সহিংসতা থেকে পালিয়ে
সপরিবারে হাশিম ফাহরাম: রয়টার্স |
নমপেনের
প্রাণকেন্দ্রে ছোটখাটো এক রেস্তোরাঁ। সেখানে ফালাফেল বিক্রি করেন হাশিম
ফাহরাম। এটি মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় চপ জাতীয় খাবার, যা এখন কম্বোডিয়ায়
হাশিমের রুটিরুজির অবলম্বন। ইরাক থেকে পালিয়ে এসে পরবাসে ভালোই আছেন হাশিম।
তাঁর মতো অনেক ইরাকি এখন যুদ্ধের ডামাডোল থেকে পালিয়ে এসে ভিন দেশে ভিন্ন
ঠিকানায় গড়ে তুলছেন নতুন জীবন।
কম্বোডিয়া এভাবে এখন অনেক শরণার্থী ও অভিবাসন-প্রত্যাশীর নতুন ঠিকানা হয়ে উঠছে। ২০১৪ সালে ইরাকি সেনাদের সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের যখন তুমুল লড়াই চলছে, ওই সময় ফালুজা থেকে পালিয়ে যান হাশিম। চলে আসেন কম্বোডিয়ায়। এ ব্যাপারে তিনি থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, ‘কম্বোডিয়া আমার জন্য নিরাপদ। এখানে ব্যবসা শুরু করা সহজ। লোকজনও মিশুক।’
কম্বোডিয়া হচ্ছে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের কাছে প্রথম পছন্দ। অভিবাসন-প্রত্যাশী যাঁরা অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র উপকূলে ধরা পড়েছেন, তাঁদের আশ্রয় দিতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দারিদ্র্যপীড়িত এই দেশটির সঙ্গে গত সেপ্টেম্বর চুক্তি করে অস্ট্রেলিয়া। এর বিনিময়ে তারা কম্বোডিয়াকে চার কোটি ডলার সহায়তা দেবে। কম্বোডিয়া এমন এক দেশ, যেখানে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, যাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় তেমন কিছুই নয়।
অভিবাসন-প্রত্যাশীদের পুনর্বাসনে এ ধরনের পদক্ষেপের জন্য মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনার মুখে পড়েছে অস্ট্রেলিয়া। সম্প্রতি ইরান থেকে তিনজন ও মিয়ানমারের একজন রোহিঙ্গা এসে কম্বোডিয়ায় আশ্রয় নেয়।
আন্তর্জাতিক মানবিক ও অভিবাসন নীতি অনুযায়ী শরণার্থী ও অভিবাসন-প্রত্যাশীদের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। শরণার্থী মূলত তারা, যারা নিরাপত্তা চেয়ে আশ্রয় নেয়। অভিবাসন-প্রত্যাশীরা আসে জীবিকার কারণে, পরিবারের কারণে।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, হাশিমের মতো নিরাপদ ও উন্নত জীবনের আশায় অভিবাসন-প্রত্যাশী হাজারো মানুষ ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে আর আন্দামান সাগর দিয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় আশ্রয় নিতে চাইছে। বাস্তবে শরণার্থী ও অভিবাসন-প্রত্যাশীদের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ গবেষক গারহার্ড হফসটিডটার বলেন, শরণার্থী আর অভিবাসী একই। আসল কথা হলো, সহিংসতা, নিপীড়ন বা দারিদ্র্যের কারণে জীবনটা হুমকির মুখে পড়লে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় মানুষ।
হাশিমের মতো যাঁরা হুমকির মধ্যে জীবন নিয়ে দেশ ছেড়েছেন, তাঁরা শরণার্থীর মর্যাদা পান না। ফলে তাঁরা সরকারি কোনো সহযোগিতা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হন না। হাশিম অবশ্য ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরায় সহজে ভিসা পেয়েছেন। পেট চালানোর মতো রেস্তোরাঁ খুলতে পেরেছেন।
২০০৯ সালে মালয়েশিয়ায় কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যান হাশিম। সেখানে স্ত্রী ও ছেলেদের নিয়ে ২০১২ সাল পর্যন্ত থাকেন। কিন্তু ভিসা না থাকায় স্ত্রী ও ছেলেদের দেশে ফিরতে হয়। ২০১৪ সালে শুরুর দিকে হাশিমের পক্ষে পড়াশোনার খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়ায় তাঁকেও ইরাকে ফিরতে হয়। কিন্তু সহিংসতার কারণে সপরিবারে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। হাশিমের মতো যারা কম্বোডিয়ায় শরণার্থীর মর্যাদা পাননি, তাঁদের প্রতি বছর ভিসা নবায়ন করতে হয়।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সহকারী আঞ্চলিক প্রতিনিধি আলিস্টেয়ার বোলটন বলেন, হাশিমের মতো পরিবারেরগুলো তেমন সমর্থন পায় না। তাদের নিরাপত্তা দরকার। মতিনি থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, কারও জীবন হুমকির মুখে পড়ুক, স্বাভাবিকভাবেই কেউ তা চাইবে না। কিন্তু ওই ব্যক্তিকে মানসিক প্রশান্তি দিতে হবে। প্রয়োজনে তাঁকে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করতে হবে।
হাশিম জানান, তিনি বছরে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ডলার আয় করেন। কিন্তু এ অর্থ দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। এমনকি তিনি তাঁর ছোট ছেলেকে স্কুলেও পাঠাতে পারছেন না। বেসরকারি একটি স্কুলে পড়াতে হলে তাঁকে গুনতে হবে বছরে সাত হাজার ডলার, যা দেওয়া তাঁর পক্ষে কঠিন।
রেস্তোরাঁর কাজে হাশিমকে সহায়তা করেন তাঁর স্ত্রী মুনা। এখানে আশ্রয় পেলেও এ জীবন তাঁর পছন্দ নয়। কারণ তিনি মুসলিম সমাজে থেকে অভ্যস্ত। ভিন্ন পরিবেশে এই ভিন্ন সমাজে খাপ খাওয়াতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর। আবার একদিন দেশে ফিরে যাবেন, এই আশায় দিন গুনছেন তিনি।
কম্বোডিয়া এভাবে এখন অনেক শরণার্থী ও অভিবাসন-প্রত্যাশীর নতুন ঠিকানা হয়ে উঠছে। ২০১৪ সালে ইরাকি সেনাদের সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের যখন তুমুল লড়াই চলছে, ওই সময় ফালুজা থেকে পালিয়ে যান হাশিম। চলে আসেন কম্বোডিয়ায়। এ ব্যাপারে তিনি থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, ‘কম্বোডিয়া আমার জন্য নিরাপদ। এখানে ব্যবসা শুরু করা সহজ। লোকজনও মিশুক।’
কম্বোডিয়া হচ্ছে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের কাছে প্রথম পছন্দ। অভিবাসন-প্রত্যাশী যাঁরা অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র উপকূলে ধরা পড়েছেন, তাঁদের আশ্রয় দিতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দারিদ্র্যপীড়িত এই দেশটির সঙ্গে গত সেপ্টেম্বর চুক্তি করে অস্ট্রেলিয়া। এর বিনিময়ে তারা কম্বোডিয়াকে চার কোটি ডলার সহায়তা দেবে। কম্বোডিয়া এমন এক দেশ, যেখানে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, যাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় তেমন কিছুই নয়।
অভিবাসন-প্রত্যাশীদের পুনর্বাসনে এ ধরনের পদক্ষেপের জন্য মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনার মুখে পড়েছে অস্ট্রেলিয়া। সম্প্রতি ইরান থেকে তিনজন ও মিয়ানমারের একজন রোহিঙ্গা এসে কম্বোডিয়ায় আশ্রয় নেয়।
আন্তর্জাতিক মানবিক ও অভিবাসন নীতি অনুযায়ী শরণার্থী ও অভিবাসন-প্রত্যাশীদের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। শরণার্থী মূলত তারা, যারা নিরাপত্তা চেয়ে আশ্রয় নেয়। অভিবাসন-প্রত্যাশীরা আসে জীবিকার কারণে, পরিবারের কারণে।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, হাশিমের মতো নিরাপদ ও উন্নত জীবনের আশায় অভিবাসন-প্রত্যাশী হাজারো মানুষ ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে আর আন্দামান সাগর দিয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় আশ্রয় নিতে চাইছে। বাস্তবে শরণার্থী ও অভিবাসন-প্রত্যাশীদের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ গবেষক গারহার্ড হফসটিডটার বলেন, শরণার্থী আর অভিবাসী একই। আসল কথা হলো, সহিংসতা, নিপীড়ন বা দারিদ্র্যের কারণে জীবনটা হুমকির মুখে পড়লে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় মানুষ।
হাশিমের মতো যাঁরা হুমকির মধ্যে জীবন নিয়ে দেশ ছেড়েছেন, তাঁরা শরণার্থীর মর্যাদা পান না। ফলে তাঁরা সরকারি কোনো সহযোগিতা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হন না। হাশিম অবশ্য ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরায় সহজে ভিসা পেয়েছেন। পেট চালানোর মতো রেস্তোরাঁ খুলতে পেরেছেন।
২০০৯ সালে মালয়েশিয়ায় কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যান হাশিম। সেখানে স্ত্রী ও ছেলেদের নিয়ে ২০১২ সাল পর্যন্ত থাকেন। কিন্তু ভিসা না থাকায় স্ত্রী ও ছেলেদের দেশে ফিরতে হয়। ২০১৪ সালে শুরুর দিকে হাশিমের পক্ষে পড়াশোনার খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়ায় তাঁকেও ইরাকে ফিরতে হয়। কিন্তু সহিংসতার কারণে সপরিবারে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। হাশিমের মতো যারা কম্বোডিয়ায় শরণার্থীর মর্যাদা পাননি, তাঁদের প্রতি বছর ভিসা নবায়ন করতে হয়।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সহকারী আঞ্চলিক প্রতিনিধি আলিস্টেয়ার বোলটন বলেন, হাশিমের মতো পরিবারেরগুলো তেমন সমর্থন পায় না। তাদের নিরাপত্তা দরকার। মতিনি থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, কারও জীবন হুমকির মুখে পড়ুক, স্বাভাবিকভাবেই কেউ তা চাইবে না। কিন্তু ওই ব্যক্তিকে মানসিক প্রশান্তি দিতে হবে। প্রয়োজনে তাঁকে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করতে হবে।
হাশিম জানান, তিনি বছরে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ডলার আয় করেন। কিন্তু এ অর্থ দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। এমনকি তিনি তাঁর ছোট ছেলেকে স্কুলেও পাঠাতে পারছেন না। বেসরকারি একটি স্কুলে পড়াতে হলে তাঁকে গুনতে হবে বছরে সাত হাজার ডলার, যা দেওয়া তাঁর পক্ষে কঠিন।
রেস্তোরাঁর কাজে হাশিমকে সহায়তা করেন তাঁর স্ত্রী মুনা। এখানে আশ্রয় পেলেও এ জীবন তাঁর পছন্দ নয়। কারণ তিনি মুসলিম সমাজে থেকে অভ্যস্ত। ভিন্ন পরিবেশে এই ভিন্ন সমাজে খাপ খাওয়াতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর। আবার একদিন দেশে ফিরে যাবেন, এই আশায় দিন গুনছেন তিনি।
No comments