অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ: ক্ষমতাসীন দলের লোকদের নিয়ন্ত্রণ করুন
গত
বুধবার নরসিংদী সদর উপজেলার সোনাতলা এলাকায় অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন
করার অভিযানকে কেন্দ্র করে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে এলাকাবাসীর যে সংঘর্ষ
হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে একটা গুরুতর সমস্যা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সমস্যাটা শুধু
অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নয়, ঝুঁকিপূর্ণ পন্থায় জ্বালানি গ্যাসের
সরবরাহ লাইন কেটে বাড়তি পাইপ জুড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষের বাসাবাড়িতে অবৈধ
সংযোগ দিয়ে যাঁরা টাকাপয়সা নিচ্ছেন, তাঁদের প্রতিহত করারও।
বলাবাহুল্য, গ্যাসের অবৈধ সংযোগ নেওয়া বন্ধ করা হলে আর তা বিচ্ছিন্ন করার প্রশ্ন আসত না। তাই প্রথমেই খতিয়ে দেখতে হয়, সোনাতলা এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা গ্যাস বিতরণের অবৈধ পাইপলাইন কারা কীভাবে স্থাপন করতে পারল। কীভাবে প্রায় দুই হাজার বাসাবাড়িতে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হলো। এই কাজটি রাতারাতি করা হয়নি, লোকচক্ষুর আড়ালেও তা ঘটেনি। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তখন কোথায় ছিল? তিতাসের বিতরণ লাইনে যারা পাইপ জোড়া দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনি পদক্ষেপ নেয়নি? বিতরণ লাইনের নিরাপত্তা সুরক্ষার দায়িত্বও তো তিতাসেরই। একই পন্থায় বিপুলসংখ্যক বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ নেওয়া হয়েছে শুধু নরসিংদীতেই নয়, সাভারসহ ঢাকার আশপাশের আরও অনেক এলাকায় তা করা হয়েছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, সোনাতলার ওই সব অবৈধ গ্যাস-সংযোগের ব্যবস্থা করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। প্রতিটি অবৈধ সংযোগের জন্য তাঁরা ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে তিতাস কর্তৃপক্ষ অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে। সরকারেরও দায়িত্ব তাঁদের দমন করা।
সোনাতলায় এর আগে দুই দফায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ গ্যাস-সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল, কিন্তু তাতে কোনো সুফল ফলেনি। অবৈধ সংযোগ তাঁরা আবার জুড়ে নিয়েছেন। বুধবারের অভিযানের পরিণতিও একই রকম হবে, যদি না অবৈধ সংযোগদাতাদের রাজনৈতিক খুঁটি উপড়ে ফেলা হয়। এ জন্য সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার।
বলাবাহুল্য, গ্যাসের অবৈধ সংযোগ নেওয়া বন্ধ করা হলে আর তা বিচ্ছিন্ন করার প্রশ্ন আসত না। তাই প্রথমেই খতিয়ে দেখতে হয়, সোনাতলা এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা গ্যাস বিতরণের অবৈধ পাইপলাইন কারা কীভাবে স্থাপন করতে পারল। কীভাবে প্রায় দুই হাজার বাসাবাড়িতে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হলো। এই কাজটি রাতারাতি করা হয়নি, লোকচক্ষুর আড়ালেও তা ঘটেনি। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তখন কোথায় ছিল? তিতাসের বিতরণ লাইনে যারা পাইপ জোড়া দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনি পদক্ষেপ নেয়নি? বিতরণ লাইনের নিরাপত্তা সুরক্ষার দায়িত্বও তো তিতাসেরই। একই পন্থায় বিপুলসংখ্যক বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ নেওয়া হয়েছে শুধু নরসিংদীতেই নয়, সাভারসহ ঢাকার আশপাশের আরও অনেক এলাকায় তা করা হয়েছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, সোনাতলার ওই সব অবৈধ গ্যাস-সংযোগের ব্যবস্থা করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। প্রতিটি অবৈধ সংযোগের জন্য তাঁরা ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে তিতাস কর্তৃপক্ষ অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে। সরকারেরও দায়িত্ব তাঁদের দমন করা।
সোনাতলায় এর আগে দুই দফায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ গ্যাস-সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল, কিন্তু তাতে কোনো সুফল ফলেনি। অবৈধ সংযোগ তাঁরা আবার জুড়ে নিয়েছেন। বুধবারের অভিযানের পরিণতিও একই রকম হবে, যদি না অবৈধ সংযোগদাতাদের রাজনৈতিক খুঁটি উপড়ে ফেলা হয়। এ জন্য সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার।
অবৈধ গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বাধা, সংঘর্ষ: নরসিংদীতে ৬ পুলিশ সদস্য আহত
আপডেট: জুলাই ০৯, ২০১৫
নরসিংদী সদর উপজেলার সোনাতলা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে স্থানীয় লোকজন তাঁদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। ছবি: প্রথম আলো |
ভ্রাম্যমাণ
আদালতের মাধ্যমে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে এলাকাবাসীর বাধার
মুখে পড়েছেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের
লোকজন। এ সময় সংঘর্ষে অন্তত ছয় পুলিশ সদস্য আহত হন। গতকাল বুধবার নরসিংদী
সদর উপজেলার সোনাতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ
পাওয়া গেছে, আওয়ামী লীগের লোকজন এই অবৈধ সংযোগ টানেন। এর আগে দুই দফা
সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও তাঁরা পুনরায় সংযোগ টেনেছেন। গতকাল তিতাস গ্যাস
ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড সেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে
গেলে এলাকাবাসীর সঙ্গে ওই সংঘর্ষ বাধে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন মাস আগে সদর উপজেলার চিনিশপুর
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাসেল ভূঁইয়া, ৭ নম্বর
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সোলেমান মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক
কাদের মিয়া ওরফে বুইট্টা কাদের, আলফাজ মিয়া, বুলবুল আহমেদ, শামসুল হক
গাজী, আলতাফ গাজী, বিল্লাল হোসেনসহ একটি চক্র দুই ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পাইপে
দুই কিলোমিটার বিতরণ লাইন টেনে প্রায় দুই হাজার বাসাবাড়িতে অবৈধ সংযোগ
দেন। তাঁরা সংযোগপ্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকা নেন। জানতে পেরে তিতাস গ্যাস
কর্তৃপক্ষ গত ৯ জুন সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করে ও অভিযান
চালিয়ে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কিন্তু ওই চক্রটি পুনরায় সংযোগ
লাগায়। তখন ১৬ জুন দ্বিতীয় মেয়াদে সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর ৫
জুলাই তৃতীয় দফায় আবার অবৈধ সংযোগ নেওয়া হয়।
অবৈধ সংযোগের পাইপ অপসারণ করা হয় l ছবি: প্রথম আলো |
গতকাল
দুপুর ১২টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শামসুল তাবরীজের নেতৃত্বে
ভ্রাম্যমাণ আদালত ও তিতাস গ্যাস কোম্পানির লোকজন কয়েকজন আনসার সদস্য নিয়ে
সোনাতলা এলাকায় অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে যান। সেখানে যাওয়ার পর
প্রায় দুই হাজার এলাকাবাসী তাঁদের বাধা দেন এবং তিতাসের একটি গাড়ি ভাঙচুর
করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে এলাকাবাসী তাদের লক্ষ্য করে ঢিল
ছুড়তে থাকেন। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রায় ৬০টি ফাঁকা গুলি
ছোড়ে। তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের পর বেলা তিনটার দিকে পরিস্থিতি পুলিশের
নিয়ন্ত্রণে আসে। সংঘর্ষে আহত পুলিশ সদস্যদের নরসিংদী জেলা হাসপাতালে
পাঠানো হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শামছুল তাবরীজ জানান, এলাকাবাসীর বাধার মুখে প্রথমে অভিযান শুরু করা না গেলেও বেলা তিনটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষকালে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন আওয়ামী লীগ নেতা রাসেল ভূঁইয়া। তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, অবৈধ গ্যাস-সংযোগের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ ঘটনায় অভিযুক্ত কাদের মিয়ার মুঠোফোনে কল করে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আবুল কাসেম জানান, এ ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
আগে দুটি ঘটনায় অবৈধ গ্যাস-সংযোগ দানকারীদের বিরুদ্ধে দুটি আলাদা মামলা হয়েছে বলে জানান তিতাসের নরসিংদী কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. তৌহিদুল ইসলাম।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শামছুল তাবরীজ জানান, এলাকাবাসীর বাধার মুখে প্রথমে অভিযান শুরু করা না গেলেও বেলা তিনটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষকালে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন আওয়ামী লীগ নেতা রাসেল ভূঁইয়া। তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, অবৈধ গ্যাস-সংযোগের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ ঘটনায় অভিযুক্ত কাদের মিয়ার মুঠোফোনে কল করে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আবুল কাসেম জানান, এ ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
আগে দুটি ঘটনায় অবৈধ গ্যাস-সংযোগ দানকারীদের বিরুদ্ধে দুটি আলাদা মামলা হয়েছে বলে জানান তিতাসের নরসিংদী কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. তৌহিদুল ইসলাম।
No comments