ইসলাম নারীর অধিকার সমুন্নত করেছে by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
ইসলাম নারীর অধিকার সমুন্নত রাখতে দিকনির্দেশক ও পথপ্রদর্শক। আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে ইসলাম নারীদের বেশ কিছু ক্ষেত্রে পুরুষের সমপর্যায়ের অধিকার দিয়ে সম্মানিত করেছে। ইসলামধর্মের মাধ্যমেই মানুষ প্রথম জেনেছে, যেকোনো মৌলিক অধিকার অর্জন মেয়েদের জন্মগত অধিকার। ইসলামই নারীকে সঠিক ও যথাযথ মর্যাদা দিয়েছে। প্রাক-ইসলামি যুগে নারীর যখন কোনো সামাজিক অধিকার ছিল না, যখন পুরুষেরা তাকে শুধু ভোগের জন্য ব্যবহার করত, যখন কন্যাশিশু জন্মগ্রহণকে অপমানজনক মনে করে তাকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হতো, তখন বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নারী ও পুরুষের সমমর্যাদার কথা বললেন। তিনি আল্লাহর বাণী ঘোষণা করলেন, ‘আর যে সত্কাজ করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী হোক, যদি সে মুমিন হয়, তাহলে এমন লোকেরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের বিন্দু পরিমাণ হকও বিনষ্ট করা হবে না।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৪)
মুসলিম পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অত্যন্ত সম্মানজনক মর্যাদা। ইসলামের শান্তিময় বিধান নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদার অধিকারী করেছে। ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোনো রকম তারতম্য নেই। ইসলাম কখনো নারীকে চার দেয়ালে আবদ্ধ করেনি। নারীকে প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বা কর্মস্থলে যেতে হবে বলেই ইসলাম তার সম্মান ও নিরাপত্তার জন্য পর্দার ব্যবস্থা অত্যাবশ্যকীয় করেছে। উম্মুল মুমিনীন তাঁদের কাছে আগত মহিলাদের ধর্মীয়, ব্যক্তিগত, পারিবারিক প্রভৃতি বিষয়ে নৈতিক শিক্ষাদান করতেন। নবী করিম (সা.) স্বয়ং নারীদের শিক্ষা গ্রহণের গুরুত্বের প্রতি বিশেষভাবে সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে নারীদের উদ্দেশে শিক্ষামূলক ভাষণ দিয়ে উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ।’ (ইবনে মাজা)
আল্লাহ প্রদত্ত মানব মর্যাদা সম্পর্কে জানতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। নারীদের শিক্ষা, চিন্তা-চেতনা, পাত্র নির্বাচন ও কর্মের স্বাধীনতাসহ সম্মতি প্রদানের অধিকার সর্বপ্রথম ইসলামই দিয়েছে। ইসলাম বিবাহের সময় অবিবাহিতা মেয়েদের, তালাকপ্রাপ্তা এবং বিধবাদের মত প্রকাশের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেছে। নারীরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজেদের নৈতিক চরিত্রকে সমুন্নত রাখবেন এবং সত্ ও ধার্মিক ব্যক্তিকে স্বামী হিসেবে নির্বাচন করবেন বিভিন্ন আয়াতে এমনই নির্দেশিত। সমাজে মাতা, গৃহকর্ত্রী ও ব্যবসা-কর্মে নিয়োজিত নারীদের যথার্থ অবস্থান নিশ্চিত করে রাসূলুল্লাহ (সা.) নারীর অধিকার সমুন্নত করে গেছেন। ইহকালীন ও পারলৌকিক জীবনে সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও মুক্তির জন্য যাবতীয় বৈষম্য, অজ্ঞতা ও অহংকার পরিত্যাগ করে সত্কর্মের দ্বারা পারস্পরিক সম্পর্কের মাপকাঠি নির্ধারণ করা একান্ত বাঞ্ছনীয়।
ইসলামে পিতামাতা, নিকটাত্মীয় ও স্বামীর সম্পত্তিতে রয়েছে নারীর সম্মানজনক অধিকার। যেকোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে যে অর্থসম্পদ মহিলারা উপার্জন করবেন এবং উত্তরাধিকার সূত্রে যে ধন-সম্পদের অধিকারী হবেন এতে ইসলাম নারীকে দিয়েছে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। তবে এ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সেলাকের (পিতা, ভাই, স্বামী) পরামর্শ গ্রহণের জন্য ইসলাম তাগিদ দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতামাতা, আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে, তা অল্পই হোক বা বেশি হোক, এক নির্ধারিত অংশ।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত-৭)
স্বভাবতই নারীরা এক নিবিড় পারিবারিক বন্ধন ছেড়ে স্বামীর গৃহে যায়। সেখানে গিয়ে যাতে মেয়েটি কোনো রকম নিরাপত্তাহীনতা অনুভব না করে, সে জন্য তার প্রতি স্বামীর সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শন এবং যাতে পুরুষ এবং নারী তাদের প্রাপ্ত অধিকার এবং হকের বিনিময়ে সচেতনতা অবলম্বন করতে পারেন তাই স্বামী-স্ত্রীর প্রাপ্য সম্মান ও সমানাধিকার সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে, ‘নারীদেরও (পুরুষদের ওপর) তদ্রূপ অধিকার আছে, যদ্রূপ নারীদের ওপর পুরুষদের অধিকার আছে বিধান অনুযায়ী।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৮)
ইসলাম নারীকে সর্বক্ষেত্রেই অধিকার দিয়েছে বেশি আর পুরুষকে দায়িত্ব ও কর্তব্য দিয়েছে বেশি। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে আল্লাহ তাআলা পোশাকের সঙ্গে তুলনা করেছেন। পোশাকের সঙ্গে শরীরের সম্পর্ক যত নিবিড়, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ততটাই নিবিড় হওয়া চাই। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা হচ্ছে তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের জন্য পোশাকস্বরূপ’।(সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৭) নবী করিম (সা.) স্বামীকেই অধিক ধৈর্যশীল ও সহিষ্ণু হতে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন, ‘তোমরা নিজ পত্নীদের প্রতি সদয় ব্যবহার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমরা তাদের গ্রহণ করেছ এবং তাঁরই আদেশমতো তাদের তোমাদের জন্য বৈধ করে নিয়েছ। মুমিন স্বামী ঈমানদার স্ত্রীর প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণকারী হবে না। কারণ, স্ত্রীর কোনো ব্যবহারে মনে কষ্ট এলেও পুনরায় তার দ্বারাই এমন ব্যবহার পাবে, যাতে সন্তুষ্টি লাভ হবে।’ (মুসলিম)
ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়েরই ন্যায্য অধিকার ও সমমর্যাদা স্বীকৃত। যেমন—বাক্স্বাধীনতা, ভোটাধিকার ও সমালোচনার অধিকার। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ পরস্পরের সহযোগী, প্রতিযোগী নয়। পরিবারে নারী-পুরুষ উভয়ই সংসারধর্ম পালন করবে এবং পারস্পরিক উন্নতির সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। স্বামী যেহেতু বাইরে চাকরি বা ব্যবসায় ব্যস্ত, সেহেতু ঘরে সন্তানদের সঠিক শিক্ষা দেওয়া ও চরিত্র গঠন করার মতো বিরাট দায়িত্ব স্ত্রীকেই পালন করতে হয়। ঘরের এ মূল দায়িত্বকে উপেক্ষা না করে কোনো নারী যদি সময়-সুযোগ, মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী সম্মানজনক কোনো চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্য করে, তবে তা অতি উত্তম। স্বামীর সংসারে কর্ত্রী হিসেবে নারীর দায়িত্ব নির্ধারণ করে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘স্ত্রী তার স্বামীর পরিজনবর্গের এবং সন্তানদের তত্ত্বাবধানকারিণী।’ (বুখারি ও মুসলিম)
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতে নারীরা স্ব স্ব যোগ্যতা ও মেধার গুণে নিজেরাই কর্মসংস্থান করে নিচ্ছেন, কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো নারীদের প্রতি রূঢ় আচরণ করা যেন মানুষের মজ্জাগত। নারী সহকর্মীকে প্রায়ই আপন করে নেওয়ার মনমানসিকতা হারিয়ে তাদের মানবিক প্রাপ্যটুকু ক্ষুণ্ন করা হয়, যা দেশ-জাতি বা নতুন প্রজন্মের উন্নতিতে বাধা দিচ্ছে। ইসলামের মহান শিক্ষা ও আদর্শ নারীকে বিভিন্ন বিষয়ে সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে তার অধিকারকে যে উঁচু মর্যাদায় উন্নীত করেছে, তা অন্য কোনো ধর্ম, আদর্শ বা মতবাদে সম্ভব নয়। অথচ সবার মধ্যে যে জিনিসটা এখনো রয়েছে তা হলো নারীদের সঠিকভাবে মর্যাদা না দেওয়া বা উপেক্ষা করা। নারীদের এমনভাবে কোণঠাসা করে না রেখে তাদের উপযুক্ত শিক্ষাদীক্ষায় অবারিত সুযোগ করে দেওয়া উচিত। এ জন্য আমাদের ধর্মীয় গোঁড়ামির দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। ইসলাম প্রদত্ত নারী জাতির ন্যায্যপ্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা ও ন্যায়সংগত অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়কেই আন্তরিক হতে হবে। ইসলামে নারীদের যেসব অধিকার দেওয়া হয়েছে তা কড়ায়-গণ্ডায় আদায় হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে নজরদারি বৃদ্ধিতে আলেম সমাজেরও এগিয়ে আসা উচিত।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
dr.munimkhan@yahoo.com
মুসলিম পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অত্যন্ত সম্মানজনক মর্যাদা। ইসলামের শান্তিময় বিধান নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদার অধিকারী করেছে। ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোনো রকম তারতম্য নেই। ইসলাম কখনো নারীকে চার দেয়ালে আবদ্ধ করেনি। নারীকে প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বা কর্মস্থলে যেতে হবে বলেই ইসলাম তার সম্মান ও নিরাপত্তার জন্য পর্দার ব্যবস্থা অত্যাবশ্যকীয় করেছে। উম্মুল মুমিনীন তাঁদের কাছে আগত মহিলাদের ধর্মীয়, ব্যক্তিগত, পারিবারিক প্রভৃতি বিষয়ে নৈতিক শিক্ষাদান করতেন। নবী করিম (সা.) স্বয়ং নারীদের শিক্ষা গ্রহণের গুরুত্বের প্রতি বিশেষভাবে সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে নারীদের উদ্দেশে শিক্ষামূলক ভাষণ দিয়ে উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ।’ (ইবনে মাজা)
আল্লাহ প্রদত্ত মানব মর্যাদা সম্পর্কে জানতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। নারীদের শিক্ষা, চিন্তা-চেতনা, পাত্র নির্বাচন ও কর্মের স্বাধীনতাসহ সম্মতি প্রদানের অধিকার সর্বপ্রথম ইসলামই দিয়েছে। ইসলাম বিবাহের সময় অবিবাহিতা মেয়েদের, তালাকপ্রাপ্তা এবং বিধবাদের মত প্রকাশের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেছে। নারীরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজেদের নৈতিক চরিত্রকে সমুন্নত রাখবেন এবং সত্ ও ধার্মিক ব্যক্তিকে স্বামী হিসেবে নির্বাচন করবেন বিভিন্ন আয়াতে এমনই নির্দেশিত। সমাজে মাতা, গৃহকর্ত্রী ও ব্যবসা-কর্মে নিয়োজিত নারীদের যথার্থ অবস্থান নিশ্চিত করে রাসূলুল্লাহ (সা.) নারীর অধিকার সমুন্নত করে গেছেন। ইহকালীন ও পারলৌকিক জীবনে সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও মুক্তির জন্য যাবতীয় বৈষম্য, অজ্ঞতা ও অহংকার পরিত্যাগ করে সত্কর্মের দ্বারা পারস্পরিক সম্পর্কের মাপকাঠি নির্ধারণ করা একান্ত বাঞ্ছনীয়।
ইসলামে পিতামাতা, নিকটাত্মীয় ও স্বামীর সম্পত্তিতে রয়েছে নারীর সম্মানজনক অধিকার। যেকোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে যে অর্থসম্পদ মহিলারা উপার্জন করবেন এবং উত্তরাধিকার সূত্রে যে ধন-সম্পদের অধিকারী হবেন এতে ইসলাম নারীকে দিয়েছে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। তবে এ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সেলাকের (পিতা, ভাই, স্বামী) পরামর্শ গ্রহণের জন্য ইসলাম তাগিদ দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতামাতা, আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে, তা অল্পই হোক বা বেশি হোক, এক নির্ধারিত অংশ।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত-৭)
স্বভাবতই নারীরা এক নিবিড় পারিবারিক বন্ধন ছেড়ে স্বামীর গৃহে যায়। সেখানে গিয়ে যাতে মেয়েটি কোনো রকম নিরাপত্তাহীনতা অনুভব না করে, সে জন্য তার প্রতি স্বামীর সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শন এবং যাতে পুরুষ এবং নারী তাদের প্রাপ্ত অধিকার এবং হকের বিনিময়ে সচেতনতা অবলম্বন করতে পারেন তাই স্বামী-স্ত্রীর প্রাপ্য সম্মান ও সমানাধিকার সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে, ‘নারীদেরও (পুরুষদের ওপর) তদ্রূপ অধিকার আছে, যদ্রূপ নারীদের ওপর পুরুষদের অধিকার আছে বিধান অনুযায়ী।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৮)
ইসলাম নারীকে সর্বক্ষেত্রেই অধিকার দিয়েছে বেশি আর পুরুষকে দায়িত্ব ও কর্তব্য দিয়েছে বেশি। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে আল্লাহ তাআলা পোশাকের সঙ্গে তুলনা করেছেন। পোশাকের সঙ্গে শরীরের সম্পর্ক যত নিবিড়, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ততটাই নিবিড় হওয়া চাই। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা হচ্ছে তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের জন্য পোশাকস্বরূপ’।(সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৭) নবী করিম (সা.) স্বামীকেই অধিক ধৈর্যশীল ও সহিষ্ণু হতে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন, ‘তোমরা নিজ পত্নীদের প্রতি সদয় ব্যবহার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমরা তাদের গ্রহণ করেছ এবং তাঁরই আদেশমতো তাদের তোমাদের জন্য বৈধ করে নিয়েছ। মুমিন স্বামী ঈমানদার স্ত্রীর প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণকারী হবে না। কারণ, স্ত্রীর কোনো ব্যবহারে মনে কষ্ট এলেও পুনরায় তার দ্বারাই এমন ব্যবহার পাবে, যাতে সন্তুষ্টি লাভ হবে।’ (মুসলিম)
ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়েরই ন্যায্য অধিকার ও সমমর্যাদা স্বীকৃত। যেমন—বাক্স্বাধীনতা, ভোটাধিকার ও সমালোচনার অধিকার। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ পরস্পরের সহযোগী, প্রতিযোগী নয়। পরিবারে নারী-পুরুষ উভয়ই সংসারধর্ম পালন করবে এবং পারস্পরিক উন্নতির সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। স্বামী যেহেতু বাইরে চাকরি বা ব্যবসায় ব্যস্ত, সেহেতু ঘরে সন্তানদের সঠিক শিক্ষা দেওয়া ও চরিত্র গঠন করার মতো বিরাট দায়িত্ব স্ত্রীকেই পালন করতে হয়। ঘরের এ মূল দায়িত্বকে উপেক্ষা না করে কোনো নারী যদি সময়-সুযোগ, মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী সম্মানজনক কোনো চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্য করে, তবে তা অতি উত্তম। স্বামীর সংসারে কর্ত্রী হিসেবে নারীর দায়িত্ব নির্ধারণ করে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘স্ত্রী তার স্বামীর পরিজনবর্গের এবং সন্তানদের তত্ত্বাবধানকারিণী।’ (বুখারি ও মুসলিম)
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতে নারীরা স্ব স্ব যোগ্যতা ও মেধার গুণে নিজেরাই কর্মসংস্থান করে নিচ্ছেন, কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো নারীদের প্রতি রূঢ় আচরণ করা যেন মানুষের মজ্জাগত। নারী সহকর্মীকে প্রায়ই আপন করে নেওয়ার মনমানসিকতা হারিয়ে তাদের মানবিক প্রাপ্যটুকু ক্ষুণ্ন করা হয়, যা দেশ-জাতি বা নতুন প্রজন্মের উন্নতিতে বাধা দিচ্ছে। ইসলামের মহান শিক্ষা ও আদর্শ নারীকে বিভিন্ন বিষয়ে সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে তার অধিকারকে যে উঁচু মর্যাদায় উন্নীত করেছে, তা অন্য কোনো ধর্ম, আদর্শ বা মতবাদে সম্ভব নয়। অথচ সবার মধ্যে যে জিনিসটা এখনো রয়েছে তা হলো নারীদের সঠিকভাবে মর্যাদা না দেওয়া বা উপেক্ষা করা। নারীদের এমনভাবে কোণঠাসা করে না রেখে তাদের উপযুক্ত শিক্ষাদীক্ষায় অবারিত সুযোগ করে দেওয়া উচিত। এ জন্য আমাদের ধর্মীয় গোঁড়ামির দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। ইসলাম প্রদত্ত নারী জাতির ন্যায্যপ্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা ও ন্যায়সংগত অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়কেই আন্তরিক হতে হবে। ইসলামে নারীদের যেসব অধিকার দেওয়া হয়েছে তা কড়ায়-গণ্ডায় আদায় হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে নজরদারি বৃদ্ধিতে আলেম সমাজেরও এগিয়ে আসা উচিত।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
dr.munimkhan@yahoo.com
No comments