টানা বর্ষণে সড়ক-মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত -কক্সবাজারে ৮ জনের মৃত্যু
কয়েক
দিন ধরে চলা মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়কে
মারাত্মক খানা–খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ও
দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল। দ্রুত খানাখন্দগুলো মেরামত করা না হলে ঈদুল
ফিতরের আগে যানজটে পড়ে ঘরমুখী মানুষকে দুঃসহ ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলে
আশঙ্কা করা হচ্ছে।
টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের ঢেউয়ে ধসের হুমকিতে পড়েছে ভোলার ১২০ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এর অন্তত ১২টি স্থান যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। গতকাল কক্সবাজারে পাহাড়ধসে নিহত হয়েছেন দুজন।
সড়ক-মহাসড়কে খানাখন্দ: টানা বর্ষণে কুমিল্লার দাউদকান্দি ও চান্দিনা উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বহু খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এসব অংশে যানবাহন চলছে স্বাভাবিক গতির চেয়ে কমে। দাউদকান্দির বিশ্বরোড, গৌরীপুর, আমিরাবাদ ও ইলিয়টগঞ্জ এবং চান্দিনার মাধাইয়া, দোতলা ও চান্দিনা বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব-পশ্চিমে তুলনামূলকভাবে গর্ত বেশি।
দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবায়েদুল আলম ও ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ সার্জেন্ট আসাদুজ্জামান বলেন, গর্তের বিষয়টি ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে গর্ত মেরামতের কাজ আপাতত করা যাচ্ছে না বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
একই মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার স্থানে অন্তত ১৭টি স্থানে বড় বড় গর্ত হয়েছে। গতি কমে যাওয়ায় গতকাল এ অংশে ছিল দীর্ঘ যানজট।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) কর্মকর্তারা কয়েক দিন ধরে ইট ও বালু ফেলে গর্ত বন্ধ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। কেননা, ভারী যানবাহনের চাকায় কিছুক্ষণের মধ্যেই সেগুলো উঠে গিয়ে গর্তের আয়তন আরও বাড়ছে।
প্রবল বর্ষণে ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের সিঅ্যান্ডবি ঘাট-গোলডাঙ্গি সড়কের দুই জায়গা গত মঙ্গলবার রাতে ভেঙে যাওয়ায় এ সড়কে যানবাহন চলাচল চার দিন ধরে বন্ধ। এই সড়কের তাইজুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গি এলাকায় ২০ ফুট লম্বা ও ১৪ ফুট চওড়া অংশ এবং সুলতান খাঁর ডাঙ্গি এলাকায় ২০ ফুট লম্বা ও ১২ ফুট চওড়া অংশ ভেঙে গেছে।
টানা বর্ষণে ফরিদপুর শহর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকার সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
হুমকিতে ভোলা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ: বৃষ্টি ও উঁচু জোয়ারে হুমকিতে পড়েছে ভোলার ১২০ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। বাঁধের কমপক্ষে ১২টি স্থান যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। বাঁধ এলাকার অনেক বাসিন্দাই বলছেন, চলতি বর্ষার আগে সংস্কার করা হলে তা এমন ধসের হুমকিতে পড়ত না। সরেজমিন দেখা যায়, সদর উপজেলার রাজাপুর, পূর্ব ইলিশা, কাচিয়া, ধনিয়া ও শিবপুর, দৌলতখানের চরপাতা, ভবানীপুর ও সৈয়দপুর, বোরহানউদ্দিনের বড় মানিকা, পক্ষিয়া ও হাসাননগর, তজুমদ্দিনের চাঁদপুর ও শম্ভুপুর, লালমোহনের ধলীগৌরনগর ও লর্ড হার্ডিঞ্জ এবং চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর, চরমাদ্রাজ, চরমানিকা, মুজিবনগর, নজরুলনগর, কুকরি-মুকরি ইউনিয়নের প্রায় ১০০ কিলোমিটার বাঁধের এক-তৃতীয়াংশ আগেই ভেঙে গেছে। গত দুই বছরে ক্ষতিগ্রস্ত এই মাটির বাঁধ সংস্কার না করায় চলতি বর্ষা ও জোয়ারে সেটি আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে। জোয়ারে এরই মধ্যে বিভিন্ন উপজেলার অর্ধশতাধিক চর ও বাঁধের বাইরে থাকা আরও অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভোলা ও চরফ্যাশন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে ৩০০ কিলোমিটার। ভোলা পাউবোর অধীন ৮৫ কিলোমিটার বাঁধের ৫০ কিলোমিটার ও চরফ্যাশন পাউবোর অধীন ২১৫ কিলোমিটারের ৭০ কিলোমিটার বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে। এর মধ্যে ভোলায় সাড়ে ১৯ ও চরফ্যাশনে নয় কিলোমিটার বাঁধের নতুনভাবে নির্মাণকাজ চলছে। চরফ্যাশন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী কাওসার আহমেদ বলেন, পর্যাপ্ত টাকার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা যাচ্ছে না।
আরও আটজনের মৃত্যু: অতিবর্ষণে কক্সবাজার জেলায় গতকাল আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাহাড়ধসে টেকনাফে গতকাল ভোররাতে বাহারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব পুরানপাড়া গ্রামের আবুল মঞ্জুরের স্ত্রী ছমুদা খাতুন (৪৫) ও তাঁর মেয়ে শাহেনা আক্তার (১৫) মারা যায়।
বাহারছড়ার ২ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোকতার আহমদ জানান, এই গ্রামের পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে মাইকিং করা হলেও পরিবারটি সরে যায়নি।
এ ছাড়া চকরিয়া উপজেলায় বন্যার পানির তীব্র স্রোতে ভেসে গিয়ে চারজন ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুজন মারা গেছেন। চকরিয়ায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন কাকারা ইউনিয়নের কাউছার রহিম (১৩), ডুলাহাজারার মোহাম্মদ আলম (২৭) ও কামাল উদ্দিন (৩৫), ঢেমুশিয়ার মোহাম্মদ আসিব (৭), কৈয়ারবিলের অজ্ঞাতনামা শিশু (৪), ফাঁসিয়াখালীর সুবর্ণা দাশ (৩০)। এঁদের মধ্যে সুবর্ণা ও কামাল বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এবং অন্যরা পানিতে ভেসে গিয়ে মারা যান।
দুর্ভোগে পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ: টানা ছয় দিন ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে কক্সবাজারের অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে গত কয়েক দিনের মতোই বন্ধ রয়েছে কক্সবাজার-টেকনাফ, কক্সবাজার-ঈদগাহ, কক্সবাজার-রামু ও রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কে যান চলাচল। এ জেলাকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণা করে ত্রাণ তৎপরতা শুরুর জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে রাজনৈতিক দল। গতকাল দুপুরে কক্সবাজার পৌরসভার কাছের ফদনারডেইল গ্রামে দেখা যায়, অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে রয়েছে।
বন্যাদুর্গত বহু মানুষকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হলেও সেখানে খাবার ও পানি সরবরাহ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, পানিবন্দী মানুষের মধ্যে গতকাল ১৪৫ টন চাল ও নগদ ১১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী। উপজেলার প্রায় সব কটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ত্রাণ বরাদ্দ পাওয়া গেছে মাত্র ১৪ টন চাল। ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে পানিবন্দী মানুষ।
বান্দরবানে বৃষ্টিপাত কমে আসায় গতকাল বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সড়কের পানি সরে যাওয়ায় জেলা ও উপজেলায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। জেলা প্রশাসন জানায়, বন্যায় জেলার এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
{প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন: প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার; ভোলা, বান্দরবান, টেকনাফ (কক্সবাজার), সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) ও দাউদকান্দি (কুমিল্লা), সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি এবং ফরিদপুর অফিস}
টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের ঢেউয়ে ধসের হুমকিতে পড়েছে ভোলার ১২০ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এর অন্তত ১২টি স্থান যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। গতকাল কক্সবাজারে পাহাড়ধসে নিহত হয়েছেন দুজন।
সড়ক-মহাসড়কে খানাখন্দ: টানা বর্ষণে কুমিল্লার দাউদকান্দি ও চান্দিনা উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বহু খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এসব অংশে যানবাহন চলছে স্বাভাবিক গতির চেয়ে কমে। দাউদকান্দির বিশ্বরোড, গৌরীপুর, আমিরাবাদ ও ইলিয়টগঞ্জ এবং চান্দিনার মাধাইয়া, দোতলা ও চান্দিনা বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব-পশ্চিমে তুলনামূলকভাবে গর্ত বেশি।
দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবায়েদুল আলম ও ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ সার্জেন্ট আসাদুজ্জামান বলেন, গর্তের বিষয়টি ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে গর্ত মেরামতের কাজ আপাতত করা যাচ্ছে না বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
একই মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার স্থানে অন্তত ১৭টি স্থানে বড় বড় গর্ত হয়েছে। গতি কমে যাওয়ায় গতকাল এ অংশে ছিল দীর্ঘ যানজট।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) কর্মকর্তারা কয়েক দিন ধরে ইট ও বালু ফেলে গর্ত বন্ধ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। কেননা, ভারী যানবাহনের চাকায় কিছুক্ষণের মধ্যেই সেগুলো উঠে গিয়ে গর্তের আয়তন আরও বাড়ছে।
প্রবল বর্ষণে ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের সিঅ্যান্ডবি ঘাট-গোলডাঙ্গি সড়কের দুই জায়গা গত মঙ্গলবার রাতে ভেঙে যাওয়ায় এ সড়কে যানবাহন চলাচল চার দিন ধরে বন্ধ। এই সড়কের তাইজুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গি এলাকায় ২০ ফুট লম্বা ও ১৪ ফুট চওড়া অংশ এবং সুলতান খাঁর ডাঙ্গি এলাকায় ২০ ফুট লম্বা ও ১২ ফুট চওড়া অংশ ভেঙে গেছে।
টানা বর্ষণে ফরিদপুর শহর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকার সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
হুমকিতে ভোলা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ: বৃষ্টি ও উঁচু জোয়ারে হুমকিতে পড়েছে ভোলার ১২০ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। বাঁধের কমপক্ষে ১২টি স্থান যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। বাঁধ এলাকার অনেক বাসিন্দাই বলছেন, চলতি বর্ষার আগে সংস্কার করা হলে তা এমন ধসের হুমকিতে পড়ত না। সরেজমিন দেখা যায়, সদর উপজেলার রাজাপুর, পূর্ব ইলিশা, কাচিয়া, ধনিয়া ও শিবপুর, দৌলতখানের চরপাতা, ভবানীপুর ও সৈয়দপুর, বোরহানউদ্দিনের বড় মানিকা, পক্ষিয়া ও হাসাননগর, তজুমদ্দিনের চাঁদপুর ও শম্ভুপুর, লালমোহনের ধলীগৌরনগর ও লর্ড হার্ডিঞ্জ এবং চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর, চরমাদ্রাজ, চরমানিকা, মুজিবনগর, নজরুলনগর, কুকরি-মুকরি ইউনিয়নের প্রায় ১০০ কিলোমিটার বাঁধের এক-তৃতীয়াংশ আগেই ভেঙে গেছে। গত দুই বছরে ক্ষতিগ্রস্ত এই মাটির বাঁধ সংস্কার না করায় চলতি বর্ষা ও জোয়ারে সেটি আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে। জোয়ারে এরই মধ্যে বিভিন্ন উপজেলার অর্ধশতাধিক চর ও বাঁধের বাইরে থাকা আরও অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভোলা ও চরফ্যাশন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে ৩০০ কিলোমিটার। ভোলা পাউবোর অধীন ৮৫ কিলোমিটার বাঁধের ৫০ কিলোমিটার ও চরফ্যাশন পাউবোর অধীন ২১৫ কিলোমিটারের ৭০ কিলোমিটার বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে। এর মধ্যে ভোলায় সাড়ে ১৯ ও চরফ্যাশনে নয় কিলোমিটার বাঁধের নতুনভাবে নির্মাণকাজ চলছে। চরফ্যাশন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী কাওসার আহমেদ বলেন, পর্যাপ্ত টাকার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা যাচ্ছে না।
আরও আটজনের মৃত্যু: অতিবর্ষণে কক্সবাজার জেলায় গতকাল আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাহাড়ধসে টেকনাফে গতকাল ভোররাতে বাহারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব পুরানপাড়া গ্রামের আবুল মঞ্জুরের স্ত্রী ছমুদা খাতুন (৪৫) ও তাঁর মেয়ে শাহেনা আক্তার (১৫) মারা যায়।
বাহারছড়ার ২ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোকতার আহমদ জানান, এই গ্রামের পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে মাইকিং করা হলেও পরিবারটি সরে যায়নি।
এ ছাড়া চকরিয়া উপজেলায় বন্যার পানির তীব্র স্রোতে ভেসে গিয়ে চারজন ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুজন মারা গেছেন। চকরিয়ায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন কাকারা ইউনিয়নের কাউছার রহিম (১৩), ডুলাহাজারার মোহাম্মদ আলম (২৭) ও কামাল উদ্দিন (৩৫), ঢেমুশিয়ার মোহাম্মদ আসিব (৭), কৈয়ারবিলের অজ্ঞাতনামা শিশু (৪), ফাঁসিয়াখালীর সুবর্ণা দাশ (৩০)। এঁদের মধ্যে সুবর্ণা ও কামাল বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এবং অন্যরা পানিতে ভেসে গিয়ে মারা যান।
দুর্ভোগে পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ: টানা ছয় দিন ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে কক্সবাজারের অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে গত কয়েক দিনের মতোই বন্ধ রয়েছে কক্সবাজার-টেকনাফ, কক্সবাজার-ঈদগাহ, কক্সবাজার-রামু ও রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কে যান চলাচল। এ জেলাকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণা করে ত্রাণ তৎপরতা শুরুর জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে রাজনৈতিক দল। গতকাল দুপুরে কক্সবাজার পৌরসভার কাছের ফদনারডেইল গ্রামে দেখা যায়, অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে রয়েছে।
বন্যাদুর্গত বহু মানুষকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হলেও সেখানে খাবার ও পানি সরবরাহ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, পানিবন্দী মানুষের মধ্যে গতকাল ১৪৫ টন চাল ও নগদ ১১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী। উপজেলার প্রায় সব কটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ত্রাণ বরাদ্দ পাওয়া গেছে মাত্র ১৪ টন চাল। ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে পানিবন্দী মানুষ।
বান্দরবানে বৃষ্টিপাত কমে আসায় গতকাল বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সড়কের পানি সরে যাওয়ায় জেলা ও উপজেলায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। জেলা প্রশাসন জানায়, বন্যায় জেলার এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
{প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন: প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার; ভোলা, বান্দরবান, টেকনাফ (কক্সবাজার), সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) ও দাউদকান্দি (কুমিল্লা), সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি এবং ফরিদপুর অফিস}
No comments