মাঠের গৌরব, ভাস্কর্যে বিবর্ণ- অযত্নে ভেঙে গেছে চট্টগ্রামের ক্রিকেট ভাস্কর্য by সুজন ঘোষ
নাকানিচুবানি
খেয়ে মাত্রই দেশছাড়া হয়েছে জিম্বাবুয়ে। হারারে পৌঁছার পরও নাকের জল,
চোখের জলের তফাত করতে পারছেন না বেচারারা! তবে মাঠের লড়াইয়ে টাইগারদের যত
দাপটই থাকুক, মাঠের বাইরের চিত্র একদমই আলাদা! ক্রিকেট খেলার কিছু মুহূর্ত ও
খেলোয়াড়দের নিয়ে চট্টগ্রামে বেশ কিছু ভাস্কর্য রয়েছে। এর কোনোটিতে দেখা
যায়, এক ব্যাটসম্যান কোনোরকমে হাতের গ্লাভসটা রক্ষা করতে পেরেছেন। তবে
ব্যাটটি বাঁচাতে পারেননি। বল লাগার আগেই ব্যাট ভেঙে গেছে। বোলারদের অবস্থা
আরও শোচনীয়। একজনের তো হাতই খুলে পড়ে গেছে! বলসহ হাতটি মাটিতে পড়ে আছে।
ব্যাটসম্যান, বোলারদের যখন এই অবস্থা, তখন পুরো দলের কী হতে পারে!
লাল-সবুজের জার্সিতে ধুলা জমতে জমতে বাংলাদেশের নামই মুছে যেতে চলেছে!
নগরের নিমতলা মোড়েই রয়েছে ১১ জন ক্রিকেটারের ভাস্কর্য। ভাগ্যিস! জিম্বাবুয়ে হয়তো চট্টগ্রামে এসে এসব ভাস্কর্য দেখার সুযোগ পায়নি। তাহলে মাঠের লড়াইটা হয়তো অন্য রকম হতো!
২০১১ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলক্ষে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ১১ ক্রিকেটারের ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছিল। একই সময় নগরের বিভিন্ন মোড়ে ফোয়ারাসহ স্থাপনাশিল্প নির্মাণ করা হয়েছিল। বরাবরের মতো রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির অভাবে এসব ভাস্কর্য এখন চট্টগ্রামের সৌন্দর্যহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদেরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্রিকেটাদের ভাস্কর্যের মধ্যে চারজন ব্যাটসম্যান, চারজন বোলার, দুজন ফিল্ডার ও একজন উইকেটকিপার রয়েছে। চার ব্যাটসম্যানের তিনজনেরই হাতে ব্যাট নেই। একজন বোলারের হাত ভেঙে গেছে। ধুলায় ধূসর হয়ে পড়েছে লাল-সবুজের জার্সি। জার্সির পেছনে থাকা বাংলাদেশের নামও মুছে গেছে। গাড়ির ধাক্কায় ভেঙে গেছে সীমানাপ্রাচীর। টাইলসের ভাঙা অংশ সরানোরও কেউ নেই। নগরের লালখান বাজার মোড়ে স্থাপন করা দুই ক্রিকেটারের ভাস্কর্যের পরিণতি হয়েছে নিমতলা মোড়ের ক্রিকেটারদের মতোই।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির পরিচালক আকরাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশকে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে আনন্দ ও গৌরব এনে দিয়েছে ক্রিকেট। সে কারণে ক্রিকেটকে তুলে ধরার জন্য যে ভাস্কর্যগুলো নির্মিত হয়েছিল, ওগুলোর যথাযথ যত্ন নেওয়া উচিত। এটি যদি না হয়ে থাকে, তাহলে তা ক্রিকেটের জন্য খুবই দুঃখজনক।’
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বায়োস্কোপ নামের একটি বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে এসব স্থাপনা নির্মাণ করে দিয়েছিল। কিন্তু করপোরেশন এসব স্থাপনার নিয়মিত যত্ন নিতে পারেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। গত মার্চে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় কিছু সংস্কার করা হয়েছে। এরপর আর খবর নেই।
বায়োস্কোপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জেসিন বলেন, ‘নগরের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য আমাদের খরচে এসব ভাস্কর্য ও স্থাপনাশিল্প নির্মাণ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা সংস্কারের জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যে সহযোগিতা পাওয়ার কথা, তা পাইনি। এতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’ তাঁর দাবি, এসব ভাস্কর্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে তা বহু বছর টিকে থাকবে।
নগরের নিমতলা মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য কামরুজ্জামান ও নজরুল বলেন, ভাস্কর্যগুলো রাতের আলোকিত করার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু আলোর শেডগুলো কে বা কারা খুলে নিয়ে গেছে। সিটি করপোরেশন গাড়ি নিয়ে এসে ধুয়ে দিলেই পারে। তাহলে অন্তত একটু পরিষ্কার দেখাবে ভাস্কর্যগুলো।
নগরের সৌন্দর্যবর্ধনের এই বেহাল অবস্থা সম্পর্কে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক মো. রাশিদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, উপলক্ষ ধরে ধরে সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগ দীর্ঘস্থায়ী হয় না। পরিকল্পিত উপায়ে চিন্তাভাবনা করে নগরের বিভিন্ন মোড় ও সড়কগুলো সৌন্দর্যবর্ধনের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। সৌন্দর্য ধরে রাখার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হলে মূল্যবান অর্থের অপচয় বন্ধ হবে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরের কাজীর দেউড়ি ও প্রবর্তক মোড়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় স্থাপনাশিল্প বসানো হয়েছিল। বর্তমানে প্রবর্তক মোড়ের স্থাপনাশিল্পটির অস্তিত্ব না থাকলেও কোনোরকমে টিকে আছে কাজীর দেউড়ি মোড়ের স্থাপনাশিল্পটি। এটি এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের পোস্টারের জঞ্জালে ঢাকা পড়েছে। নিয়মিত সংস্কার না করায় পাতগুলো বেঁকে গেছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি জেরিনা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এমনিতেই অর্থের স্বল্পতা রয়েছে। তাই যেনতেনভাবে কিছু না করে পরিকল্পিতভাবে ও দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করে ভাস্কর্য ও স্থাপনাশিল্প নির্মাণ করা উচিত। আর এখন যা করা হয়েছে, তাও রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না। এটিই খুবই দুঃখজনক।’
জিইসি মোড়ের সড়কদ্বীপের ফোয়ারায় একসময় বর্ণিল ছিল আশপাশের পরিবেশ। কিন্তু সে অবস্থা আর নেই। ঝলমলে ফোয়ারা এখন বিবর্ণ। ঝরনাধারাও থেমে গেছে। সেখানে জমেছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। টাইগারপাস মোড়ের ফোয়ারাটিও নিষ্প্রাণ। এর পাশে থাকা লোহার পাত ও তার দিয়ে তৈরি করা প্রজাপতি ও ফড়িংয়ের শরীরে জং ধরেছে। সড়কদ্বীপের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে বসানো হয়েছে বিলবোর্ড।
এসব বিষয়ে সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ার হোছাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্রিকেটারদের ভাস্কর্য ও ফোয়ারাগুলো সংস্কার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। যাতে দৃষ্টিনন্দন হয়।’
নগরের নিমতলা মোড়েই রয়েছে ১১ জন ক্রিকেটারের ভাস্কর্য। ভাগ্যিস! জিম্বাবুয়ে হয়তো চট্টগ্রামে এসে এসব ভাস্কর্য দেখার সুযোগ পায়নি। তাহলে মাঠের লড়াইটা হয়তো অন্য রকম হতো!
২০১১ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলক্ষে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ১১ ক্রিকেটারের ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছিল। একই সময় নগরের বিভিন্ন মোড়ে ফোয়ারাসহ স্থাপনাশিল্প নির্মাণ করা হয়েছিল। বরাবরের মতো রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির অভাবে এসব ভাস্কর্য এখন চট্টগ্রামের সৌন্দর্যহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদেরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্রিকেটাদের ভাস্কর্যের মধ্যে চারজন ব্যাটসম্যান, চারজন বোলার, দুজন ফিল্ডার ও একজন উইকেটকিপার রয়েছে। চার ব্যাটসম্যানের তিনজনেরই হাতে ব্যাট নেই। একজন বোলারের হাত ভেঙে গেছে। ধুলায় ধূসর হয়ে পড়েছে লাল-সবুজের জার্সি। জার্সির পেছনে থাকা বাংলাদেশের নামও মুছে গেছে। গাড়ির ধাক্কায় ভেঙে গেছে সীমানাপ্রাচীর। টাইলসের ভাঙা অংশ সরানোরও কেউ নেই। নগরের লালখান বাজার মোড়ে স্থাপন করা দুই ক্রিকেটারের ভাস্কর্যের পরিণতি হয়েছে নিমতলা মোড়ের ক্রিকেটারদের মতোই।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির পরিচালক আকরাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশকে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে আনন্দ ও গৌরব এনে দিয়েছে ক্রিকেট। সে কারণে ক্রিকেটকে তুলে ধরার জন্য যে ভাস্কর্যগুলো নির্মিত হয়েছিল, ওগুলোর যথাযথ যত্ন নেওয়া উচিত। এটি যদি না হয়ে থাকে, তাহলে তা ক্রিকেটের জন্য খুবই দুঃখজনক।’
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বায়োস্কোপ নামের একটি বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে এসব স্থাপনা নির্মাণ করে দিয়েছিল। কিন্তু করপোরেশন এসব স্থাপনার নিয়মিত যত্ন নিতে পারেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। গত মার্চে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় কিছু সংস্কার করা হয়েছে। এরপর আর খবর নেই।
বায়োস্কোপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জেসিন বলেন, ‘নগরের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য আমাদের খরচে এসব ভাস্কর্য ও স্থাপনাশিল্প নির্মাণ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা সংস্কারের জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যে সহযোগিতা পাওয়ার কথা, তা পাইনি। এতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’ তাঁর দাবি, এসব ভাস্কর্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে তা বহু বছর টিকে থাকবে।
নগরের নিমতলা মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য কামরুজ্জামান ও নজরুল বলেন, ভাস্কর্যগুলো রাতের আলোকিত করার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু আলোর শেডগুলো কে বা কারা খুলে নিয়ে গেছে। সিটি করপোরেশন গাড়ি নিয়ে এসে ধুয়ে দিলেই পারে। তাহলে অন্তত একটু পরিষ্কার দেখাবে ভাস্কর্যগুলো।
নগরের সৌন্দর্যবর্ধনের এই বেহাল অবস্থা সম্পর্কে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক মো. রাশিদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, উপলক্ষ ধরে ধরে সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগ দীর্ঘস্থায়ী হয় না। পরিকল্পিত উপায়ে চিন্তাভাবনা করে নগরের বিভিন্ন মোড় ও সড়কগুলো সৌন্দর্যবর্ধনের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। সৌন্দর্য ধরে রাখার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হলে মূল্যবান অর্থের অপচয় বন্ধ হবে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরের কাজীর দেউড়ি ও প্রবর্তক মোড়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় স্থাপনাশিল্প বসানো হয়েছিল। বর্তমানে প্রবর্তক মোড়ের স্থাপনাশিল্পটির অস্তিত্ব না থাকলেও কোনোরকমে টিকে আছে কাজীর দেউড়ি মোড়ের স্থাপনাশিল্পটি। এটি এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের পোস্টারের জঞ্জালে ঢাকা পড়েছে। নিয়মিত সংস্কার না করায় পাতগুলো বেঁকে গেছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি জেরিনা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এমনিতেই অর্থের স্বল্পতা রয়েছে। তাই যেনতেনভাবে কিছু না করে পরিকল্পিতভাবে ও দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করে ভাস্কর্য ও স্থাপনাশিল্প নির্মাণ করা উচিত। আর এখন যা করা হয়েছে, তাও রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না। এটিই খুবই দুঃখজনক।’
জিইসি মোড়ের সড়কদ্বীপের ফোয়ারায় একসময় বর্ণিল ছিল আশপাশের পরিবেশ। কিন্তু সে অবস্থা আর নেই। ঝলমলে ফোয়ারা এখন বিবর্ণ। ঝরনাধারাও থেমে গেছে। সেখানে জমেছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। টাইগারপাস মোড়ের ফোয়ারাটিও নিষ্প্রাণ। এর পাশে থাকা লোহার পাত ও তার দিয়ে তৈরি করা প্রজাপতি ও ফড়িংয়ের শরীরে জং ধরেছে। সড়কদ্বীপের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে বসানো হয়েছে বিলবোর্ড।
এসব বিষয়ে সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ার হোছাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্রিকেটারদের ভাস্কর্য ও ফোয়ারাগুলো সংস্কার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। যাতে দৃষ্টিনন্দন হয়।’
No comments