বছরে ক্ষতি ৫৫ হাজার কোটি টাকা by মানসুরা হোসাইন
এবারেও ঈদবাজারের একটি আলোচিত বিষয় যানজট। একাধিক বিপণিবিতানের বিক্রয়কর্মীরা বলেছেন, যানজটের যন্ত্রণায় মার্কেটে ক্রেতা কম। এর মাশুল দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়ররাও তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘যানজট’ নিরসনকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। কারণ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) গবেষণা অনুযায়ী, শুধু যানজটের কারণে পাঁচ বছর আগে নগরবাসীর প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হতো। এখন এর পরিমাণ আরও অনেক বেড়েছে। এক হিসাবে দেখা যায়, টাকার অঙ্কে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
এখন থেকে পাঁচ বছর আগে এমসিসিআই ও দ্য চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব লজিস্টিকস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট যৌথভাবে রাজধানীর যানজট নিয়ে এক গবেষণা করেছিল। গবেষণায় বেরিয়ে আসে, রাজধানীতে যানজটের কারণে বছরে বাণিজ্যিক ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি, প্রতিদিন ৮৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া আরও নানা ধরনের ক্ষতির কথা তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে। ফলে তখন সব মিলিয়ে যানজটের কারণে দিনে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
এ গবেষণাটির দলনেতা ছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন। বর্তমানে তিনি সড়ক ও জনপথ বিভাগ রংপুরের বিভাগীয় প্রকৌশলী। গতকাল তিনি টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ বছর আগে যে গবেষণা হয়েছে, সেটার তুলনায় বর্তমানে রাজধানীতে গাড়ির সংখ্যা অনেকে বেড়েছে। সে অনুপাতে রাস্তা বাড়েনি। তাই যানজটের পরিমাণও বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে আর্থিক ক্ষতিও। তিনি মনে করেন, ক্ষতির পরিমাণ আগের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এই হিসাবে বলা যায়, প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় দেড় শ কোটি টাকা অর্থাৎ বছরে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
২০১০ সালে এমসিসিআইয়ের সভাপতি ছিলেন এসিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ-দৌলা। গত বুধবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গবেষণা না হলেও বলা যায়, তখনকার তুলনায় এখন যানজটের কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১০ গুণ বেড়েছে। ব্যবসার মূল কথা হলো টাইম ইজ মানি। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এসে প্রথমেই যানজটের প্রতিবন্ধকতার কথা বলে। আমাদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতেই সময় চলে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কাজের সুযোগের ওপর দেশের উন্নতি নির্ভর করে। শুধু যানজটের কারণে আমাদের চারটির জায়গায় একটি কাজ করতে হচ্ছে। মধ্যম আয়ের দেশ গড়তে আমরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছি।’
এ প্রসঙ্গে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার কারণে যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, তাতে উৎপাদন, বিনিয়োগ ও ভোগের প্রতিটি পর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই ক্ষতির কারণে আমাদের পণ্যের প্রকৃত উৎপাদন খরচ বাড়ে। প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয়।’
২০০৯ সালে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ বিভাগ ঢাকার যানজট-সংক্রান্ত এক গবেষণায় উল্লেখ করে যে ঢাকা শহরে সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় চলাচলকারী যানবাহন গড়ে ৭ দশমিক ৫ ঘণ্টা থেমে থাকে।
যানজটের আর্থিক ক্ষতি ও অন্যান্য বিষয়ে তেমন একটা গবেষণা না থাকা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ শামসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের গবেষণা করতে হলে সমন্বিত তথ্য প্রয়োজন। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনের দায়িত্ব বছরভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করা। তবে তা তারা করছে না।’
শামসুল হক বলেন, সব মানুষের কর্মঘণ্টার ক্ষতি এক রকম হবে না। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী আর একজন ছাত্রের কর্মঘণ্টার মধ্যে তফাত হবে। ধরা যাক, সিগন্যালে যানজটের কারণে একটি বাস আটকে আছে। তখন দেখতে হবে, বাসে কত যাত্রী আছে। অথবা রাস্তায় ট্রাক চলছে। প্রতিটি ট্রাকের ক্ষতি আলাদাভাবে বের করতে হবে। দুর্ঘটনায় পথচারীর মৃত্যু বা আহত হলে তারও ক্ষতির হিসাব এক হবে না। প্রতিটি জংশনে কতক্ষণ অপেক্ষা বা দেরি হচ্ছে, সে হিসাবসহ নানান তথ্য জোগাড় করতে করতে গবেষণার সময়ই শেষ হয়ে যায়।
গবেষণার তথ্য হাতে না থাকলে রাজধানীবাসী যানজটের যন্ত্রণা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন যানজটের যন্ত্রণায় ভুগতে ভুগতে মানুষের বিরক্তি চরম সীমায় পৌঁছাচ্ছে। উদ্বেগ, উত্কণ্ঠাজনিত রোগ বাড়ছে, সহনশীলতা কমছে, যা তার আচরণে প্রভাব ফেলে। এর ফলে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বিভিন্ন বিষয়ের আর্থিক ক্ষতি নিয়ে গবেষণা বা মূল্যায়ন হলেও মানসিক ক্ষতি নিয়ে সেভাবে কোনো গবেষণা করা হয় না। যেমন যানজটের কারণে আর্থিক ক্ষতি নিয়ে কিছু গবেষণা থাকলেও মানসিক ক্ষতি নিয়ে জাতীয় বা বেসরকারি পর্যায় গবেষণা হয়নি। আমরা যানজটে প্রতিনিয়ত ত্যক্তবিরক্ত হচ্ছি। কিন্তু বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি না।’
ট্রাফিক বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের সময় ১৭ জন ট্রাফিক মারা গেছেন। ২০১০ সাল থেকে গত মে মাস পর্যন্ত ২ হাজার ৭৫টি দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৫২ জন পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। তবে এসব মৃত্যুর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কত, তা জানার কোনো উপায় নেই।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়ররাও তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘যানজট’ নিরসনকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। কারণ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) গবেষণা অনুযায়ী, শুধু যানজটের কারণে পাঁচ বছর আগে নগরবাসীর প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হতো। এখন এর পরিমাণ আরও অনেক বেড়েছে। এক হিসাবে দেখা যায়, টাকার অঙ্কে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
এখন থেকে পাঁচ বছর আগে এমসিসিআই ও দ্য চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব লজিস্টিকস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট যৌথভাবে রাজধানীর যানজট নিয়ে এক গবেষণা করেছিল। গবেষণায় বেরিয়ে আসে, রাজধানীতে যানজটের কারণে বছরে বাণিজ্যিক ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি, প্রতিদিন ৮৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া আরও নানা ধরনের ক্ষতির কথা তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে। ফলে তখন সব মিলিয়ে যানজটের কারণে দিনে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
এ গবেষণাটির দলনেতা ছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন। বর্তমানে তিনি সড়ক ও জনপথ বিভাগ রংপুরের বিভাগীয় প্রকৌশলী। গতকাল তিনি টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ বছর আগে যে গবেষণা হয়েছে, সেটার তুলনায় বর্তমানে রাজধানীতে গাড়ির সংখ্যা অনেকে বেড়েছে। সে অনুপাতে রাস্তা বাড়েনি। তাই যানজটের পরিমাণও বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে আর্থিক ক্ষতিও। তিনি মনে করেন, ক্ষতির পরিমাণ আগের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এই হিসাবে বলা যায়, প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় দেড় শ কোটি টাকা অর্থাৎ বছরে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
২০১০ সালে এমসিসিআইয়ের সভাপতি ছিলেন এসিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ-দৌলা। গত বুধবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গবেষণা না হলেও বলা যায়, তখনকার তুলনায় এখন যানজটের কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১০ গুণ বেড়েছে। ব্যবসার মূল কথা হলো টাইম ইজ মানি। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এসে প্রথমেই যানজটের প্রতিবন্ধকতার কথা বলে। আমাদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতেই সময় চলে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কাজের সুযোগের ওপর দেশের উন্নতি নির্ভর করে। শুধু যানজটের কারণে আমাদের চারটির জায়গায় একটি কাজ করতে হচ্ছে। মধ্যম আয়ের দেশ গড়তে আমরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছি।’
এ প্রসঙ্গে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার কারণে যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, তাতে উৎপাদন, বিনিয়োগ ও ভোগের প্রতিটি পর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই ক্ষতির কারণে আমাদের পণ্যের প্রকৃত উৎপাদন খরচ বাড়ে। প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয়।’
২০০৯ সালে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ বিভাগ ঢাকার যানজট-সংক্রান্ত এক গবেষণায় উল্লেখ করে যে ঢাকা শহরে সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় চলাচলকারী যানবাহন গড়ে ৭ দশমিক ৫ ঘণ্টা থেমে থাকে।
যানজটের আর্থিক ক্ষতি ও অন্যান্য বিষয়ে তেমন একটা গবেষণা না থাকা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ শামসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের গবেষণা করতে হলে সমন্বিত তথ্য প্রয়োজন। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনের দায়িত্ব বছরভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করা। তবে তা তারা করছে না।’
শামসুল হক বলেন, সব মানুষের কর্মঘণ্টার ক্ষতি এক রকম হবে না। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী আর একজন ছাত্রের কর্মঘণ্টার মধ্যে তফাত হবে। ধরা যাক, সিগন্যালে যানজটের কারণে একটি বাস আটকে আছে। তখন দেখতে হবে, বাসে কত যাত্রী আছে। অথবা রাস্তায় ট্রাক চলছে। প্রতিটি ট্রাকের ক্ষতি আলাদাভাবে বের করতে হবে। দুর্ঘটনায় পথচারীর মৃত্যু বা আহত হলে তারও ক্ষতির হিসাব এক হবে না। প্রতিটি জংশনে কতক্ষণ অপেক্ষা বা দেরি হচ্ছে, সে হিসাবসহ নানান তথ্য জোগাড় করতে করতে গবেষণার সময়ই শেষ হয়ে যায়।
গবেষণার তথ্য হাতে না থাকলে রাজধানীবাসী যানজটের যন্ত্রণা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন যানজটের যন্ত্রণায় ভুগতে ভুগতে মানুষের বিরক্তি চরম সীমায় পৌঁছাচ্ছে। উদ্বেগ, উত্কণ্ঠাজনিত রোগ বাড়ছে, সহনশীলতা কমছে, যা তার আচরণে প্রভাব ফেলে। এর ফলে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বিভিন্ন বিষয়ের আর্থিক ক্ষতি নিয়ে গবেষণা বা মূল্যায়ন হলেও মানসিক ক্ষতি নিয়ে সেভাবে কোনো গবেষণা করা হয় না। যেমন যানজটের কারণে আর্থিক ক্ষতি নিয়ে কিছু গবেষণা থাকলেও মানসিক ক্ষতি নিয়ে জাতীয় বা বেসরকারি পর্যায় গবেষণা হয়নি। আমরা যানজটে প্রতিনিয়ত ত্যক্তবিরক্ত হচ্ছি। কিন্তু বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি না।’
ট্রাফিক বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের সময় ১৭ জন ট্রাফিক মারা গেছেন। ২০১০ সাল থেকে গত মে মাস পর্যন্ত ২ হাজার ৭৫টি দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৫২ জন পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। তবে এসব মৃত্যুর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কত, তা জানার কোনো উপায় নেই।
No comments