৬৫ ভাগ মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে না by পার্থ শঙ্কর সাহা
দেশের
৬৫ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ অনিরাপদ পানি পান করে। এই পানিতে আর্সেনিক এবং ই.
কোলাই (মলের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া) সংক্রমণ আছে। নিরাপদ পানি পাওয়ার
ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে সিলেট বিভাগ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর
(বিবিএস) জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিপুল পরিমাণ মানুষের অনিরাপদ পানি পানের এই চিত্রে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পানি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, সরকারের আগের সব নথিপত্রে ৯৭ শতাংশ মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহের যে দাবি করা হচ্ছে, নতুন এই তথ্য তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। তাঁদের কথা, সরকারের উচিত ভুল ধারণা থেকে বের হয়ে এসে বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য প্রকৃত অর্থে নিরাপদ পানির সংস্থানে সচেষ্ট হওয়া।
বিবিএসের এই বহু নির্দেশক গুচ্ছ জরিপ (মাল্টিপল ইনডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে-মিকস) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় ৫ জুলাই। জাতিসংঘ শিশু তহবিল—ইউনিসেফের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বিবিএস এই জরিপ করে। জরিপে ৫১ হাজার ৮৯৫টি পরিবারের ২ লাখ ৩৭ হাজার ৩৯৬ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
এই জরিপ প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পানি ও স্যানিটেশনের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক বলেন, ‘আমি এই তথ্য অসত্য বলছি না। তবে এটা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং আমি তা মেনে নিচ্ছি না।’
বিবিএসের জরিপে পানির উৎস এবং গৃহস্থালিতে মানুষের খাওয়ার পানির মান পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, দেশের ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ খাওয়ার পানির উৎস নিরাপদ নয়। উৎসেই আর্সেনিক এবং ই. কোলাইয়ের সংক্রমণ থাকায় এই পানিকে অনিরাপদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ই. কোলাই জীবাণূর কারণে কলেরা, ডায়রিয়াসহ নানারকম পেটের অসুখ হয় এবং তা মৃত্যুরও কারণ হতে পারে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আর্সেনিক এবং ই. কোলাইয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যে মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়, সে অনুযায়ী দেশের ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষের খাবার পানির উৎস নিরাপদ আছে। তবে ঘরে মাত্র ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পান করতে পারে। কারণ উৎস অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হলেও সরবরাহব্যবস্থার ত্রুটি, পানি পরিবহন, সংরক্ষণ ও পরিবেশনের পর্যায়ে তা অনিরাপদ হয়ে পড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি লিটার পানিতে ১০ পিপিবি (পার্টস পার বিলিয়ন) আর্সেনিকের উপস্থিতি থাকলেই তা খাওয়ার অনুপযোগী বলে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের মানদণ্ড অনুযায়ী তা ৫০ পিপিবি।
জরিপে ৫০ পিপিবিকে মান ধরে দেখা যায়, দেশের প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ মানুষ আর্সেনিক সংক্রমিত উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে। তবে সিলেট বিভাগে এ হার ৩০ দশমিক ২ শতাংশ। আর বরিশাল বিভাগে এই হার সবচেয়ে কম, মাত্র ১ শতাংশ। শহরের চেয়ে আর্সেনিকে দূষিত পানির উৎস গ্রামে দ্বিগুণ।
মিকসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪১ শতাংশ পরিবারের খাবার পানির উৎসে ক্ষতিকর মাত্রায় ই. কোলাই রয়েছে। প্রতি ১০০ মিলিলিটার পানিতে ১ কলোনি ফর্মিং ইউনিটের (সিএফইউ) বেশি ই. কোলাই থাকলে তা অনিরাপদ পানি হিসেবে বিবেচিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অণুজীব ও রোগ প্রতিরোধ বিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন মিয়া বলেন, ‘অনেকগুলো ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে ই. কোলাই একটি। পানিতে শুধু এর উপস্থিতিই যে ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগ সৃষ্টি করে তা বলা যায় না। তবে ১ সিএফইউয়ের চেয়ে বেশি পরিমাণ ই. কোলাই সংক্রমিত পানি নিঃসন্দেহে পেটের পীড়ার জন্য দায়ী।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গৃহস্থালিতে ব্যবহারের পানিতে ই. কোলাইয়ের সংক্রমণের হার ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ উৎসের চেয়ে ব্যবহারকালে পানিতে আরও ই. কোলাই সংক্রমিত হয়। সরবরাহ লাইনের ত্রুটি এবং পরিচ্ছন্নতার অভাবই এর মূল কারণ বলে মনে করেন অধ্যাপক রুহুল আমিন মিয়া।
আর্সেনিক সংক্রমণের হার গ্রামে বেশি হলেও গ্রামের চেয়ে শহরের পানি বেশি মাত্রায় ই. কোলাই সংক্রমিত। শহরাঞ্চলে ৫৫ শতাংশ পানির উৎস এবং গ্রামাঞ্চলে ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ পানির উৎস ই. কোলাই সংক্রমিত। বিভাগের হিসাবে সিলেটে সর্বোচ্চ ৬১ দশমিক ৯ শতাংশ পানি ই. কোলাই সংক্রমিত। সিলেটের ২১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং এরপরেই ঢাকা বিভাগের ২০ দশমিক ৭ শতাংশ খাওয়ার পানিতে অতি উচ্চমাত্রায় ই. কোলাই সংক্রমিত আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা মহানগরে ওয়াসার পানি সরবরাহব্যবস্থার ত্রুটির কারণে এ অঞ্চলে ই. কোলাই সংক্রমণের হার বেশি। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) এক গবেষণায় ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা ৬৩ শতাংশ পানিতেই ই. কোলাই জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া যায়।
সরকারের দাবি, ২০১৫ সালের মধ্যে ৮৫ শতাংশ মানুষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জিত হয়েছে। এমডিজিতে পানি সরবরাহের ক্ষেত্রটিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। উৎসে কোনো ধরনের সংক্রমণের দিকটি এখানে স্থান পায়নি। তবে গত ৩০ জুন প্রকাশিত ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ‘স্যানিটেশন ও সুপেয় পানি খাতে অগ্রগতি: এমডিজি মূল্যায়ন ২০১৫’ শীর্ষক চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ১৩ শতাংশ মানুষ এখনো অনিরাপদ উৎসের পানি ব্যবহার করে। আর্সেনিক সংক্রমিত পানিকেই এখানে অনিরাপদ পানি বলে ধরা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটার এইডের বাংলাদেশীয় প্রধান খায়রুল ইসলাম মনে করেন, বাংলাদেশে স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানি খাতে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। তবে অর্জনের সংজ্ঞায় যেসব ফাঁকফোকর আছে, তাকে পুঁজি করে অর্জনের পরিসংখ্যান কৃত্রিমভাবে দেখানো হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার খায়রুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিসংখ্যানগত সততার বিষয়ে আমাদের আন্তরিক হওয়া উচিত। ঊর্ধ্বতন মহলের যা শুনলে ভালো লাগে, সে রকম তথ্য সাজিয়ে দেওয়া মিত্রের কাজ নয়। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে দেশের অধিকাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পায় না। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যকর কর্মসূচি নেওয়া দরকার।’
তবে পানি ও স্যানিটেশন খাতে পরিসংখ্যান বাড়িয়ে বলে কৃতিত্ব নেওয়ার কোনো অভিপ্রায় নেই, এমন মন্তব্য করে স্থানীয় সরকারসচিব আব্দুল মালেক বলেন, ‘যাঁরা সরকারের বাইরে আছেন, তাঁরা অনেক কিছুই বলতে পারেন। বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন।’
বেসরকারি সংগঠন এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথের নির্বাহী পরিচালক এস এম এ রশিদ বলেন, নিরাপদ পানির ক্ষেত্রে সরকারকে এখন তার দাবি থেকে সরে আসতে হবে। কারণ ৯৭ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পায় আর ৬৫ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পায় না—দুটিই এখন সরকারি তথ্য। তাই এখন সরকারকে এ বিষয়ে বাস্তবানুগ পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিপুল পরিমাণ মানুষের অনিরাপদ পানি পানের এই চিত্রে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পানি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, সরকারের আগের সব নথিপত্রে ৯৭ শতাংশ মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহের যে দাবি করা হচ্ছে, নতুন এই তথ্য তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। তাঁদের কথা, সরকারের উচিত ভুল ধারণা থেকে বের হয়ে এসে বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য প্রকৃত অর্থে নিরাপদ পানির সংস্থানে সচেষ্ট হওয়া।
বিবিএসের এই বহু নির্দেশক গুচ্ছ জরিপ (মাল্টিপল ইনডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে-মিকস) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় ৫ জুলাই। জাতিসংঘ শিশু তহবিল—ইউনিসেফের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বিবিএস এই জরিপ করে। জরিপে ৫১ হাজার ৮৯৫টি পরিবারের ২ লাখ ৩৭ হাজার ৩৯৬ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
এই জরিপ প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পানি ও স্যানিটেশনের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক বলেন, ‘আমি এই তথ্য অসত্য বলছি না। তবে এটা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং আমি তা মেনে নিচ্ছি না।’
বিবিএসের জরিপে পানির উৎস এবং গৃহস্থালিতে মানুষের খাওয়ার পানির মান পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, দেশের ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ খাওয়ার পানির উৎস নিরাপদ নয়। উৎসেই আর্সেনিক এবং ই. কোলাইয়ের সংক্রমণ থাকায় এই পানিকে অনিরাপদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ই. কোলাই জীবাণূর কারণে কলেরা, ডায়রিয়াসহ নানারকম পেটের অসুখ হয় এবং তা মৃত্যুরও কারণ হতে পারে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আর্সেনিক এবং ই. কোলাইয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যে মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়, সে অনুযায়ী দেশের ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষের খাবার পানির উৎস নিরাপদ আছে। তবে ঘরে মাত্র ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পান করতে পারে। কারণ উৎস অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হলেও সরবরাহব্যবস্থার ত্রুটি, পানি পরিবহন, সংরক্ষণ ও পরিবেশনের পর্যায়ে তা অনিরাপদ হয়ে পড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি লিটার পানিতে ১০ পিপিবি (পার্টস পার বিলিয়ন) আর্সেনিকের উপস্থিতি থাকলেই তা খাওয়ার অনুপযোগী বলে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের মানদণ্ড অনুযায়ী তা ৫০ পিপিবি।
জরিপে ৫০ পিপিবিকে মান ধরে দেখা যায়, দেশের প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ মানুষ আর্সেনিক সংক্রমিত উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে। তবে সিলেট বিভাগে এ হার ৩০ দশমিক ২ শতাংশ। আর বরিশাল বিভাগে এই হার সবচেয়ে কম, মাত্র ১ শতাংশ। শহরের চেয়ে আর্সেনিকে দূষিত পানির উৎস গ্রামে দ্বিগুণ।
মিকসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪১ শতাংশ পরিবারের খাবার পানির উৎসে ক্ষতিকর মাত্রায় ই. কোলাই রয়েছে। প্রতি ১০০ মিলিলিটার পানিতে ১ কলোনি ফর্মিং ইউনিটের (সিএফইউ) বেশি ই. কোলাই থাকলে তা অনিরাপদ পানি হিসেবে বিবেচিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অণুজীব ও রোগ প্রতিরোধ বিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন মিয়া বলেন, ‘অনেকগুলো ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে ই. কোলাই একটি। পানিতে শুধু এর উপস্থিতিই যে ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগ সৃষ্টি করে তা বলা যায় না। তবে ১ সিএফইউয়ের চেয়ে বেশি পরিমাণ ই. কোলাই সংক্রমিত পানি নিঃসন্দেহে পেটের পীড়ার জন্য দায়ী।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গৃহস্থালিতে ব্যবহারের পানিতে ই. কোলাইয়ের সংক্রমণের হার ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ উৎসের চেয়ে ব্যবহারকালে পানিতে আরও ই. কোলাই সংক্রমিত হয়। সরবরাহ লাইনের ত্রুটি এবং পরিচ্ছন্নতার অভাবই এর মূল কারণ বলে মনে করেন অধ্যাপক রুহুল আমিন মিয়া।
আর্সেনিক সংক্রমণের হার গ্রামে বেশি হলেও গ্রামের চেয়ে শহরের পানি বেশি মাত্রায় ই. কোলাই সংক্রমিত। শহরাঞ্চলে ৫৫ শতাংশ পানির উৎস এবং গ্রামাঞ্চলে ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ পানির উৎস ই. কোলাই সংক্রমিত। বিভাগের হিসাবে সিলেটে সর্বোচ্চ ৬১ দশমিক ৯ শতাংশ পানি ই. কোলাই সংক্রমিত। সিলেটের ২১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং এরপরেই ঢাকা বিভাগের ২০ দশমিক ৭ শতাংশ খাওয়ার পানিতে অতি উচ্চমাত্রায় ই. কোলাই সংক্রমিত আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা মহানগরে ওয়াসার পানি সরবরাহব্যবস্থার ত্রুটির কারণে এ অঞ্চলে ই. কোলাই সংক্রমণের হার বেশি। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) এক গবেষণায় ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা ৬৩ শতাংশ পানিতেই ই. কোলাই জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া যায়।
সরকারের দাবি, ২০১৫ সালের মধ্যে ৮৫ শতাংশ মানুষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জিত হয়েছে। এমডিজিতে পানি সরবরাহের ক্ষেত্রটিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। উৎসে কোনো ধরনের সংক্রমণের দিকটি এখানে স্থান পায়নি। তবে গত ৩০ জুন প্রকাশিত ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ‘স্যানিটেশন ও সুপেয় পানি খাতে অগ্রগতি: এমডিজি মূল্যায়ন ২০১৫’ শীর্ষক চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ১৩ শতাংশ মানুষ এখনো অনিরাপদ উৎসের পানি ব্যবহার করে। আর্সেনিক সংক্রমিত পানিকেই এখানে অনিরাপদ পানি বলে ধরা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটার এইডের বাংলাদেশীয় প্রধান খায়রুল ইসলাম মনে করেন, বাংলাদেশে স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানি খাতে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। তবে অর্জনের সংজ্ঞায় যেসব ফাঁকফোকর আছে, তাকে পুঁজি করে অর্জনের পরিসংখ্যান কৃত্রিমভাবে দেখানো হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার খায়রুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিসংখ্যানগত সততার বিষয়ে আমাদের আন্তরিক হওয়া উচিত। ঊর্ধ্বতন মহলের যা শুনলে ভালো লাগে, সে রকম তথ্য সাজিয়ে দেওয়া মিত্রের কাজ নয়। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে দেশের অধিকাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পায় না। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যকর কর্মসূচি নেওয়া দরকার।’
তবে পানি ও স্যানিটেশন খাতে পরিসংখ্যান বাড়িয়ে বলে কৃতিত্ব নেওয়ার কোনো অভিপ্রায় নেই, এমন মন্তব্য করে স্থানীয় সরকারসচিব আব্দুল মালেক বলেন, ‘যাঁরা সরকারের বাইরে আছেন, তাঁরা অনেক কিছুই বলতে পারেন। বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন।’
বেসরকারি সংগঠন এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথের নির্বাহী পরিচালক এস এম এ রশিদ বলেন, নিরাপদ পানির ক্ষেত্রে সরকারকে এখন তার দাবি থেকে সরে আসতে হবে। কারণ ৯৭ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পায় আর ৬৫ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পায় না—দুটিই এখন সরকারি তথ্য। তাই এখন সরকারকে এ বিষয়ে বাস্তবানুগ পদক্ষেপ নিতে হবে।
No comments