একাদশে ভর্তি- সাড়ে ১১ লাখ শিক্ষার্থীর দুর্ভোগ by নূর মোহাম্মদ
২৫শে
জুন থেকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিপ্রত্যাশীরা।
মন্ত্রণালয় ও বোর্ডে গাফিলতির কারণে দুশ্চিন্তা ও ভোগান্তিতে পড়েছেন সাড়ে
১১ লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। এদিকে ভর্তির তালিকা প্রকাশে বিলম্ব
হওয়ায় একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি ও ক্লাস শুরুর সময় বাড়িয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
নতুন সময়সূচি অনুযায়ী, ভর্তি কার্যক্রম চলবে ২৯শে জুন থেকে ১লা জুলাই
পর্যন্ত। আর ক্লাস শুরু হবে ২রা জুলাই। এদিকে নিজেদের দোষ এড়াতে শিক্ষাসচিব
ও বোর্ড কর্মকর্তা এবং বুয়েট-এর সংশ্লিষ্ট বিভাগ পরস্পরকে দোষারোপ করছে।
বুয়েট বলছে, সারা দেশে কলেজগুলোর ডাটাবেইজ সঠিক সময় দিতে পারেনি
শিক্ষাবোর্ড। বোর্ড বলছে, বুয়েট সফটওয়ার কয়েকবার হ্যাং হয়েছে। ভর্তির এ
পুরো প্রক্রিয়াজুড়েই ছিল বুয়েট ও বোর্ডের মধ্যে চরম সমন্বয়হীনতা। এদিকে ৪
দিনেও ফল প্রকাশ করতে না পারায় চরম দুশ্চিতায় পড়েন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
ফল প্রকাশ হলেও সেটি আদৌ সঠিক হবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান তারা। ফল
প্রকাশের সময় হিসেবে গভীর রাতকে বেছে নেয়ায় গত ৪ দিন নির্ঘুম রাত কাটাতে
হয়েছে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের। যথাসময়ে ফল প্রকাশ করতে না পারায় ছয়
বছর পর এবারই শিক্ষাপঞ্জি পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বুয়েট অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ মানবজমিনকে জানান, পুরো সফটওয়ারটি হ্যাং হয়েছে। নতুন করে কাজ করতে হচ্ছে। কবে নাগাদ ফল দেয়া যাবে এমন প্রশ্নে কায়কোবাদ বলেন, আমাদের কাজ করতে দেন। আশা করি শিগগিরই ফল দেয়া যাবে। এদিকে গতকাল বিকালে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের জানান, আজকে (রোববার) মধ্যে ফল দেয়া যাবে জানিয়েছে বুয়েট। এদিকে রাতে শিক্ষা সচিব জানান, রাত সাড়ে ১১টায় ফল প্রকাশ হতে পারে।
এর আগে ২৫শে জুন প্রথম দিন ফল দিতে ব্যর্থ হওয়ার পর ২৬শে জুন রাতে ফল প্রকাশের নতুন তারিখ দেয়। কিন্তু আগের দিনের মতো ওইদিনই রাত ৩টা পর্যন্ত বুয়েটে ছিলেন শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান। কিন্তু ফল প্রকাশে ব্যর্থ হওয়ায় শনিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিক্ষা সচিব ঊর্ধ্বতন সকলকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে ভারত বা সিঙ্গাপুর থেকেও আইটি বিশেষজ্ঞ এনে দ্রুত ফল দেয়ার পক্ষেও মত দেন কেউ কেউ। তবে সর্বশেষ এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয় বিশিষ্ট তথ্য প্রযুক্তিবিদ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. কায়কোবাদকে। তিনি একদিন সময় নেন। সেই হিসেবেই গতকাল ফল প্রকাশের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়।
মাত্র ৪-৫ দিনের মধ্যে সাড়ে ১১ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর নানা সমীকরণের হিসাব মিলাতে গিয়েই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে কোন ধরনের টেকনিক্যাল সমস্যা হয়নি। নানা ধরনের কোটা যেমন স্কুল-কলেজ সংযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কোটা মন্ত্রণালয়ের ও মাউশি’র কোটা এবং মেধাবীদের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে নির্ভুল তালিকা প্রকাশ করতে গিয়েই বিলম্ব ঘটছে। এ ছাড়া একেকটি প্রোগ্রাম চালু এবং তা নির্ভুলভাবে সমন্বয করার জন্য যে পরিমাণ সময় ও লোকবল প্রয়োজন তাও চূড়ান্ত ছিল না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আন্তঃবোর্ড সমন্বয় সূত্র জানায়, শুরুতে শুধু বুয়েটের ৬ সদস্যের একটি আইটি বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করেছে। গত ২৭ তারিখে বুয়েটের প্রফেসর কায়কোবোদের নেতেৃত্বে আরও ৬ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল যুক্ত হয় ভর্তির আবেদনে ফল প্রকাশের কাজে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এটুআই প্রকল্পের বিশেষজ্ঞরা এবং বোর্ডের আইটি টিমও যুক্ত হয়ে তিন ভাগে কাজ করছে এখন। কর্মকর্তারা জানান, কোন প্রকার প্রস্তুতি ছাড়াই সাড়ে এগার লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর ভর্তির আবেদন অনলাইনে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভর্তির আবেদনের সময় তিন দিন পেছানো হয়। অনলাইনে ভর্তির আবেদন কিছু ফটকাবাজ শিক্ষার ব্যবসায়ী-মাফিয়া প্রতিষ্ঠান মেধাবীদের পক্ষে নিজের প্রতিষ্ঠানে আবেদন করে ফেলা, মেধাবী ও জিপিএ-৫ ধারীদের সংখ্যাধিক্য, একসঙ্গে ৫টি প্রতিষ্ঠানের পছন্দ নির্ধারণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কোটা নির্ধারিত করে রাখাসহ ইত্যাদি জটিল সমীকরণ সমাধার করতে গলধঘর্ম হতে হয়েছে বুয়েটের আইটি বিশেষজ্ঞদের।
মন্ত্রণালয় ও বোর্ড সূত্র বলছে, শিক্ষা সচিব নজরুল ইলাম খানের সিদ্ধান্তের কারণে সাড়ে ১১ লাখ শিক্ষার্থীকে দুর্দশায় পড়তে হয়েছে। এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের পর সিদ্ধান্ত হয় যেসব কলেজের আসন সংখ্যা ৩০০ এর ওপরে এরকম ৩০০ থেকে ৫০০ কলেজ দিয়ে এবার অনলাইন কার্যত্রম শুরু হবে। এরপর ধীরে ধীরে পুরো ভর্তি প্রত্রিুয়া অনলাইনে আওতায় আনা হবে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা মিটিং হয়। তবে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় সারা দেশে ৩০০ বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয় এ সব কলেজকে অনলাইনের আওতায় আনা। শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, একসঙ্গে সারা দেশের কলেজে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা সমীচীন হবে না। এটা বাস্তবসম্মতও নয়। পর্যায়ক্রমে এর আওতা বাড়াতে হবে। তাছাড়া আমাদের অনলাইন ক্যাপাসিটিও নেই। এছাড়া বোর্ডের অধিকাংশ কর্মকর্তাদের সায় ছিল এই সিদ্ধান্তে। কিন্তু হঠাৎ করে প্রভাবশালী এই আমলা ও শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট মঞ্জুরুল কবিরের আগ্রহের কারণে শেষ মুহূর্তে সকল কলেজকেই অনলাইন ভর্তির আওতায় আনা হয়। বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, প্রায় সরা দেশের ৩ হাজার ৭৫৭টি কলেজকে সকল তথ্য বোর্ডের কাছে ছিল না। ফলে বোর্ড বুয়েটকে এসব তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারেনি। বুয়েট কয়েক দফা তাগাদা দিয়েও এসব তথ্য পায়নি। এমনকি এত শিক্ষার্থীর ডাটা হ্যান্ডেলিং করার কোন অভিজ্ঞতাই ঢাকা বোর্ডের ছিল না। ফলে বারবার ফল প্রকাশের সময় ঘোষণা করেও ব্যর্থ হতে হচ্ছে।
সফওটওয়্যার সিন্ডিকেটের কবলে ঢাকা বোর্ড: ঢাকা বোর্ডে সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মনঞ্জুরুল কবির একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসিসহ সকল অনলাইনের কাজ তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সর্বশেষ জেএসসি পরীক্ষা ফরম পূরণের কাজ দেয় তার গড়া প্রতিষ্ঠান শিক্ষাঙ্গন ডট কমকে। ঢাকা বোর্ডে নিজস্ব সুপার সফটওয়ার থাকার পরও বেনামি এই প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয় প্রায় ১৮ লাখ শিক্ষার্থী ফরম পূরণে কাজ। ফলে শুরুতেই বিপর্যয় দেখা দেয়। কয়েকদফা সংশোধন করে কাজ চালাতে না পেরেও ৪ দফা সময় বৃদ্ধি করা হয়। এ নিয়ে সারা দেশে থেকে অভিযোগ আসতে থাকে বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে। কিন্তু বোর্ড চেয়ারম্যান নির্বিকার থাকেন। শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, মঞ্জুরুল কবির বোর্ডে পুরো কাজ একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করেন। শিক্ষক বিভিন্ন সময় নানা ভোগান্তির অভিযোগ দাখিল করলেও তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন তিনি।
ট্রান্সত্রিুপ্ট বিতরণে মহাভুল: গত ২৫শে জুন এসএসসি ২০১৫ একাডেমিক ট্র্রান্সক্রিপ্ট দেয়ার কথা ছিল। বোর্ড ইতিমধ্যে প্রায় ১০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিতরণ করেছে। হঠাৎ করে একটি মারাত্মক ভুল ধরা পড়ে। একটি বিষয়ে পেয়েছে জিপিএ-৫ কে লেখা হয়েছে জিপিএ-৪। এভাবে ভেতরে অনেক ভুল ধরা পড়ে। বোর্ড সূত্রে জানায়, প্রোগার্মিং সেট ভুল ছিল। সেজন্য এ ধরনের বড় ভুল ধরা পড়েছে। ওই দিন বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসার পর তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, অনিবার্য কারণবশত একাডেমিক ট্রান্সত্রিুপ্ট বিতরণ স্থগিত করা হলো। যারা ট্রান্সত্রিুপ্ট নিয়েছেন তাদের জরুরি ভিত্তিতে বোর্ডে ফেরত দেয়ার কথা বলা হয় বোর্ডের নোটিশে। এতে বোর্ডের প্রায় আড়াই কোটি টাকা অপচয় হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ট্রান্সক্রিপ্ট বিতরণকারী করনিক জামাল হোসেন জানান, আমাদের টেকনিক্যাল ভুল হয়েছে। যাদের ট্রান্সত্রিুপ্ট দেয়া হয়েছে তাদের ফেরত দিয়ে যেতে বলেছি। কেন এ রকম হয়েছে এর সঠিক কিছু বলতে পারেনি তিনি। সিস্টেম এনালিস্টের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।
গতকাল সারা দিন সিস্টেম অনালিস্ট মঞ্জুরুল কবিরের ফোন ফরওয়ার্ড করা পাওয়া যায়। কয়েকবার এসএমএস দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
বুয়েট অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ মানবজমিনকে জানান, পুরো সফটওয়ারটি হ্যাং হয়েছে। নতুন করে কাজ করতে হচ্ছে। কবে নাগাদ ফল দেয়া যাবে এমন প্রশ্নে কায়কোবাদ বলেন, আমাদের কাজ করতে দেন। আশা করি শিগগিরই ফল দেয়া যাবে। এদিকে গতকাল বিকালে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের জানান, আজকে (রোববার) মধ্যে ফল দেয়া যাবে জানিয়েছে বুয়েট। এদিকে রাতে শিক্ষা সচিব জানান, রাত সাড়ে ১১টায় ফল প্রকাশ হতে পারে।
এর আগে ২৫শে জুন প্রথম দিন ফল দিতে ব্যর্থ হওয়ার পর ২৬শে জুন রাতে ফল প্রকাশের নতুন তারিখ দেয়। কিন্তু আগের দিনের মতো ওইদিনই রাত ৩টা পর্যন্ত বুয়েটে ছিলেন শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান। কিন্তু ফল প্রকাশে ব্যর্থ হওয়ায় শনিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিক্ষা সচিব ঊর্ধ্বতন সকলকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে ভারত বা সিঙ্গাপুর থেকেও আইটি বিশেষজ্ঞ এনে দ্রুত ফল দেয়ার পক্ষেও মত দেন কেউ কেউ। তবে সর্বশেষ এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয় বিশিষ্ট তথ্য প্রযুক্তিবিদ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. কায়কোবাদকে। তিনি একদিন সময় নেন। সেই হিসেবেই গতকাল ফল প্রকাশের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়।
মাত্র ৪-৫ দিনের মধ্যে সাড়ে ১১ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর নানা সমীকরণের হিসাব মিলাতে গিয়েই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে কোন ধরনের টেকনিক্যাল সমস্যা হয়নি। নানা ধরনের কোটা যেমন স্কুল-কলেজ সংযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কোটা মন্ত্রণালয়ের ও মাউশি’র কোটা এবং মেধাবীদের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে নির্ভুল তালিকা প্রকাশ করতে গিয়েই বিলম্ব ঘটছে। এ ছাড়া একেকটি প্রোগ্রাম চালু এবং তা নির্ভুলভাবে সমন্বয করার জন্য যে পরিমাণ সময় ও লোকবল প্রয়োজন তাও চূড়ান্ত ছিল না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আন্তঃবোর্ড সমন্বয় সূত্র জানায়, শুরুতে শুধু বুয়েটের ৬ সদস্যের একটি আইটি বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করেছে। গত ২৭ তারিখে বুয়েটের প্রফেসর কায়কোবোদের নেতেৃত্বে আরও ৬ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল যুক্ত হয় ভর্তির আবেদনে ফল প্রকাশের কাজে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এটুআই প্রকল্পের বিশেষজ্ঞরা এবং বোর্ডের আইটি টিমও যুক্ত হয়ে তিন ভাগে কাজ করছে এখন। কর্মকর্তারা জানান, কোন প্রকার প্রস্তুতি ছাড়াই সাড়ে এগার লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর ভর্তির আবেদন অনলাইনে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভর্তির আবেদনের সময় তিন দিন পেছানো হয়। অনলাইনে ভর্তির আবেদন কিছু ফটকাবাজ শিক্ষার ব্যবসায়ী-মাফিয়া প্রতিষ্ঠান মেধাবীদের পক্ষে নিজের প্রতিষ্ঠানে আবেদন করে ফেলা, মেধাবী ও জিপিএ-৫ ধারীদের সংখ্যাধিক্য, একসঙ্গে ৫টি প্রতিষ্ঠানের পছন্দ নির্ধারণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কোটা নির্ধারিত করে রাখাসহ ইত্যাদি জটিল সমীকরণ সমাধার করতে গলধঘর্ম হতে হয়েছে বুয়েটের আইটি বিশেষজ্ঞদের।
মন্ত্রণালয় ও বোর্ড সূত্র বলছে, শিক্ষা সচিব নজরুল ইলাম খানের সিদ্ধান্তের কারণে সাড়ে ১১ লাখ শিক্ষার্থীকে দুর্দশায় পড়তে হয়েছে। এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের পর সিদ্ধান্ত হয় যেসব কলেজের আসন সংখ্যা ৩০০ এর ওপরে এরকম ৩০০ থেকে ৫০০ কলেজ দিয়ে এবার অনলাইন কার্যত্রম শুরু হবে। এরপর ধীরে ধীরে পুরো ভর্তি প্রত্রিুয়া অনলাইনে আওতায় আনা হবে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা মিটিং হয়। তবে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় সারা দেশে ৩০০ বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয় এ সব কলেজকে অনলাইনের আওতায় আনা। শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, একসঙ্গে সারা দেশের কলেজে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা সমীচীন হবে না। এটা বাস্তবসম্মতও নয়। পর্যায়ক্রমে এর আওতা বাড়াতে হবে। তাছাড়া আমাদের অনলাইন ক্যাপাসিটিও নেই। এছাড়া বোর্ডের অধিকাংশ কর্মকর্তাদের সায় ছিল এই সিদ্ধান্তে। কিন্তু হঠাৎ করে প্রভাবশালী এই আমলা ও শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট মঞ্জুরুল কবিরের আগ্রহের কারণে শেষ মুহূর্তে সকল কলেজকেই অনলাইন ভর্তির আওতায় আনা হয়। বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, প্রায় সরা দেশের ৩ হাজার ৭৫৭টি কলেজকে সকল তথ্য বোর্ডের কাছে ছিল না। ফলে বোর্ড বুয়েটকে এসব তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারেনি। বুয়েট কয়েক দফা তাগাদা দিয়েও এসব তথ্য পায়নি। এমনকি এত শিক্ষার্থীর ডাটা হ্যান্ডেলিং করার কোন অভিজ্ঞতাই ঢাকা বোর্ডের ছিল না। ফলে বারবার ফল প্রকাশের সময় ঘোষণা করেও ব্যর্থ হতে হচ্ছে।
সফওটওয়্যার সিন্ডিকেটের কবলে ঢাকা বোর্ড: ঢাকা বোর্ডে সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মনঞ্জুরুল কবির একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসিসহ সকল অনলাইনের কাজ তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সর্বশেষ জেএসসি পরীক্ষা ফরম পূরণের কাজ দেয় তার গড়া প্রতিষ্ঠান শিক্ষাঙ্গন ডট কমকে। ঢাকা বোর্ডে নিজস্ব সুপার সফটওয়ার থাকার পরও বেনামি এই প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয় প্রায় ১৮ লাখ শিক্ষার্থী ফরম পূরণে কাজ। ফলে শুরুতেই বিপর্যয় দেখা দেয়। কয়েকদফা সংশোধন করে কাজ চালাতে না পেরেও ৪ দফা সময় বৃদ্ধি করা হয়। এ নিয়ে সারা দেশে থেকে অভিযোগ আসতে থাকে বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে। কিন্তু বোর্ড চেয়ারম্যান নির্বিকার থাকেন। শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, মঞ্জুরুল কবির বোর্ডে পুরো কাজ একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করেন। শিক্ষক বিভিন্ন সময় নানা ভোগান্তির অভিযোগ দাখিল করলেও তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন তিনি।
ট্রান্সত্রিুপ্ট বিতরণে মহাভুল: গত ২৫শে জুন এসএসসি ২০১৫ একাডেমিক ট্র্রান্সক্রিপ্ট দেয়ার কথা ছিল। বোর্ড ইতিমধ্যে প্রায় ১০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিতরণ করেছে। হঠাৎ করে একটি মারাত্মক ভুল ধরা পড়ে। একটি বিষয়ে পেয়েছে জিপিএ-৫ কে লেখা হয়েছে জিপিএ-৪। এভাবে ভেতরে অনেক ভুল ধরা পড়ে। বোর্ড সূত্রে জানায়, প্রোগার্মিং সেট ভুল ছিল। সেজন্য এ ধরনের বড় ভুল ধরা পড়েছে। ওই দিন বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসার পর তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, অনিবার্য কারণবশত একাডেমিক ট্রান্সত্রিুপ্ট বিতরণ স্থগিত করা হলো। যারা ট্রান্সত্রিুপ্ট নিয়েছেন তাদের জরুরি ভিত্তিতে বোর্ডে ফেরত দেয়ার কথা বলা হয় বোর্ডের নোটিশে। এতে বোর্ডের প্রায় আড়াই কোটি টাকা অপচয় হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ট্রান্সক্রিপ্ট বিতরণকারী করনিক জামাল হোসেন জানান, আমাদের টেকনিক্যাল ভুল হয়েছে। যাদের ট্রান্সত্রিুপ্ট দেয়া হয়েছে তাদের ফেরত দিয়ে যেতে বলেছি। কেন এ রকম হয়েছে এর সঠিক কিছু বলতে পারেনি তিনি। সিস্টেম এনালিস্টের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।
গতকাল সারা দিন সিস্টেম অনালিস্ট মঞ্জুরুল কবিরের ফোন ফরওয়ার্ড করা পাওয়া যায়। কয়েকবার এসএমএস দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
No comments