রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ বিটিআরসির, নিরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন গ্রামীণফোনের
মুঠোফোন কোম্পানি গ্রামীণফোন (জিপি) গত ১৫ বছরে তিন হাজার ৩৪ কোটি ১১ লাখ আট হাজার ৫৮১ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিটিআরসি। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ বলেছেন, ২২ অক্টোবরের মধ্যে এ টাকা পরিশোধ না করলে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে বিটিআরসির আর্থিক নিরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে গ্রামীণফোন। মুঠোফোন কোম্পানিটির দাবি, নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো নিয়মনীতি অনুসরণ না করে এবং গ্রামীণফোনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই এই নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ করেছে।
প্রসঙ্গত, নিরীক্ষা প্রতিবেদন সাপেক্ষে পাওনা টাকা চেয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে গ্রামীণফোনের কাছে চিঠি পাঠায় বিটিআরসি। ওই চিঠি পেয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিটিআরসির চিঠির প্রতিটি পর্বের ব্যাখ্যা দিয়ে জবাব পাঠায় গ্রামীণফোন।
আজ মঙ্গলবার সকালে বিটিআরসির চেয়ারম্যান নিরীক্ষায় পাওয়া তথ্য সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। আর বিকেলে গ্রামীণফোন তাদের অবস্থান জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ বলেন, ‘রেভিনিউ শেয়ারিং (লভ্যাংশ ভাগাভাগি) খাতে গ্রামীণফোন ২১৬ কোটি ৫৮ লাখ তিন হাজার ৬৩৪ টাকা ফাঁকি দিয়েছে।’ এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের লিগ্যাল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগের প্রধান জাকি ওমর বলেন, ‘সরকার তথা বিটিআরসির সঙ্গে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে যে লভ্যাংশ ভাগাভাগির (টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী) নিয়ম ছিল, তাতে শুধু কলচার্জ ও ভাড়া বাবদ আয়ের লভ্যাংশের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। কিন্তু বিটিআরসির নিরীক্ষায় গ্রামীণফোনের মোট আয়ের লভ্যাংশ উল্লেখ করা হয়েছে।’ উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ জুলাই বিটিআরসি কোনো ধরনের আয়ের লভ্যাংশের ভাগ নেবে, সে জন্য সব মুঠোফোন অপারেটরের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়।
বৈদেশিক কল আদান-প্রদান সম্পর্কে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামীণফোন এ খাতে সরকারকে ৩০ শতাংশ হারে মোট ৪৬ কোটি ৫২ লাখ দুই হাজার ৪৩৯ টাকা ফাঁকি দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের দাবি, বৈদেশিক কল থেকে আয়ের ৩০ শতাংশ অবশ্যই সরকার বা বিটিআরসিকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা প্রতিদিনের কল আদান-প্রদানের শেষে নয়। সেটা বিভিন্ন গেটওয়ে লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি কল সংযোগকারীর সঙ্গে সমস্ত হিসাব শেষে জিপির প্রাপ্ত আয়ের ৩০ শতাংশ। প্রতি বছরে চারবার হিসাব শেষ করে বিটিআরসির পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হয়। যেহেতু ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে গত কয়েক মাসের দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি হয়নি, এখনই এ অর্থ বিটিআরসি কীভাবে দাবি করছে?
নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তৃতীয় পর্বে বলা হয়েছে, ‘কল ডিটেইলস রেকর্ডার’ অনুযায়ী ভয়েস, খুদেবার্তা ও ইন্টারনেট সেবা প্রদান খাতে গ্রামীণফোন ফাঁকি দিয়েছে ৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ৫২ হাজার ৪৮৭ টাকা। এ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা কাজী মনিরুল কবির বলেন, মাত্র দুই মাসের তথ্য-উপাত্তকে ১৪ বছরের হিসাবে রূপান্তর করাটাই পুরো নিরীক্ষা কার্যক্রমের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
স্পেকট্রাম বরাদ্দ ফি খাতে গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত গ্রামীণফোন এক কোটি ২০ লাখ ৮৩ হাজার ৭৯৮ টাকা ফাঁকি দিয়েছে বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে নিরীক্ষা কার্যক্রম চলাকালে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি বলে অভিযোগ করে গ্রামীণফোন। জাকি ওমরের দাবি, গ্রামীণফোনের কাছ থেকে স্পেকট্রাম ও মাইক্রোওয়েভ বাবদ সরকারের এক টাকাও পাওনা নেই।
নিরীক্ষা কার্যক্রমের পঞ্চম পর্ব নিয়ে আপত্তি তুলেছে গ্রামীণফোন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হ্যান্ডসেটে রয়্যালটি (বছরে ১১০০ টাকা) এবং ২০০৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বেইজ স্টেশন বাবদ ৫৯৯ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ৯৪৫ টাকা সরকারকে দেয়নি গ্রামীণফোন। এ প্রসঙ্গে মনিরুল কবির বলেন, হ্যান্ডসেটে রয়্যালটির বিষয়টি ২০০৬ সালের এপ্রিলে সব অপারেটরের সঙ্গে তত্কালীন কমিশনের আলোচনা সাপেক্ষে বাতিল করা হয়। বাতিল অধ্যাদেশ কার্যকরের তারিখ ছিল ২০০৫ সালের এপ্রিল থেকে। আর ওই রয়্যালটি বাতিল করেই লভ্যাংশ ভাগাভাগি এক শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়। এ ছাড়া রয়্যালটি বাতিলে জনস্বার্থে কয়েকটি মামলায় আদালত তা বাতিলের রায় দেন, যা অপর এক শুনানিতে স্থগিতও করা হয়। কয়েকটি বিষয় এখনো আদালতের রায় হয়নি। আদালতের প্রথম রায় ও শুনানির মধ্যকার প্রায় সাত মাস কোনো অপারেটর রয়্যালটি দেয়নি। মাত্র সাত মাসের হিসাবও যদি ধরা হয় তাহলে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান কীভাবে এই পরিমাণ অর্থ ফাঁকি খুঁজে পায় বলে প্রশ্ন তোলেন তিনি। আর বেইজ স্টেশন বাবদ সরকারের পাওনা নেই বলে জানান তিনি।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ষষ্ঠ পর্বে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে গ্রামীণফোন সিম সংযোগ কর বাবদ ৭২০ কোটি এক লাখ ২৯ হাজার ৬০০ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। এ বিষয়ে কাজী মনিরুল কবির বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান হিসাবরক্ষণ বিভাগ একটি নির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে কাজ করে। এটা যেকোনো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের জন্যই প্রযোজ্য। এখন নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান অপারেটরদের কাজের পদ্ধতি না জেনে নিজ পদ্ধতিতে কাজ করলে চূড়ান্ত হিসাবে অবশ্যই ভুল হবে। আর এনবিআরের পাওনা টাকা কেন বিটিআরসি হিসাব করবে, এ প্রশ্নও তোলেন তিনি। শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কর হিসাবে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা গ্রামীণফোন কর দিয়েছে।
সাংবাদিকদের বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ফাঁকি দেওয়া মোট অর্থের সঙ্গে ১৫ শতাংশ হারে চক্রবৃদ্ধি সুদ হিসেবে গ্রামীণফোনকে পাওনা পরিশোধ করতে হবে। সেটা অবশ্যই দ্বিতীয় প্রজন্মের (টুজি) লাইসেন্স নবায়নের আগেই। তিনি অভিযোগ করেন, গ্রামীণফোন অনেক তথ্য গোপন করেছে। নিরীক্ষায় অতিরিক্ত এক কোটির বেশি গ্রাহকের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা আগে বিটিআরসিকে গ্রামীণফোন জানায়নি। তিনি বলেন, নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের আগে সরকারের আয় ছিল মাসে ৩০-৩১ কোটি। কিন্তু গত এপ্রিল থেকে গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকে নিরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরে এই আয় ৮০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। নিরীক্ষা প্রতিবেদন বাতিলের কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে চেয়ারম্যান আরও বলেন, উপযুক্ত নথিপত্র তাঁদের হাতে রয়েছে।
চেয়ারম্যানের এসব বক্তব্য প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের কাজী মনিরুল কবির বলেন, ‘গ্রামীণফোনসহ প্রতিটি অপারেটর তাদের মাসিক গ্রাহকসংখ্যা নিয়মিত বিটিআরসিকে জানায়। তা বিটিআরসির ওয়েবসাইটেও প্রকাশিত হয়। আর অপারেটরদের দৈনিক কার্যক্রমে অবশ্যই আয়-ব্যয়ের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে দেনাপাওনা থাকবে। প্রতিদিনের হিসাব প্রতিদিন সমন্বয় করা সম্ভব নয়। আর সরকারের পক্ষ থেকে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান কোম্পানিগুলোর নিরীক্ষা কার্যক্রম অবশ্যই হওয়া উচিত। কিন্তু সেটা অবশ্যই আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে হতে হবে। আমরা আশা করব, বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসে আমাদের ব্যাখ্যা শুনে তা বিবেচনা করবে।’
আজ মঙ্গলবার সকালে বিটিআরসির চেয়ারম্যান নিরীক্ষায় পাওয়া তথ্য সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। আর বিকেলে গ্রামীণফোন তাদের অবস্থান জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ বলেন, ‘রেভিনিউ শেয়ারিং (লভ্যাংশ ভাগাভাগি) খাতে গ্রামীণফোন ২১৬ কোটি ৫৮ লাখ তিন হাজার ৬৩৪ টাকা ফাঁকি দিয়েছে।’ এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের লিগ্যাল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগের প্রধান জাকি ওমর বলেন, ‘সরকার তথা বিটিআরসির সঙ্গে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে যে লভ্যাংশ ভাগাভাগির (টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী) নিয়ম ছিল, তাতে শুধু কলচার্জ ও ভাড়া বাবদ আয়ের লভ্যাংশের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। কিন্তু বিটিআরসির নিরীক্ষায় গ্রামীণফোনের মোট আয়ের লভ্যাংশ উল্লেখ করা হয়েছে।’ উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ জুলাই বিটিআরসি কোনো ধরনের আয়ের লভ্যাংশের ভাগ নেবে, সে জন্য সব মুঠোফোন অপারেটরের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়।
বৈদেশিক কল আদান-প্রদান সম্পর্কে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামীণফোন এ খাতে সরকারকে ৩০ শতাংশ হারে মোট ৪৬ কোটি ৫২ লাখ দুই হাজার ৪৩৯ টাকা ফাঁকি দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের দাবি, বৈদেশিক কল থেকে আয়ের ৩০ শতাংশ অবশ্যই সরকার বা বিটিআরসিকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা প্রতিদিনের কল আদান-প্রদানের শেষে নয়। সেটা বিভিন্ন গেটওয়ে লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি কল সংযোগকারীর সঙ্গে সমস্ত হিসাব শেষে জিপির প্রাপ্ত আয়ের ৩০ শতাংশ। প্রতি বছরে চারবার হিসাব শেষ করে বিটিআরসির পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হয়। যেহেতু ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে গত কয়েক মাসের দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি হয়নি, এখনই এ অর্থ বিটিআরসি কীভাবে দাবি করছে?
নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তৃতীয় পর্বে বলা হয়েছে, ‘কল ডিটেইলস রেকর্ডার’ অনুযায়ী ভয়েস, খুদেবার্তা ও ইন্টারনেট সেবা প্রদান খাতে গ্রামীণফোন ফাঁকি দিয়েছে ৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ৫২ হাজার ৪৮৭ টাকা। এ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা কাজী মনিরুল কবির বলেন, মাত্র দুই মাসের তথ্য-উপাত্তকে ১৪ বছরের হিসাবে রূপান্তর করাটাই পুরো নিরীক্ষা কার্যক্রমের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
স্পেকট্রাম বরাদ্দ ফি খাতে গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত গ্রামীণফোন এক কোটি ২০ লাখ ৮৩ হাজার ৭৯৮ টাকা ফাঁকি দিয়েছে বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে নিরীক্ষা কার্যক্রম চলাকালে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি বলে অভিযোগ করে গ্রামীণফোন। জাকি ওমরের দাবি, গ্রামীণফোনের কাছ থেকে স্পেকট্রাম ও মাইক্রোওয়েভ বাবদ সরকারের এক টাকাও পাওনা নেই।
নিরীক্ষা কার্যক্রমের পঞ্চম পর্ব নিয়ে আপত্তি তুলেছে গ্রামীণফোন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হ্যান্ডসেটে রয়্যালটি (বছরে ১১০০ টাকা) এবং ২০০৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বেইজ স্টেশন বাবদ ৫৯৯ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ৯৪৫ টাকা সরকারকে দেয়নি গ্রামীণফোন। এ প্রসঙ্গে মনিরুল কবির বলেন, হ্যান্ডসেটে রয়্যালটির বিষয়টি ২০০৬ সালের এপ্রিলে সব অপারেটরের সঙ্গে তত্কালীন কমিশনের আলোচনা সাপেক্ষে বাতিল করা হয়। বাতিল অধ্যাদেশ কার্যকরের তারিখ ছিল ২০০৫ সালের এপ্রিল থেকে। আর ওই রয়্যালটি বাতিল করেই লভ্যাংশ ভাগাভাগি এক শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়। এ ছাড়া রয়্যালটি বাতিলে জনস্বার্থে কয়েকটি মামলায় আদালত তা বাতিলের রায় দেন, যা অপর এক শুনানিতে স্থগিতও করা হয়। কয়েকটি বিষয় এখনো আদালতের রায় হয়নি। আদালতের প্রথম রায় ও শুনানির মধ্যকার প্রায় সাত মাস কোনো অপারেটর রয়্যালটি দেয়নি। মাত্র সাত মাসের হিসাবও যদি ধরা হয় তাহলে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান কীভাবে এই পরিমাণ অর্থ ফাঁকি খুঁজে পায় বলে প্রশ্ন তোলেন তিনি। আর বেইজ স্টেশন বাবদ সরকারের পাওনা নেই বলে জানান তিনি।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ষষ্ঠ পর্বে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে গ্রামীণফোন সিম সংযোগ কর বাবদ ৭২০ কোটি এক লাখ ২৯ হাজার ৬০০ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। এ বিষয়ে কাজী মনিরুল কবির বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান হিসাবরক্ষণ বিভাগ একটি নির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে কাজ করে। এটা যেকোনো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের জন্যই প্রযোজ্য। এখন নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান অপারেটরদের কাজের পদ্ধতি না জেনে নিজ পদ্ধতিতে কাজ করলে চূড়ান্ত হিসাবে অবশ্যই ভুল হবে। আর এনবিআরের পাওনা টাকা কেন বিটিআরসি হিসাব করবে, এ প্রশ্নও তোলেন তিনি। শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কর হিসাবে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা গ্রামীণফোন কর দিয়েছে।
সাংবাদিকদের বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ফাঁকি দেওয়া মোট অর্থের সঙ্গে ১৫ শতাংশ হারে চক্রবৃদ্ধি সুদ হিসেবে গ্রামীণফোনকে পাওনা পরিশোধ করতে হবে। সেটা অবশ্যই দ্বিতীয় প্রজন্মের (টুজি) লাইসেন্স নবায়নের আগেই। তিনি অভিযোগ করেন, গ্রামীণফোন অনেক তথ্য গোপন করেছে। নিরীক্ষায় অতিরিক্ত এক কোটির বেশি গ্রাহকের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা আগে বিটিআরসিকে গ্রামীণফোন জানায়নি। তিনি বলেন, নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের আগে সরকারের আয় ছিল মাসে ৩০-৩১ কোটি। কিন্তু গত এপ্রিল থেকে গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকে নিরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরে এই আয় ৮০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। নিরীক্ষা প্রতিবেদন বাতিলের কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে চেয়ারম্যান আরও বলেন, উপযুক্ত নথিপত্র তাঁদের হাতে রয়েছে।
চেয়ারম্যানের এসব বক্তব্য প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের কাজী মনিরুল কবির বলেন, ‘গ্রামীণফোনসহ প্রতিটি অপারেটর তাদের মাসিক গ্রাহকসংখ্যা নিয়মিত বিটিআরসিকে জানায়। তা বিটিআরসির ওয়েবসাইটেও প্রকাশিত হয়। আর অপারেটরদের দৈনিক কার্যক্রমে অবশ্যই আয়-ব্যয়ের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে দেনাপাওনা থাকবে। প্রতিদিনের হিসাব প্রতিদিন সমন্বয় করা সম্ভব নয়। আর সরকারের পক্ষ থেকে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান কোম্পানিগুলোর নিরীক্ষা কার্যক্রম অবশ্যই হওয়া উচিত। কিন্তু সেটা অবশ্যই আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে হতে হবে। আমরা আশা করব, বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসে আমাদের ব্যাখ্যা শুনে তা বিবেচনা করবে।’
No comments