শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিনা ভাড়ার অফিস!
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে
আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে ৭ শীর্ষ সন্ত্রাসী। এরা হচ্ছে- ফাঁসির
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি যুবলীগ ক্যাডার দীপক দত্ত ভোলা, শিবির ক্যাডার তসলিম
উদ্দিন মিন্টু, আজম ওরফে শফিউল আজম, আলমগীর ওরফে বাইট্টা আলমগীর ও রতন
সিকদার এবং কারাদণ্ডপ্রাপ্ত নাছির উদ্দিন ওরফে শিবির নাছির ও ছাত্রলীগ
ক্যাডার ফরহাদ। পুরো কারাগারই যেন তাদের নিয়ন্ত্রণে। রাজার হালে পার করছেন
বন্দিজীবন। সব কিছু পেয়ে যান না চাইতেই। বাইরে আন্ডারওয়ার্ল্ডের এরা ডন
হিসেবে পরিচিত তেমনি কারাগারের ভেতরেও তাদের দৌর্দণ্ড প্রতাপ। অনেকটা বিনা
ভাড়ায় অফিস পাওয়ার মতো। কারাগারে বসেই ব্যবসায়ী, প্রবাসীসহ বিভিন্ন জনকে
টার্গেট করে মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবিসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ
রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সময়ে তাদের কাছ থেকে সেসব মোবাইল ফোনও
উদ্ধার করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। বন্দিদের নানা অপকর্মে কারা কর্তৃপক্ষ অতিষ্ঠ
হয়ে উঠলেও নানা কারণে তাদের অনেককেই অন্য কারাগারে বদলি করা যাচ্ছে না।
কর্তৃপক্ষ বলছে, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি,
প্রতারণা, চুরি ও অপহরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে আরও কয়েকটি মামলা বিচারাধীন
রয়েছে। ওইসব মামলায় তাদের আদালতে হাজিরা দিতে নিয়ে যেতে হয়। এ কারণে অন্য
কারাগারে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এসব বন্দির কারও কারও বিরুদ্ধে রয়েছে সাধারণ ধারার মামলা। যে মামলার অজুহাতে তারা প্রায়ই হাজিরা দিতে যাচ্ছে আদালতে। আর সেখানে গিয়ে তারা তাদের অপরাধ জগতের সহযোগীদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। কারাগারের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও রক্ষীর সহায়তায় মোবাইলগুলো বন্দিদের হাতে পৌঁছে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে মোবাইল ফোন উদ্ধার হলেও ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা কারারক্ষীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয় না। সদ্য জামিনে মুক্তি পাওয়া কয়েকজন বন্দি যুগান্তরকে জানান, কারাগারের ১২০ নম্বর ওয়ার্ডে এবং মেডিকেল ওয়ার্ড ও ফাঁসির সেলে ৫০টির বেশি মোবাইল ফোন বর্তমানে রয়েছে। কারাকর্তৃপক্ষ এসব জেনেও উদ্ধার করছে না।
সাত বন্দির হালচাল : মোহাম্মদ আজম ওরফে শফিউল আজম চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। ফটিকছড়ি উপজেলার আমতলী মেম্বার বাড়ির নজির আহাম্মদের ছেলে। অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে হত্যা মামলায় ২০০৩ সালের ৬ ফেব্র“য়ারি বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল তার ফাঁসির আদেশ দেন। ওই বছরের ২০ মার্চ থেকে সে কারাগারে আছে। তার বিরুদ্ধে বন্দর থানায় একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। এ ছাড়া সে বহদ্দারহাটে ৮ ছাত্রলীগ কর্মীকে ব্রাশফায়ারে খুন করার অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামি। ১০ মাসে তার কাছ থেকে তিনবার মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শাস্তি হিসেবে তাকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। আজমের ওই ফোন থেকে আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী কারাগার থেকে কথা বলত তাদের কর্মীদের সঙ্গে।
শিবির ক্যাডার তসলিম উদ্দিন মন্টু ফটিকছড়ি উপজেলার দক্ষিণ ধর্মপুর এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। ৬ ফেব্র“য়ারি বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল একটি হত্যা মামলায় তাকে ফাঁসির দণ্ড দেন। ২০১০ সালের ১১ জুলাই থেকে কারাগারে আছে। তার বিরুদ্ধে রাউজান থানায় একটি হত্যা মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। ১৮ জুন তার কাছ থেকে ১টি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। মোবাইল ফোনে বিভিন্ন জনের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
দীপক দত্ত ভোলা যুবলীগ ক্যাডার। সে রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের ব্রাহ্মণদাশপাড়া এলাকার তেজেন্দ্র লাল দত্তের ছেলে। চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। রাউজান উপজেলার ডাবুয়া বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু জ্ঞানজ্যাতি হত্যা মামলায় ২০০৪ সালের ১০ জুন বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল তাকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। এছাড়া বর্তমানে তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ২০০৩ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে সে কারাগারে আছে। ২০ জুন ভোলার কাছ থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করে কারা কর্তৃপক্ষ।
সন্ত্রাসী রতন শিকদার ওরফে রতন দাশ আনোয়ারা উপজেলার কেয়াঘর রাখাল মাস্টারের বাড়ির রবীন্দ্র দাশ শিকদারের ছেলে। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট মামুন হত্যা মামলায় বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল তাকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেন। দুর্ধর্ষ এ সন্ত্রাসী কারাগারে বসে তার অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। ১৮ জুন তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি মোবাইল ফোন। এ অভিযোগে তাকে শাস্তিমূলকভাবে কুমিল্লা কারাগারে বদলি করা হয়েছে।
শিবির ক্যাডার আলমগীর ওরফে বাইট্টা আলমগীর ফটিকছড়ি উপজেলার ইদুলপুর ইউনিয়নের পণ্ডিতপাড়া এলাকার আবদুস সত্তারের ছেলে। ২০০২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে সে কারাগারে। ১৮ জুন তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শাস্তি হিসেবে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে ৩০ দিন ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখে।
নাছির উদ্দিন ওরফে শিবির নাছির হাটহাজারী উপজেলার মন্দাকিনী গ্রামের এলাহী বক্সের ছেলে নাছির উদ্দিন ওরফে শিবির নাছির। ১৯৯৭ সালের ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রাবাস থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সে কারাগারে রয়েছে। ২৬ জানুয়ারি তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন উদ্ধারের পর তাকে ৪৫ দিন ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখার শাস্তি দেয়া হয়। নাছিরের বিরুদ্ধে হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি থানায় বিভিন্ন অভিযোগে ৩৬টি মামলা রয়েছে। ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মাত্র এগারো বছরে তার বিরুদ্ধে এসব মামলা রুজু হয়। তার মধ্যে ১৪টি মামলায় তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন আদালত। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে ২১টি মামলা আদালতে চলমান রয়েছে।
ছাত্রলীগ ক্যাডার ফরহাদ চট্টগ্রামের খুলশী থানাধীন আমবাগান এলাকার বাসিন্দা। একটি হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি রয়েছে। নিয়ন্ত্রণ করছে কারাগারের মেডিকেল বিভাগ। কারা মেডিকেলের চিফ রাইটার হিসেবে দায়িত্বে রয়েছে। বন্দিদের আরামের স্থান হিসেবে পরিচিত কারা মেডিকেল। অভিযোগ রয়েছে, ১০০ শয্যার কারা মেডিকেলে যারা আছে তাদের অধিকাংশই রোগী নয়। হাসপাতালের জন্য ডাক্তারও রয়েছেন মাত্র ১ জন। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সন্ত্রাসী বন্দিরা কারা মেডিকেলে থাকার সুযোগ পাচ্ছে। ফরহাদ কারাকর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কারা মেডিকেল মাসিক হারে লিজ নিয়েছে বলে কয়েকজন বন্দি জানিয়েছে। কারাগারে বন্দিদের নির্যাতনের মাধ্যমে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার দাপটে তটস্থ থাকতে হয় কারা কর্তৃপক্ষকে।
কারাগারে যেভাবে মোবাইল রাখা হয় : একাধিক কারা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারাগারে যেসব বন্দি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তারা এমন সব স্থানে ফোনটি লুকিয়ে রাখে যা কারাকর্তৃপক্ষের তল্লাশিতেও অনেক সময় ধরা পড়ে না। বন্দিদের কাছ থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে, বিশেষ কায়দায় মোবাইল ফোন কনডমের ভেতর ঢুকিয়ে সুতা দিয়ে বেঁধে টয়লেটের কমোডের ভেতর রাখা। টেলিভিশন এবং রেডিওর ওপরের অংশ খুলে তার ভেতর রাখা, দেয়াল ছিদ্র করে তার ভেতর মোবাইল রেখে ওপরে কাগজ লাগিয়ে দেয়া, ভবনের মেঝেতে গর্ত খুঁড়ে মোবাইল রেখে তার ওপর বিছানাপত্র রাখা, বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী যেমন মুড়ি, বিস্কুটের প্যাকেটের সঙ্গে রাখা অবস্থায় চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ছগির মিয়া জানান, কারাগারে যারা বন্দি আছে তারা বিভিন্ন অপরাধে আটক রয়েছে। অপরাধী সব জায়গাতেই অপরাধ করার চেষ্টা করে। এ পর্যন্ত যাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কারাবিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে আসার সময় তারা বিভিন্ন কায়দায় লুকিয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে আসতে পারে। কিছু অসাধু কারারক্ষীর সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করেও মোবাইল আনতে পারে। মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল করার জন্য জেমার থাকলেও জেমারের চেয়ে মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্ক আরও বেশি শক্তিশালী হওয়ায় জেমারগুলো কাজ করছে না। চট্টগ্রাম কারাভবনে ৬টি ছাদে ১৩টি জেমার রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি অকেজো। কয়েক মাস আগে আরও ১৫টি নতুন জেমার চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছে কারাকর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এসব বন্দির কারও কারও বিরুদ্ধে রয়েছে সাধারণ ধারার মামলা। যে মামলার অজুহাতে তারা প্রায়ই হাজিরা দিতে যাচ্ছে আদালতে। আর সেখানে গিয়ে তারা তাদের অপরাধ জগতের সহযোগীদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। কারাগারের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও রক্ষীর সহায়তায় মোবাইলগুলো বন্দিদের হাতে পৌঁছে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে মোবাইল ফোন উদ্ধার হলেও ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা কারারক্ষীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয় না। সদ্য জামিনে মুক্তি পাওয়া কয়েকজন বন্দি যুগান্তরকে জানান, কারাগারের ১২০ নম্বর ওয়ার্ডে এবং মেডিকেল ওয়ার্ড ও ফাঁসির সেলে ৫০টির বেশি মোবাইল ফোন বর্তমানে রয়েছে। কারাকর্তৃপক্ষ এসব জেনেও উদ্ধার করছে না।
সাত বন্দির হালচাল : মোহাম্মদ আজম ওরফে শফিউল আজম চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। ফটিকছড়ি উপজেলার আমতলী মেম্বার বাড়ির নজির আহাম্মদের ছেলে। অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে হত্যা মামলায় ২০০৩ সালের ৬ ফেব্র“য়ারি বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল তার ফাঁসির আদেশ দেন। ওই বছরের ২০ মার্চ থেকে সে কারাগারে আছে। তার বিরুদ্ধে বন্দর থানায় একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। এ ছাড়া সে বহদ্দারহাটে ৮ ছাত্রলীগ কর্মীকে ব্রাশফায়ারে খুন করার অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামি। ১০ মাসে তার কাছ থেকে তিনবার মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শাস্তি হিসেবে তাকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। আজমের ওই ফোন থেকে আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী কারাগার থেকে কথা বলত তাদের কর্মীদের সঙ্গে।
শিবির ক্যাডার তসলিম উদ্দিন মন্টু ফটিকছড়ি উপজেলার দক্ষিণ ধর্মপুর এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। ৬ ফেব্র“য়ারি বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল একটি হত্যা মামলায় তাকে ফাঁসির দণ্ড দেন। ২০১০ সালের ১১ জুলাই থেকে কারাগারে আছে। তার বিরুদ্ধে রাউজান থানায় একটি হত্যা মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। ১৮ জুন তার কাছ থেকে ১টি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। মোবাইল ফোনে বিভিন্ন জনের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
দীপক দত্ত ভোলা যুবলীগ ক্যাডার। সে রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের ব্রাহ্মণদাশপাড়া এলাকার তেজেন্দ্র লাল দত্তের ছেলে। চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। রাউজান উপজেলার ডাবুয়া বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু জ্ঞানজ্যাতি হত্যা মামলায় ২০০৪ সালের ১০ জুন বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল তাকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। এছাড়া বর্তমানে তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ২০০৩ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে সে কারাগারে আছে। ২০ জুন ভোলার কাছ থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করে কারা কর্তৃপক্ষ।
সন্ত্রাসী রতন শিকদার ওরফে রতন দাশ আনোয়ারা উপজেলার কেয়াঘর রাখাল মাস্টারের বাড়ির রবীন্দ্র দাশ শিকদারের ছেলে। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট মামুন হত্যা মামলায় বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল তাকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেন। দুর্ধর্ষ এ সন্ত্রাসী কারাগারে বসে তার অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। ১৮ জুন তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি মোবাইল ফোন। এ অভিযোগে তাকে শাস্তিমূলকভাবে কুমিল্লা কারাগারে বদলি করা হয়েছে।
শিবির ক্যাডার আলমগীর ওরফে বাইট্টা আলমগীর ফটিকছড়ি উপজেলার ইদুলপুর ইউনিয়নের পণ্ডিতপাড়া এলাকার আবদুস সত্তারের ছেলে। ২০০২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে সে কারাগারে। ১৮ জুন তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শাস্তি হিসেবে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে ৩০ দিন ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখে।
নাছির উদ্দিন ওরফে শিবির নাছির হাটহাজারী উপজেলার মন্দাকিনী গ্রামের এলাহী বক্সের ছেলে নাছির উদ্দিন ওরফে শিবির নাছির। ১৯৯৭ সালের ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রাবাস থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সে কারাগারে রয়েছে। ২৬ জানুয়ারি তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন উদ্ধারের পর তাকে ৪৫ দিন ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখার শাস্তি দেয়া হয়। নাছিরের বিরুদ্ধে হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি থানায় বিভিন্ন অভিযোগে ৩৬টি মামলা রয়েছে। ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মাত্র এগারো বছরে তার বিরুদ্ধে এসব মামলা রুজু হয়। তার মধ্যে ১৪টি মামলায় তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন আদালত। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে ২১টি মামলা আদালতে চলমান রয়েছে।
ছাত্রলীগ ক্যাডার ফরহাদ চট্টগ্রামের খুলশী থানাধীন আমবাগান এলাকার বাসিন্দা। একটি হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি রয়েছে। নিয়ন্ত্রণ করছে কারাগারের মেডিকেল বিভাগ। কারা মেডিকেলের চিফ রাইটার হিসেবে দায়িত্বে রয়েছে। বন্দিদের আরামের স্থান হিসেবে পরিচিত কারা মেডিকেল। অভিযোগ রয়েছে, ১০০ শয্যার কারা মেডিকেলে যারা আছে তাদের অধিকাংশই রোগী নয়। হাসপাতালের জন্য ডাক্তারও রয়েছেন মাত্র ১ জন। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সন্ত্রাসী বন্দিরা কারা মেডিকেলে থাকার সুযোগ পাচ্ছে। ফরহাদ কারাকর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কারা মেডিকেল মাসিক হারে লিজ নিয়েছে বলে কয়েকজন বন্দি জানিয়েছে। কারাগারে বন্দিদের নির্যাতনের মাধ্যমে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার দাপটে তটস্থ থাকতে হয় কারা কর্তৃপক্ষকে।
কারাগারে যেভাবে মোবাইল রাখা হয় : একাধিক কারা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারাগারে যেসব বন্দি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তারা এমন সব স্থানে ফোনটি লুকিয়ে রাখে যা কারাকর্তৃপক্ষের তল্লাশিতেও অনেক সময় ধরা পড়ে না। বন্দিদের কাছ থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে, বিশেষ কায়দায় মোবাইল ফোন কনডমের ভেতর ঢুকিয়ে সুতা দিয়ে বেঁধে টয়লেটের কমোডের ভেতর রাখা। টেলিভিশন এবং রেডিওর ওপরের অংশ খুলে তার ভেতর রাখা, দেয়াল ছিদ্র করে তার ভেতর মোবাইল রেখে ওপরে কাগজ লাগিয়ে দেয়া, ভবনের মেঝেতে গর্ত খুঁড়ে মোবাইল রেখে তার ওপর বিছানাপত্র রাখা, বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী যেমন মুড়ি, বিস্কুটের প্যাকেটের সঙ্গে রাখা অবস্থায় চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ছগির মিয়া জানান, কারাগারে যারা বন্দি আছে তারা বিভিন্ন অপরাধে আটক রয়েছে। অপরাধী সব জায়গাতেই অপরাধ করার চেষ্টা করে। এ পর্যন্ত যাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কারাবিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে আসার সময় তারা বিভিন্ন কায়দায় লুকিয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে আসতে পারে। কিছু অসাধু কারারক্ষীর সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করেও মোবাইল আনতে পারে। মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল করার জন্য জেমার থাকলেও জেমারের চেয়ে মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্ক আরও বেশি শক্তিশালী হওয়ায় জেমারগুলো কাজ করছে না। চট্টগ্রাম কারাভবনে ৬টি ছাদে ১৩টি জেমার রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি অকেজো। কয়েক মাস আগে আরও ১৫টি নতুন জেমার চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছে কারাকর্তৃপক্ষ।
No comments