এসব বিল উত্থাপন করা হয়েছে। এনজিওবিষয়ক প্রস্তাবিত বিলটির ব্যাপারেও এমন মত তাদের। মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, এর মাধ্যমে বামধারায় বিশ্বাসী এনজিও ও সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করার পাঁয়তারা চলছে। হিলারির এ উদ্বেগ প্রকাশের ব্যাপারে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে রবিবার ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়। অর্থমন্ত্রী ইউভাল স্তেইনিৎজ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যকে 'সম্পূর্ণ অতিরঞ্জিত' বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, 'ইসরায়েলের গণতন্ত্র জীবন্ত। এর শ্বাস-প্রশ্বাসের উৎস উদারতা।' স্তেইনিৎজকে উদ্ধৃত করে ইসরায়েলি একাধিক পত্রিকা এ কথা জানায়। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।
No comments