লাইলাতুল কদরের তাত্পর্য by সাইয়্যিদ জুলফিকার জহুর
সময়ের
নাম হায়াত, সময়েরই নাম ইতিহাস। সময়েরই নাম যুগ এবং যুগ সন্ধিক্ষণ। এমনই এক
খণ্ড সময়ের নাম বছর এবং বছরেরই একাংশের নাম মাস এবং এমনই একটি মাসের নাম
রমজান। রমজান তো সেই মাস, যার শেষাংশে রয়েছে কদরের রাত এবং কদরের রাতের
মধ্যে রয়েছে এক সুপ্ত সফলতা, যার মধ্যে লুকায়িত হাজার মাস—৮৩ বছরের ইবাদতময়
সফলতা। এখন তো সেই সময়, সেই এক হাজার মাস কোলে করে ঘুমিয়ে থাকা ঘুমন্ত
মর্যাদাময় রাতের প্রতীক্ষাপর্ব। যে রাত ঘুমানোর জন্য বেছে নেয় আলসে ও
অজ্ঞ হতভাগা মানুষেরা। অথচ জেগে থাকেন সব ফেরেশতা এবং ফেরেশতাদের আমির
জিবরাইল (আ.)-এর নেতৃত্বে শান্তির বার্তা নিয়ে ঘোরে শান্তিময় ভবিষ্যত্ ও
শান্তি আলয় দারুস সালামের প্রবেশাধিকারপ্রাপ্তির প্রত্যাশা বিতরণ করে চলে
সারা রাত এবং ফজর পর্যন্ত। এমনই দিনে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ক্ষমার আভাসে বলে
উঠতেন: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম; তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।’
আপনিই সেই সত্তা, যে ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। অতঃপর ক্ষমা করেন, হে মহান
ক্ষমাশীল। (জামেউত তিরমিজি: ৩৫-১৩)।
হজরত মুহাম্মদ (সা.) জেগে থাকতেন রাতের প্রতিটি প্রহরে, প্রতি বেজোড় রাতের গভীরতা ও পবিত্রতা মাপতেন লাইলাতুল কদরের পরম নিক্তিতে। কেনই-বা তিনি তা করবেন না! কুদরতি কৌতূহলে তাঁকেই তো জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ‘আপনি কি জানেন, কদরের রাত্রি কি?
হয়তো আল্লাহর রাসুল তাঁর বিনীত উত্তরে বলেছিলেন, আল্লাহই ভালো জানেন। অতঃপর আল্লাহ বলেছিলেন, এই সেই রাত, যে রাতের গর্ভে লুকিয়ে থাকে ৮৩ বছর ৪ মাস। রমজানে কেউ যদি এ রাতে জেগে রয়, কেউ যদি কেঁদে ফেলে, কেউ যদি ক্ষমা চায়, কেউ যদি তাকওয়া-তাড়িত হয়ে সিজদায় পড়ে রয়; সে এক রাতে এবাদতে পূর্ণ ৮৩ বছরের হায়াতসমৃদ্ধ হবে। জীবনের পবিত্র প্রবৃদ্ধি এর থেকে বেশি আর কীই-বা হতে পারে?
কদরের পার্থক্য ও পরিচিতি:
কদরের রাত যদিও তার আঁধার, অবয়ব, প্রহরের প্রেক্ষাপট সন্ধ্যা ও সুবহে সাদিক একই রকম; তবু এর ভাবগাম্ভীর্য আলাদা, আলাদা এর অভ্যন্তর ভাগের দীপ্তি ও মহত্ত্ব। তেমনি ব্যতিক্রম হতে পারে এর আবহাওয়া এবং সুবহে সাদিক তো মালাইকা কুলের ফিরতি প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম হয়ে ওঠে। উলম্বিত উচ্চতা ও অভিনব মর্যাদা লাভ করতে পারে। কুরআনিক মর্যাদার কারণে যেমন কদর মহিমাপূর্ণ, তেমনি কদরের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় কোরআনও মহিমাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কুদরতি রহস্যে ঘেরা এ রাত যেমন উম্মতে মুহাম্মদির হায়াতে তৈয়্যবা বৃদ্ধি ঘটিয়েছে, তেমনি গাফেলরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় সরাসরি।
এ রাত প্রকাশিত এবং অপ্রকাশিতও বটে:
এর প্রকাশিত প্রেক্ষাপট যেমন আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের মধ্যে আকর্ষণ ও আবেগ সৃষ্টি করে, তেমনি এ রাতের টানেই রাত জেগে রয়—রাতের পাহারায় কাটে ১০ দিন ১০ রাত্রি। আবেগ ভুলে যায় তার সাময়িক সংসার, ঈদের শপিং ও বাস্তবিক ব্যবসায়িক ব্যস্ততা। এ কারণেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ রাতের আবেগে ঘর ছেড়ে মসজিদমুখী হতেন। এ রাতের পাহারায় জেগে থাকতেন সম্ভাব্য রাতগুলো। ইতিকাফে খুব যত্ন করে মগ্ন থাকতেন জিকির ও সালাতে। রাতের আঁধারে এসে এ রাত যেন আঁধারেই হারিয়ে না যায়। এ রাত প্রাপ্তির আভাস পেয়েই হজরত মুহাম্মদ (সা.) অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন বেজোড় রাতগুলোয় পূর্ণ জাগরণের।
বরাদ্দ ও বিধানের প্রেক্ষাপটে কদরের রাত্রি
‘ফিহা ইয়ুফরকু কুল্ল আমরিন হাকিম। আমরাম মিন ইনদিনা ইন্না কুন্না মুরসিলিন।’ (দুখান: ২-৩)। এই সেই রাত, যার অভ্যন্তরে রয়েছে বিধান বিতরণের প্রেক্ষাপট। আমারই কাছ থেকে বিধানাবলি আমিই প্রেরণ করে থাকি। তাই এ রাত কেবলি প্রতীকী মর্যাদায় মহিমান্বিত নয় বরং আল্লাহর দাপ্তরিক কর্মসূচি ও বরাদ্দের কারণেও অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ কারণেই প্রান্তিক পবিত্রতা ও প্রক্রিয়ায় মালাইকা কুলের ব্যস্ততা যে ব্যাপ্তি ধারণ করে ও জ্যোতি ছড়ায়, তা সর্বাবস্থায়ই তুলনাহীন। এ রাত ধারণ ও বরণের একমাত্র পথ। রাতের পাহারায় রাত জাগরণ, সিজদা বহরের মাধ্যমে বরণ করে নেওয়া; আর এর শিক্ষা ধারণ করাটাই সারা জীবনের জন্যই পরম পাথেয়।
মওলানা সাইয়্যিদ জুলফিকার জহুর: খতিব, মসজিদুত তাকওয়া, ধানমন্ডি, ঢাকা এবং স্থপতি।
হজরত মুহাম্মদ (সা.) জেগে থাকতেন রাতের প্রতিটি প্রহরে, প্রতি বেজোড় রাতের গভীরতা ও পবিত্রতা মাপতেন লাইলাতুল কদরের পরম নিক্তিতে। কেনই-বা তিনি তা করবেন না! কুদরতি কৌতূহলে তাঁকেই তো জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ‘আপনি কি জানেন, কদরের রাত্রি কি?
হয়তো আল্লাহর রাসুল তাঁর বিনীত উত্তরে বলেছিলেন, আল্লাহই ভালো জানেন। অতঃপর আল্লাহ বলেছিলেন, এই সেই রাত, যে রাতের গর্ভে লুকিয়ে থাকে ৮৩ বছর ৪ মাস। রমজানে কেউ যদি এ রাতে জেগে রয়, কেউ যদি কেঁদে ফেলে, কেউ যদি ক্ষমা চায়, কেউ যদি তাকওয়া-তাড়িত হয়ে সিজদায় পড়ে রয়; সে এক রাতে এবাদতে পূর্ণ ৮৩ বছরের হায়াতসমৃদ্ধ হবে। জীবনের পবিত্র প্রবৃদ্ধি এর থেকে বেশি আর কীই-বা হতে পারে?
কদরের পার্থক্য ও পরিচিতি:
কদরের রাত যদিও তার আঁধার, অবয়ব, প্রহরের প্রেক্ষাপট সন্ধ্যা ও সুবহে সাদিক একই রকম; তবু এর ভাবগাম্ভীর্য আলাদা, আলাদা এর অভ্যন্তর ভাগের দীপ্তি ও মহত্ত্ব। তেমনি ব্যতিক্রম হতে পারে এর আবহাওয়া এবং সুবহে সাদিক তো মালাইকা কুলের ফিরতি প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম হয়ে ওঠে। উলম্বিত উচ্চতা ও অভিনব মর্যাদা লাভ করতে পারে। কুরআনিক মর্যাদার কারণে যেমন কদর মহিমাপূর্ণ, তেমনি কদরের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় কোরআনও মহিমাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কুদরতি রহস্যে ঘেরা এ রাত যেমন উম্মতে মুহাম্মদির হায়াতে তৈয়্যবা বৃদ্ধি ঘটিয়েছে, তেমনি গাফেলরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় সরাসরি।
এ রাত প্রকাশিত এবং অপ্রকাশিতও বটে:
এর প্রকাশিত প্রেক্ষাপট যেমন আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের মধ্যে আকর্ষণ ও আবেগ সৃষ্টি করে, তেমনি এ রাতের টানেই রাত জেগে রয়—রাতের পাহারায় কাটে ১০ দিন ১০ রাত্রি। আবেগ ভুলে যায় তার সাময়িক সংসার, ঈদের শপিং ও বাস্তবিক ব্যবসায়িক ব্যস্ততা। এ কারণেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ রাতের আবেগে ঘর ছেড়ে মসজিদমুখী হতেন। এ রাতের পাহারায় জেগে থাকতেন সম্ভাব্য রাতগুলো। ইতিকাফে খুব যত্ন করে মগ্ন থাকতেন জিকির ও সালাতে। রাতের আঁধারে এসে এ রাত যেন আঁধারেই হারিয়ে না যায়। এ রাত প্রাপ্তির আভাস পেয়েই হজরত মুহাম্মদ (সা.) অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন বেজোড় রাতগুলোয় পূর্ণ জাগরণের।
বরাদ্দ ও বিধানের প্রেক্ষাপটে কদরের রাত্রি
‘ফিহা ইয়ুফরকু কুল্ল আমরিন হাকিম। আমরাম মিন ইনদিনা ইন্না কুন্না মুরসিলিন।’ (দুখান: ২-৩)। এই সেই রাত, যার অভ্যন্তরে রয়েছে বিধান বিতরণের প্রেক্ষাপট। আমারই কাছ থেকে বিধানাবলি আমিই প্রেরণ করে থাকি। তাই এ রাত কেবলি প্রতীকী মর্যাদায় মহিমান্বিত নয় বরং আল্লাহর দাপ্তরিক কর্মসূচি ও বরাদ্দের কারণেও অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ কারণেই প্রান্তিক পবিত্রতা ও প্রক্রিয়ায় মালাইকা কুলের ব্যস্ততা যে ব্যাপ্তি ধারণ করে ও জ্যোতি ছড়ায়, তা সর্বাবস্থায়ই তুলনাহীন। এ রাত ধারণ ও বরণের একমাত্র পথ। রাতের পাহারায় রাত জাগরণ, সিজদা বহরের মাধ্যমে বরণ করে নেওয়া; আর এর শিক্ষা ধারণ করাটাই সারা জীবনের জন্যই পরম পাথেয়।
মওলানা সাইয়্যিদ জুলফিকার জহুর: খতিব, মসজিদুত তাকওয়া, ধানমন্ডি, ঢাকা এবং স্থপতি।
No comments