আফ্রিদি ঝড়ের ১৫ বছর
ঐতিহাসিক অনেক ঘটনাই ঘটেছে ৪ অক্টোবর। ১৯৮৩ সালের এই দিনে ঘণ্টায় ৬৩৩.৪৬৮ মাইলের ল্যান্ড স্পিড রেকর্ড গড়েছিলেন রিচার্ড নোবেল। ১৮৯৫ সালের ৪ অক্টোবর থেকেই শুরু গলফের ঐতিহ্যবাহী ইউএস ওপেন। তারও আগে ৬১০ খ্রিস্টাব্দের ৪ অক্টোবর হারকিউলিস আফ্রিকা থেকে কনস্টান্টিনোপোলে এসে রাজা হয়েছিলেন গ্রিসের। ক্রিকেটেও এদিনে আবির্ভাব আরেক 'রাজা' শহীদ আফ্রিদির। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ২৮৯টি ছক্কা মারা এই পাকিস্তানি এখনো কিন্তু 'কিং অব সিঙ্সে' বা 'ছক্কার রাজা'।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখা মাত্র ১৬ বছর বয়সে। ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর কেনিয়ার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে খেললেও ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি। লেগ স্পিনার মুশতাক আহমেদের বদলে সুযোগ পান যিনি, তাঁর সে সুযোগ না পাওয়াই স্বাভাবিক। তবে চার দেশীয় সেই 'সামীর কাপ'-এ তখনকার পাকিস্তানি অধিনায়ক সাঈদ আনোয়ার খেয়াল করেছিলেন, নেটে ওয়াকার ইউনুস আর সাকলায়েন মুশতাকের মতো বোলারের বল অবলীলায় মাঠের বাইরে পাঠাচ্ছেন আফ্রিদি। তাই ৪ অক্টোবর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আফ্রিদিকেই ব্যাট করতে পাঠান ৩ নম্বরে। বাকিটা ইতিহাস। সাইক্লোন, টর্নেডো, হারিকেন_এমন সব নামের সঙ্গে ১৬ বছরের এই তরুণ যোগ করলেন 'আফ্রিদিস্টর্ম'। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ইনিংসেই কল্পনাকেও হার মানিয়ে সেঞ্চুরি করলেন ৩৭ বলে! পাড়ার এলেবেলে বোলারের বিপক্ষেও যা অকল্পনীয় সেটাই করে দেখালেন মুরালিধরন, ভাসের মতো কিংবদন্তিদের সাধারণ কাতারে নামিয়ে এনে।
৩৭ বলের মধ্যে ১১টাই ছক্কা (যা তখন পর্যন্ত ওয়ানডের এক ইনিংসে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ছক্কার কীর্তি) আর বাউন্ডারি ছিল ৬টি। ভাবা যায়! পাকিস্তানের বিপক্ষে সে বছরেরই এপ্রিলে ৪৮ বলে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন বলেই কিনা জয়াসুরিয়ার ওপর দিয়েই ঝড়টা গেছে বেশি। জয়াসুরিয়ার ১১ বল থেকে ৫ ছক্কা ও ২ বাউন্ডারিসহ আফ্রিদি নিয়েছিলেন ৪১ রান। এ ছাড়া ধর্মসেনার ৭ বলে ২১, ভাসের ৭ বলে ১০ আর মুরালিধরনের ৯ বলে নিয়েছিলেন ২৫ রান। কেবল ডি সিলভাকেই (৮ বলে ৬) খেলতে পারেননি ঠিকভাবে। ৪০ বলে ১০২ করে তিনি আউটও হয়েছিলেন ডি সিলভার বলে।
ঝড়ো সেই ইনিংসের ১৫ বছর পূর্তি হলো গতকাল। ঝড় তুলে আবির্ভাব বলেই কিনা ক্যারিয়ারজুড়ে 'উড়িয়ে দেব' একটা ভাব ছিল তাঁর। ব্যাটিং-বোলিং, চালচলন, কথাবার্তা প্রায় সবখানে একই রকম 'বুম-বুম' আফ্রিদি। এমনকি ২৭ টেস্টে ১৭১৬ রান ও ৪৮ উইকেট আর ৩২৫ ওয়ানডেতে ৬৬৯৫ রান ও ৩১৫ উইকেট নেওয়া আফ্রিদি অবসরও নিয়েছেন বিতর্কের ঝড় তুলে। কোচের বিপক্ষে মুখ খোলার পর পিসিবি প্রেসিডেন্টকে একহাত নিয়ে হঠাৎ অবসরের ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছেন, 'বোর্ডে বদল না এলে আর ফিরব না।' কোচ ওয়াকার ইউনিস সরে যাওয়ার পর অবশ্য আবারও ফেরার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে তাঁর কথায়।
গত ১৫ বছরে টেমস-যমুনা-সোয়াতে পানি গড়িয়েছে অনেক। কিন্তু অমলিন আছে আফ্রিদির সেই কীর্তি। ওয়ানডের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটা ভাঙার আশা জাগিয়েও সফল হননি কেউই। ১৯৯৯ সালে ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে তাণ্ডব চালিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ব্রায়ান লারা। ব্যাটে ক্যালিপসো সুর তুলে ৪৫ বলে ৪ ছক্কা ও ১৮ বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি পূরণ করেন একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ৪০০ করা এই কিংবদন্তি। খালেদ মাহমুদ সুজনের করা ১৪তম ওভারেই তো নিয়েছিলেন ২৪ রান! তখন পর্যন্ত সেটাই ছিল ওয়ানডেতে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। ২০০৬ সালে লারার কীর্তিটা পেছনে ফেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মার্ক বাউচার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পচেফসস্ট্রোমে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেন ৪৪ বলে। ৬৮ বলে ৮ বাউন্ডারি ও ১০ ছক্কায় শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১৪৭-এ। ৫০-এর কম বলে সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস সেটা।
২০০৫ সালে আফ্রিদিই আবার গড়েন তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। কানপুরে ভারতের বিপক্ষে ১৫ বলে ৪৩ আর ২০ বলে ফিফটি করার পর ৩৬ বলে করেছিলেন ৮৮। ৪২ বলে ৯৬-এর পর সেঞ্চুরিতে পেঁৗছতে বল খেলেন আরো ৩টি। তবে ৪৫ বলের ওই সেঞ্চুরি এখনো যৌথভাবে তৃতীয় দ্রুততম।
৫০ বলের আগে সেঞ্চুরি করা সম্ভব, ওয়ানডেতে সবার আগে সেটা করে দেখিয়েছিলেন সনাৎ জয়াসুরিয়া। '৯৬ সালে বিশ্বকাপ জয়ের ঠিক পরই সিঙ্গার কাপের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। বিশ্বকাপের পরের টুর্নামেন্ট বলে চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা আর টুর্নামেন্টসেরা জয়াসুরিয়াকে ঘিরে প্রত্যাশা ছিল অনেক। সেই প্রত্যাশার পুরোটাই 'মাতারা হারিকেন' মিটিয়ে দেন ৪৮ বলে সেঞ্চুরি করে। ৬৫ বলে তাঁর ১১ বাউন্ডারি ও ১১ ছক্কায় ৩৪৯ রানের পাহাড়ই দাঁড় করায় শ্রীলঙ্কা। ম্যাচটা তারা জিতেও নেয় ৩৪ রানে। তখনকার দ্রুততম সেই সেঞ্চুরি আফ্রিদি-বাউচারদের দাপটে নেমে এসেছে এখন পঞ্চম স্থানে।
জয়াসুরিয়ার ঠিক পরই আছেন কেভিন ও'ব্রায়েন। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫০ বলে সেঞ্চুরি করেন এই আইরিশ। আইসিসির সহযোগী দেশের সদস্য হলেও বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটা ও'ব্রায়েনেরই।
৩৭ বলের মধ্যে ১১টাই ছক্কা (যা তখন পর্যন্ত ওয়ানডের এক ইনিংসে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ছক্কার কীর্তি) আর বাউন্ডারি ছিল ৬টি। ভাবা যায়! পাকিস্তানের বিপক্ষে সে বছরেরই এপ্রিলে ৪৮ বলে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন বলেই কিনা জয়াসুরিয়ার ওপর দিয়েই ঝড়টা গেছে বেশি। জয়াসুরিয়ার ১১ বল থেকে ৫ ছক্কা ও ২ বাউন্ডারিসহ আফ্রিদি নিয়েছিলেন ৪১ রান। এ ছাড়া ধর্মসেনার ৭ বলে ২১, ভাসের ৭ বলে ১০ আর মুরালিধরনের ৯ বলে নিয়েছিলেন ২৫ রান। কেবল ডি সিলভাকেই (৮ বলে ৬) খেলতে পারেননি ঠিকভাবে। ৪০ বলে ১০২ করে তিনি আউটও হয়েছিলেন ডি সিলভার বলে।
ঝড়ো সেই ইনিংসের ১৫ বছর পূর্তি হলো গতকাল। ঝড় তুলে আবির্ভাব বলেই কিনা ক্যারিয়ারজুড়ে 'উড়িয়ে দেব' একটা ভাব ছিল তাঁর। ব্যাটিং-বোলিং, চালচলন, কথাবার্তা প্রায় সবখানে একই রকম 'বুম-বুম' আফ্রিদি। এমনকি ২৭ টেস্টে ১৭১৬ রান ও ৪৮ উইকেট আর ৩২৫ ওয়ানডেতে ৬৬৯৫ রান ও ৩১৫ উইকেট নেওয়া আফ্রিদি অবসরও নিয়েছেন বিতর্কের ঝড় তুলে। কোচের বিপক্ষে মুখ খোলার পর পিসিবি প্রেসিডেন্টকে একহাত নিয়ে হঠাৎ অবসরের ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছেন, 'বোর্ডে বদল না এলে আর ফিরব না।' কোচ ওয়াকার ইউনিস সরে যাওয়ার পর অবশ্য আবারও ফেরার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে তাঁর কথায়।
গত ১৫ বছরে টেমস-যমুনা-সোয়াতে পানি গড়িয়েছে অনেক। কিন্তু অমলিন আছে আফ্রিদির সেই কীর্তি। ওয়ানডের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটা ভাঙার আশা জাগিয়েও সফল হননি কেউই। ১৯৯৯ সালে ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে তাণ্ডব চালিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ব্রায়ান লারা। ব্যাটে ক্যালিপসো সুর তুলে ৪৫ বলে ৪ ছক্কা ও ১৮ বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি পূরণ করেন একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ৪০০ করা এই কিংবদন্তি। খালেদ মাহমুদ সুজনের করা ১৪তম ওভারেই তো নিয়েছিলেন ২৪ রান! তখন পর্যন্ত সেটাই ছিল ওয়ানডেতে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। ২০০৬ সালে লারার কীর্তিটা পেছনে ফেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মার্ক বাউচার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পচেফসস্ট্রোমে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেন ৪৪ বলে। ৬৮ বলে ৮ বাউন্ডারি ও ১০ ছক্কায় শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১৪৭-এ। ৫০-এর কম বলে সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস সেটা।
২০০৫ সালে আফ্রিদিই আবার গড়েন তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। কানপুরে ভারতের বিপক্ষে ১৫ বলে ৪৩ আর ২০ বলে ফিফটি করার পর ৩৬ বলে করেছিলেন ৮৮। ৪২ বলে ৯৬-এর পর সেঞ্চুরিতে পেঁৗছতে বল খেলেন আরো ৩টি। তবে ৪৫ বলের ওই সেঞ্চুরি এখনো যৌথভাবে তৃতীয় দ্রুততম।
৫০ বলের আগে সেঞ্চুরি করা সম্ভব, ওয়ানডেতে সবার আগে সেটা করে দেখিয়েছিলেন সনাৎ জয়াসুরিয়া। '৯৬ সালে বিশ্বকাপ জয়ের ঠিক পরই সিঙ্গার কাপের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। বিশ্বকাপের পরের টুর্নামেন্ট বলে চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা আর টুর্নামেন্টসেরা জয়াসুরিয়াকে ঘিরে প্রত্যাশা ছিল অনেক। সেই প্রত্যাশার পুরোটাই 'মাতারা হারিকেন' মিটিয়ে দেন ৪৮ বলে সেঞ্চুরি করে। ৬৫ বলে তাঁর ১১ বাউন্ডারি ও ১১ ছক্কায় ৩৪৯ রানের পাহাড়ই দাঁড় করায় শ্রীলঙ্কা। ম্যাচটা তারা জিতেও নেয় ৩৪ রানে। তখনকার দ্রুততম সেই সেঞ্চুরি আফ্রিদি-বাউচারদের দাপটে নেমে এসেছে এখন পঞ্চম স্থানে।
জয়াসুরিয়ার ঠিক পরই আছেন কেভিন ও'ব্রায়েন। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫০ বলে সেঞ্চুরি করেন এই আইরিশ। আইসিসির সহযোগী দেশের সদস্য হলেও বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটা ও'ব্রায়েনেরই।
No comments