৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধ করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র -প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে তার মনোভাব পরিষ্কার করেছেন। বলেছেন, ৫ই
জানুয়ারির নির্বাচন তারা বন্ধ করতে চেয়েছিল। পদ্মা সেতুতে তারা
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করেছিল। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা
করেছিল। সপ্তম নৌবহর পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ শেষ হয়ে যাইনি।
যুক্তরাষ্ট্র পাশে না থাকলে আমরা মরে যাবো না। মনে রাখতে হবে, আমরা একটি
স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। গতকাল গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব
কথা বলেন। সম্প্রতি সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেয়া ও মালয়েশিয়া সফর নিয়ে এ
সংবাদ সম্মেলন আয়োজন হলেও প্রশ্নোত্তর পর্বে রাজনৈতিক বিষয় এবং সরকারের
অবস্থান নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের
অবস্থানের অবনতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস, দল ও সরকারের দায়িত্বশীলদের বিতর্কিত
বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
জবাব দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের মধ্যে বৈঠকের বিষয়েও।
বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রশাসনের
সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বৈঠকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তার
প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, আইন তার আপন গতিতে চলবে। যারা গিয়েছেন তাদের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুর্নীতি নিয়ে টিআই’র রিপোর্টের উদ্দেশ্য নিয়ে
প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, যারা দুর্নীতি নিয়ে কাজ করে তাদের
আয়ের উৎসও খুঁজে দেখা হবে। বিরোধী জোটের আন্দোলন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী
জানিয়েছেন, সরকার অনেক শক্ত ভিতের ওপর আছে। সংবাদ সম্মেলনে
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, শ্রম ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান
মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা
ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান
মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতে সম্প্রতি মার্কিন সহকারী মন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের ঢাকা সফর নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সঙ্গে সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে- গণমাধ্যমে এমন সংবাদ আসছে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন বিষয়ে মতবিরোধ হলেই একটি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন না।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছেন, তিনি বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনিও সার্কে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র সার্কের পর্যবেক্ষক। তার সম্পর্কে কেউ যদি কোন মতামত দিয়ে থাকেন তাহলে সে দায়িত্ব তার। তাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ সেতুর কাজ শুরুর আগেই আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অপবাদ দেয়া হয়েছিল। অনেক খুঁজেও দুর্নীতি পায়নি। কাউকে জড়াতে পারেনি। তারা নানা চাপ দিয়েছিল। বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই চেয়ারম্যান অর্থায়ন বাতিল করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নির্দেশেই তা করা হয়েছিল বলে শোনা যাচ্ছে। কোন একটি কারণে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে তাতো বলা যাবে না। একটা দেশ পাশে না থাকলে একেবারে শেষ হয়ে যাবে? প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। সে মর্যাদা নিয়ে চলতে হবে। কেউ পাশে থাকলে বাঁচবো, না থাকলে মরে যাবো- এটা ঠিক না। যুক্তরাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানেও আমাদের বন্ধু আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সবাই এক না। তারা আমাদের সহযোগিতা করে থাকেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হলো- সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শুত্রুতা নয়। এ নীতি বঙ্গবন্ধুর সময়ের। দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের স্বার্থে আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করে যাবো। আমরা সেটাই করছি। তিনি বলেন, সম্পর্ক পূর্ব না পশ্চিম, উত্তর না দক্ষিণ- তা আমি বিবেচনায় নিতে চাই না।
তবে কাউকে ছাড়া বাংলাদেশ পারে না এই চিন্তা কিন্তু ঠিক না। আমরা পদ্মা সেতুর কাজ নিজস্ব অর্থায়নেই করছি। অনেকে বলেছিল বিশ্বব্যাংক টাকা না দিলে এটি আর করা যাবে না। কাজ করতে হলে আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। নিজে ভাল থাকলে বন্ধুর অভাব হয় না।
আইন আপন গতিতে চলবে: বৃহস্পতিবার রাতে প্রজাতন্ত্রের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। এ বিষয়ে সরকার প্রধান এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আইন তার আপন গতিতে চলবে। রাতের বেলা এ ধরনের বৈঠকে মানুষের মাঝে প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক। এতো গভীর রাতে সেখানে যাতায়াত কেন? এখনতো দেশ সুষ্ঠুভাবে চলছে। এরা চাকরি করে, এদের বেতন- ভাতা আমি ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছি। সেখানে যাতায়াতের কারণ কি? গভীর রাতে কেন? উনার সঙ্গে গভীর রাতে চুপেচুপে কেন তারা দেখা করেন? উনি মনে হয় সুষ্ঠু রাজনীতি চান না। উনাকে বলবো, যা করেন দিনের আলোতে করেন। রাতের অভিসার বাদ দিন।
আরেক ধাক্কা দিয়ে সরকারকে ফেলে দেয়া হবে বিএনপি’র এমন হুমকির বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, উনিতো (খালেদা জিয়া) ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছেন। হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। উনি তা দিয়ে যাচ্ছেন, আমার কাজ আমি করছি। উনার মানসিকতা হলো দেশের মানুষ ভাল থাকলে ভাল লাগে না।
তাদের আয়ের উৎস খুঁজে দেখা হবে: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবনতি হওয়ার বিষয়ে সরকার প্রধানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, টিআইবি দুর্নীতির কথা বলে। যারা দুর্নীতি করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে না। টিআই কেন হঠাৎ এ সময়ে এমন রিপোর্ট প্রকাশ করে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। ডিসেম্বর মাসে তারা এ রিপোর্ট দিলো। তাদের উদ্দেশ্যটা কি এটিও বিষয়। সামরিক শাসকদের সময়ে দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা পায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিলিটারি ডিক্টেটরদের সময় থেকে দেশে দুর্নীতির প্রচলন। সেখান থেকে বের হয়ে আসাটা এখন কঠিন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিআই শুধু বললেই হবে না। তাদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হবে। গড়িতে, ট্রাকে, দোকানে দুই টাকা, চার টাকা দুর্নীতি হয়তো কোথাও হয়। পৃথিবীর কোন দেশ আছে যেখানে দুর্নীতি নেই। আমরা সরকারে আছি। আমরা দুর্নীতি করছি কিনা সেটা প্রশ্ন। দুর্নীতি করলে তো প্রবৃব্ধি ৬.২ ভাগ হতো না। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন পিছনে গেছে। আর এখন আমরা সামনে নিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে দুর্নীতির বীজ বপন করে গেছে মিলিটারি ডিক্টেটররা। সেই শেকড় উপড়ানো কঠিন। দুর্নীতি করে তারা কোটি কোটি টাকা কামিয়ে এখন ইজ্জতও পাচ্ছে। টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি কতগুলো চ্যানেল দিয়েছি। আপনারা নেতা বানিয়েছেন একজনকে। তার এতো টাকা কিভাবে এলো। এখন টাকা দিয়ে ইজ্জতও কিনে নিয়েছে। টিআইবি এ নিয়ে কোন প্রশ্ন করেছে?
যারা অরফানেজের টাকা মেরে দিয়েছে এ বিষয়ে কোন একটি কথা টকশোতে শুনি না। যারা এভাবে সম্পদ করেছে টিআইবি তাদের সম্পদ খুঁজে বের করুক না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এখন রিজার্ভ ২২.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দুর্নীতি হলে এতো রিজার্ভ থাকে কিভাবে? আমরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে দেশে এতো উন্নয়ন হয় কিভাবে। জিয়াউর রহমান দুর্নীতির বীজ বপন করে গেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দুর্নীতির কথা বলে তাদের সোর্স অব ইনকাম আমরা খুঁজে দেখবো।
পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা চলবে: সার্ক সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে কিনা? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের সব বিষয়ে ’৭১ সালেই আমরা জবাব দিয়েছি। তারা পরাজিত হয়েছে। যেসব বিষয় অমীমাংসিত তা নিয়ে আলোচনা চলবে। কারণ ৭১ সালে পরাজয় স্বীকার করে তারা আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্ক চার্টারে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে কথা বলার সুযোগ নেই। সার্ক চার্টার হিসেবে আমি ব্যবহার করে এসেছি। পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছিল। আমরা এখন এগিয়ে যাচ্ছি। কূটনৈতিক সম্পর্কটা সেখান থেকেই।
বিএনপির সময় প্রশ্ন আগেই দিয়ে দিত: পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মাঝে মাঝে প্রশ্ন ফাঁসের খবর পাওয়া যায়। তা কখনও তথ্যভিত্তিক হয়। বিএনপির সময়তো প্রশ্ন আগেই দিয়ে দেয়া হতো। আমাদের সময় কোন অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। বিমানের অব্যবস্থাপনা ও স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানতো আগে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। এখন যারা বিমানে ভ্রমণ করেন নিশ্চয় তাদের তফাৎটা চোখে পড়বে। এখন বিমানের নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যাত্রীদের তল্লাশি করায় স্বর্ণ ধরা পড়ছে। যেটা আগে করা হতো না। যারা ধরা পড়ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। পত্রপত্রিকায় চেয়ারম্যানের পালিত পুত্র নিয়ে নানা ধরনের খবর এসেছে। এখানে চেয়ারম্যানের দোষ কি। যারা ধরা পড়েছে তাদের ছাড়িয়ে আনতে কি চেয়ারম্যান গিয়েছে?
অনেকের কথা দলের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে: দলের নেতাদের বিতর্কিত বক্তব্যে সরকার বিব্রত কি না এমন এক প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সরকার প্রধান বলেন, অনেকে অনেক কথা বলেন, দলের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে। তাদের কথা বলার স্বাধীনতা আছে। তবে স্বাধীনতা যখন ভোগ করি তখন দায়িত্বশীলতা থাকা দরকার। ছাত্রলীগ ও নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাকে জিজ্ঞাসা করুন। তিনি ব্যাখ্যা দেবেন। এইচ টি ইমামের বক্তব্য নির্বাচন নিয়ে নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এ বিষয়ে সরকার প্রধান হিসেবে বক্তব্য কি? এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে ৪০ ভাগ ভোট পড়েছে। মানুষ ভোট দিয়েছে এটিতো বাস্তব কথা। এইচ টি ইমাম যা বলেছেন তা তার দায়িত্ব। নিজে থেকে বলেছেন। এতোগুলো টেলিভিশন চ্যানেল, মিডিয়ার চোখ গলে কি কিছু করা যায়। তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন না হলে কি হতো? থাইল্যান্ডের মতো পরিস্থিতি আসতো। তখন ভাল থাকতেন? মানুষের কল্যাণ হতো?
কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না: বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের কর্মকা-ে সরকারের দুর্নাম হচ্ছে। এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাউকে খাতির করা হচ্ছে না। কেউ কেউ আছে অলটাইম গভর্নমেন্ট পার্টি। এটি ছাত্রদের ক্ষেত্রেও হয়। যে দল ক্ষমতায় থাকে সে দলের হয়ে যায়। তবে আমাদের সময়ে কেউ অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে না। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় আমরা কাউকে ছেড়ে দেই নি। কে কার জামাই বা আত্মীয় তা দেখিনি। রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে খুন করেছে ছাত্রদল ও যুবদলের কর্মীরা। এ বিষয়ে তো কেউ কথা বলে না এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন তোলে না। এটা কেমন কথা। তবে যে কোন আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো। সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।
বিরোধী জোটের আন্দোলনের হুমকির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি তো বলেছিলেন আমি প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও হতে পারব না। কার ব্যাপারে সেটা সত্য হলো। উনি তো এখন বিরোধী দলের নেতা না। শকুনের দোয়ায় গরু মরে না।
সফর সফল: সংবাদ সম্মেলনে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ও মালয়েশিয়া সফর সফল হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন লিখিত বক্তব্যে। প্রধানমন্ত্রী জানান, সার্ক সম্মেলনে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে এ সংক্রান্ত একটি কনভেনশন দ্রুত বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ব্লু ইকোনোমি বিষয়ে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ এবং অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তা সম্মেলনের ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সাফটার অধীনে বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিভিন্ন অশুল্ক বাধা দূর করতে বাংলাদেশের আরেকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকায় বহির্বিশ্বে এ অঞ্চলের অভিবাসী কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সার্কের আওতায় পারস্পরিক সহযোগিতা করতে সম্মেলনে সকলে একমত হয়েছেন। অভিবাসন, ব্লু ইকোনোমি, ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়নসূচিসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে বলে যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। সার্ক সম্মেলনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকগুলো ফলপ্রসূ হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দু’দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতার ওপর আমরা গুরুত্বারোপ করেছি। নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার সঙ্গে বৈঠককালে আমরা দু’দেশের আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার নিয়ে আলোচনা করেছি। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গে বৈঠককালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি এবং এক দেশের পণ্য অন্য দেশে প্রবেশে সুযোগের সৃষ্টির ওপর আমরা গুরুত্বারোপ করেছি। এছাড়া পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের অভিজ্ঞতা লাভের জন্য বাংলাদেশে প্রতিনিধি পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করলে আমি স্বাগত জানিয়েছি।
মালয়েশিয়া সফর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী জানান, এ সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও গতিশীল করা এবং দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় হয়। এ আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং জনশক্তি রপ্তানির বিষয়গুলো বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। প্রধানমন্ত্রী জানান, দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শেষে দু’দেশের মধ্যে আংশিক ভিসা অব্যাহতি বিষয়ক একটি চুক্তি, পর্যটন ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধিকল্পে পৃথক পৃথক দুটি সমঝোতা স্মারক এবং মালয়েশিয়ার সারাওয়াক রাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে একটি প্রটোকল স্বাক্ষর হয়েছে।
প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতে সম্প্রতি মার্কিন সহকারী মন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের ঢাকা সফর নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সঙ্গে সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে- গণমাধ্যমে এমন সংবাদ আসছে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন বিষয়ে মতবিরোধ হলেই একটি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন না।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছেন, তিনি বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনিও সার্কে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র সার্কের পর্যবেক্ষক। তার সম্পর্কে কেউ যদি কোন মতামত দিয়ে থাকেন তাহলে সে দায়িত্ব তার। তাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ সেতুর কাজ শুরুর আগেই আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অপবাদ দেয়া হয়েছিল। অনেক খুঁজেও দুর্নীতি পায়নি। কাউকে জড়াতে পারেনি। তারা নানা চাপ দিয়েছিল। বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই চেয়ারম্যান অর্থায়ন বাতিল করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নির্দেশেই তা করা হয়েছিল বলে শোনা যাচ্ছে। কোন একটি কারণে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে তাতো বলা যাবে না। একটা দেশ পাশে না থাকলে একেবারে শেষ হয়ে যাবে? প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। সে মর্যাদা নিয়ে চলতে হবে। কেউ পাশে থাকলে বাঁচবো, না থাকলে মরে যাবো- এটা ঠিক না। যুক্তরাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানেও আমাদের বন্ধু আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সবাই এক না। তারা আমাদের সহযোগিতা করে থাকেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হলো- সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শুত্রুতা নয়। এ নীতি বঙ্গবন্ধুর সময়ের। দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের স্বার্থে আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করে যাবো। আমরা সেটাই করছি। তিনি বলেন, সম্পর্ক পূর্ব না পশ্চিম, উত্তর না দক্ষিণ- তা আমি বিবেচনায় নিতে চাই না।
তবে কাউকে ছাড়া বাংলাদেশ পারে না এই চিন্তা কিন্তু ঠিক না। আমরা পদ্মা সেতুর কাজ নিজস্ব অর্থায়নেই করছি। অনেকে বলেছিল বিশ্বব্যাংক টাকা না দিলে এটি আর করা যাবে না। কাজ করতে হলে আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। নিজে ভাল থাকলে বন্ধুর অভাব হয় না।
আইন আপন গতিতে চলবে: বৃহস্পতিবার রাতে প্রজাতন্ত্রের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। এ বিষয়ে সরকার প্রধান এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আইন তার আপন গতিতে চলবে। রাতের বেলা এ ধরনের বৈঠকে মানুষের মাঝে প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক। এতো গভীর রাতে সেখানে যাতায়াত কেন? এখনতো দেশ সুষ্ঠুভাবে চলছে। এরা চাকরি করে, এদের বেতন- ভাতা আমি ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছি। সেখানে যাতায়াতের কারণ কি? গভীর রাতে কেন? উনার সঙ্গে গভীর রাতে চুপেচুপে কেন তারা দেখা করেন? উনি মনে হয় সুষ্ঠু রাজনীতি চান না। উনাকে বলবো, যা করেন দিনের আলোতে করেন। রাতের অভিসার বাদ দিন।
আরেক ধাক্কা দিয়ে সরকারকে ফেলে দেয়া হবে বিএনপি’র এমন হুমকির বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, উনিতো (খালেদা জিয়া) ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছেন। হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। উনি তা দিয়ে যাচ্ছেন, আমার কাজ আমি করছি। উনার মানসিকতা হলো দেশের মানুষ ভাল থাকলে ভাল লাগে না।
তাদের আয়ের উৎস খুঁজে দেখা হবে: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবনতি হওয়ার বিষয়ে সরকার প্রধানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, টিআইবি দুর্নীতির কথা বলে। যারা দুর্নীতি করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে না। টিআই কেন হঠাৎ এ সময়ে এমন রিপোর্ট প্রকাশ করে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। ডিসেম্বর মাসে তারা এ রিপোর্ট দিলো। তাদের উদ্দেশ্যটা কি এটিও বিষয়। সামরিক শাসকদের সময়ে দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা পায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিলিটারি ডিক্টেটরদের সময় থেকে দেশে দুর্নীতির প্রচলন। সেখান থেকে বের হয়ে আসাটা এখন কঠিন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিআই শুধু বললেই হবে না। তাদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হবে। গড়িতে, ট্রাকে, দোকানে দুই টাকা, চার টাকা দুর্নীতি হয়তো কোথাও হয়। পৃথিবীর কোন দেশ আছে যেখানে দুর্নীতি নেই। আমরা সরকারে আছি। আমরা দুর্নীতি করছি কিনা সেটা প্রশ্ন। দুর্নীতি করলে তো প্রবৃব্ধি ৬.২ ভাগ হতো না। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন পিছনে গেছে। আর এখন আমরা সামনে নিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে দুর্নীতির বীজ বপন করে গেছে মিলিটারি ডিক্টেটররা। সেই শেকড় উপড়ানো কঠিন। দুর্নীতি করে তারা কোটি কোটি টাকা কামিয়ে এখন ইজ্জতও পাচ্ছে। টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি কতগুলো চ্যানেল দিয়েছি। আপনারা নেতা বানিয়েছেন একজনকে। তার এতো টাকা কিভাবে এলো। এখন টাকা দিয়ে ইজ্জতও কিনে নিয়েছে। টিআইবি এ নিয়ে কোন প্রশ্ন করেছে?
যারা অরফানেজের টাকা মেরে দিয়েছে এ বিষয়ে কোন একটি কথা টকশোতে শুনি না। যারা এভাবে সম্পদ করেছে টিআইবি তাদের সম্পদ খুঁজে বের করুক না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এখন রিজার্ভ ২২.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দুর্নীতি হলে এতো রিজার্ভ থাকে কিভাবে? আমরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে দেশে এতো উন্নয়ন হয় কিভাবে। জিয়াউর রহমান দুর্নীতির বীজ বপন করে গেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দুর্নীতির কথা বলে তাদের সোর্স অব ইনকাম আমরা খুঁজে দেখবো।
পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা চলবে: সার্ক সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে কিনা? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের সব বিষয়ে ’৭১ সালেই আমরা জবাব দিয়েছি। তারা পরাজিত হয়েছে। যেসব বিষয় অমীমাংসিত তা নিয়ে আলোচনা চলবে। কারণ ৭১ সালে পরাজয় স্বীকার করে তারা আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্ক চার্টারে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে কথা বলার সুযোগ নেই। সার্ক চার্টার হিসেবে আমি ব্যবহার করে এসেছি। পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছিল। আমরা এখন এগিয়ে যাচ্ছি। কূটনৈতিক সম্পর্কটা সেখান থেকেই।
বিএনপির সময় প্রশ্ন আগেই দিয়ে দিত: পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মাঝে মাঝে প্রশ্ন ফাঁসের খবর পাওয়া যায়। তা কখনও তথ্যভিত্তিক হয়। বিএনপির সময়তো প্রশ্ন আগেই দিয়ে দেয়া হতো। আমাদের সময় কোন অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। বিমানের অব্যবস্থাপনা ও স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানতো আগে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। এখন যারা বিমানে ভ্রমণ করেন নিশ্চয় তাদের তফাৎটা চোখে পড়বে। এখন বিমানের নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যাত্রীদের তল্লাশি করায় স্বর্ণ ধরা পড়ছে। যেটা আগে করা হতো না। যারা ধরা পড়ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। পত্রপত্রিকায় চেয়ারম্যানের পালিত পুত্র নিয়ে নানা ধরনের খবর এসেছে। এখানে চেয়ারম্যানের দোষ কি। যারা ধরা পড়েছে তাদের ছাড়িয়ে আনতে কি চেয়ারম্যান গিয়েছে?
অনেকের কথা দলের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে: দলের নেতাদের বিতর্কিত বক্তব্যে সরকার বিব্রত কি না এমন এক প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সরকার প্রধান বলেন, অনেকে অনেক কথা বলেন, দলের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে। তাদের কথা বলার স্বাধীনতা আছে। তবে স্বাধীনতা যখন ভোগ করি তখন দায়িত্বশীলতা থাকা দরকার। ছাত্রলীগ ও নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাকে জিজ্ঞাসা করুন। তিনি ব্যাখ্যা দেবেন। এইচ টি ইমামের বক্তব্য নির্বাচন নিয়ে নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এ বিষয়ে সরকার প্রধান হিসেবে বক্তব্য কি? এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে ৪০ ভাগ ভোট পড়েছে। মানুষ ভোট দিয়েছে এটিতো বাস্তব কথা। এইচ টি ইমাম যা বলেছেন তা তার দায়িত্ব। নিজে থেকে বলেছেন। এতোগুলো টেলিভিশন চ্যানেল, মিডিয়ার চোখ গলে কি কিছু করা যায়। তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন না হলে কি হতো? থাইল্যান্ডের মতো পরিস্থিতি আসতো। তখন ভাল থাকতেন? মানুষের কল্যাণ হতো?
কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না: বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের কর্মকা-ে সরকারের দুর্নাম হচ্ছে। এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাউকে খাতির করা হচ্ছে না। কেউ কেউ আছে অলটাইম গভর্নমেন্ট পার্টি। এটি ছাত্রদের ক্ষেত্রেও হয়। যে দল ক্ষমতায় থাকে সে দলের হয়ে যায়। তবে আমাদের সময়ে কেউ অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে না। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় আমরা কাউকে ছেড়ে দেই নি। কে কার জামাই বা আত্মীয় তা দেখিনি। রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে খুন করেছে ছাত্রদল ও যুবদলের কর্মীরা। এ বিষয়ে তো কেউ কথা বলে না এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন তোলে না। এটা কেমন কথা। তবে যে কোন আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো। সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।
বিরোধী জোটের আন্দোলনের হুমকির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি তো বলেছিলেন আমি প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও হতে পারব না। কার ব্যাপারে সেটা সত্য হলো। উনি তো এখন বিরোধী দলের নেতা না। শকুনের দোয়ায় গরু মরে না।
সফর সফল: সংবাদ সম্মেলনে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ও মালয়েশিয়া সফর সফল হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন লিখিত বক্তব্যে। প্রধানমন্ত্রী জানান, সার্ক সম্মেলনে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে এ সংক্রান্ত একটি কনভেনশন দ্রুত বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ব্লু ইকোনোমি বিষয়ে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ এবং অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তা সম্মেলনের ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সাফটার অধীনে বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিভিন্ন অশুল্ক বাধা দূর করতে বাংলাদেশের আরেকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকায় বহির্বিশ্বে এ অঞ্চলের অভিবাসী কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সার্কের আওতায় পারস্পরিক সহযোগিতা করতে সম্মেলনে সকলে একমত হয়েছেন। অভিবাসন, ব্লু ইকোনোমি, ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়নসূচিসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে বলে যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। সার্ক সম্মেলনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকগুলো ফলপ্রসূ হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দু’দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতার ওপর আমরা গুরুত্বারোপ করেছি। নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার সঙ্গে বৈঠককালে আমরা দু’দেশের আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার নিয়ে আলোচনা করেছি। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গে বৈঠককালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি এবং এক দেশের পণ্য অন্য দেশে প্রবেশে সুযোগের সৃষ্টির ওপর আমরা গুরুত্বারোপ করেছি। এছাড়া পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের অভিজ্ঞতা লাভের জন্য বাংলাদেশে প্রতিনিধি পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করলে আমি স্বাগত জানিয়েছি।
মালয়েশিয়া সফর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী জানান, এ সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও গতিশীল করা এবং দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় হয়। এ আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং জনশক্তি রপ্তানির বিষয়গুলো বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। প্রধানমন্ত্রী জানান, দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শেষে দু’দেশের মধ্যে আংশিক ভিসা অব্যাহতি বিষয়ক একটি চুক্তি, পর্যটন ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধিকল্পে পৃথক পৃথক দুটি সমঝোতা স্মারক এবং মালয়েশিয়ার সারাওয়াক রাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে একটি প্রটোকল স্বাক্ষর হয়েছে।
No comments