আফ্রিকার শীর্ষচূড়ায় by পল্লব মোহাইমেন
মুসা ইব্রাহীম ল্যাপটপে ভিডিও দেখাচ্ছিলেন। নতুন একটা ভিডিও ক্লিপ চালু হলো। পুরো পর্দাটাই প্রায় অন্ধকার। ক্যামেরার দৃষ্টি সীমার নিচে দেখা যাচ্ছে ঘন মেঘ। মেঘের ওপারে দিগন্তে সোনালি আভা। ধীরে ধীরে সেই আভা উজ্জ্বল হচ্ছে। আলোকিত হয়ে উঠছে চারদিক। মুসার সহঅভিযাত্রী নিয়াজ মোরশেদ পাটওয়ারী বলেন, ‘দেখেন, সূর্য উঠছে। আমাদের নিচে তখন মেঘ। সেই মেঘ ভেদ করে সূর্য উঠছে।
কী দারুণ রোমাঞ্চকর দৃশ্য।’ ভিডিওতে ধীরে ধীরে সূর্যোদয় দেখা গেল। ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল তখন একটু বদলে গেছে। নিয়াজ বলেন, ‘দেখেন দূরে আলোর মিছিল—পর্বতারোহীদের মাথায় লাগানো হেডল্যাম্পের আলো এগুলো।’ সূর্যোদয়ের এই ভিডিও দৃশ্য গত ১২ সেপ্টেম্বর ভোরের। ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার ৩০০ ফুট উঁচু স্টেলা পয়েন্ট থেকে। আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত কিলিমানজারোর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পিক এটা। মুসা বলেন, ‘স্টেলা পয়েন্টে উঠলেও একটা সনদপত্র দেওয়া হয়। সেটার রং সবুজ। আর কিলিমানজারোর একেবারে শীর্ষ চূড়া উহুরু (স্থানীয় নাম কিবো) পিক সামিট করলে যে সনদপত্রটা অর্জন করা যায় সেটির রং সোনালি।’
মুসা ও নিয়াজ স্টেলা পয়েন্টে পৌঁছেছিলেন ভোর সাড়ে ছটার দিকে। এখান থেকে আবার চলা শুরু করে উহুরু পিকে, তাঁরা পৌঁছান সাতটা ৩০ মিনিটে। ১৯ হাজার ৩৪০ ফুট উচ্চতার এই চূড়ায় তাঁরা বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ওড়ান সকাল সাতটা ৪৮ মিনিটে (স্থানীয় সময়)। তানজানিয়ার কিলিমানজারো পর্বত চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা এর আগেও উড়েছে। মুসা ও নিয়াজের আগে তিনজন বাংলাদেশি জয় করেছেন এই পর্বত। তাঁদের পরে গত ২ অক্টোবর বাংলাদেশের পর্বতারোহী ওয়াসফিয়া নাজরীন জয় করেন কিলিমানজারো।
এভারেস্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহীম এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়াজ মোরশেদ পাটওয়ারীর কিলিমানজারো জয়ের মধ্য দিয়ে নর্থ আলপাইন ক্লাব বাংলাদেশের সেভেন সামিট অভিযানের দ্বিতীয় ধাপ অর্জিত হলো। পৃথিবীর সাতটি মহাদেশের সর্বোচ্চ সাতটি পর্বতশৃঙ্গ জয় করার যে অভিযান সেটিকে বলা হয় সেভেন সামিট। ২০১০ সালের ২৩ মে এভারেস্ট জয় করে মুসা সেভেন সামিটের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেন। কিলিমানজারো জয়ের মধ্য দিয়ে মুসার মাথায় আরেকটি পালক যুক্ত হলো। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি জয় করলেন দুই মহাদেশের সর্বোচ্চ দুই পর্বত। পরবর্তী লক্ষ্য অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ভিনসন ম্যাসিফ।
সেভেন সামিট অভিযানের অংশ হিসেবে কিলিমানজারো অভিযানে এনএসিবির যে দল গঠন করা হয়েছিল, সে দলে মুসা ও নিয়াজের সঙ্গে ছিলেন ৫৭ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এম এ সাত্তার। তিনি ১৫ হাজার ফুট উচ্চতার লাভা টাওয়ার পর্যন্ত গিয়েও ছিলেন। কিন্তু উচ্চতাজনিত শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি নেমে আসেন। ‘আমি কোনো দিন কারও কোনো কথা শুনিনি। এবারই প্রথম মুসা ইব্রাহীমের কথা শুনলাম। তিনি আমাদের দলনেতা, তাই তাঁর কথা শুনে নেমে আসি নিচে।’ তিন অভিযাত্রীর সঙ্গে আলাপচারিতার সময় বললেন এম এ সাত্তার। অভিযানের তৃতীয় দিন ১০ সেপ্টেম্বর শিরা ক্যাম্প থেকে লাভা ক্যাম্পে গিয়েছিল দলটি, বেশি উচ্চতায় শরীরকে খাপ খাওয়ানোর জন্য। মুসা বলেন, ‘হঠাৎ আমরা খেয়াল করলাম সাত্তার ভাই পিছিয়ে পড়ছেন। আমি ও নিয়াজ উঠে যাচ্ছি কিন্তু তাঁর হাঁটার গতি কমে আসছে।’ একপর্যায়ে এম এ সাত্তার বসে পড়লেন। নিয়াজ জানান, ‘আমরা খোঁজ করতে লাগলাম আশপাশে অন্য অভিযাত্রীদলগুলোর মধ্যে কোনো চিকিৎ সক আছে কি না। চিকিৎ সক নেই। কিন্তু পাওয়া গেল রক্তচাপ মাপার যন্ত্র আর অক্সিজেন মাপার অক্সিমিটার। মেপে দেখা গেল, এম এ সাত্তারের রক্তচাপ তখন খুব কম ৪৫ থেকে ৫০। আর তাঁর শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ মাত্র ৪০-৪৫ শতাংশ। তাঁকে তখন পাওয়ার জেল খাওয়ানো হয়।’ এ অবস্থায় পোর্টারদের সাহায্যে এম এ সাত্তারকে নামিয়ে আনা হয় ১২ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতার বারানকো ক্যাম্পে। মুসা ও নিয়াজও সঙ্গে আসেন। এ সময় অন্য পর্বতারোহীরাও তাঁদের সঙ্গে ধীরে ধীরে নামতে থাকেন। বারানকো ক্যাম্পে রাত কাটানোর পর ১১ সেপ্টেম্বর সকালে শারীরিক অবস্থার কারণে এম এ সাত্তার নিচে নেমে যান পোর্টারদের সঙ্গে। আর মুসা ও নিয়াজ যাত্রা শুরু করেন পরবর্তী উচ্চতার দিকে। এম এ সাত্তার বলেন, ‘প্রথমে একটু রাগ হয়েছিল। পরে নিচে নেমে আসার দিন দুয়েক পর শুনলাম উহুরু পিক জয় করে ফিরে আসা একজন ব্রিটিশ পর্বতারোহী ফুসফুস ফেটে মারা যান। তখন বুঝলাম দলনেতা মুসা ইব্রাহীমের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।’
মুসা ইব্রাহীমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই দলটি তানজানিয়ায় মোশি থেকে ৮ সেপ্টেম্বর শুরু করেন কিলিমানজারো অভিযান। প্রথমেই মাচামি গেটে পৌঁছে নিবন্ধনের কাজ সারতে হয়। এরপর সে দিনই তাঁরা পৌঁছান ১০ হাজার ফুট উঁচু মাচামি ক্যাম্পে। ৯ সেপ্টেম্বর দলটি যায় ১২ হাজার ৫০০ ফুট উঁচু শিরা ক্যাম্পে। মুসা জানালেন, পর্বতারোহণের একটা নিয়ম হলো গো হাই স্লিপ লো। তাই ১০ সেপ্টেম্বর শিরা থেকে আড়াই হাজার ফুট উঁচু লাভা টাওয়ারে যান তাঁরা।
১১ সেপ্টেম্বর একদিকে এম এ সাত্তার পবর্ত থেকে নামা শুরু করলেন অন্যদিকে মুসা ও নিয়াজ পরবর্তী গন্তব্য বারাফুর দিকে যাত্রা শুরু করলেন। সকাল সাড়ে আটটায় রওনা দিয়ে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পৌঁছে যান কিলিমানজারো ন্যাশনাল পার্ক এলাকায়। ‘সন্ধ্যা সাতটার মধ্যেই রাতের খাবার সারা হলো। তখন খাবারের তাঁবুতে সভা হলো। ঠিক হলো রাত ১২টার দিকে আমরা উহুরুর উদ্দেশে চলা শুরু করব। গাইড চাচ্ছিলেন আমরা ১১টার দিকে রওনা দিই। কিন্তু আমি আর নিয়াজ ১২টার দিকে শুরু করতে চাচ্ছিলাম। কারণ দুই দিনের পথ পাড়ি দিয়েছি এক দিনে, তাই শরীর খুব ক্লান্ত।’ বললেন মুসা। নিয়াজ যোগ করেন, ‘রাত ১২টার দিকে আমরা যখন বের হই তখন আশপাশে কেউ নেই। সব তাঁবু ফাঁকা। দূরে দেখা যাচ্ছে হেডল্যাম্পের আলোর মিছিল। আমাদের হাঁটার গতি ভালো ছিল, তাই অনেককে ধরে ফেললাম। এর মধ্যে আবার চার-পাঁচজনকে ফিরেও আসতে দেখলাম। ঠান্ডায় কাঁপছে তাঁরা।’
ধীরে ধীরে স্টেলা পয়েন্টে পৌঁছালেন দুই পর্বতারোহী। অন্ধকারের পর তখন আলোকিত কিলিমানজারো পর্বত। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন দুজন। পেছনে উহুরু পিক। গেয়ে উঠলেন দুই পর্বতারোহী ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি...।’ পর্বতশৃঙ্গে স্বদেশের উপস্থাপনা এর চেয়ে আর ভালো কী হতে পারে!
বাংলাদেশিদের কিলিমানজারো জয়
২০০৭ (২৫ মে): সাফিনা শেহনাজ, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক
২০০৮: আবদুল সালাম, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক
২০১০ (৮ সেপ্টেম্বর): মাহফুজ এ রাসেল
২০১১ (১২ সেপ্টেম্বর): মুসা ইব্রাহীম ও নিয়াজ মোরশেদ পাটওয়ারী
২০১১ (২ অক্টোবর): ওয়াসফিয়া নাজরীন
মুসা ও নিয়াজ স্টেলা পয়েন্টে পৌঁছেছিলেন ভোর সাড়ে ছটার দিকে। এখান থেকে আবার চলা শুরু করে উহুরু পিকে, তাঁরা পৌঁছান সাতটা ৩০ মিনিটে। ১৯ হাজার ৩৪০ ফুট উচ্চতার এই চূড়ায় তাঁরা বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ওড়ান সকাল সাতটা ৪৮ মিনিটে (স্থানীয় সময়)। তানজানিয়ার কিলিমানজারো পর্বত চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা এর আগেও উড়েছে। মুসা ও নিয়াজের আগে তিনজন বাংলাদেশি জয় করেছেন এই পর্বত। তাঁদের পরে গত ২ অক্টোবর বাংলাদেশের পর্বতারোহী ওয়াসফিয়া নাজরীন জয় করেন কিলিমানজারো।
এভারেস্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহীম এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়াজ মোরশেদ পাটওয়ারীর কিলিমানজারো জয়ের মধ্য দিয়ে নর্থ আলপাইন ক্লাব বাংলাদেশের সেভেন সামিট অভিযানের দ্বিতীয় ধাপ অর্জিত হলো। পৃথিবীর সাতটি মহাদেশের সর্বোচ্চ সাতটি পর্বতশৃঙ্গ জয় করার যে অভিযান সেটিকে বলা হয় সেভেন সামিট। ২০১০ সালের ২৩ মে এভারেস্ট জয় করে মুসা সেভেন সামিটের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেন। কিলিমানজারো জয়ের মধ্য দিয়ে মুসার মাথায় আরেকটি পালক যুক্ত হলো। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি জয় করলেন দুই মহাদেশের সর্বোচ্চ দুই পর্বত। পরবর্তী লক্ষ্য অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ভিনসন ম্যাসিফ।
সেভেন সামিট অভিযানের অংশ হিসেবে কিলিমানজারো অভিযানে এনএসিবির যে দল গঠন করা হয়েছিল, সে দলে মুসা ও নিয়াজের সঙ্গে ছিলেন ৫৭ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এম এ সাত্তার। তিনি ১৫ হাজার ফুট উচ্চতার লাভা টাওয়ার পর্যন্ত গিয়েও ছিলেন। কিন্তু উচ্চতাজনিত শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি নেমে আসেন। ‘আমি কোনো দিন কারও কোনো কথা শুনিনি। এবারই প্রথম মুসা ইব্রাহীমের কথা শুনলাম। তিনি আমাদের দলনেতা, তাই তাঁর কথা শুনে নেমে আসি নিচে।’ তিন অভিযাত্রীর সঙ্গে আলাপচারিতার সময় বললেন এম এ সাত্তার। অভিযানের তৃতীয় দিন ১০ সেপ্টেম্বর শিরা ক্যাম্প থেকে লাভা ক্যাম্পে গিয়েছিল দলটি, বেশি উচ্চতায় শরীরকে খাপ খাওয়ানোর জন্য। মুসা বলেন, ‘হঠাৎ আমরা খেয়াল করলাম সাত্তার ভাই পিছিয়ে পড়ছেন। আমি ও নিয়াজ উঠে যাচ্ছি কিন্তু তাঁর হাঁটার গতি কমে আসছে।’ একপর্যায়ে এম এ সাত্তার বসে পড়লেন। নিয়াজ জানান, ‘আমরা খোঁজ করতে লাগলাম আশপাশে অন্য অভিযাত্রীদলগুলোর মধ্যে কোনো চিকিৎ সক আছে কি না। চিকিৎ সক নেই। কিন্তু পাওয়া গেল রক্তচাপ মাপার যন্ত্র আর অক্সিজেন মাপার অক্সিমিটার। মেপে দেখা গেল, এম এ সাত্তারের রক্তচাপ তখন খুব কম ৪৫ থেকে ৫০। আর তাঁর শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ মাত্র ৪০-৪৫ শতাংশ। তাঁকে তখন পাওয়ার জেল খাওয়ানো হয়।’ এ অবস্থায় পোর্টারদের সাহায্যে এম এ সাত্তারকে নামিয়ে আনা হয় ১২ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতার বারানকো ক্যাম্পে। মুসা ও নিয়াজও সঙ্গে আসেন। এ সময় অন্য পর্বতারোহীরাও তাঁদের সঙ্গে ধীরে ধীরে নামতে থাকেন। বারানকো ক্যাম্পে রাত কাটানোর পর ১১ সেপ্টেম্বর সকালে শারীরিক অবস্থার কারণে এম এ সাত্তার নিচে নেমে যান পোর্টারদের সঙ্গে। আর মুসা ও নিয়াজ যাত্রা শুরু করেন পরবর্তী উচ্চতার দিকে। এম এ সাত্তার বলেন, ‘প্রথমে একটু রাগ হয়েছিল। পরে নিচে নেমে আসার দিন দুয়েক পর শুনলাম উহুরু পিক জয় করে ফিরে আসা একজন ব্রিটিশ পর্বতারোহী ফুসফুস ফেটে মারা যান। তখন বুঝলাম দলনেতা মুসা ইব্রাহীমের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।’
মুসা ইব্রাহীমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই দলটি তানজানিয়ায় মোশি থেকে ৮ সেপ্টেম্বর শুরু করেন কিলিমানজারো অভিযান। প্রথমেই মাচামি গেটে পৌঁছে নিবন্ধনের কাজ সারতে হয়। এরপর সে দিনই তাঁরা পৌঁছান ১০ হাজার ফুট উঁচু মাচামি ক্যাম্পে। ৯ সেপ্টেম্বর দলটি যায় ১২ হাজার ৫০০ ফুট উঁচু শিরা ক্যাম্পে। মুসা জানালেন, পর্বতারোহণের একটা নিয়ম হলো গো হাই স্লিপ লো। তাই ১০ সেপ্টেম্বর শিরা থেকে আড়াই হাজার ফুট উঁচু লাভা টাওয়ারে যান তাঁরা।
১১ সেপ্টেম্বর একদিকে এম এ সাত্তার পবর্ত থেকে নামা শুরু করলেন অন্যদিকে মুসা ও নিয়াজ পরবর্তী গন্তব্য বারাফুর দিকে যাত্রা শুরু করলেন। সকাল সাড়ে আটটায় রওনা দিয়ে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পৌঁছে যান কিলিমানজারো ন্যাশনাল পার্ক এলাকায়। ‘সন্ধ্যা সাতটার মধ্যেই রাতের খাবার সারা হলো। তখন খাবারের তাঁবুতে সভা হলো। ঠিক হলো রাত ১২টার দিকে আমরা উহুরুর উদ্দেশে চলা শুরু করব। গাইড চাচ্ছিলেন আমরা ১১টার দিকে রওনা দিই। কিন্তু আমি আর নিয়াজ ১২টার দিকে শুরু করতে চাচ্ছিলাম। কারণ দুই দিনের পথ পাড়ি দিয়েছি এক দিনে, তাই শরীর খুব ক্লান্ত।’ বললেন মুসা। নিয়াজ যোগ করেন, ‘রাত ১২টার দিকে আমরা যখন বের হই তখন আশপাশে কেউ নেই। সব তাঁবু ফাঁকা। দূরে দেখা যাচ্ছে হেডল্যাম্পের আলোর মিছিল। আমাদের হাঁটার গতি ভালো ছিল, তাই অনেককে ধরে ফেললাম। এর মধ্যে আবার চার-পাঁচজনকে ফিরেও আসতে দেখলাম। ঠান্ডায় কাঁপছে তাঁরা।’
ধীরে ধীরে স্টেলা পয়েন্টে পৌঁছালেন দুই পর্বতারোহী। অন্ধকারের পর তখন আলোকিত কিলিমানজারো পর্বত। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন দুজন। পেছনে উহুরু পিক। গেয়ে উঠলেন দুই পর্বতারোহী ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি...।’ পর্বতশৃঙ্গে স্বদেশের উপস্থাপনা এর চেয়ে আর ভালো কী হতে পারে!
বাংলাদেশিদের কিলিমানজারো জয়
২০০৭ (২৫ মে): সাফিনা শেহনাজ, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক
২০০৮: আবদুল সালাম, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক
২০১০ (৮ সেপ্টেম্বর): মাহফুজ এ রাসেল
২০১১ (১২ সেপ্টেম্বর): মুসা ইব্রাহীম ও নিয়াজ মোরশেদ পাটওয়ারী
২০১১ (২ অক্টোবর): ওয়াসফিয়া নাজরীন
No comments