মন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাকবিতণ্ডায় প্রবাসীরা
সদ্যসমাপ্ত
ফ্রান্স সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর উপস্থিতিতেই
বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন প্রবাসীরা। গত ২৩শে জুন প্যারিসে স্থানীয় আওয়ামী
লীগ আয়োজিত দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। দীর্ঘদিন ধরে
দূতাবাসের কনস্যুলার উইংয়ের ফার্স্ট সেক্রেটারি আনিসা আমিনের অসদাচরণে
অতিষ্ঠ হয়ে আছেন ফ্রান্স প্রবাসীরা। ওই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে মন্ত্রীর
অনুষ্ঠানে। ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৩ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের একটি
ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে মন্ত্রীর সঙ্গে এক প্রবাসীর কথোপকথনে ছিল
ক্ষোভ আর অভিযোগ। অবশ্য তার সব অভিযোগই ছিল দূতাবাসের একজন কর্মকর্তার
বিরুদ্ধে। ছিল এমন- ওই ব্যক্তি বলছেন, ‘আমি ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু বলছি
না, আমি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করি।’ মন্ত্রী তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমরাও
জনগণের প্রতিনিধিত্ব করি’। এ সময় দর্শক সারির থেকে কয়েক জন হাত উঁচু করে
মন্ত্রীর কাছে কথা বলার জন্য সময় চান। একেবারে সামনে বসা একজন মন্ত্রীকে
স্যার সম্বোধন করে কথা বলতে শুরু করেন। বলেন, ‘অ্যাম্বাসেডর সাহেব ভাল,
কিন্তু আনিসা ম্যাডাম অনেক খারাপ। তিনি দুর্ব্যবহার করেন।’ ভিডিওতে দেখা
যায় প্রায় মিনিট খানেক ওই অবস্থা চলার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। টাই পরা
এক প্রবাসী দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শুরু করেন। বলেন, আমি তার দুর্ব্যবহারের
প্রত্যক্ষ সাক্ষী। আজ আপনাকে সেটি অবগত করতে চাই। শুরুতে মন্ত্রীকে স্বাগত
জানিয়ে বলেন, আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি আমাদের মাঝে আসছেন (এসেছেন)। আনিসা
ম্যাডাম যে দুর্ব্যবহার করে পাকিস্তানিরাও সম্ভবত এমনটি করে না। এখানে একটি
লোক ১০-১৫ লাখ টাকা খরচ করে আসে। কিভাবে আসে আপনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে
ভাল জানেন। আপনারা আসতে পারেন, কিন্তু একটি বাঙালি ছেলেকে অনেক টাকা খরচ
করে, অনেক কষ্ট করে আসতে হয়। কি পরিমাণ কষ্ট হয় তা আপনারা কল্পনা করুণ।
এখানে তাদের কাগজপত্র থাকে না। এ অবস্থায় অনেককে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। তাদের
বাংলাদেশে ফেরতও পাঠায়। এমন অবস্থায় ম্যাডাম (আনিসা) বলে কেন আসছো? কেন
বিদেশে আসছো? উত্তেজিত ওই ব্যক্তি বলেন, আজ আমার প্রশ্ন এখানে উনি যে বেতন
নিচ্ছে এটা কার টাকায়? প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠায়। আর উনি এ চেয়ারে বসে
প্রবাসীদের অবহেলা করেন। এ নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কয়েকবার বৈঠক হয়েছে
জানিয়ে তিনি বলেন, আমি তার দুর্ব্যবহারে প্রত্যক্ষ সাক্ষী উনি যেসব ব্যবহার
করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রদূত সাহেব তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি। তিনি
মন্ত্রীকে সাক্ষী করে রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চান কবে তাকে ওই পদ থেকে
প্রত্যাহার করা হবে? এ সময় তিনি আন্দোলনের হুমকি দেন। বলেন, যদি তাকে
(আনিসা) প্রত্যাহার না করা হয়, তাহলে সামজিক আন্দোলন করে কিভাবে তাকে
বিতাড়িত করতে হবে সেটি বাঙালিদের জানা আছে। উপস্থিত দর্শকরাও এসময় করতালি
দিয়ে প্রবাসী কমিউনিটি লিডারের বক্তব্যকে স্বাগত জানান। দর্শকদের সাড়া পেয়ে
তিনি তার বক্তৃতা চালিয়ে যান। বলেন, এমন বেআদব মহিলাকে এই জায়গায় দেখতে
চাই না। আশা করি অতি শিগগির তাকে এখান থেকে প্রত্যাহার করা হবে। উপস্থিত
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি তার কথা শেষ করেন। ভিডিওতে দেখা যায় ওই বক্তৃতা
শেষ হওয়ার পর ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম ফ্লোর
নেন। আনিসা আমিনকে মিসেস আমিন সম্বোধন করে তিনি প্রবাসীদের উদ্দেশে বলেন,
তার বিষয়ে আপনাদের সঙ্গে আমার অনেকবার কথা হয়েছে। এবং আপনারা জানেন যে
আপনাদের কনস্যুলার বিষয়ে আমার অনেক নজর রয়েছে। আপনাদের ফটোকপির ব্যবস্থা
ছিল না, আমি তা করে দিয়েছি। পানির খাওয়ার সমস্যা ছিল। ওয়াটার মেশিন
বসিয়েছি। আগে যাওয়া পরে যাওয়ার একটি ব্যাপার ছিল। সেটিও সমাধান করেছি। এখন
টোকেন সিস্টেম করেছি। মিসেস আমিনের একটি ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। আপনারা জানেন
এখানে রাষ্ট্রদূত হিসাবে ছিলেন তার স্বামী। তিনি মারা যাওয়ার পর মাননীয়
পররাষ্ট্রমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তার প্রতি সদয় হয়ে তাতে
এখানে নিয়োগ দিয়েছেন। এ সময় মন্ত্রী মাহমুদ আলী রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের
মধ্যেই বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত তার
সঙ্গে কণ্ঠ মিলান। বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় হয়ে মানবিক গ্রাউন্ডে
তাকে এখানে রেখেছেন। আমাদের অনেক অ্যাম্বাসি আছে যেখানে এভাবে নিয়োগ দেয়া
হয় তারা থাকে, কোন কাজ করে না। কিন্তু মিসেস আমিনের একটি পজেটিভ দিক হলো
তিনি কাজ করে খান। নাম্বার টু হলো- তার সততার ব্যাপারে কোন বিচ্যুতি আমি
পাইনি। আমি যতটুক জানি তা হল উনি চেষ্টা করছেন কমিউনিটির সঙ্গে আরও
ফ্রেন্ডলি হতে, আপনাদের সেবা দিতে। একবার আপনাদের এক সিনিয়র লিডারের সঙ্গে
তার ব্যবহার সঠিক হয়নি। আমি সেটি জানার পর ব্যবস্থা নিয়েছি।’ চার দিন
ফ্রান্স সফরে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তার সঙ্গে পররাষ্ট্র দপ্তরের
কর্মকর্তারাও ছিলেন। ২৫শে জুন মন্ত্রী দেশে ফেরার পর বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র
দপ্তরের কানাঘুষা শোনা যায়। অবশ্য সেখানে ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে।
দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার মানবজমিনকে বলেন, দীর্ঘ বক্তৃতাকারী প্রবাসী
নেতার নাম কয়েস। তিনি আওয়ামী লীগের প্যারিস শাখার নেতা। অনুষ্ঠান শেষে
মন্ত্রীর কাছে তিনি তার আক্রমণাত্মক আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলেও
দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।
No comments