মহিমান্বিত রজনী শবে কদর by মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
গুটিয়া মসজিদ, বরিশাল |
পবিত্র
রমজানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো শবে কদর। মহানবী (সা.) বলেন: যে
ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদত করবে; তার অতীতের সকল
গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি: ৩৪)। রমজানুল মোবারকের রাতসমূহের মধ্যে
একটি রাতকে শবে কদর বলা হয়, যা খুবই বরকত ও মঙ্গলের রাত। কোরআন পাকে একে
হাজার মাস হতে উত্তম বলা হয়েছে। হাজার মাসে ৮৩ বছর ৪ মাস হয়। ভাগ্যবান ওই
ব্যক্তি, যার এই রাতের ইবাদত নছিব হয়।
বছরে একটি রাত শবে কদর; রমজান মাস সেরা মাস, তাই শবে কদর রমজান মাসে হবে এটাই স্বাভাবিক; শেষ দশকে থাকার সম্ভাবনা প্রবল; বিজোড় রাতগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ। শবে কদর পাওয়ার জন্য প্রিয় নবী (সা.) ইতিকাফ করতেন এবং করতে বলেছেন। প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেন: যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে ইবাদত করবে; তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি: ৩৬)।
কোরআনুল কারিমে আরও এসেছে: শপথ সুস্পস্ট কিতাবের। আমি তো নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; আমি তো সতর্ককারী। যাতে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয় আমিই রাসুল পাঠিয়ে থাকি। এ হলো আপনার প্রভুর দয়া, নিশ্চয় তিনি সব শোনেন এবং সব জানেন। তিনি নভোমণ্ডল-ভূমণ্ডল এবং এ উভয়ের মাঝে যা আছে সেসবের রব। যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাস কর; তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি জীবন ও মৃত্যু দেন, তিনিই তোমাদের পরওয়ারদেগার আর তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও। তবু তারা সংশয়ে রঙ্গ করে। তবে অপেক্ষা করো সেই দিনের, যেদিন আকাশ সুস্পষ্টভাবে ধূম্রাচ্ছন্ন হবে। (সূরা দুখান, আয়াত: ২-১০)।
শবে কদর নামের তাত্পর্য:
আরবিতে লাইলাতুল কদরের অর্থ হলো মর্যাদাপূর্ণ রাত, ভাগ্য রজনী মহিমান্বিত রজনী। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানা ভাষাভাষী মানুষের কাছে এটি শবে কদর নামেই সমধিক পরিচিত।
এ রাতটি হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ রাত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সূরা কদর নামে স্বতন্ত্র একটি সূরাও আছে। সুরাটির সারসংক্ষেপ হলো: ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে। আর মহিমান্বিত রজনী সম্বন্ধে তুমি কি জানো? মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সেই রজনী ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।’ হজরত আনাছ (রা.) হতে বর্ণিত হুজুর (সা.) ইরশাদ করেন: শবে কদর একমাত্র আমার উম্মতকে দেওয়া হয়েছে, অন্য কোনো উম্মতকে নয়। (মুসলিম, দুররে মানছূরে)
যেভাবে এল শবে কদর:
পূর্ববর্তী উম্মতগণ দীর্ঘায়ু হওয়ার কারণে বেশি বেশি ইবাদত করতে পারতেন। আখেরি নবীর উম্মত স্বল্পায়ু হওয়ার কারণে বেশি ইবাদত হতে বঞ্চিত ছিল। তাই আল্লাহ পাক দয়া করে এই রাতটি উম্মাতে মুহাম্মদিকে উপহার দিলেন। অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, মহানবী (সা.) একদিন বনী ইসরাইলের এক ব্যক্তির হাজার মাস জিহাদে কাটানোর কথা সাহাবাদের নিকট উল্লেখ করেন, এতে সাহাবায়ে কেরামের ঈর্ষা হয়। তখন আল্লাহ রব্বুল আলামিন সূরা কদর নাজিলের মাধ্যমে শবে কদর দান করে তাঁদের সান্ত্বনা দেন। সূরা কদরের ৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: শবে কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যার অর্থ হলো, এ রাতের ইবাদত ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদতের সমতুল্য। রাসুল (সা.) বলেন: তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বিজোড় তারিখে শবে কদর খোঁজ করো। (বুখারি)।
যদি কোনো ভাগ্যবানের একটি রাতও নছিব হয়ে যায়, আর এ রাতটি ইবাদতে কাটায়, তবে যেন ৮৩ বছর ৪ মাসের অধিক কাল ইবাদতের ছওয়াব পাবে।
হুজুর পাক (সা.) বনী ইসরাঈলের চার নবী আইয়ূব (আ.), যাকারিয়া (আ.), হিযকিল (আ.), ইউশা (আ.)-এর আলোচনা করলেন। তাঁরা একেকজন ৮০ বছর পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতেন এবং এক পলকের জন্যও আল্লাহর নাফরমানি করেননি। সাহাবাগণ আশ্চর্য হলে তখন হজরত জিবরাইল (আ.) উপস্থিত হন এবং সূরা কদর শোনান। উম্মাতে মুহাম্মদির জন্য এটি আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিয়ামত। এ রাত আল্লাহরই দান, আর এতে আমল করাও তাঁরই তাওফিকে লাভ হয়ে থাকে।
শবে কদরের তারিখ নির্ধারণ:
এই রাত নির্ধারণের ব্যাপারে হাদিস শরিফে এসেছে: একদা নবী করিম (সা.) ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদের দিকে আসছিলেন, পথে দেখলেন দুজন লোক ঝগড়া করছে; তিনি বিমর্ষ হলেন। মসজিদে এসে সাহাবিদের বললেন, আমাকে শবে কদরের তারিখ জানানো হয়েছিল। আমি আসছিলাম তোমাদের তা জানাতে; কিন্তু দুই ব্যক্তির ঝগড়ার কারণে আমি তা ভুলে গেছি। তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোয়, অর্থাত্ বিশ তারিখ দিবাগত (একুশ তারিখের রাত), বাইশ তারিখ দিবাগত (তেইশ তারিখের রাত), চব্বিশ তারিখ দিবাগত (পঁচিশ তারিখের রাত), ছাব্বিশ তারিখ দিবাগত (সাতাশ তারিখের রাত), আটাশ তারিখ দিবাগত (উনত্রিশ তারিখের রাত) শবে কদর সন্ধান করো। (মুসলিম)। বুজুর্গানদের অনেকেই ছাব্বিশ তারিখ দিবাগত (সাতাশ তারিখের) রাতকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে শবে কদর প্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ার জন্য নিরাপদ পন্থা হলো ইতিকাফ করা।
শবে কদরে করণীয় আমলসমূহ:
এ রাতে ইবাদত করলে আল্লাহ পাক বান্দার ইবাদতে বরকত দান করেন, রহমত ও বরকত নাজিল করেন এবং বান্দাকে তিনি ক্ষমা করে দেন। এ রাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহ রব্বুল আলামিন প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বান্দাদের উদ্দেশে বলেন, আছে কি কোনো ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। আছে কি কোনো রিজিক অন্বেষণকারী? আমি তাকে রিজিক দান করব। আছে কি কেউ বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দেব। আছে কি কেউ রোগাক্রান্ত? আমি তাকে সুস্থ করে দেব। কার কী অভাব? আমি দূর করে দেব; কার কী প্রয়োজন? আমি তা পূর্ণ করে দেব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত ডাকতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ: খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা: ৩৭৮)।
বরকতপূর্ণ এই রজনীতে অধিক পরিমাণে তওবা-ইস্তিগফার, দোয়া ও জিকির-আসকার করা, নফল নামাজ ও তাসবিহ-তাহলিল পড়া দরকার। আল্লাহর কাছে পার্থিব ও পরকালীন সুখ-শান্তি চাওয়া এবং সার্বিক সফলতার জন্য কান্নাকাটির মাধ্যমে রাত কাটানো শ্রেয়। এ ছাড়া আছে নফল নামাজ (আউওয়াবিন, তাহাজ্জুদ, ছলাতুত তাছবিহ, তওবার নামাজ ও অন্যান্য নফল নামাজ) পড়া; কিরাআত ও রুকু-সিজদা দীর্ঘ করা; কোরআন শরিফ (সূরা কদর, সূরা দুখান ও অন্যান্য ফজিলতের সূরাসমূহ) তিলাওয়াত করা; দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া; তওবা-ইস্তিগফার বেশি করা; দোয়া-কালাম, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আসকার ইত্যাদি করা; কবর জিয়ারত করা; নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মুমিন-মুসলমানের জন্য দোয়া করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করা।
নবী করিম (সা.) বলেন: আল্লাহ তাআলা এ রাতে মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস-৫৬৬৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস-১৩৯০)। আল্লাহ তাআলা এ রাতে বিদ্বেষ পোষণকারী ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যাকারী ছাড়া বাকি সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। (মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৭৬)। আল্লাহ তাআলা মুশরিক ও ব্যভিচারিণী ছাড়া সবার চাওয়া পূরণ করে থাকেন। (শুআবুল ইমান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৮৩)। যখন এ রাত আসে, তখন আল্লাহ তাআলা মাখলুকাতের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান; মুমিনদের ক্ষমা করে দেন, কাফিরদের ফিরে আসার সুযোগ দেন এবং হিংসুকদের হিংসা পরিত্যাগ ছাড়া ক্ষমা করেন না। (কিতাবুস সন্নাহ, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৮২)। তওবার মাধ্যমে সব পাপ মাফ পাওয়া যায়।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি।
বছরে একটি রাত শবে কদর; রমজান মাস সেরা মাস, তাই শবে কদর রমজান মাসে হবে এটাই স্বাভাবিক; শেষ দশকে থাকার সম্ভাবনা প্রবল; বিজোড় রাতগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ। শবে কদর পাওয়ার জন্য প্রিয় নবী (সা.) ইতিকাফ করতেন এবং করতে বলেছেন। প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেন: যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে ইবাদত করবে; তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি: ৩৬)।
কোরআনুল কারিমে আরও এসেছে: শপথ সুস্পস্ট কিতাবের। আমি তো নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; আমি তো সতর্ককারী। যাতে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয় আমিই রাসুল পাঠিয়ে থাকি। এ হলো আপনার প্রভুর দয়া, নিশ্চয় তিনি সব শোনেন এবং সব জানেন। তিনি নভোমণ্ডল-ভূমণ্ডল এবং এ উভয়ের মাঝে যা আছে সেসবের রব। যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাস কর; তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি জীবন ও মৃত্যু দেন, তিনিই তোমাদের পরওয়ারদেগার আর তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও। তবু তারা সংশয়ে রঙ্গ করে। তবে অপেক্ষা করো সেই দিনের, যেদিন আকাশ সুস্পষ্টভাবে ধূম্রাচ্ছন্ন হবে। (সূরা দুখান, আয়াত: ২-১০)।
শবে কদর নামের তাত্পর্য:
আরবিতে লাইলাতুল কদরের অর্থ হলো মর্যাদাপূর্ণ রাত, ভাগ্য রজনী মহিমান্বিত রজনী। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানা ভাষাভাষী মানুষের কাছে এটি শবে কদর নামেই সমধিক পরিচিত।
এ রাতটি হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ রাত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সূরা কদর নামে স্বতন্ত্র একটি সূরাও আছে। সুরাটির সারসংক্ষেপ হলো: ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে। আর মহিমান্বিত রজনী সম্বন্ধে তুমি কি জানো? মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সেই রজনী ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।’ হজরত আনাছ (রা.) হতে বর্ণিত হুজুর (সা.) ইরশাদ করেন: শবে কদর একমাত্র আমার উম্মতকে দেওয়া হয়েছে, অন্য কোনো উম্মতকে নয়। (মুসলিম, দুররে মানছূরে)
যেভাবে এল শবে কদর:
পূর্ববর্তী উম্মতগণ দীর্ঘায়ু হওয়ার কারণে বেশি বেশি ইবাদত করতে পারতেন। আখেরি নবীর উম্মত স্বল্পায়ু হওয়ার কারণে বেশি ইবাদত হতে বঞ্চিত ছিল। তাই আল্লাহ পাক দয়া করে এই রাতটি উম্মাতে মুহাম্মদিকে উপহার দিলেন। অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, মহানবী (সা.) একদিন বনী ইসরাইলের এক ব্যক্তির হাজার মাস জিহাদে কাটানোর কথা সাহাবাদের নিকট উল্লেখ করেন, এতে সাহাবায়ে কেরামের ঈর্ষা হয়। তখন আল্লাহ রব্বুল আলামিন সূরা কদর নাজিলের মাধ্যমে শবে কদর দান করে তাঁদের সান্ত্বনা দেন। সূরা কদরের ৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: শবে কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যার অর্থ হলো, এ রাতের ইবাদত ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদতের সমতুল্য। রাসুল (সা.) বলেন: তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বিজোড় তারিখে শবে কদর খোঁজ করো। (বুখারি)।
যদি কোনো ভাগ্যবানের একটি রাতও নছিব হয়ে যায়, আর এ রাতটি ইবাদতে কাটায়, তবে যেন ৮৩ বছর ৪ মাসের অধিক কাল ইবাদতের ছওয়াব পাবে।
হুজুর পাক (সা.) বনী ইসরাঈলের চার নবী আইয়ূব (আ.), যাকারিয়া (আ.), হিযকিল (আ.), ইউশা (আ.)-এর আলোচনা করলেন। তাঁরা একেকজন ৮০ বছর পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতেন এবং এক পলকের জন্যও আল্লাহর নাফরমানি করেননি। সাহাবাগণ আশ্চর্য হলে তখন হজরত জিবরাইল (আ.) উপস্থিত হন এবং সূরা কদর শোনান। উম্মাতে মুহাম্মদির জন্য এটি আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিয়ামত। এ রাত আল্লাহরই দান, আর এতে আমল করাও তাঁরই তাওফিকে লাভ হয়ে থাকে।
শবে কদরের তারিখ নির্ধারণ:
এই রাত নির্ধারণের ব্যাপারে হাদিস শরিফে এসেছে: একদা নবী করিম (সা.) ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদের দিকে আসছিলেন, পথে দেখলেন দুজন লোক ঝগড়া করছে; তিনি বিমর্ষ হলেন। মসজিদে এসে সাহাবিদের বললেন, আমাকে শবে কদরের তারিখ জানানো হয়েছিল। আমি আসছিলাম তোমাদের তা জানাতে; কিন্তু দুই ব্যক্তির ঝগড়ার কারণে আমি তা ভুলে গেছি। তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোয়, অর্থাত্ বিশ তারিখ দিবাগত (একুশ তারিখের রাত), বাইশ তারিখ দিবাগত (তেইশ তারিখের রাত), চব্বিশ তারিখ দিবাগত (পঁচিশ তারিখের রাত), ছাব্বিশ তারিখ দিবাগত (সাতাশ তারিখের রাত), আটাশ তারিখ দিবাগত (উনত্রিশ তারিখের রাত) শবে কদর সন্ধান করো। (মুসলিম)। বুজুর্গানদের অনেকেই ছাব্বিশ তারিখ দিবাগত (সাতাশ তারিখের) রাতকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে শবে কদর প্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ার জন্য নিরাপদ পন্থা হলো ইতিকাফ করা।
শবে কদরে করণীয় আমলসমূহ:
এ রাতে ইবাদত করলে আল্লাহ পাক বান্দার ইবাদতে বরকত দান করেন, রহমত ও বরকত নাজিল করেন এবং বান্দাকে তিনি ক্ষমা করে দেন। এ রাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহ রব্বুল আলামিন প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বান্দাদের উদ্দেশে বলেন, আছে কি কোনো ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। আছে কি কোনো রিজিক অন্বেষণকারী? আমি তাকে রিজিক দান করব। আছে কি কেউ বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দেব। আছে কি কেউ রোগাক্রান্ত? আমি তাকে সুস্থ করে দেব। কার কী অভাব? আমি দূর করে দেব; কার কী প্রয়োজন? আমি তা পূর্ণ করে দেব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত ডাকতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ: খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা: ৩৭৮)।
বরকতপূর্ণ এই রজনীতে অধিক পরিমাণে তওবা-ইস্তিগফার, দোয়া ও জিকির-আসকার করা, নফল নামাজ ও তাসবিহ-তাহলিল পড়া দরকার। আল্লাহর কাছে পার্থিব ও পরকালীন সুখ-শান্তি চাওয়া এবং সার্বিক সফলতার জন্য কান্নাকাটির মাধ্যমে রাত কাটানো শ্রেয়। এ ছাড়া আছে নফল নামাজ (আউওয়াবিন, তাহাজ্জুদ, ছলাতুত তাছবিহ, তওবার নামাজ ও অন্যান্য নফল নামাজ) পড়া; কিরাআত ও রুকু-সিজদা দীর্ঘ করা; কোরআন শরিফ (সূরা কদর, সূরা দুখান ও অন্যান্য ফজিলতের সূরাসমূহ) তিলাওয়াত করা; দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া; তওবা-ইস্তিগফার বেশি করা; দোয়া-কালাম, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আসকার ইত্যাদি করা; কবর জিয়ারত করা; নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মুমিন-মুসলমানের জন্য দোয়া করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করা।
নবী করিম (সা.) বলেন: আল্লাহ তাআলা এ রাতে মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস-৫৬৬৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস-১৩৯০)। আল্লাহ তাআলা এ রাতে বিদ্বেষ পোষণকারী ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যাকারী ছাড়া বাকি সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। (মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৭৬)। আল্লাহ তাআলা মুশরিক ও ব্যভিচারিণী ছাড়া সবার চাওয়া পূরণ করে থাকেন। (শুআবুল ইমান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৮৩)। যখন এ রাত আসে, তখন আল্লাহ তাআলা মাখলুকাতের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান; মুমিনদের ক্ষমা করে দেন, কাফিরদের ফিরে আসার সুযোগ দেন এবং হিংসুকদের হিংসা পরিত্যাগ ছাড়া ক্ষমা করেন না। (কিতাবুস সন্নাহ, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৮২)। তওবার মাধ্যমে সব পাপ মাফ পাওয়া যায়।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি।
No comments