৭০০ কোটি টাকার টেন্ডার বাগাতে রাজউকে মহড়া
পূর্বাচল নতুন শহর, উত্তরা তৃতীয় পর্যায় ও উত্তরা ফ্ল্যাট প্রকল্পের ৭০০ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে পুরো আন্ডারওয়ার্ল্ড এখন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এ অবস্থান নিয়েছে। আন্ডারওয়ার্ল্ড সদস্য ও ক্ষমতাসীন দলের কয়েক শতাধিক নেতাকর্মীরা নিজেদের বাগে টেন্ডারের কাজগুলো নিতে রীতিমতো পাহারা বসিয়েছেন। রাজউকের বিভিন্ন তলার সিঁড়ি, ছাদ ও প্রকৌশল শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের রুম সর্বত্র এখন তাদের দাপট। যখন তখন খারাপ ব্যবহার করছেন তারা। এমন অবস্থার কথা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের কান পর্যন্ত পৌঁছেছে। টেন্ডার জমাদানের সময়সীমা বাড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এর ভিত্তিতে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত টেন্ডার জমাদানের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাজউকের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) মো. হাফিজুর রহমান মুন্সী প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদানের পর থেকেই এমন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে সাধারণ ঠিকাদাররা কিছু বলতেই পারেন না। তাদের অভিযোগ, প্রধান প্রকৌশলী মুন্সী তার পছন্দের ঠিকাদারদের কাজগুলো দিতে রীতিমতো মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এ জন্য রাজউকের প্রকৌশলী ও কর্মচারীদের এ বিষয়ে পাত্তা দিচ্ছেন না। ঠিকাদারদের নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই নিজের অফিস, বাসা ও বাইরের কোন ভাল রেস্টুরেন্টে বসে মিটিং করছেন। বাতলে দিচ্ছেন টেন্ডার ব্লক (নিয়ন্ত্রণে) করার নানা কায়দা-কানুন। ঠিকাদারনামীয় একপক্ষ মাসলম্যানদের গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় আরেক গ্রুপের রোষানলের ভয়ে বেশ সাবধানে চলাফেরা করছেন প্রধান প্রকৌশলী মুন্সী। সব সময় নিরাপত্তা পরিবেষ্টিত হয়ে থাকেন। তার রুমের সামনে সব সময় পুলিশ ও আনসার সদস্যদের পাহারা দিতে দেখা যায়। এছাড়া, রুমে বসে কিছু অপরিচিত মুখ ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার সঙ্গে খোশগল্পে মেতে থাকেন। প্রধান প্রকৌশলী বাসায় যাওয়ার পথে তাকে রীতিমতো এসকর্ট দিয়ে নিয়ে যান। বিষয়টি সম্পর্কে রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানলেও মুখ খোলেন না। বরং প্রধান প্রকৌশলীর প্রসঙ্গ আসলেই এড়িয়ে যান। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কয়েকটি সেক্টরের ভেতরের রাস্তা ও সারফেস ড্রেন নির্মাণের ১৭ গ্রুপের কাজগুলো নিয়ে রাজউকে মহড়া চালাচ্ছে কিছু অপরিচিত মুখ। উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে (ওটিএম) গত ১৯শে মে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ০৩, ০৮, ২০, ২২, ০৭ ও ২৬ নং সেক্টরের কিছু অংশ উন্নয়নের জন্য নয় গ্রুপের কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এসব সেক্টরের ভেতরের রাস্তা তৈরির জন্য নয় গ্রুপের বিপরীতে প্রায় দেড় শ’ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। সিডিউলে উল্লিখিত সময় অনুযায়ী আগামী ২৪শে জুন দরপত্র দলিল বিক্রির শেষ তারিখ ছিল। ২৫শে মে বেলা ১২টার মধ্যে এসব লটের দরপত্র গ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগের ভিত্তিতে এ সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ১৪ই মে একই প্রকল্পের ৯, ১০, ১১, ১৪, ১৫ ও ১৬ নং সেক্টরের সারফেস ড্রেন নির্মাণে আট গ্রুপের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। সিডিউলে উল্লিখিত সময় অনুযায়ী আগামী ২৮শে জুন দরপত্র দলিল বিক্রির শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ২৯ শে জুন বেলা ১২টার মধ্যে এসব লটের দরপত্র গ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু এ সময়সীমাও বদল করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ১৭ গ্রুপের কাজ নিয়ে মহড়া চলছে রাজউকে। এদিকে উত্তরা তৃতীয় পর্যায় প্রকল্প ও উত্তরা ফ্ল্যাট প্রকল্পের চারশ’ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়েও রাজউকে চলছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘাত ঘটতে পারে। এর আগে রাজউকে যোগদানের পর প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সীর রুমে কয়েক দফা হামলা হয়েছে। এনিয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান জিএম জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়াসহ অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার রুম পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু এরপরও ৭০০ কোটি টাকার টেন্ডার পছন্দের লোকদের দিতে রীতিমতো মরিয়া হয়ে উঠেছেন প্রধান প্রকৌশলী। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) মো. হাফিজুর রহমান মুন্সীকে একাধিকবার তার ব্যক্তিগত ও অফিসিয়াল মোবাইলে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
No comments