সহিংসতা নির্যাতন নিপীড়নে বেড়ে উঠছে ওরা by শরীফা বুলবুল
পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় আমাদের কন্যাশিশুরা ঘরে-বাইরে সর্বত্র আজও নানামুখী সহিংসতা আর নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাদের কোনো কিছুই ছেলেশিশুদের মতো অতটা সহজ ও সাবলীল নয়। জীবনের শুরু থেকে প্রতি পদে ওরা বৈষম্যের শিকার। এ অবস্থায় কন্যাশিশুদের প্রতি আরো যত্নশীল ও সচেতন হওয়ার লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে, 'শিক্ষা, বিজ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তি : নিশ্চিত করবে কন্যাশিশুর অগ্রগতি'। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করবে।
শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী শিশুদের জন্য মৌলিক অধিকার হলো_ জীবনধারণ, বেঁচে থাকা ও বিকাশের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, সুস্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার অধিকার। এ অধিকারগুলো সব শিশুর জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু বাস্তবতা হলো, জন্ম থেকেই বেশির ভাগ কন্যাশিশু এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত। অনেক পরিবারেই কন্যাশিশুদের খাদ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে কম সুবিধা দেওয়া হয়। শুধুই লিঙ্গভেদের কারণে আশৈশব তাদের নানামুখী বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে, যা সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন।
শিশুদের অর্থনৈতিক শোষণ ও ক্ষতিকর কাজ থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকারকে শিশু সনদের ৩২ ধারায় স্বীকৃতি দেওয়া সত্ত্বেও দেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কন্যাশিশুর বাধ্যতামূলক শ্রম এক অনিবার্য বাস্তবতা। তথ্য মোতাবেক, বাংলাদেশে ১০-১৪ বছর বয়সী শ্রমজীবী কন্যাশিশুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে আট লাখ। শিশুশ্রম জরিপ অনুসারে, ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কন্যাশিশুদের ২৮ শতাংশ ও ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের ৪৮ শতাংশ শ্রমশক্তির অন্তর্ভুক্ত। আবার গৃহকর্মে নিয়োজিত কন্যাশিশুর বেশির ভাগই দৈহিক, যৌন ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত নিহত, আহত ও ধর্ষণের শিকার গৃহপরিচারিকাদের ৩২ শতাংশই কন্যাশিশু, যাদের বয়স পাঁচ থেকে ১৫ বছরের
মধ্যে।
পথভিত্তিক কন্যাশিশু পতিতাদের ওপর জরিপে দেখা যায়, ৯৫ শতাংশ কন্যাশিশুরই প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা হয়েছে ১০ বছর বয়সের মধ্যে। ঢাকা শহরে ভাসমান যৌনকর্মীর সংখ্যা অনুমান করা হয় দেড় থেকে দুই লাখ। তাদের ৫০ শতাংশের বয়স ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। তাদের অধিকাংশই এ থেকে মুক্তি চায়।
জাতীয় ই-তথ্যকোষের তথ্যমতে, মোট জনসংখ্যার প্রায় ছয় কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার হচ্ছে শিশু, যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। এর মধ্যে কন্যাশিশুর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি ৩৯ লাখ। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অধিকার, নিরাপত্তা সর্বোপরি সার্বিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা প্রয়োজন।
নারী উদ্যোগ কেন্দ্রের তথ্যমতে, দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ কন্যাশিশু প্রাথমিক শিক্ষা শেষে স্কুলে ভর্তি হয় না। শিক্ষা ক্ষেত্রে ১৫ বছর অথবা এর বেশি বয়সের মেয়েদের স্বাক্ষরতার হার ছেলেদের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম। উচ্চ মাধ্যমিকের পর উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে এ হার আরো কমে দাঁড়ায় ৫ শতাংশ।
বাল্যবিবাহ কন্যাশিশুদের জন্য আরেক নির্যাতনের নামান্তর। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ ব্যাপারে তাদের সম্মতি বা মতামত নেওয়া হয় না। ইউনিসেফের তথ্যমতে, বেশি বাল্যবিবাহ হয় এমন দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। ইউনিসেফের আরেকটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় এবং দুই দশক ধরে এ হার প্রায় অপরিবর্তিত। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে-২০০৭ (বিডিএইচএস) অনুযায়ী, এ হার ৭০ শতাংশের কাছাকাছি।
সর্বশেষ পরিচালিত জাতীয় পুষ্টি জরিপেও ছেলেশিশুদের তুলনায় কন্যাশিশুদের প্রতি প্রকট বৈষম্যের চিত্র ধরা পড়েছে। এ বৈষম্য শহরের তুলনায় গ্রামে আরো বেশি। আশার কথা, কন্যাশিশু তথা নারীদের উন্নয়নে সরকার বেশকিছু নীতিমালা ও সুস্পষ্ট আইন প্রবর্তন করেছে।
কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, জাতি হিসেবে আগামী দিনের নারীদের পেছনে রেখে বেশি দূর এগোনো সম্ভব নয়। তাদের অগ্রগমনকে নিশ্চিত করতে হলে আজকের কন্যাশিশুদের সার্বিক অবস্থা পরিবর্তনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু বলেন, কন্যাশিশুর অধিকার রক্ষায় কেবল নীতিমালা যথেষ্ট নয়, কঠোরভাবে এর বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে।
দিবসের কর্মসূচি
জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে আজ সকাল ৯টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হবে। এরপর সকাল ১০টায় শিশু একাডেমী মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। উভয় কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি থাকবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ সেপ্টেম্বর কন্যাশিশু দিবস হলেও বাংলাদেশে আজ ৪ অক্টোবর দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিশু অধিকার দিবসের পাশাপাশি ১১ বছর ধরে বাংলাদেশে কন্যাশিশুদের অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে কন্যাশিশু দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
শিশুদের অর্থনৈতিক শোষণ ও ক্ষতিকর কাজ থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকারকে শিশু সনদের ৩২ ধারায় স্বীকৃতি দেওয়া সত্ত্বেও দেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কন্যাশিশুর বাধ্যতামূলক শ্রম এক অনিবার্য বাস্তবতা। তথ্য মোতাবেক, বাংলাদেশে ১০-১৪ বছর বয়সী শ্রমজীবী কন্যাশিশুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে আট লাখ। শিশুশ্রম জরিপ অনুসারে, ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কন্যাশিশুদের ২৮ শতাংশ ও ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের ৪৮ শতাংশ শ্রমশক্তির অন্তর্ভুক্ত। আবার গৃহকর্মে নিয়োজিত কন্যাশিশুর বেশির ভাগই দৈহিক, যৌন ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত নিহত, আহত ও ধর্ষণের শিকার গৃহপরিচারিকাদের ৩২ শতাংশই কন্যাশিশু, যাদের বয়স পাঁচ থেকে ১৫ বছরের
মধ্যে।
পথভিত্তিক কন্যাশিশু পতিতাদের ওপর জরিপে দেখা যায়, ৯৫ শতাংশ কন্যাশিশুরই প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা হয়েছে ১০ বছর বয়সের মধ্যে। ঢাকা শহরে ভাসমান যৌনকর্মীর সংখ্যা অনুমান করা হয় দেড় থেকে দুই লাখ। তাদের ৫০ শতাংশের বয়স ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। তাদের অধিকাংশই এ থেকে মুক্তি চায়।
জাতীয় ই-তথ্যকোষের তথ্যমতে, মোট জনসংখ্যার প্রায় ছয় কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার হচ্ছে শিশু, যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। এর মধ্যে কন্যাশিশুর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি ৩৯ লাখ। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অধিকার, নিরাপত্তা সর্বোপরি সার্বিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা প্রয়োজন।
নারী উদ্যোগ কেন্দ্রের তথ্যমতে, দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ কন্যাশিশু প্রাথমিক শিক্ষা শেষে স্কুলে ভর্তি হয় না। শিক্ষা ক্ষেত্রে ১৫ বছর অথবা এর বেশি বয়সের মেয়েদের স্বাক্ষরতার হার ছেলেদের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম। উচ্চ মাধ্যমিকের পর উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে এ হার আরো কমে দাঁড়ায় ৫ শতাংশ।
বাল্যবিবাহ কন্যাশিশুদের জন্য আরেক নির্যাতনের নামান্তর। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ ব্যাপারে তাদের সম্মতি বা মতামত নেওয়া হয় না। ইউনিসেফের তথ্যমতে, বেশি বাল্যবিবাহ হয় এমন দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। ইউনিসেফের আরেকটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় এবং দুই দশক ধরে এ হার প্রায় অপরিবর্তিত। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে-২০০৭ (বিডিএইচএস) অনুযায়ী, এ হার ৭০ শতাংশের কাছাকাছি।
সর্বশেষ পরিচালিত জাতীয় পুষ্টি জরিপেও ছেলেশিশুদের তুলনায় কন্যাশিশুদের প্রতি প্রকট বৈষম্যের চিত্র ধরা পড়েছে। এ বৈষম্য শহরের তুলনায় গ্রামে আরো বেশি। আশার কথা, কন্যাশিশু তথা নারীদের উন্নয়নে সরকার বেশকিছু নীতিমালা ও সুস্পষ্ট আইন প্রবর্তন করেছে।
কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, জাতি হিসেবে আগামী দিনের নারীদের পেছনে রেখে বেশি দূর এগোনো সম্ভব নয়। তাদের অগ্রগমনকে নিশ্চিত করতে হলে আজকের কন্যাশিশুদের সার্বিক অবস্থা পরিবর্তনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু বলেন, কন্যাশিশুর অধিকার রক্ষায় কেবল নীতিমালা যথেষ্ট নয়, কঠোরভাবে এর বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে।
দিবসের কর্মসূচি
জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে আজ সকাল ৯টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হবে। এরপর সকাল ১০টায় শিশু একাডেমী মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। উভয় কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি থাকবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ সেপ্টেম্বর কন্যাশিশু দিবস হলেও বাংলাদেশে আজ ৪ অক্টোবর দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিশু অধিকার দিবসের পাশাপাশি ১১ বছর ধরে বাংলাদেশে কন্যাশিশুদের অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে কন্যাশিশু দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
No comments