চার মুক্তিযোদ্ধার কষ্ট by কাজী তানভীর মাহমুদ
‘সময় ফুরিয়ে গেছে এখন শুধু আল্লাহর ডাকের অপেক্ষায় আছি। জীবনবাজি রেখে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। সরকারের কাছে কোন ভাতা চাই না, চাই গেজেট নম্বর, যাতে আমরা মরলে আমাদের লাশের বুকে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা মুড়িয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মানে দাফন করা হয়। জীবনের এই শেষ প্রান্তে এসে মরার আগে যদি মুক্তিযুদ্ধের গেজেট নম্বরটা জানতে পারতাম তাহলে মরেও শান্তি পেতাম’- বলছিলেন রাজবাড়ী জেলার চার মুক্তিযোদ্ধা। এরা হলেন জেলা সদরের রামকান্তপুর ইউনিয়নের মাটিপাড়া গ্রামের ৭নং ওয়ার্ডের মৃত জাওয়াদ আলী খন্দকারের ছেলে যুদ্ধাহত মো. আতাউর রহমান দুলু (৭১), ২নং ওয়ার্ডের মৃত কুরমান আলী মৃধার ছেলে নিজাম আলী মৃধা (৭০), ৭নং ওয়ার্ডের মৃত জাবেদ আলী মোল্লার ছেলে মো. মহিউদ্দিন মোল্লা মহা (৭৩), ৭নং ওয়ার্ডের মৃত হাসেম ব্যাপারীর ছেলে মো. জলিল ব্যাপারী ফকা (৭০), মৃত ছিরু মিয়ার ছেলে মো. ওমর আলী মিয়া (৭০)। স্বাধীনতার ৪২ বছরেও সম্মানী ভাতা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন তারা। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রাপ্ত সম্মানী ভাতা পেতে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে একথা তারা স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও কেন এত দুঃখ-কষ্ট নিয়ে বাঁচতে হবে- এমন অভিযোগে তাদের। যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতাউর রহমান দুলু (৭১) জানান, ১৯৭১ সালে ২৭ বছর বয়সে আনসার বাহিনীর ট্রেনিং নিয়ে তৎকালীন ৮নং সেক্টরে সেক্টর কমান্ডার মেজর আ ন ম মঞ্জুরের নির্দেশে যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। কুষ্টিয়া মিলপাড়া ওয়ারলেস এলাকায় থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। ওই সম্মুখযুদ্ধ করতে গিয়ে তার ডান হাতের বাহুতে গুলি লাগে। মিলছে না সরকারি গেজেটসহ অন্য কোন সহায়তা। তারা আরও জানান, আমাদের যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা সাথী ভাই মুক্তিযোদ্ধা মো. ওমর আলী মিয়া (৭০) বছর ২ আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। মরার আগে সে তার গেজেট নম্বরটা জানতে পারেনি। পাইনি তার প্রকৃত সম্মান। আমরাও বাকি চারজন এখন মৃত্যুর পথে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছি। কোন কাজ করতে পারি না। মুক্তিযুদ্ধের যাচাই- বাছাই তালিকায় আমাদের নাম নিয়েও প্রকৃত অর্থে মুক্তিযোদ্ধা হলেও আমাদের গেজেট নম্বর দেয়নি। এ ব্যাপারে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (সাবেক) আবুল হোসেনের কাছে একাধিকবার ধরনা দিয়েও কোন সহযোগিতা পাইনি। তিনি শুধু বলেন, সরকারের অর্ডার হলে ডাকবো। কিন্তু সরকারের অর্ডার আর কবে হবে। বীর এ মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটের ব্যাপারে বর্তমান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল জলিল জানান, তারা যদি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকেন তাহলে তাদের অবশ্যই যুদ্ধকালীন অস্ত্র জমা দেয়ার রসিদ দেখাতে হবে। তারা যদি অস্ত্র জমার রসিদ দিতে পারে তাহলে আমি তাদের সাহায্যের জন্য চেষ্টা করবো। গেজেট নং ৮১ প্রাপ্ত বীর মুক্তযোদ্ধা মো. আবদুস সোবাহান বলেন, ‘আমি মনেপ্রাণে চাই যেন তাদের গেজেট নম্বর আসে। যাতে তারা মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় সম্মান পায়’।
No comments