স্বপ্ন দেখি, একদিন মিরাকলটা হবেই হবে
(ছয়জন
মা তাঁদের সন্তানকে নিয়ে নিজেদের কথা লিখেছেন। নিজেরাই সন্তানের ছবি
তুলেছেন। আর এসব নিয়েই রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইএমকে সেন্টারে চলে ‘মায়ের
আলোকচিত্রে সন্তান’ শীর্ষক প্রদর্শনী। এতে অংশ নেওয়া ছয় মায়ের মধ্যে
চারজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানের মা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন) ‘এখন
আহমেদ সুন্দর করে আঁকতে পারে, কম্পিউটার শিখছে। আমি খুশিতে বাকহারা হয়ে
পড়ি, যখন ও ছবি এঁকে পুরস্কার জিতে নেয়, আর তা আমার হাতে তুলে দেয় তা। ও
যা, আমি এই আহমেদকেই ভালোবাসি।’ এই কথাগুলো লিখেছেন লুবনা মোহাম্মদ।
তাঁর দ্বিতীয় সন্তান আহমেদ সালেহ অন্য দুই সন্তানের চেয়ে আলাদা। প্রায়
বছর খানেক আহমেদ জামা কাপড় পরতে চাইত না। ওকে আদর করতে গেলে বা ছুঁলে; ও
আঁচড়ে, কামড়ে একশা বানাত। দেয়াল, আসবাবপত্র সবকিছু কামড়াত।
যেখানে-সেখানে, যখন-তখন বাড়ির কোণায়-আড়ালে প্রস্রাব-পায়খানা করে ফেলত।
দাঁত পরিষ্কার করানো যেত না।
লুবনা মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি সারা দিন ওর পেছন পেছন দৌঁড়ে বেড়াচ্ছি। সমাজ থেকে যেন বিচ্ছিন্নই হয়ে পড়েছিলাম। একটা যন্ত্রমানবে পরিণত হলাম। আমি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকতাম, আমি কী কোনো ভুল করেছিলাম?’ তবে লুবনা এখন বুঝতে পেরেছেন, অটিজম নিয়ে শুধু তিনি নন, বিজ্ঞান পর্যন্ত কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। যে বিশেষ স্কুলে আহমেদ পড়ছে, সেখানেই লুবনা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে শিক্ষকতা করছেন।
লুবনাসহ ছয়জন মা তাঁদের সন্তানকে নিয়ে নিজেদের কথা লিখেছেন। নিজেরাই সন্তানের ছবি তুলেছেন। আর এসব নিয়েই রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইএমকে সেন্টারে (মাইডাস ভবনের নবম তলা) চলে ‘মায়ের আলোকচিত্রে সন্তান’ শীর্ষক প্রদর্শনী। আজ শনিবার রাত আটটা পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। এতে অংশ নেওয়া ছয় মায়ের মধ্যে চারজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানের মা। ফলে তাঁদের সংগ্রামটা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।
মা ও সন্তানের সম্পর্ক, ভাবনা, স্বপ্ন নিয়ে এ প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছে ফটোগ্রাফি, ভিডিও ও ইমেজ নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান এপারচার লিমিটেড। আর এ উদ্যোগে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে চেঞ্জ মেকার্স ও ইএমকে সেন্টার।
এপারচারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেফালী আক্তার বলেন, ‘সন্তানের সঙ্গে মায়ের অন্তরঙ্গতা ও সন্তানকে ঘিরে মায়ের নিরন্তর ভাবনার কিছুটা প্রকাশ ছয় মায়ের তোলা সন্তানের আলোকচিত্রে। তবে এ প্রদর্শনী অন্য অনেক, অসংখ্য মায়ের কথা বলে। সামনে আরও অনেক মা যুক্ত হবে মুক্ত কথার এ উদ্যোগে।’
৩ ডিসেম্বর প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার আদায়ে আন্তর্জাতিক দিবসকে কেন্দ্র করেই অনুষ্ঠিত হয় তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স ফর উইমেন লিডারিশপের নির্বাহী পরিচালক নাসিম ফিরদাউস।
এবার ফেরা যাক প্রদর্শনীতে। সাদা বোর্ডে বাঁধানো ছবি, আর ছবির পাশেই মায়েদের লেখা। শেফালী আক্তার তাঁর মেয়ে সুরেলাকে নিয়ে লিখেছেন, ‘আমার স্বপ্ন, আমার মেয়ে একদিন আমার প্রতিষ্ঠানের হাল ধরবে।’
তাহমিনা আক্তারের মেয়ে জয়িতা। মা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন একটি স্কুল পরিচালনা করছেন। জয়িতা মাকে অনুকরণ করতে পছন্দ করে। তাই তাহমিনা চান তাঁর মেয়েও একদিন প্রতিষ্ঠানটির হাল ধরবে। শেফালী ও তাহমিনা স্বাভাবিক সন্তানকে নিয়ে যতটা সহজে স্বপ্ন দেখতে পেরেছেন, অন্য মায়েদের স্বপ্নগুলো খানিকটা হোঁচট খেয়েছে। তাঁরা ধাপে ধাপে স্বপ্ন দেখেছেন।
টোটন সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত। মা শারমিনা পারভীন লিখেছেন, ‘বাচ্চাদের সাথে খেলতে ও খুব পছন্দ করে। কিন্তু যেহেতু ও হাঁটতে পারে না, তাই ওদের সাথে ভালো করে খেলতে পারে না। তখন খুব মন খারাপ করে ও। মা হয়ে এটা সহ্য করা খুব কষ্টের। তখন শুধু মনে হয়, ও কবে হাঁটতে পারবে! একসময় এগুলো নিয়ে খুব মন খারাপ হতো, কান্না করতাম। এখন আর করি না। কারণ একটাই স্বপ্ন, একটাই চ্যালেঞ্জ, ওকে যতটা সম্ভব সক্ষম-সমর্থ করা। স্বপ্ন দেখি, একদিন এই মিরাকলটা হবেই হবে!’ তিনি যেদিন দেখলেন তাঁর ছেলে সাইকেলে বসতে পারছে, সেদিন তিনি এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে, ছবি না তুলে থাকতে পারেননি। কিন্তু এই খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেনি। কেননা তিনি লিখেছেন ‘একটা ভয় সব সময়ই হয়, আমি যখন থাকব না, তখন আমার টোটনকে কে দেখবে? কার কাছে থাকবে ও?’
অটিস্টিক সন্তানের মা সৈয়দা ফেরদৌসী। লেখার শুরুতেই তিনি বলেছেন, ‘একজন মায়ের তার শিশু সন্তানকে নিয়ে কত যে চিন্তা, ভাবনা, সাধনা, ভালোবাসা, আশা-আকাঙ্ক্ষা সামান্য ছোট লেখায় কি তা প্রকাশ করা যায়?’ এই মা লিখেছেন, ‘যখন ধ্রুবর বাবা-মা আমরা থাকব না, তখন ধ্রুব কীভাবে একা একা বাঁচবে? যে সমাজে সাধারণ মানুষ সুস্থভাবে বাঁচতে পারে না, সে সমাজে আমাদের ধ্রুবদের মতো বাচ্চারা, যারা অটিস্টিক অথবা নানাভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ছে, তারা কীভাবে বেঁচে থাকবে? শুধুই ভাবি . . .।’
লুবনা মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি সারা দিন ওর পেছন পেছন দৌঁড়ে বেড়াচ্ছি। সমাজ থেকে যেন বিচ্ছিন্নই হয়ে পড়েছিলাম। একটা যন্ত্রমানবে পরিণত হলাম। আমি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকতাম, আমি কী কোনো ভুল করেছিলাম?’ তবে লুবনা এখন বুঝতে পেরেছেন, অটিজম নিয়ে শুধু তিনি নন, বিজ্ঞান পর্যন্ত কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। যে বিশেষ স্কুলে আহমেদ পড়ছে, সেখানেই লুবনা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে শিক্ষকতা করছেন।
লুবনাসহ ছয়জন মা তাঁদের সন্তানকে নিয়ে নিজেদের কথা লিখেছেন। নিজেরাই সন্তানের ছবি তুলেছেন। আর এসব নিয়েই রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইএমকে সেন্টারে (মাইডাস ভবনের নবম তলা) চলে ‘মায়ের আলোকচিত্রে সন্তান’ শীর্ষক প্রদর্শনী। আজ শনিবার রাত আটটা পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। এতে অংশ নেওয়া ছয় মায়ের মধ্যে চারজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানের মা। ফলে তাঁদের সংগ্রামটা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।
মা ও সন্তানের সম্পর্ক, ভাবনা, স্বপ্ন নিয়ে এ প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছে ফটোগ্রাফি, ভিডিও ও ইমেজ নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান এপারচার লিমিটেড। আর এ উদ্যোগে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে চেঞ্জ মেকার্স ও ইএমকে সেন্টার।
এপারচারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেফালী আক্তার বলেন, ‘সন্তানের সঙ্গে মায়ের অন্তরঙ্গতা ও সন্তানকে ঘিরে মায়ের নিরন্তর ভাবনার কিছুটা প্রকাশ ছয় মায়ের তোলা সন্তানের আলোকচিত্রে। তবে এ প্রদর্শনী অন্য অনেক, অসংখ্য মায়ের কথা বলে। সামনে আরও অনেক মা যুক্ত হবে মুক্ত কথার এ উদ্যোগে।’
৩ ডিসেম্বর প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার আদায়ে আন্তর্জাতিক দিবসকে কেন্দ্র করেই অনুষ্ঠিত হয় তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স ফর উইমেন লিডারিশপের নির্বাহী পরিচালক নাসিম ফিরদাউস।
এবার ফেরা যাক প্রদর্শনীতে। সাদা বোর্ডে বাঁধানো ছবি, আর ছবির পাশেই মায়েদের লেখা। শেফালী আক্তার তাঁর মেয়ে সুরেলাকে নিয়ে লিখেছেন, ‘আমার স্বপ্ন, আমার মেয়ে একদিন আমার প্রতিষ্ঠানের হাল ধরবে।’
তাহমিনা আক্তারের মেয়ে জয়িতা। মা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন একটি স্কুল পরিচালনা করছেন। জয়িতা মাকে অনুকরণ করতে পছন্দ করে। তাই তাহমিনা চান তাঁর মেয়েও একদিন প্রতিষ্ঠানটির হাল ধরবে। শেফালী ও তাহমিনা স্বাভাবিক সন্তানকে নিয়ে যতটা সহজে স্বপ্ন দেখতে পেরেছেন, অন্য মায়েদের স্বপ্নগুলো খানিকটা হোঁচট খেয়েছে। তাঁরা ধাপে ধাপে স্বপ্ন দেখেছেন।
টোটন সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত। মা শারমিনা পারভীন লিখেছেন, ‘বাচ্চাদের সাথে খেলতে ও খুব পছন্দ করে। কিন্তু যেহেতু ও হাঁটতে পারে না, তাই ওদের সাথে ভালো করে খেলতে পারে না। তখন খুব মন খারাপ করে ও। মা হয়ে এটা সহ্য করা খুব কষ্টের। তখন শুধু মনে হয়, ও কবে হাঁটতে পারবে! একসময় এগুলো নিয়ে খুব মন খারাপ হতো, কান্না করতাম। এখন আর করি না। কারণ একটাই স্বপ্ন, একটাই চ্যালেঞ্জ, ওকে যতটা সম্ভব সক্ষম-সমর্থ করা। স্বপ্ন দেখি, একদিন এই মিরাকলটা হবেই হবে!’ তিনি যেদিন দেখলেন তাঁর ছেলে সাইকেলে বসতে পারছে, সেদিন তিনি এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে, ছবি না তুলে থাকতে পারেননি। কিন্তু এই খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেনি। কেননা তিনি লিখেছেন ‘একটা ভয় সব সময়ই হয়, আমি যখন থাকব না, তখন আমার টোটনকে কে দেখবে? কার কাছে থাকবে ও?’
অটিস্টিক সন্তানের মা সৈয়দা ফেরদৌসী। লেখার শুরুতেই তিনি বলেছেন, ‘একজন মায়ের তার শিশু সন্তানকে নিয়ে কত যে চিন্তা, ভাবনা, সাধনা, ভালোবাসা, আশা-আকাঙ্ক্ষা সামান্য ছোট লেখায় কি তা প্রকাশ করা যায়?’ এই মা লিখেছেন, ‘যখন ধ্রুবর বাবা-মা আমরা থাকব না, তখন ধ্রুব কীভাবে একা একা বাঁচবে? যে সমাজে সাধারণ মানুষ সুস্থভাবে বাঁচতে পারে না, সে সমাজে আমাদের ধ্রুবদের মতো বাচ্চারা, যারা অটিস্টিক অথবা নানাভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ছে, তারা কীভাবে বেঁচে থাকবে? শুধুই ভাবি . . .।’
No comments