সরকার পর্যায়ে আলোচনার যোগ্যতা কি আমাদের আছে? -শ্রমদাস ইলিয়াসের জবানবন্দী by তারেক মোরতাজা
হকচকিয়ে গেলাম ইলিয়াসের কথায়। ‘বাংলাদেশ সরকার দুর্বল। কথা বলার যোগ্যতা নেই। নোগেশিয়েট তো পরের কথা।’ মুখ তুলে তাকালাম। বললাম, আপনার এমন মনে হচ্ছে কেন? হেসে ইলিয়াস বলেন, বিদেশে শুধু শ্রমিক পাঠাবে আর রেমিট্যান্সের পাহাড় দেখানোর রাজনীতি করবেন উনারা; শ্রমিকদের কি কোনো অধিকার দিতে পারেন, স্বস্তি দিতে পারেন? পারেন না। আপনি এ নগরে যেকোনো শ্রমিকের কাছেই যাবেন একই কথা শুনবেন। তারা অধিকারবঞ্চিত। একই উপমহাদেশের অন্য সব দেশ থেকে এখানে শ্রমিক আসছে। তারা কেমন আছেন আর আমরা কেমন আছি। একটু সরলভাবেই তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এখানকার হাইকমিশন কিছু করে না? ফাইরুজ হোটেলে আলো খেলানো বারান্দায় লাল পোশাকে দাঁড়িয়ে থাকা ইলিয়াস দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, হুম, করেন বটে! সেটি নিজেদের জন্য। উনারা এসি গাড়িতে সাদা কাপড় পরে চলবেন, সেখানে এ শ্রমিকদের যদি ধুলো উড়ে পড়ে তাই কাচের দেয়াল তুলে দেন। সরকার আসে, সরকার যায় কিন্তু আমাদের কোনো উন্নতি হয় না। লক্ষ্মীপুরের ছেলে ইলিয়াস হোটেলের কাজ করছেন কয়েক বছর ধরে। মদিনাতুন নবীর তারকা হোটেল ফাইরুজে তার ডিউটি শুরু হয় সকাল ৬টায়।
শেষ কখন? জানতে চাইলে হেসে বলেন, শেষ নেই। কখনো রাত ১২টা, কখনো ১টা। কখনো তারো বেশি। তাই বলে সকালে দেরি করলে চলবে না। নিজেই ফের জানান, এভাবে কি জীবন চলে? চলে না। পাশের একজন ভারতীয়কে দেখিয়ে বলেন, এর চেয়ে আমি বেশি কাজ করি। এটা তো অন্তত সপ্তাহ খানেকে আপনারা দেখছেন। কিন্তু তার বেতন আর আমার বেতন এক নয়! ও আমার চেয়ে বেশি বেতন পায়। কেন এমন হয় বলতে পারেন? পারবেন না। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মানুষ। আর আমাদের দেশের কথা বলতে চাই না। ক্ষুব্ধ ইলিয়াস সাত থেকে আটটি ভাষা জানেন। কাজ করেন সবার আগে। কিন্তু বেতন তুলতে গেলে তার মনটা খারাপ হয়ে যায়।
ইলিয়াস বলেন, ভারত থেকে এখানে শ্রমিক আসার আগে সে দেশের সরকারিপর্যায়ের কর্মকর্তারা আসেন; তারা শ্রমিক নিয়োগের সব শর্ত, বেতনভাতা ও সুবিধা দেখে তারপর শ্রমিক পাঠান। আর আমাদের দেশ থেকে তারা শ্রমিক আনতে চান না। আপনি ঢাকা গিয়ে শ্রমমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলবেনÑ সৌদি আরবে আমরা নাকি শুধু ‘আকাম’ করি। এখন বিদেশে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে এসে ছয় হাজার বা সাত হাজার টাকা বেতন পেলে কি কেউ ভালো কাজ করবেন? ইলিয়াসের জবানি বাড়তে থাকে; শ্রমদাস হিসেবে তারা সৌদি আরব তবুও থাকতে চান। দেশের রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে খবর নিতে চান না তারা। তাদের এ শ্রম বৃথা তবুও নিজের পরিবারের কথা মনে রেখে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান ইলিয়াস।
একাই কি ইলিয়াস ক্ষুব্ধ নাকি অন্যরাও? সৌদি আরব অবস্থানকালে আরো কিছু শ্রমিকের সাথে কথা হয়। তাদের আরেকজন রাজীব বলেন, আমরা এখানে শ্রমদাস। সরকার আমাদের নিয়ে ভাবে না। রাজীব জানান, সৌদি সরকার দেশটিতে টেক্সি ড্রাইভার নেবে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে নয়, ভারত থেকে নেবে। এখানে একটু ভালো চাকরির জন্য ভারতীয়দের অগ্রাধিকার। বেতনও ভালো। এটা আমাদের ভাগ্যে জোটে না। আমাদের সরকারের মনোভাব খুবই খারাপ। ভারতীয় হিন্দুরাও এখানে নাম পাল্টে ভালো আছে।
তারা মনে করে, আমরা বিদেশ আসা মানে ‘আপদ’ বিদায়। তাই তারা সৌদি সরকারের সাথে আলাপে যায় না। আসলে আলাপ করার ক্ষেত্রে ভাষা ও দক্ষতা একটা বড় বাধা বলে মনে করেন নেয়ামত আলী। এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি সৌদি আরব থাকছেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মন্ত্রীরা কথাবার্তাই বলতে পারেন না। যুক্তিতর্ক তো পরের কথা। পাল্টা প্রশ্ন করলাম, দেশে ভালো কথা বলেন। এখানে পারেন না কেন? হেসে নেয়ামত বলেন, ‘গলাবাজি’ করা আর সমঝোতা করা এক জিনিস না। তাই তো! থেমে থাকলাম। তিনি বলেন, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী আসেন; তারপর দেশে গিয়ে অনেক ভালো ভালো খবর বলেন। সে সব পড়ে আমরা আশ্বস্ত হই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে আশা পূরণ হয় না।
শেষ কখন? জানতে চাইলে হেসে বলেন, শেষ নেই। কখনো রাত ১২টা, কখনো ১টা। কখনো তারো বেশি। তাই বলে সকালে দেরি করলে চলবে না। নিজেই ফের জানান, এভাবে কি জীবন চলে? চলে না। পাশের একজন ভারতীয়কে দেখিয়ে বলেন, এর চেয়ে আমি বেশি কাজ করি। এটা তো অন্তত সপ্তাহ খানেকে আপনারা দেখছেন। কিন্তু তার বেতন আর আমার বেতন এক নয়! ও আমার চেয়ে বেশি বেতন পায়। কেন এমন হয় বলতে পারেন? পারবেন না। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মানুষ। আর আমাদের দেশের কথা বলতে চাই না। ক্ষুব্ধ ইলিয়াস সাত থেকে আটটি ভাষা জানেন। কাজ করেন সবার আগে। কিন্তু বেতন তুলতে গেলে তার মনটা খারাপ হয়ে যায়।
ইলিয়াস বলেন, ভারত থেকে এখানে শ্রমিক আসার আগে সে দেশের সরকারিপর্যায়ের কর্মকর্তারা আসেন; তারা শ্রমিক নিয়োগের সব শর্ত, বেতনভাতা ও সুবিধা দেখে তারপর শ্রমিক পাঠান। আর আমাদের দেশ থেকে তারা শ্রমিক আনতে চান না। আপনি ঢাকা গিয়ে শ্রমমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলবেনÑ সৌদি আরবে আমরা নাকি শুধু ‘আকাম’ করি। এখন বিদেশে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে এসে ছয় হাজার বা সাত হাজার টাকা বেতন পেলে কি কেউ ভালো কাজ করবেন? ইলিয়াসের জবানি বাড়তে থাকে; শ্রমদাস হিসেবে তারা সৌদি আরব তবুও থাকতে চান। দেশের রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে খবর নিতে চান না তারা। তাদের এ শ্রম বৃথা তবুও নিজের পরিবারের কথা মনে রেখে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান ইলিয়াস।
একাই কি ইলিয়াস ক্ষুব্ধ নাকি অন্যরাও? সৌদি আরব অবস্থানকালে আরো কিছু শ্রমিকের সাথে কথা হয়। তাদের আরেকজন রাজীব বলেন, আমরা এখানে শ্রমদাস। সরকার আমাদের নিয়ে ভাবে না। রাজীব জানান, সৌদি সরকার দেশটিতে টেক্সি ড্রাইভার নেবে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে নয়, ভারত থেকে নেবে। এখানে একটু ভালো চাকরির জন্য ভারতীয়দের অগ্রাধিকার। বেতনও ভালো। এটা আমাদের ভাগ্যে জোটে না। আমাদের সরকারের মনোভাব খুবই খারাপ। ভারতীয় হিন্দুরাও এখানে নাম পাল্টে ভালো আছে।
তারা মনে করে, আমরা বিদেশ আসা মানে ‘আপদ’ বিদায়। তাই তারা সৌদি সরকারের সাথে আলাপে যায় না। আসলে আলাপ করার ক্ষেত্রে ভাষা ও দক্ষতা একটা বড় বাধা বলে মনে করেন নেয়ামত আলী। এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি সৌদি আরব থাকছেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মন্ত্রীরা কথাবার্তাই বলতে পারেন না। যুক্তিতর্ক তো পরের কথা। পাল্টা প্রশ্ন করলাম, দেশে ভালো কথা বলেন। এখানে পারেন না কেন? হেসে নেয়ামত বলেন, ‘গলাবাজি’ করা আর সমঝোতা করা এক জিনিস না। তাই তো! থেমে থাকলাম। তিনি বলেন, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী আসেন; তারপর দেশে গিয়ে অনেক ভালো ভালো খবর বলেন। সে সব পড়ে আমরা আশ্বস্ত হই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে আশা পূরণ হয় না।
তারেক মোরতাজা, সৌদি আরব থেকে ফিরে
No comments