সামষ্টিক অর্থনীতির নতুন কৌশল by জেফরি ডি. স্যাকস
আমি একজন সামষ্টিক অর্থনীতিবিদ। কিন্তু
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ ধারার দুটি ঘরানা থেকেই আমি বিচ্ছিন্ন: এক দল
হচ্ছে নব্য কেইনসীয়পন্থী, যারা সমন্বিত চাহিদা বাড়ানোয় গুরুত্বারোপ করে;
আরেক দল হচ্ছে সরবরাহপন্থী, যারা কর হ্রাসের ওপর জোর দেয়। কিন্তু এ দুই
ঘরানার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও উচ্চ আয়ের অর্থনীতির গত কয়েক বছরের দুর্বল
পারফরম্যান্স কাটানো সম্ভব হয়নি। সময় এসেছে, নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হবে,
যার ভিত্তি হবে টেকসই ও বিনিয়োগসৃষ্ট প্রবৃদ্ধি। সামষ্টিক অর্থনীতির
প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, সমাজের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা।
যে শ্রমিকেরা কাজ খুঁজছেন, তাঁদের অবশ্যই তা পেতে হবে, কারখানার পুঁজি
দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে। আর পুঁজির যে অংশটা ভোগ না হয়ে বেঁচে
গেছে, সেটা মানুষের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে বিনিয়োগ হতে হবে।
এই তৃতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়েই নব্য কেইনসীয়পন্থী ও সরবরাহপন্থীরা রণে ভঙ্গ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপের উচ্চ আয়ের দেশগুলো ভবিষ্যতের সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষ্যে সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে পারছে না। বিনিয়োগ করার মাধ্যম দুটি: অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে। দুনিয়া এ দুই ক্ষেত্রেই কমজোর হয়ে পড়েছে।
অভ্যন্তীরণ বিনিয়োগ নানাভাবেই হতে পারে: যন্ত্রপাতি ও ভবন, গৃহস্থালি কাজে বিনিয়োগ ও জনগণের জন্য সরকারি বিনিয়োগ (শিক্ষা, দক্ষতা), জ্ঞান (গবেষণা ও উন্নয়ন) ও অবকাঠামো (যাতায়াত, শক্তি, পানি ও জলবায়ু সহিষ্ণুতা)।
নব্য কেইনসীয় পন্থা অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ কোনোভাবেই বাড়াতে পারেনি। হ্যাঁ, এ দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, খরচ তো খরচই। নব্য কেইনসীয়পন্থীরা এভাবে গৃহায়ণে বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে, তার জন্য সুদের হার অনেক কমানো হয়েছে। সুনিশ্চিত ভোক্তা ঋণের মাধ্যমে মোটরগাড়ি বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করেছে তারা। আর স্বল্পমেয়াদি উদ্দীপনা কর্মসূচির মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নযোগ্য অবকাঠামো প্রকল্পও তারা হাতে নিয়েছে। আর বিনিয়োগ ব্যয়ের কোনো নড়চড় না হলে তারা সুপারিশ করেছে, ‘অতিরিক্ত’ সঞ্চয় যেন ভোগে ব্যয় করা হয়।
অন্যদিকে, সরবরাহপন্থীরা ব্যক্তিগত (সরকারি নয়) বিনিয়োগ বাড়ানোর পক্ষপাতী, এর জন্য তারা কর হ্রাস ও নিয়ম শিথিল করার পক্ষে। তারা বিভিন্ন সময়েই এ কাজ করার চেষ্টা করেছে, সর্বশেষ জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনের সময় তারা এ কাজ করার চেষ্টা করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই শিথিলকরণের ফলে স্বল্প সময়ের জন্য গৃহায়ণে বুদ্বুদ সৃষ্টি হয়েছিল। সেটা ব্যক্তিগত বিনিয়োগে কোনো টেকসই তেজিভাব আনতে পারেনি।
যদিও সরবরাহপন্থী ও নব্য কেইনসীয়পন্থীদের নীতি সাধারণত এক হয় না, তাদের উভয়ের নীতির ফলে এক অভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে: অধিকাংশ উচ্চ আয়ের দেশে জাতীয় আয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগ কমেছে। আইএমএফের তথ্য অনুসারে, এসব দেশের মোট বিনিয়োগ ১৯৯০ সালে ছিল জিডিপির ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ, আর ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২০ শতাংশে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯০ সালে বিনিয়োগ ব্যয় ছিল জিডিপির ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ৩ শতাংশে। নিট হিসাব করলে দেখা যায়, এ হ্রাস আরও অনেক বেশি (পুঁজির অবমূল্যায়ন বাদ দিয়ে মোট বিনিয়োগ)।
কিন্তু এরা কেউই সমস্যার মূলে যায় না। আমাদের সমাজের জরুরি ভিত্তিতে আরও বিনিয়োগ দরকার। বিশেষত অতি মাত্রায় দূষণশীল, শক্তিঘন ও উচ্চ কার্বন সৃষ্টিকারী উৎপাদন ব্যবস্থাটির রূপান্তর দরকার, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারবে ও নিম্ন কার্বন নিঃসরণ করে এমন একটি উৎপাদনব্যবস্থা আমাদের প্রয়োজন। এরূপ বিনিয়োগ হতে গেলে সরকারি ও বেসরকারি খাত উভয়কেই এগিয়ে আসতে হবে।
এই প্রয়োজনীয় বিনিয়োগে সৌর ও বায়ুশক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। যোগাযোগব্যবস্থায় বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, সেটা বাস, ট্রেন থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত গাড়ি পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই করতে হবে। শক্তিবান্ধব ভবন, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বহনের জন্য গ্রিড বানাতে হবে।
কিন্তু যখন এই বিনিয়োগ করার সময়, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সরকারি খাতে একধরনের বিনিয়োগ স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বাজেট ভারসাম্যের নামে সরকার বিনিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিকল্প বিদ্যুতে অধিক হারে বিনিয়োগ করতে পারে না। সরকারি নীতি অস্পষ্ট হলে তারা এ ঝুঁকি নিতে পারে না।
এই বিনিয়োগ পক্ষাঘাতগ্রস্ততার ব্যাপারটি বুঝতে সরবরাহপন্থী ও নব্য কেইনসীয়পন্থী উভয়ই ভুল করেছে। নব্য কেইনসীয়পন্থীদের কাছে বিনিয়োগ হচ্ছে সমন্বিত চাহিদার আরেকটি রূপ মাত্র, সরকারি ও বেসরকারি। শক্তিব্যবস্থা ও অবকাঠামোবিষয়ক সরকারি নীতির প্রতি তাদের একধরনের অবহেলা আছে। অথচ পরিবেশের জন্য সহনীয় ও স্মার্ট প্রযুক্তি নির্মাণে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য যেটা খুবই দরকার। ফলে তারা শুধু সুদের হার কমানোর কথা বলে। বিনিয়োগ বাড়াতে পারে, এমন তেজিজাতীয় নীতির কথা তারা বলে না।
অন্যদিকে, সরবরাহপন্থীরা এটা একেবারেই ভুলে যায় যে বেসরকারি বিনিয়োগ আসলে সরকারি বিনিয়োগ ও সুস্পষ্ট নীতিমালার ওপর নির্ভরশীল। তারা সরকারি বিনিয়োগ কমানোর কথা বলে, তারা কেমন শিক্ষানবিশের মতো বিশ্বাস করে, বেসরকারি খাত কোনো না কোনোভাবে এ শূন্যতা পূরণ করবে। কিন্তু আসলে সরকারি বিনিয়োগ কমানোর কথা বলে তারা বেসরকারি বিনিয়োগের পথ রুদ্ধ করছে। সরকার যদি দীর্ঘ সঞ্চালন লাইন তৈরি না করে তাহলে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরা ব্যাপক পরিমাণ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহী হবে না। কিন্তু মুক্তবাজারের প্রবক্তারা কখনোই এরূপ বিশৃঙ্খল নীতি নিয়ে মাথা ঘামাননি।
অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় কাজে লাগিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করারও সুযোগ রয়েছে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র নিম্ন আয়ের আফ্রিকার দেশগুলোকে টাকা ধার দিয়ে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎ কোম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার সুযোগ করে দিতে পারে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় বৈদেশিক দারিদ্র্য মোকাবিলার মতো ইতিবাচক কাজে ব্যবহার করা যায়।
তদুপরি, এই দুই ঘরানার কেউই উন্নয়ন ফিন্যান্স প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নে তেমন একটা মাথা ঘামায়নি। জাপান ও চীনকে ভোগ ব্যয় বাড়ানোর উপদেশ না দিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতিবিদদের উচিত হবে, দেশ দুটিকে উদ্বুদ্ধ করা, যাতে তারা তাদের সঞ্চয় শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও বিনিয়োগ করে।
যাঁরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশদূষণও রোধ করতে চান, তাঁদের কাছে এরূপ বিবেচনার উদ্দেশ্য খুবই পরিষ্কার। আমাদের প্রজন্মের সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, দুনিয়ার নোংরা ও কার্বনভিত্তিক শক্তি ব্যবস্থাটির রূপান্তর করে একুশ শতকের জন্য একটি স্মার্ট, পরিষ্কার ও কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা। টেকসই উন্নয়নে বিনিয়োগ করলে নিশ্চিতভাবেই আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে, আর আমাদের ‘অতিরিক্ত সঞ্চয়’ সঠিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু এটা আপনাআপনি হবে না। আমাদের দীর্ঘ মেয়াদে সরকারি বিনিয়োগ কৌশল, পরিবেশগত পরিকল্পনা ও প্রযুক্তি রোডম্যাপ লাগবে। নতুন ও টেকসই প্রযুক্তির জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব প্রয়োজন। আরও বড় পরিসরে বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। এসব হাতিয়ার এক নতুন সামষ্টিক অর্থনীতি সৃষ্টি করবে, যার ওপর আমাদের স্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধি নির্ভর করছে।
এই তৃতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়েই নব্য কেইনসীয়পন্থী ও সরবরাহপন্থীরা রণে ভঙ্গ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপের উচ্চ আয়ের দেশগুলো ভবিষ্যতের সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষ্যে সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে পারছে না। বিনিয়োগ করার মাধ্যম দুটি: অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে। দুনিয়া এ দুই ক্ষেত্রেই কমজোর হয়ে পড়েছে।
অভ্যন্তীরণ বিনিয়োগ নানাভাবেই হতে পারে: যন্ত্রপাতি ও ভবন, গৃহস্থালি কাজে বিনিয়োগ ও জনগণের জন্য সরকারি বিনিয়োগ (শিক্ষা, দক্ষতা), জ্ঞান (গবেষণা ও উন্নয়ন) ও অবকাঠামো (যাতায়াত, শক্তি, পানি ও জলবায়ু সহিষ্ণুতা)।
নব্য কেইনসীয় পন্থা অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ কোনোভাবেই বাড়াতে পারেনি। হ্যাঁ, এ দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, খরচ তো খরচই। নব্য কেইনসীয়পন্থীরা এভাবে গৃহায়ণে বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে, তার জন্য সুদের হার অনেক কমানো হয়েছে। সুনিশ্চিত ভোক্তা ঋণের মাধ্যমে মোটরগাড়ি বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করেছে তারা। আর স্বল্পমেয়াদি উদ্দীপনা কর্মসূচির মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নযোগ্য অবকাঠামো প্রকল্পও তারা হাতে নিয়েছে। আর বিনিয়োগ ব্যয়ের কোনো নড়চড় না হলে তারা সুপারিশ করেছে, ‘অতিরিক্ত’ সঞ্চয় যেন ভোগে ব্যয় করা হয়।
অন্যদিকে, সরবরাহপন্থীরা ব্যক্তিগত (সরকারি নয়) বিনিয়োগ বাড়ানোর পক্ষপাতী, এর জন্য তারা কর হ্রাস ও নিয়ম শিথিল করার পক্ষে। তারা বিভিন্ন সময়েই এ কাজ করার চেষ্টা করেছে, সর্বশেষ জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনের সময় তারা এ কাজ করার চেষ্টা করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই শিথিলকরণের ফলে স্বল্প সময়ের জন্য গৃহায়ণে বুদ্বুদ সৃষ্টি হয়েছিল। সেটা ব্যক্তিগত বিনিয়োগে কোনো টেকসই তেজিভাব আনতে পারেনি।
যদিও সরবরাহপন্থী ও নব্য কেইনসীয়পন্থীদের নীতি সাধারণত এক হয় না, তাদের উভয়ের নীতির ফলে এক অভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে: অধিকাংশ উচ্চ আয়ের দেশে জাতীয় আয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগ কমেছে। আইএমএফের তথ্য অনুসারে, এসব দেশের মোট বিনিয়োগ ১৯৯০ সালে ছিল জিডিপির ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ, আর ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২০ শতাংশে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯০ সালে বিনিয়োগ ব্যয় ছিল জিডিপির ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ৩ শতাংশে। নিট হিসাব করলে দেখা যায়, এ হ্রাস আরও অনেক বেশি (পুঁজির অবমূল্যায়ন বাদ দিয়ে মোট বিনিয়োগ)।
কিন্তু এরা কেউই সমস্যার মূলে যায় না। আমাদের সমাজের জরুরি ভিত্তিতে আরও বিনিয়োগ দরকার। বিশেষত অতি মাত্রায় দূষণশীল, শক্তিঘন ও উচ্চ কার্বন সৃষ্টিকারী উৎপাদন ব্যবস্থাটির রূপান্তর দরকার, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারবে ও নিম্ন কার্বন নিঃসরণ করে এমন একটি উৎপাদনব্যবস্থা আমাদের প্রয়োজন। এরূপ বিনিয়োগ হতে গেলে সরকারি ও বেসরকারি খাত উভয়কেই এগিয়ে আসতে হবে।
এই প্রয়োজনীয় বিনিয়োগে সৌর ও বায়ুশক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। যোগাযোগব্যবস্থায় বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, সেটা বাস, ট্রেন থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত গাড়ি পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই করতে হবে। শক্তিবান্ধব ভবন, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বহনের জন্য গ্রিড বানাতে হবে।
কিন্তু যখন এই বিনিয়োগ করার সময়, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সরকারি খাতে একধরনের বিনিয়োগ স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বাজেট ভারসাম্যের নামে সরকার বিনিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিকল্প বিদ্যুতে অধিক হারে বিনিয়োগ করতে পারে না। সরকারি নীতি অস্পষ্ট হলে তারা এ ঝুঁকি নিতে পারে না।
এই বিনিয়োগ পক্ষাঘাতগ্রস্ততার ব্যাপারটি বুঝতে সরবরাহপন্থী ও নব্য কেইনসীয়পন্থী উভয়ই ভুল করেছে। নব্য কেইনসীয়পন্থীদের কাছে বিনিয়োগ হচ্ছে সমন্বিত চাহিদার আরেকটি রূপ মাত্র, সরকারি ও বেসরকারি। শক্তিব্যবস্থা ও অবকাঠামোবিষয়ক সরকারি নীতির প্রতি তাদের একধরনের অবহেলা আছে। অথচ পরিবেশের জন্য সহনীয় ও স্মার্ট প্রযুক্তি নির্মাণে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য যেটা খুবই দরকার। ফলে তারা শুধু সুদের হার কমানোর কথা বলে। বিনিয়োগ বাড়াতে পারে, এমন তেজিজাতীয় নীতির কথা তারা বলে না।
অন্যদিকে, সরবরাহপন্থীরা এটা একেবারেই ভুলে যায় যে বেসরকারি বিনিয়োগ আসলে সরকারি বিনিয়োগ ও সুস্পষ্ট নীতিমালার ওপর নির্ভরশীল। তারা সরকারি বিনিয়োগ কমানোর কথা বলে, তারা কেমন শিক্ষানবিশের মতো বিশ্বাস করে, বেসরকারি খাত কোনো না কোনোভাবে এ শূন্যতা পূরণ করবে। কিন্তু আসলে সরকারি বিনিয়োগ কমানোর কথা বলে তারা বেসরকারি বিনিয়োগের পথ রুদ্ধ করছে। সরকার যদি দীর্ঘ সঞ্চালন লাইন তৈরি না করে তাহলে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরা ব্যাপক পরিমাণ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহী হবে না। কিন্তু মুক্তবাজারের প্রবক্তারা কখনোই এরূপ বিশৃঙ্খল নীতি নিয়ে মাথা ঘামাননি।
অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় কাজে লাগিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করারও সুযোগ রয়েছে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র নিম্ন আয়ের আফ্রিকার দেশগুলোকে টাকা ধার দিয়ে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎ কোম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার সুযোগ করে দিতে পারে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় বৈদেশিক দারিদ্র্য মোকাবিলার মতো ইতিবাচক কাজে ব্যবহার করা যায়।
তদুপরি, এই দুই ঘরানার কেউই উন্নয়ন ফিন্যান্স প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নে তেমন একটা মাথা ঘামায়নি। জাপান ও চীনকে ভোগ ব্যয় বাড়ানোর উপদেশ না দিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতিবিদদের উচিত হবে, দেশ দুটিকে উদ্বুদ্ধ করা, যাতে তারা তাদের সঞ্চয় শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও বিনিয়োগ করে।
যাঁরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশদূষণও রোধ করতে চান, তাঁদের কাছে এরূপ বিবেচনার উদ্দেশ্য খুবই পরিষ্কার। আমাদের প্রজন্মের সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, দুনিয়ার নোংরা ও কার্বনভিত্তিক শক্তি ব্যবস্থাটির রূপান্তর করে একুশ শতকের জন্য একটি স্মার্ট, পরিষ্কার ও কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা। টেকসই উন্নয়নে বিনিয়োগ করলে নিশ্চিতভাবেই আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে, আর আমাদের ‘অতিরিক্ত সঞ্চয়’ সঠিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু এটা আপনাআপনি হবে না। আমাদের দীর্ঘ মেয়াদে সরকারি বিনিয়োগ কৌশল, পরিবেশগত পরিকল্পনা ও প্রযুক্তি রোডম্যাপ লাগবে। নতুন ও টেকসই প্রযুক্তির জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব প্রয়োজন। আরও বড় পরিসরে বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। এসব হাতিয়ার এক নতুন সামষ্টিক অর্থনীতি সৃষ্টি করবে, যার ওপর আমাদের স্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধি নির্ভর করছে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
জেফরি ডি. স্যাকস: কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকসই উন্নয়নের অধ্যাপক।
No comments