ভীতি আর আশঙ্কার নাম বিশু
একজন খেলা ছেড়ে এখন নির্বাচক। অন্যজন এখনো খেলছেন। সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারের পথপরিক্রমায় দুজনই মুখোমুখি হয়েছেন শেন ওয়ার্ন-অনিল কুম্বলেদের। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো লেগস্পিনের প্রসঙ্গ উঠলে হাবিবুল বাশার ও মোহাম্মদ আশরাফুলের চোখের পর্দায় এঁদের কেউই ভেসে ওঠেন না। তাহলে কে?
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটসম্যান হাবিবুল বাশারের কাছ থেকেই জেনে নিন, 'শেন ওয়ার্নকেও খেলেছি। তবে দানিশ কানেরিয়ার কথাই বেশি মনে আছে। কারণ ও-ই আমাদের বেশি ঝামেলায় ফেলেছে।
এ পাকিস্তানি লেগস্পিনারের সঙ্গে প্রথম মুখোমুখিতেই বিস্তর ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। ২০০১ সালের আগস্টে মুলতানে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে দুই ইনিংসে ৬টি করে ১২ উইকেট তুলে নেওয়া কানেরিয়ার বোলিং ড্রেসিংরুমে বসেই দেখেছিলেন আশরাফুল। কলম্বোয় পরের ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাঁর টেস্ট অভিষেক এবং সে ম্যাচেই সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে ইতিহাসে নাম লিখিয়ে ফেলা এ তরুণ পরে দেখা পেয়েছেন কানেরিয়ারও। আজ এত দিন পরও কানেরিয়ার স্পিন-বিষ আশরাফুলের চোখে এতটুকু ঝাপসা নয়, 'ও তো আমাদের বিপক্ষে চার-পাঁচের নামতা পড়ে নামত।'
খুব ভুল বলেননি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫ টেস্টে ১৬.৪১ গড় তো ওই কথার পক্ষেই সাক্ষ্য দেয়। যদিও অখ্যাত বোলারকে বাংলাদেশ বিখ্যাত বানিয়ে দেয় কি না, এ নিয়েও তুমুল আলোচনা চলত সে সময়। নিজগুণে তেমন আলোচনার যতিও টেনে দিয়েছেন কানেরিয়া। ৬১ টেস্টে ৩৪.৭৯ গড়ে শিকার সংখ্যা ২৬১, পাকিস্তানি স্পিনারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এটা যে ৩৫০ হয়নি, সে জন্য উইকেটের পেছনে বরাবরই অবিশ্বস্ত কামরান আকমলকে দায়ী করা হয়ে থাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজের আগে নির্বাচক-খেলোয়াড়ের স্মৃতি থেকে কানেরিয়া উঁকি দিচ্ছেন কারণ ক্যারিবীয়রাও নিয়ে এসেছে দেবেন্দ্র বিশু নামের এক লেগস্পিনারকে। মাত্র ৫ টেস্টের ক্যারিয়ারেই যাঁর মাঝে অনেকে দেখতে পাচ্ছেন এ ধরনের বোলিংয়ের এক অনাগত শিল্পীকে। ৩৫.৪২ গড়ে ইতিমধ্যেই ২১ উইকেট, এ জন্য আইসিসির বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতেছেন সম্প্রতি।
স্পিনের বিপক্ষে সাবলীল ভারতীয় ব্যাটসম্যানরাও যাঁর বোলিং সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন এই কিছুদিন আগেও। সেখানে লেগস্পিনে নিয়মিতই টাল হারিয়ে আসা বাংলাদেশকে না আবার বিশুর বিষে নীল হতো হয়! এমন আশঙ্কা আছে বলেই না কিছুদিন আগে আশরাফুল আগাম সতর্কতার কথা বলে রেখেছেন। তাঁকে খেলার প্রস্তুতি নিতেই জাতীয় দলের অনুশীলনে এখন নিয়মিত মুখ নূর হোসেন মুন্না ও তানভীর আহমেদরা। এঁরা আছেন বলেই আশঙ্কার চেয়ে আশার আলোই বেশি দেখতে পাচ্ছেন হাবিবুল, 'এখন তো প্র্যাকটিসে নিয়মিত লেগস্পিনার পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের সময় তো তাও পেতাম না। নেটে বল করার মতো তেমন কেউই ছিল না। দুয়েকজন ছিল কিন্তু খুব অর্ডিনারি। খেলে কোনো উপকার হতো না।'
এখন উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন কারণ, 'বিশুর মানের না হলেও তানভীর ও নূর হোসেন খারাপ না। লেগস্পিন খেলার প্রস্তুতিটা এবার খুব ভালোই হয়েছে বলব।' সেই সঙ্গে ভিডিও ফুটেজ দেখে বিশুর বোলিংয়ের শক্তি আর দুর্বলতার কাটাছেঁড়া তো ক্রমাগত চলছেই দলের অন্দরমহলে। এমন গবেষণা আগেও চলত কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হতো না। হাবিবুলের ব্যাখ্যা, 'এখনো আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে লেগস্পিনার খুব বেশি নেই। আগে তো দেখাই পাওয়া যেত না। তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেমেই লেগস্পিন খেলতে হতো আমাদের। এ অনভ্যস্ততার জন্যই ভুগতে হতো বেশি। আমাদের ব্যাটসম্যানদের একেবারে নতুন একটা জিনিসের মুখোমুখি হতে হতো।' এবার পূর্বপ্রস্তুতি আছে। ঘরের মাঠের উইকেটও গায়ানিজ লেগিকে সামলানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছেন হাবিবুল, 'লেগস্পিনারের সবচেয়ে বড় গুণটা বিশুর মধ্যে আছে। টার্ন করাতে পারে। তবে আমাদের উইকেটে কিন্তু অত দ্রুত টার্ন করে না। ধীরে টার্ন করে। দেখেশুনে খেললে আমাদের ব্যাটসম্যানরা সামলে নিতে পারবে।' আশরাফুল তো বিশুর জন্য 'অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স' তত্ত্বও দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন, 'খেয়াল করে দেখেছি ওকে দুই-তিন ওভার অ্যাটাক করে খেললে একটু এলোমেলো হয়ে যায়।'
সেটি করতে গিয়ে কানেরিয়াকে ফিরিয়ে না আনলেই হয়। বাংলাদেশের স্মৃতিতে যে তিনি শেন ওয়ার্নের চেয়েও বড় লেগস্পিনার!
No comments