কোকেন পাচার নিয়ে বিশ্বব্যাপী তোলপাড় জাতিসংঘ আসছে by মিজানুর রহমান ও মহিউদ্দীন জুয়েল
চট্টগ্রামে
তেলের সঙ্গে তরল কোকেনের চালান ধরা পড়ায় দুনিয়ার দৃষ্টি এখন বাংলাদেশে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এরই মধ্যে ঘটনাটির বিষয়ে খোঁজখবর
নিতে শুরু করেছে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের মাদক ও
অপরাধবিষয়ক সংস্থা (ইউএনওডিসি) নড়েচড়ে বসেছে। সরকারের তরফে জাতিসংঘকে এ
ঘটনার তদন্তে সহযোগিতার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। সরকারের শুল্ক
গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হোসাইন আহম্মদ মানবজমিনকে
জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে এ নিয়ে জাতিসংঘকে চিঠি দেয়া হবে। সেখানে
আন্তর্জাতিকভাবে ঘটনাটি তদন্তের কথা জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশজুড়ে তোলপাড় হওয়া এই ঘটনার পর গতকাল পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এনবিআর। এরপর
বিকালে এক বৈঠকে চলতি সপ্তাহের সোম ও মঙ্গলবারের মধ্যে চিঠিটি পাঠানোর
সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আন্তর্জাতিক তদন্তের বিষয়ে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত
করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র। বলা হয়েছে, এ ধরনের অপরাধে
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এমনিতে আকৃষ্ট হয়। বিশেষ করে জাতিসংঘের।
তারা স্থানীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে থাকে। সরকার চাইলে
তারা তদন্তেও সহযোগিতা করে।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজীবুর রহমান মানবজমিনকে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। তারা সতর্ক ছিল বলে এত বড় চালান আটক করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকারত। সরকার তার নিজস্ব ক্ষমতা দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করছে। প্রয়োজনে তদন্তে বৈদেশিক সহায়তা নেয়া হবে। তবে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আগে সিদ্ধান্ত হবে। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক সংস্থা (ইউএনওডিসি)’র সঙ্গে যোগাযোগ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন অপরাধের বিষয়ে খোঁজখবর রাখে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করে থাকে। এ ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তাদের আনুষ্ঠানিক কোন যোগাযোগ হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এনবিআরের কারও সঙ্গে হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
এদিকে ধরা পড়া কোকেনের চালান বাংলাদেশে ব্যবহারের জন্য এসেছে এমনটি মনে করেন না মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। কারণ হিসাবে তারা বলেন, যেহেতু বাংলাদেশে কোকেনের বাজার এখনও ততোটা সয়লাভ হয়নি। তারা মনে করেন এখানে রুট হিসেবে বাংলাদেশকে মাফিয়ারা ব্যবহার করতে পারে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে আরও সময় লাগবে বলে মনে করেন তারা। পুরো বিষয়টি এনবিআর মনিটরিং করছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, এ জন্য আন্তর্জাতিকভাবে তদন্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, আগামী সপ্তাহে এই বিষয়ে তদন্ত করতে দুটি বিদেশী টিম চট্টগ্রাম বন্দরে আসার বিষয়টি এক প্রকার নিশ্চিত হয়েছে। দুই দলেই মোট ৫ সদস্য করে ১০ জন পৃথকভাবে বন্দর পরিদর্শন করবেন বলে ফোনে জানিয়েছেন তাদেরকে। তবে এই বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল মানবজমিনকে বলেন, আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হচ্ছে। বিদেশী কয়েকজন গোয়েন্দা সদস্য আসার কথা শুনেছি। তদন্তের স্বার্থে এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না। এদিকে এই ঘটনায় আমদানিকারক খান জাহান আলী লিমিটেডের বিরুদ্ধে গতকাল বিকালে বন্দর থানায় মামলা করেছে পুলিশ। এতে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদকে আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। যদিও তিনি এই ঘটনায় জড়িত নন বলে দাবি করেছেন। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় সোহেল নামের তার প্রতিষ্ঠানের অপর এক কর্মকর্তা এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে বলে মানবজমিনকে জানান বন্দর থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম।
লন্ডনে বসে ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ!
চট্টগ্রাম বন্দরে সূর্যমুখী তেলের ড্রামে কোকেন আমদানির ঘটনায় লন্ডনপ্রবাসী ফজলু নামের এক ব্যক্তির জড়িত থাকার নাম বেরিয়ে আসছে ঘুরেফিরে। এই ঘটনায় গত ২১ দিন আগে গ্রেপ্তার হওয়া খান জাহান আলী লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রাইম হ্যাচারির কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সোহেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ওই সময় তিনি লন্ডনে থাকা এক ব্যক্তির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে ভোজ্য তেল আমদানির কথা জানান। গত শনিবার পরীক্ষাগারে কোকেন পাওয়ার ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর পুলিশ জনৈক ব্যক্তিটির নাম ফজলু বলে জানতে পারেন।
সম্পর্কে তিনি গ্রেপ্তার হওয়া সোহেলের খালাতো বোনের জামাই। তার মাধ্যমেই বলিভিয়া থেকে সে এই চালানটি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে নিয়ে এসেছিল বলে পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিল। গতকাল এই বিষয়ে জানতে চাইলে নগর গোয়েন্দা পুলিশ ও শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ফজলুকে গ্রেপ্তার করার বিষয়ে মত দেন।
তারা জানান, তাকে ধরা গেলে এই ঘটনার গোপন রহস্য বেরিয়ে আসবে। যদিও গ্রেপ্তার হওয়া সোহেলও অনেক কিছু জানেন। তার কথায় ইতিমধ্যে কোকেন পাচার হওয়ার চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ধারণা করা হচ্ছে, সোহেলের খালাতো বোনের জামাই ফজলু একজন আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ী। কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরকে রুট হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছে সে। এই কাজে তার সঙ্গে চীন ও সিঙ্গাপুরের একটি চক্র জড়িত রয়েছে।
পুলিশ আরও জানায়, একটি বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত ৬ই জুন ভোজ্য তেলের বড় এই চালানটির ঘটনা ফাঁস হয়। এর আগে চালানটি ছাড়িয়ে নিতে আমদানিকারক খান জাহান আলী লিমিটেডকে জানানো হলে প্রতিষ্ঠানটির মালিক নূর মোহাম্মদ এর কোন দায়ভার নিতে রাজি হননি। তখন তিনি বলেছিলেন তার প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে কেউ এই কাজটি করেছে।
এতে সন্দেহ আরও বাড়ে। শেষমেশ চালানটির রপ্তানিকারক বলিভিয়ার সান্তা ক্রুজ কোম্পানি থেকে খাতুনগঞ্জের নবী মার্কেটের খান জাহান আলীর প্যাড ব্যবহার করে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সোহেল সান ফ্লাওয়ার তেলের চালানটি আমদানি করেন বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।
এরপর কৌশলে গত ৬ই জুন রাতে অভিযান চালিয়ে সোহেলকে আটক করে। পরে তার দেয়া স্বীকারোক্তিতে বন্দরের সিসিটি গিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের সহযোগিতায় কনটেইনারটি জব্দ করা হয়। গত ৮ই জুন কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও পুলিশের উপস্থিতিতে কনটেইনারটি খোলা হয়।
যদিও তখন সেখানে থাকা ১০৭টি ড্রাম থেকে নমুনা সংগ্রহ করে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েও কোকেন পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিলেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মঈনুল খান। পরে সেগুলো ঢাকায় পাঠানোর পর গত শনিবার ৯৬ নম্বর ড্রামে তা ধরা পড়ে।
বর্তমান বাজার দর অনুসারে প্রতি কেজি কোকেনের দাম ৫০ কোটি টাকা। সেই হিসেবে ড্রামে থাকা এক তৃতীয়াংশ কোকেনের পরিমাণ প্রায় ৬১ কেজি।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ঘটনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক জাকির হোসেনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মহাপরিচালক ড. মঈনুল খান বলেন, বাংলাদেশে কোকেনের বাজার তেমন নেই। তবে বিদেশী কোন চক্র এই দেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। এইজন্য চট্টগ্রাম বন্দরকে কৌশলে কাজে লাগাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে। এই ঘটনায় দেশের বাইরের অনেকে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা। তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তানভীর আরাফাত মানবজমিনকে বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া সোহেল লন্ডন প্রবাসী এক ব্যক্তির নাম বলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সে-ই মূল হোতা। সম্পর্কে সোহেলের আত্মীয়। অপরাধীরা ভেবেছে তরল কোকেন পরীক্ষা করা যায় না বাংলাদেশে। আর সেই কারণে পাউডারের পরিবর্তে তরল করে তা পাচারের পন্থা বেছে নিয়েছে।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজীবুর রহমান মানবজমিনকে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। তারা সতর্ক ছিল বলে এত বড় চালান আটক করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকারত। সরকার তার নিজস্ব ক্ষমতা দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করছে। প্রয়োজনে তদন্তে বৈদেশিক সহায়তা নেয়া হবে। তবে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আগে সিদ্ধান্ত হবে। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক সংস্থা (ইউএনওডিসি)’র সঙ্গে যোগাযোগ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন অপরাধের বিষয়ে খোঁজখবর রাখে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করে থাকে। এ ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তাদের আনুষ্ঠানিক কোন যোগাযোগ হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এনবিআরের কারও সঙ্গে হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
এদিকে ধরা পড়া কোকেনের চালান বাংলাদেশে ব্যবহারের জন্য এসেছে এমনটি মনে করেন না মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। কারণ হিসাবে তারা বলেন, যেহেতু বাংলাদেশে কোকেনের বাজার এখনও ততোটা সয়লাভ হয়নি। তারা মনে করেন এখানে রুট হিসেবে বাংলাদেশকে মাফিয়ারা ব্যবহার করতে পারে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে আরও সময় লাগবে বলে মনে করেন তারা। পুরো বিষয়টি এনবিআর মনিটরিং করছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, এ জন্য আন্তর্জাতিকভাবে তদন্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, আগামী সপ্তাহে এই বিষয়ে তদন্ত করতে দুটি বিদেশী টিম চট্টগ্রাম বন্দরে আসার বিষয়টি এক প্রকার নিশ্চিত হয়েছে। দুই দলেই মোট ৫ সদস্য করে ১০ জন পৃথকভাবে বন্দর পরিদর্শন করবেন বলে ফোনে জানিয়েছেন তাদেরকে। তবে এই বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল মানবজমিনকে বলেন, আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হচ্ছে। বিদেশী কয়েকজন গোয়েন্দা সদস্য আসার কথা শুনেছি। তদন্তের স্বার্থে এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না। এদিকে এই ঘটনায় আমদানিকারক খান জাহান আলী লিমিটেডের বিরুদ্ধে গতকাল বিকালে বন্দর থানায় মামলা করেছে পুলিশ। এতে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদকে আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। যদিও তিনি এই ঘটনায় জড়িত নন বলে দাবি করেছেন। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় সোহেল নামের তার প্রতিষ্ঠানের অপর এক কর্মকর্তা এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে বলে মানবজমিনকে জানান বন্দর থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম।
লন্ডনে বসে ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ!
চট্টগ্রাম বন্দরে সূর্যমুখী তেলের ড্রামে কোকেন আমদানির ঘটনায় লন্ডনপ্রবাসী ফজলু নামের এক ব্যক্তির জড়িত থাকার নাম বেরিয়ে আসছে ঘুরেফিরে। এই ঘটনায় গত ২১ দিন আগে গ্রেপ্তার হওয়া খান জাহান আলী লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রাইম হ্যাচারির কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সোহেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ওই সময় তিনি লন্ডনে থাকা এক ব্যক্তির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে ভোজ্য তেল আমদানির কথা জানান। গত শনিবার পরীক্ষাগারে কোকেন পাওয়ার ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর পুলিশ জনৈক ব্যক্তিটির নাম ফজলু বলে জানতে পারেন।
সম্পর্কে তিনি গ্রেপ্তার হওয়া সোহেলের খালাতো বোনের জামাই। তার মাধ্যমেই বলিভিয়া থেকে সে এই চালানটি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে নিয়ে এসেছিল বলে পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিল। গতকাল এই বিষয়ে জানতে চাইলে নগর গোয়েন্দা পুলিশ ও শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ফজলুকে গ্রেপ্তার করার বিষয়ে মত দেন।
তারা জানান, তাকে ধরা গেলে এই ঘটনার গোপন রহস্য বেরিয়ে আসবে। যদিও গ্রেপ্তার হওয়া সোহেলও অনেক কিছু জানেন। তার কথায় ইতিমধ্যে কোকেন পাচার হওয়ার চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ধারণা করা হচ্ছে, সোহেলের খালাতো বোনের জামাই ফজলু একজন আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ী। কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরকে রুট হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছে সে। এই কাজে তার সঙ্গে চীন ও সিঙ্গাপুরের একটি চক্র জড়িত রয়েছে।
পুলিশ আরও জানায়, একটি বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত ৬ই জুন ভোজ্য তেলের বড় এই চালানটির ঘটনা ফাঁস হয়। এর আগে চালানটি ছাড়িয়ে নিতে আমদানিকারক খান জাহান আলী লিমিটেডকে জানানো হলে প্রতিষ্ঠানটির মালিক নূর মোহাম্মদ এর কোন দায়ভার নিতে রাজি হননি। তখন তিনি বলেছিলেন তার প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে কেউ এই কাজটি করেছে।
এতে সন্দেহ আরও বাড়ে। শেষমেশ চালানটির রপ্তানিকারক বলিভিয়ার সান্তা ক্রুজ কোম্পানি থেকে খাতুনগঞ্জের নবী মার্কেটের খান জাহান আলীর প্যাড ব্যবহার করে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সোহেল সান ফ্লাওয়ার তেলের চালানটি আমদানি করেন বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।
এরপর কৌশলে গত ৬ই জুন রাতে অভিযান চালিয়ে সোহেলকে আটক করে। পরে তার দেয়া স্বীকারোক্তিতে বন্দরের সিসিটি গিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের সহযোগিতায় কনটেইনারটি জব্দ করা হয়। গত ৮ই জুন কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও পুলিশের উপস্থিতিতে কনটেইনারটি খোলা হয়।
যদিও তখন সেখানে থাকা ১০৭টি ড্রাম থেকে নমুনা সংগ্রহ করে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েও কোকেন পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিলেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মঈনুল খান। পরে সেগুলো ঢাকায় পাঠানোর পর গত শনিবার ৯৬ নম্বর ড্রামে তা ধরা পড়ে।
বর্তমান বাজার দর অনুসারে প্রতি কেজি কোকেনের দাম ৫০ কোটি টাকা। সেই হিসেবে ড্রামে থাকা এক তৃতীয়াংশ কোকেনের পরিমাণ প্রায় ৬১ কেজি।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ঘটনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক জাকির হোসেনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মহাপরিচালক ড. মঈনুল খান বলেন, বাংলাদেশে কোকেনের বাজার তেমন নেই। তবে বিদেশী কোন চক্র এই দেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। এইজন্য চট্টগ্রাম বন্দরকে কৌশলে কাজে লাগাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে। এই ঘটনায় দেশের বাইরের অনেকে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা। তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তানভীর আরাফাত মানবজমিনকে বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া সোহেল লন্ডন প্রবাসী এক ব্যক্তির নাম বলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সে-ই মূল হোতা। সম্পর্কে সোহেলের আত্মীয়। অপরাধীরা ভেবেছে তরল কোকেন পরীক্ষা করা যায় না বাংলাদেশে। আর সেই কারণে পাউডারের পরিবর্তে তরল করে তা পাচারের পন্থা বেছে নিয়েছে।
No comments