চারদিক-রক্তে আঁকা বাংলাদেশ
অসংখ্য বুলেট যেন বিদীর্ণ করেছে বাংলাদেশের হূদয়। সেই হূদয়ের রক্তক্ষরণে সবুজের বুকে লাল সূর্য। একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশকে অর্জন করতে ৩০ লাখ শহীদের তাজা প্রাণ হয়েছে বলিদান। রক্তের হূদয় চিরে বেরিয়ে আসে রং। আর সেই রং দিয়েই আঁকা বাংলাদেশের প্রকৃতি, মা, মানুষ ও বিচিত্র অনুষঙ্গ। মোহাম্মদ জাহিদ আত্তারি তরুণ শিল্পী। বিজয় দিবস ঘিরে তাঁর আঁকা ৭৪টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে সৈয়দপুর শহরের মুর্তজা
ইনস্টিটিউট গ্যালারিতে। বিষয় ‘রক্তে আঁকা বাংলাদেশ’। রক্তে আঁকা বাংলাদেশ সত্যিই শিহরিত করে হূদয়। রঙের আঁচড়ে শিল্পী ফুটিয়ে তুলেছেন মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের চেতনা ও বাংলাদেশ।
সাতচল্লিশে দেশ বিভাগ, বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, আর জাতির সবচেয়ে বড় যে অর্জন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ—সবই চিত্রিত হয়েছে প্রদর্শনীতে। যেন জীবন্ত সব ছবি। পেনসিল স্কেচ, জল ও তৈলচিত্র—সব মাধ্যমেই শিল্পীর প্রগাঢ় অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে।
সবুজ বাংলাদেশকে শিল্পী দেখেছেন তাঁর আপন দৃষ্টিভঙ্গিতে। শত হতাশার মাঝেও শিল্পী আশাবাদী। বাংলাদেশকে তিনি সমৃদ্ধির গন্তব্যে এগিয়ে দিতে চান।
ষড়ঋতুর বাংলাদেশ উঠে আসে রংতুলির প্রাণান্ত আঁচড়ে। বর্ষা, শীত গ্রীষ্মে প্রকৃতি যে আভা ছড়ায়, তা যেন বাস্তবতা পায় ক্যানভাসে। মুক্তিযুদ্ধে নারীর সম্ভ্রমহানি, শহীদের রক্তাক্ত লাশ শকুনের খাবার হয়ে ওঠে, জল্লাদ ইয়াহিয়ার মুখচ্ছবি, সাতই মার্চে বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্স মাঠের ঐতিহাসিক ভাষণ—কী নেই শিল্পীর কল্পনায়? নতুন প্রজন্ম এসব দেখে যেমন অভিভূত হয়, তেমনই ঘৃণায় ভরে ওঠে তাদের হূদয়। যে ঘৃণা গিয়ে ঠেকে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর। রাজাকার-আলবদরদের ঘৃণিত কার্যকলাপের ওপর, যারা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; চালিয়েছিল নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ, লুণ্ঠন আর ধর্ষণ। সত্যিকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার পথ যেন বলে দিতে চায় এসব বিমূর্ত ছবি।
এমন চিত্রপ্রদর্শনীর অনেক বেশি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রাজনৈতিক ব্যাখ্যা-অপব্যাখ্যার এ সময়টায়। এমন মন্তব্য করলেন, বর্তমান প্রজন্মের একজন দর্শনার্থী। মাহ্মুদ সরকার নামের ওই দর্শনার্থী বললেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। পাঠ্যবইয়ে একেক সময় একেক ইতিহাস পড়ে অনেক বিভ্রান্তিতে পড়েছিলাম। এ প্রদর্শনী আমার চোখ অনেকটা খুলে দিয়েছে। প্রদর্শনীর ছবিগুলোয় সংযোজিত ইতিহাসের বর্ণনা দেখে ভুল ভেঙেছে আমার। আসলে মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালির অস্তিত্বের যুদ্ধ। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বিনির্মাণের যুদ্ধ। একটি জনযুদ্ধ। আর সেই বঞ্চনা মুক্তির যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অন্য কেউ নন।
শিল্পী জাহিদ আত্তারির প্রত্যাশা অনেক। সৈয়দপুরের এই গুণী শিল্পী মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধ আসলে আমাদের সংস্কৃতির ভান্ডার অনেক সমৃদ্ধ করেছে। তাই জাতিকে প্রকৃত ইতিহাস জানাতে সেই সংস্কৃতির বহুমাত্রিক ব্যবহার করতে হবে। জাহিদ চান, তাঁর এ শিল্পকর্ম ছড়িয়ে দেবেন দেশময়। ২০১২ সালের মধ্যেই তিনি ঢাকায় তাঁর ছবি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করবেন। এরপর একে একে দেশের বড় শহরগুলোয় প্রদর্শনী নিয়ে যাবেন তিনি।
সৈয়দপুরে বিজয় দিবসের তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনীতে হাজারও মানুষের ঢল নামে। দর্শক দেখে উৎফুল্ল শিল্পী। জাহিদ আত্তারি জানান, ইতিপূর্বে সৈয়দপুরে লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনসহ বেশ কটি ভেন্যুতে তিনি প্রদর্শনীর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। প্রতিটি প্রদর্শনীতেই সাংস্কৃতিক বোদ্ধাদের বিনয়ী উপস্থিতি দেখেছেন শিল্পী। তিনি আরও জানান, রাজধানীর বাইরে একটি ছোট্ট শহর সৈয়দপুর, তবু এখানে মুক্তিযুদ্ধের অনেক উপকরণ রয়েছে। কারণ, এ শহরেই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। হাজারও মানুষ স্বাধীনতার জন্য অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেছেন। এসব স্মৃতি সংরক্ষণ তো করতেই হবে।
সৈয়দপুরের মতো জায়গায় স্বাধীনতার প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করেছেন বলেই জাহিদের এ প্রদর্শনী ছিল ব্যতিক্রমী। প্রদর্শনীতে তাঁর আঁকা প্রচুর ছবি বিক্রি হয়েছে। তিনি ছবি বিক্রি থেকে উপার্জিত টাকা জনহিতকর কাজে ব্যয় করতে চান বলে জানালেন।
১৬ ডিসেম্বর শীতবিকেলে শিল্পীর একক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) মো. মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী। এ প্রদর্শনী তাঁকে মুগ্ধ করেছে। তিনি বললেন, চেতনা শাণিত করতেই হবে। নয়তো স্মৃতি হারিয়ে যায় বিস্মৃতির অতলান্তে। জাহিদের ছবিগুলো যেন একেকটি ইতিহাসের স্বাক্ষর। তিনি এ ধরনের ইতিবাচক কাজকে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে সহযোগিতা দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
এম আর আলম
সাতচল্লিশে দেশ বিভাগ, বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, আর জাতির সবচেয়ে বড় যে অর্জন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ—সবই চিত্রিত হয়েছে প্রদর্শনীতে। যেন জীবন্ত সব ছবি। পেনসিল স্কেচ, জল ও তৈলচিত্র—সব মাধ্যমেই শিল্পীর প্রগাঢ় অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে।
সবুজ বাংলাদেশকে শিল্পী দেখেছেন তাঁর আপন দৃষ্টিভঙ্গিতে। শত হতাশার মাঝেও শিল্পী আশাবাদী। বাংলাদেশকে তিনি সমৃদ্ধির গন্তব্যে এগিয়ে দিতে চান।
ষড়ঋতুর বাংলাদেশ উঠে আসে রংতুলির প্রাণান্ত আঁচড়ে। বর্ষা, শীত গ্রীষ্মে প্রকৃতি যে আভা ছড়ায়, তা যেন বাস্তবতা পায় ক্যানভাসে। মুক্তিযুদ্ধে নারীর সম্ভ্রমহানি, শহীদের রক্তাক্ত লাশ শকুনের খাবার হয়ে ওঠে, জল্লাদ ইয়াহিয়ার মুখচ্ছবি, সাতই মার্চে বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্স মাঠের ঐতিহাসিক ভাষণ—কী নেই শিল্পীর কল্পনায়? নতুন প্রজন্ম এসব দেখে যেমন অভিভূত হয়, তেমনই ঘৃণায় ভরে ওঠে তাদের হূদয়। যে ঘৃণা গিয়ে ঠেকে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর। রাজাকার-আলবদরদের ঘৃণিত কার্যকলাপের ওপর, যারা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; চালিয়েছিল নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ, লুণ্ঠন আর ধর্ষণ। সত্যিকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার পথ যেন বলে দিতে চায় এসব বিমূর্ত ছবি।
এমন চিত্রপ্রদর্শনীর অনেক বেশি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রাজনৈতিক ব্যাখ্যা-অপব্যাখ্যার এ সময়টায়। এমন মন্তব্য করলেন, বর্তমান প্রজন্মের একজন দর্শনার্থী। মাহ্মুদ সরকার নামের ওই দর্শনার্থী বললেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। পাঠ্যবইয়ে একেক সময় একেক ইতিহাস পড়ে অনেক বিভ্রান্তিতে পড়েছিলাম। এ প্রদর্শনী আমার চোখ অনেকটা খুলে দিয়েছে। প্রদর্শনীর ছবিগুলোয় সংযোজিত ইতিহাসের বর্ণনা দেখে ভুল ভেঙেছে আমার। আসলে মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালির অস্তিত্বের যুদ্ধ। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বিনির্মাণের যুদ্ধ। একটি জনযুদ্ধ। আর সেই বঞ্চনা মুক্তির যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অন্য কেউ নন।
শিল্পী জাহিদ আত্তারির প্রত্যাশা অনেক। সৈয়দপুরের এই গুণী শিল্পী মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধ আসলে আমাদের সংস্কৃতির ভান্ডার অনেক সমৃদ্ধ করেছে। তাই জাতিকে প্রকৃত ইতিহাস জানাতে সেই সংস্কৃতির বহুমাত্রিক ব্যবহার করতে হবে। জাহিদ চান, তাঁর এ শিল্পকর্ম ছড়িয়ে দেবেন দেশময়। ২০১২ সালের মধ্যেই তিনি ঢাকায় তাঁর ছবি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করবেন। এরপর একে একে দেশের বড় শহরগুলোয় প্রদর্শনী নিয়ে যাবেন তিনি।
সৈয়দপুরে বিজয় দিবসের তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনীতে হাজারও মানুষের ঢল নামে। দর্শক দেখে উৎফুল্ল শিল্পী। জাহিদ আত্তারি জানান, ইতিপূর্বে সৈয়দপুরে লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনসহ বেশ কটি ভেন্যুতে তিনি প্রদর্শনীর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। প্রতিটি প্রদর্শনীতেই সাংস্কৃতিক বোদ্ধাদের বিনয়ী উপস্থিতি দেখেছেন শিল্পী। তিনি আরও জানান, রাজধানীর বাইরে একটি ছোট্ট শহর সৈয়দপুর, তবু এখানে মুক্তিযুদ্ধের অনেক উপকরণ রয়েছে। কারণ, এ শহরেই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। হাজারও মানুষ স্বাধীনতার জন্য অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেছেন। এসব স্মৃতি সংরক্ষণ তো করতেই হবে।
সৈয়দপুরের মতো জায়গায় স্বাধীনতার প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করেছেন বলেই জাহিদের এ প্রদর্শনী ছিল ব্যতিক্রমী। প্রদর্শনীতে তাঁর আঁকা প্রচুর ছবি বিক্রি হয়েছে। তিনি ছবি বিক্রি থেকে উপার্জিত টাকা জনহিতকর কাজে ব্যয় করতে চান বলে জানালেন।
১৬ ডিসেম্বর শীতবিকেলে শিল্পীর একক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) মো. মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী। এ প্রদর্শনী তাঁকে মুগ্ধ করেছে। তিনি বললেন, চেতনা শাণিত করতেই হবে। নয়তো স্মৃতি হারিয়ে যায় বিস্মৃতির অতলান্তে। জাহিদের ছবিগুলো যেন একেকটি ইতিহাসের স্বাক্ষর। তিনি এ ধরনের ইতিবাচক কাজকে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে সহযোগিতা দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
এম আর আলম
No comments