সাকার বিরুদ্ধে গুরুতর ৩২ অপরাধের অভিযোগ
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা, শিল্পী-সাহিত্যক, সাংবাদিক, নারী ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হত্যা, গণহত্যা, অগি্নসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১১৯ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হয়েছে। ৩২টি ঘটনার সঙ্গে সাকা চৌধুরী সরাসরি জড়িত বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সাকা চৌধুরী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট-১৯৭৩-এর ৩(২) ধারার(এ, সি ও জি) উপধারার অপরাধ করেছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে এ মামলায় ১৪৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
এ প্রতিবেদন পাওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আগামী ১৪ নভেম্বর জমা দিতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে ওই সময় পর্যন্ত সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আটকাদেশ বহাল থাকবে বলেও আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে সদর এবং নিজের এলাকা রাউজানে সাকা চৌধুরী মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধ করেন। ৩২টি ঘটনার সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের সঙ্গে সাকা চৌধুরী সরাসরি যুক্ত ছিলেন। সাকা চৌধুরীর চট্টগ্রামের বাসভবন 'গুডহিল'কে টর্চার সেন্টার করা হয়। সেখানে ক্রমাগতভাবে শহরের মুক্তিযোদ্ধা, হিন্দু লোকজন, শিল্পী-সাহিত্যক, সাংবাদিক ও নারীদের ধরে এনে টর্চারের পর হত্যা করা হতো। শুধু তাই নয়, তাঁর নিজের এলাকা রাউজানের ডা. নতুন চন্দ্র সিংহসহ মধ্য গহিরার ডা. মাখন লাল শর্মার বাড়ি, গহিরা বিশ্বাসপাড়া, জগৎমল্লপাড়া, ঊনসত্তরপাড়াসহ পুরো হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে এসবের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে ৭১ সালে এবং তার পরে সাকা চৌধুরী সম্পর্কে যেসব পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা জমা দেওয়া হয়ছে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে দাখিল করা হয়েছে।
গতকাল সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। এজন্য সোমবার তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপুর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এ প্রতিবেদন পাওয়ার পর গতকাল তা ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় প্রসিকিউসন টিম। সকাল সাড়ে ১০টায় ট্রাইব্যুনাল বসার পর প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ফরমাল চার্জ দাখিল করার জন্য এক মাসের সময় চান। এরপর ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৪ নভেম্বর ফরমাল চার্জ দাখিলের নির্দেশ দেন।
গতকাল সাকা চৌধুরীর মামলা থাকলেও তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়নি। এরপরও জেয়াদ আল মালুম তদন্ত প্রতিবেদন উত্থাপন করে সাকা চৌধুরীর আটাকাদেশ বাড়ানোর আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল এ আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের জন্য গত ১৫ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে তদন্ত সংস্থা। এর কয়েক ঘণ্টা ব্যবধানেই গত ১৬ ডিসেম্বর ভোর রাতে বনানীর একটি বাসা থেকে গাড়িতে অগি্নসংযোগের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে প্রথমবারের মতো তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। সাকা চৌধুরীকে ধানমণ্ডির সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত সংস্থা।
No comments