শিক্ষা খাতে ৪৮২ কোটি টাকার অনিয়ম by শামীমুল হক
শিক্ষা
খাতের ৪৮২ কোটি টাকা গিলে খেয়েছে কিছু শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষা
মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর তদন্ত করে এ অনিয়ম উদঘাটন
করেছে। একই সঙ্গে তারা এ অনিয়মে কারা জড়িত তাদেরও চিহ্নিত করেছে। এ টাকার
পুরোটাই খেয়েছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকরা। পাশাপাশি ওইসব
শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায়
তোলপাড় চলছে মন্ত্রণালয় ও ডিজি অফিসজুড়ে। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের
পরিচালক প্রফেসর মো. মফিজ উদ্দিন আহমদ ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত তদন্ত প্রতিবেদনে
দেখা যায়- শুধু চলতি বছর মে মাসেই শিক্ষকরা গিলে খেয়েছে ২ কোটি ৫৩ হাজার
৫২৬ টাকা। এপ্রিলে এর পরিমাণ ছিল ৮২ লাখ ৯৯ হাজার ২৩৪ টাকা। মার্চে ৮৫ লাখ
৪২ হাজার ৪৩৬ টাকা। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছিল সবচেয়ে বেশি লুটপাটের
ঘটনা। এ মাসে শিক্ষকরা গিলে খায় ৫৭ কোটি ৩০ লাখ ৭৪ হাজার ১৮ টাকা। আর
জানুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৩৭ টাকা। তদন্ত
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক অবৈধ ও
বিধিবহির্ভূতভাবে সরকারি এ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ টাকা আদায় বা কর্তনের প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয় ও মাউশি অধিদপ্তরে সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন
অনুযায়ী এভাবে শিক্ষা খাত থেকে গিলে খাওয়ার পরিমাণ ৪৮২ কোটি ৭৮ লাখ ৫২
হাজার ৫৫৭ টাকা। এতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে দেখা গেছে ১ কোটি ৮৯ লাখ ৫০
হাজার ৪৪৬ টাকা, নভেম্বরে ২ কোটি ৯১ লাখ ১৭ হাজার ২০২ টাকা। একই বছরের
অক্টোবরে ২ কোটি ২১ লাখ ৮৭ হাজার ৫৫৫ টাকা, সেপ্টেম্বরে ৬৫ লাখ ৭৯ হাজার
৪৯০ টাকা, আগস্টে এর পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৬৪ লাখ ১৬ হাজার ৪৫ টাকা, জুলাইয়ে
এর পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৮৭ হাজার ২৮৮ টাকা। ১৯৮১ সালে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা
অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলতি বছর মে পর্যন্ত হিসাব তুলে ধরা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ খাত থেকে শিক্ষকরা লুটে
নিয়েছে ২১ কোটি ৫২ লাখ ৫৮ হাজার ৯৮৩ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৬২ লাখ
১ হাজার ৫৮৭ টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮৭ টাকা,
২০১০-১১ অর্থবছরে অনিয়ম হয়েছে ৭ কোটি ৬২ লাখ ৬১ হাজার ২০০ টাকা। এভাবে
২০০৯-১০ অর্থবছরে লুটে নেয়া হয়েছে ১৮ কোটি ৯ লাখ ৪৬ হাজার ২৬৩ টাকা।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৩৫ কোটি ৩১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৪৪ টাকার অনিয়ম হয়েছে। ২০০৭-০৮
অর্থবছরে শিক্ষকরা গিলে খেয়েছেন ৫৩ কোটি ৯১ লাখ ৯৯ হাজার ৯১৭ টাকা। আর
২০০৬-০৭ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৫৭ কোটি ১৩ লাখ ৪৭ হাজার ৮১৬ টাকা। ২০০৫-০৬
অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ২৫ কোটি ২৪ লাখ ২৯৩২ টাকা। ২০০৪-০৫ সালে ছিল ৩০
কোটি ২২ লাখ ৭৫ হাজার ৪৩০ টাকা। ২০০৩-০৪ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে অনিয়ম হয়েছে
৩১ কোটি ৪১ লাখ ৩৮৩২ টাকা। ২০০২-০৩ অর্থবছরে ১৬ কোটি ১৯ লাখ ৯৩ হাজার ৪৮১
টাকা। ২০০১-০২ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৫০৫ টাকা।
২০০০-০১ অর্থবছরে এ খাতে লুট হয়েছে ৪ কোটি ২০ লাখ ৪২১১ টাকা। ১৯৯৯-০০
অর্থবছরে ৫ কোটি ৪৮ লাখ ১৯ হাজার ২৪৭ টাকা গিলে খান শিক্ষকরা। ১৯৯৮-৯৯
অর্থবছরে ৪ কোটি ৪০ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪৭ টাকার অনিয়ম হয়। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে ১৭
কোটি ৭৭ লাখ ১৩ হাজার ৫৩৪ টাকা, ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৫৯ লাখ ১৮ হাজার
৯১৮ টাকা, ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে ১১ কোটি ৮২ লাখ ৫৩ হাজার ১৫৩ টাকা, ১৯৯৪-৯৫
অর্থবছরে শিক্ষকরা অনিয়মের মাধ্যমে গিলে খান ৬ কোটি ১৫ লাখ ৩২ হাজার ৩৫৫
টাকা। ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে ১ কোটি ৮১ লাখ ১৪ হাজার ৭৭৯ টাকা, ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে
৮৬ লাখ ২৯ হাজার ৬৪০ টাকা, ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫১ হাজার ৬০১
টাকা, ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে ৫৫ লাখ ৬৫ হাজার ৩৭০ টাকা, ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে এ খাতে
শিক্ষকরা গিলে খান ২৩ কোটি ৩১ লাখ ৮৯ হাজার ৩১২ টাকা। ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে ১৫
কোটি ৬২ লাখ ৭১ হাজার ৮৬৫ টাকা, ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে ৫ কোটি ৫৬ লাখ ৫৩৭০
টাকা, ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে ৫ কোটি ৮৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬১ টাকা, ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে
৫ কোটি ৯৬ লাখ ২১ হাজার ৮৬১ টাকা, ১৯৮৪-৮৫ অর্থবছরে ২ কোটি ২০ লাখ ৫৫
হাজার ৫৯১ টাকা, ১৯৮৩-৮৪ অর্থ বছরে ২ কোটি ১০ লাখ ৩ হাজার ৩০০ টাকা,
১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে ১ কোটি ৩৪ লাখ ২৮ হাজার ৮৫ টাকা এবং ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে ১০
লাখ ৮৮ হাজর ৫৩ টাকার অনিয়ম হয়েছে। সূত্র জানায়, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা
অধিদপ্তর এসব অনিয়ম উদঘাটন করে মন্ত্রণালয় ও মাউশিতে প্রতিবেদন জমা দিলেও
যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের কিছুই হচ্ছে না। তারা নির্বিঘ্নে তাদের কাজ
চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে দু-একজন কিছু টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে পার
পেয়ে যাচ্ছে।
No comments