সিএনএনের চোখে ঢাকার ইটভাটায় দুর্দশা
রাফায়েলে
পেত্রালা রোমভিত্তিক একজন ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফার। সমপ্রতি তিনি ঢাকার
বিভিন্ন ইটখোলা ঘুরে দেখেন। ক্যামেরার ফ্রেমে ধারণ করেন সেখানকার
পরিবেশহানি ও শ্রমিকদের শোষণের চিত্র। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত
হয়েছে সিএনএন-এ। ঢাকার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইটখোলা নিয়ে একটি
ডকুমেন্টারি বানাতেই বাংলাদেশে এসেছিলেন পেত্রালা। ২০১৪ সালের এক বসন্তে
তিনি প্রথম যে ছবিটি তুলেছিলেন, সেখানে দেখা যাচ্ছে, সারি সারি দাঁড়িয়ে
থাকা বহু চুল্লি থেকে বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া। প্রায় ২ মাস থাকার কথা ছিল
তার। ইটখোলার কর্মীদের সঙ্গে থেকে তাদের কঠিন জীবনের একটি বাস্তব
প্রতিচ্ছবি তিনি পেতে চেয়েছিলেন। তার ভাষ্য, প্রতিটি ইটখোলার পাশে
শ্রমিকদের একটি গ্রাম থাকে। সে ঘরগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয়। উচ্চতায় মাত্র
দেড় মিটার, ফলে আপনি ভেতরে দাঁড়াতে পারবেন না। নেই কোন বিদ্যুৎ। মাথার উপরে
ব্যবহার করা হয় টিন। ফলে রোদের দিন ঘরের ভেতরটা থাকে খুবই গরম। এছাড়া,
পাশে ভূ-গর্ভস্থ নিচে ইটের চুলার গরম তো আছেই। ৩ বা ৪ বর্গমিটারের একটি ঘরে
প্রায় ১০ জন মানুষও থাকতে দেখেছি।
খুব শিগগিরই পেত্রালা আবিষ্কার করেন যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব শ্রমিক এসেছেন ইটখোলায় কাজ করতে। তাদের বেশির ভাগেরই ঘর-বাড়ি বড় শহর থেকে অনেক দূরে, কোন এক প্রত্যন্ত গ্রামে। তাদেরকে ভালো বসতি ও বেতনের লোভ দেখিয়ে আনা হয় এখানে। এরপর রাখা হয় মাসের পর মাস। ১৯ বছর বয়সী সাদ্দামের সঙ্গে সেখানে দেখা হয় পেত্রালার। পেত্রালা বলেন, সাদ্দাম আমাকে একদিন বলে যে, তার গ্রামে এক লোক বড় কার সহ আসে। পোশাক দেখে মনে হয় অনেক ধনী কোন ব্যক্তি। সে ব্যক্তি তাকে ও তার পরিবারের সকলকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেয়, যদি তারা ঢাকায় যায়। তার আশ্বাসের পর সাদ্দামের পরিবার ঢাকায় পাড়ি জমায়। কয়েকদিন পর বেশ কয়েকটি ট্রাকে করে বহু মানুষ পাড়ি জমায় ইটখোলায় কাজ করতে। পেত্রালা বলেন, এসব শ্রমিক প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল যে, তাদের একটি ভালো চাকরি দেয়া হবে, থাকার ঘর দেয়া হবে। এক বছর কাজ শেষে তারা চলেও যেতে পারবে। কিন্তু মওসুম শেষে তাদের কাছে বাড়ি ফিরে যাবার টাকাও থাকে না। এমন বহু গ্রামের গল্প শুনেছেন পেত্রালা, সবারই একই দশা। শুধুমাত্র বয়স্করাই যে যাঁতাকলে পিষ্ট হয়, তা নয়। যেহেতু বেতন খুবই অল্প। তাই একটি পরিবারের সব সদস্যকেই কাজ করতে হয়। ফলে পরিবারের ছয় বছর বয়সী শিশুও ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করে। বয়স্কদের মতো তাদেরও একই মজুরি। তবে তারা কাঠের বাক্সে কয়টি ইট তারা পরিবহন করছে, সেটার উপর নির্ভর করে তাদের বেতন। পেত্রালা ওই সব শিশুর ছবিও ধারণ করেছেন নিজের ক্যামেরায়। বেশিরভাগ ইটখোলাই অবৈধ। তাই ইটখোলার মালিকরা অপরিচিত কাউকে বাঁকা চোখে দেখে। সাংবাদিক হলে তো কথাই নেই। তাই পেত্রালা ইটখোলার ছবি তোলার সময় একজন পর্যটক হিসেবেই যান। ভাব দেখান যে, তিনি ইট ও ধুলাবালির রং-এ মুগ্ধ!
ইটখোলার পরিচালক চলে যাবার পর, শ্রমিকদের সঙ্গে থাকতেন পেত্রালা। ক্যামেরায় ধারণ করতেন তাদের দৈনন্দিন দিনের ছবি। তিনি আরও জানান, এসব শ্রমিক প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল, কাজ করে তাদের জীবনই পরিবর্তিত হয়ে যাবে। পরিবর্তিত হবে আর্থিক অবস্থা। কিন্তু বাস্তবে, তাদের স্বাস্থ্যসেবা নেই। শুধু কোন মতে খেয়ে পরে দিন যায়। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু কাজ থামাতে পারে না। কারণ, কাজ ব্যতিত তাদের বেঁচে থাকার কোন পথ নেই। পেত্রালা জানালেন, আসলেই হয়তো বের হওয়ার কোন উপায় নেই। এদের বেশির ভাগই অশিক্ষিত। ফলে তারা আসলে জানেই না, এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে কিভাবে নিজেকে মুক্ত করতে হয়। সরকার এ সমস্যা মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এছাড়া, ইটখোলা থেকে উৎপন্ন দূষণ রোধের কথাও বলেছিল সরকার। কিন্তু কোন অগ্রগতি হয়নি। বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের ইটখোলা প্রতি বছর ৯৮ লাখ টন গ্রিন হাউস গ্যাস উদগীরণ করে। এ দূষণের ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়া ধোঁয়া থেকে চোখ, ফুসফুস ও গলায় সমস্যা দেখা দেয় শ্রমিকদের। এছাড়া, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক অগ্রগতিও ব্যাহত করে। পরিবেশগত ক্ষতি তো রয়েছেই। ইটখোলার জন্য প্রতিবছর পোড়ানো হয় প্রচুর পরিমাণ কাঠ। এটিও পরিবেশহানির অন্যতম কারণ। বাংলাদেশের শহর ও নগরায়নের ব্যাপক বিস্তৃতিতে অবদান রাখছে এসব শ্রমিক। কিন্তু পেত্রালার ভাষায়, শ্রমিকরা এসবের দাস ছাড়া কিছু নয়। তারা যা প্রবৃদ্ধি আনে, সেখানে তাদের কোন এখতিয়ার নেই। এটি পুরোপুরি অবিচার।
খুব শিগগিরই পেত্রালা আবিষ্কার করেন যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব শ্রমিক এসেছেন ইটখোলায় কাজ করতে। তাদের বেশির ভাগেরই ঘর-বাড়ি বড় শহর থেকে অনেক দূরে, কোন এক প্রত্যন্ত গ্রামে। তাদেরকে ভালো বসতি ও বেতনের লোভ দেখিয়ে আনা হয় এখানে। এরপর রাখা হয় মাসের পর মাস। ১৯ বছর বয়সী সাদ্দামের সঙ্গে সেখানে দেখা হয় পেত্রালার। পেত্রালা বলেন, সাদ্দাম আমাকে একদিন বলে যে, তার গ্রামে এক লোক বড় কার সহ আসে। পোশাক দেখে মনে হয় অনেক ধনী কোন ব্যক্তি। সে ব্যক্তি তাকে ও তার পরিবারের সকলকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেয়, যদি তারা ঢাকায় যায়। তার আশ্বাসের পর সাদ্দামের পরিবার ঢাকায় পাড়ি জমায়। কয়েকদিন পর বেশ কয়েকটি ট্রাকে করে বহু মানুষ পাড়ি জমায় ইটখোলায় কাজ করতে। পেত্রালা বলেন, এসব শ্রমিক প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল যে, তাদের একটি ভালো চাকরি দেয়া হবে, থাকার ঘর দেয়া হবে। এক বছর কাজ শেষে তারা চলেও যেতে পারবে। কিন্তু মওসুম শেষে তাদের কাছে বাড়ি ফিরে যাবার টাকাও থাকে না। এমন বহু গ্রামের গল্প শুনেছেন পেত্রালা, সবারই একই দশা। শুধুমাত্র বয়স্করাই যে যাঁতাকলে পিষ্ট হয়, তা নয়। যেহেতু বেতন খুবই অল্প। তাই একটি পরিবারের সব সদস্যকেই কাজ করতে হয়। ফলে পরিবারের ছয় বছর বয়সী শিশুও ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করে। বয়স্কদের মতো তাদেরও একই মজুরি। তবে তারা কাঠের বাক্সে কয়টি ইট তারা পরিবহন করছে, সেটার উপর নির্ভর করে তাদের বেতন। পেত্রালা ওই সব শিশুর ছবিও ধারণ করেছেন নিজের ক্যামেরায়। বেশিরভাগ ইটখোলাই অবৈধ। তাই ইটখোলার মালিকরা অপরিচিত কাউকে বাঁকা চোখে দেখে। সাংবাদিক হলে তো কথাই নেই। তাই পেত্রালা ইটখোলার ছবি তোলার সময় একজন পর্যটক হিসেবেই যান। ভাব দেখান যে, তিনি ইট ও ধুলাবালির রং-এ মুগ্ধ!
ইটখোলার পরিচালক চলে যাবার পর, শ্রমিকদের সঙ্গে থাকতেন পেত্রালা। ক্যামেরায় ধারণ করতেন তাদের দৈনন্দিন দিনের ছবি। তিনি আরও জানান, এসব শ্রমিক প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল, কাজ করে তাদের জীবনই পরিবর্তিত হয়ে যাবে। পরিবর্তিত হবে আর্থিক অবস্থা। কিন্তু বাস্তবে, তাদের স্বাস্থ্যসেবা নেই। শুধু কোন মতে খেয়ে পরে দিন যায়। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু কাজ থামাতে পারে না। কারণ, কাজ ব্যতিত তাদের বেঁচে থাকার কোন পথ নেই। পেত্রালা জানালেন, আসলেই হয়তো বের হওয়ার কোন উপায় নেই। এদের বেশির ভাগই অশিক্ষিত। ফলে তারা আসলে জানেই না, এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে কিভাবে নিজেকে মুক্ত করতে হয়। সরকার এ সমস্যা মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এছাড়া, ইটখোলা থেকে উৎপন্ন দূষণ রোধের কথাও বলেছিল সরকার। কিন্তু কোন অগ্রগতি হয়নি। বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের ইটখোলা প্রতি বছর ৯৮ লাখ টন গ্রিন হাউস গ্যাস উদগীরণ করে। এ দূষণের ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়া ধোঁয়া থেকে চোখ, ফুসফুস ও গলায় সমস্যা দেখা দেয় শ্রমিকদের। এছাড়া, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক অগ্রগতিও ব্যাহত করে। পরিবেশগত ক্ষতি তো রয়েছেই। ইটখোলার জন্য প্রতিবছর পোড়ানো হয় প্রচুর পরিমাণ কাঠ। এটিও পরিবেশহানির অন্যতম কারণ। বাংলাদেশের শহর ও নগরায়নের ব্যাপক বিস্তৃতিতে অবদান রাখছে এসব শ্রমিক। কিন্তু পেত্রালার ভাষায়, শ্রমিকরা এসবের দাস ছাড়া কিছু নয়। তারা যা প্রবৃদ্ধি আনে, সেখানে তাদের কোন এখতিয়ার নেই। এটি পুরোপুরি অবিচার।
No comments