জঙ্গি মডিউলগুলো দ্রুত অকার্যকর করার নির্দেশ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্ত করতে গিয়ে ভারতে সক্রিয় বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জেএমবি’র যে বিস্তীর্ণ জঙ্গি মডিউলের সন্ধান পাওয়া গেছে, সেগুলোকে দ্রুত অকার্যকর করে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। সোমবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এনআইএ’র প্রধান শারদ কুমার, এনএসজি’র প্রধান জয়ন্ত চৌধুরী, আইবি’র প্রধান ইব্রাহিম ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষ স্বরাষ্ট্র সচিব প্রকাশ মিশ্রকে সঙ্গে নিয়ে বর্ধমানে বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করে জেএমবি’র জঙ্গি মডিউলের অনেক নতুন তথ্য হাতে পাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেসব বিস্তারিত জানানোর পর দিল্লি ফিরে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে জেএমবি’র অসংখ্য মডিউল এবং তার সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে সব তথ্য জানানোর পরই সমস্ত জঙ্গি মডিউল অকার্যকর করতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, দক্ষিণ ভারতে কিভাবে জেএমবি’র জঙ্গিরা মডিউলগুলো তৈরি করেছিল তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে। গত সোমবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকেও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জানিয়েছেন, জেএমবি’র জঙ্গি মডিউলের তৎপরতা এতটাই বিস্তারিত হয়ে পড়েছে, এর মোকাবিলা করতে রাজ্য ও কেন্দ্রের গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর মধ্যে সমন্বয় বিশেষভাবে জরুরি। এনআইএ’ও তদন্তকারীরা এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে, খাগড়াগড় বিস্ফোরণে নিহত শাকিল গাজী ও সুভান মণ্ডলসহ ধৃত জঙ্গিরা সবারই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র সক্রিয় সদস্য। গোয়েন্দারা নিশ্চিতভাবে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে একযোগে নাশকতা ও হামলা চালানোর উদ্দেশ্য নিয়ে বর্ধমানে গ্রেনেড ও সকেট বোমা তৈরি করা হয়েছিল। এরই মধ্যে প্রায় ৭০০-এর মতো গ্রেনেডের চালান বাংলাদেশে জঙ্গিদের হাতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এদিকে এনআইএ গোয়েন্দারা মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গেই লুকিয়ে রয়েছে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব। এখানে বসেই বাংলাদেশে নাশকতার ছক তৈরি করা হয়েছিল। এখান থেকেই বাংলাদেশে যায় জঙ্গি ও বিস্ফোরক। জামায়াতের হাত ধরে এ রাজ্য থেকেই আইসিস জঙ্গিগোষ্ঠীতে গেছে তরুণ-তরুণীরা। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার রিপোর্টে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের দেয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে গ্রেপ্তার জামাআতুল মুজাহিদীন সদস্যদের জেরায় জানা গেছে, গত কয়েক মাসে ভারত ও বাংলাদেশ থেকে কয়েক শ’ প্রশিক্ষিত জঙ্গি যোগ দিয়েছে আইসিসে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার কাছে বিভিন্ন সূত্র থেকে যে তথ্য পৌঁছেছে তাও বিশাল এক জঙ্গি নেটওয়ার্কেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। গত ১৯শে সেপ্টেম্বর ঢাকার তুরাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয় ৭ জামাআতুল মুজাহিদীন সদস্য। ধৃতদের মধ্যে জামাআতুলের কার্যনির্বাহীর প্রধান আবদুল্লাহ আল তাসনিম ওরফে নাহিদও রয়েছে। এ তাসনিমকে জেরা করেই সামনে এসেছে ভারতে জামায়াত মডিউলের বিস্ফোরক তথ্য। ২০১০ সাল থেকেই ভারতের মাটিকে কাজে লাগিয়ে ফের সংগঠিত হতে শুরু করে জামাআতুল মুজাহিদীন। গোয়েন্দা মতে, ২০১০ সালে ১০ জন সক্রিয় জামায়াত সদস্যকে দিয়ে রাজ্যে তৈরি হয়েছিল দু’টি জামায়াত মডিউল। মডিউল তৈরিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেয় জামায়াতের সর্বোচ্চ কমিটি শূরার সদস্য আনিসুর ও মোফাজ্জল হুসেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১১০০ জামায়াত কর্মী সমর্থক সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে এসেছে। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, পশ্চিম এশিয়া থেকে হাওয়ালা মারফত বাংলাদেশ হয়ে এ রাজ্যে ঢোকে জিহাদি অর্থ। এ হাওয়ালা চক্রে যুক্ত কুয়েতের একটি এবং সৌদি আরবের দু’টি এনজিও। মডিউলগুলোর মূল কাজ বাংলাদেশে নাশকতা চালাতে বিস্ফোরক ও প্রশিক্ষিত জঙ্গি সরবরাহ দেয়া। শুধু তাই নয়, গোয়েন্দা তথ্য বলছে বাংলাদেশে জামায়াতের জঙ্গিগোষ্ঠীও নিয়ন্ত্রিত হয় ভারত থেকেই। জামাআতুল মুজাহিদীনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সোহেল মেহফুজ ভারতে বসেই বাংলাদেশের সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করে। এ বছরের গোড়ায় বাংলাদেশ থেকে এসে সোহেলের সঙ্গে যোগ দেয় জহিদুল ইসলাম ও সালাউদ্দিন। বাংলাদেশ পুলিশের হাত থেকে জহিদুল ইসলামকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছিল ফারুক। ওই চারজনেরই থাকার ব্যবস্থা করেছিল বসিরহাটের এক ঈমাম। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বাংলাদেশের একাধিক লোকেশনে একযোগে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল জেএমবি। সে জন্য বাড়তি বিস্ফোরকের বরাতও এসেছিল খাগড়াগড়ের মতো গ্রেনেড কারখানাগুলোতে। তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, বর্ধমানের শিমুলিয়ার অনুমোদনহীন মারদাসা থেকেই ইতিমধ্যে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছে প্রায় ১০০ কিশোরী। গত সেপ্টেম্বরেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের তরফে এ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল দিল্লিকে। পশ্চিমবঙ্গেও পৌঁছেছিল সেই সতর্কবার্তা। সোমবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুখ্যমন্ত্রীকে ফের একবার এসব তথ্যই নতুন করে জানিয়ে গেছেন।
নেপাল সীমান্তে ধৃত জঙ্গিকে নিয়ে ধোঁয়াশা: গত রোববার পশ্চিমবঙ্গের নেপাল সীমান্ত থেকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এসটিএফ-এর গোয়েন্দারা বর্ধমানের শিমুলিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষক ইউসুফ শেখের মতো দেখতে এক ব্যক্তিতে গ্রেপ্তার করে এনআইএ’র গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দিয়েছে। গোয়েন্দারা ধৃত ব্যক্তিই ইউসুফ শেখ বলে মোটামুটি নিশ্চিত হলেও ধৃত ব্যক্তি তা অস্বীকার করায় তার পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। গোয়েন্দারা তাই ইউসুফের স্ত্রী আয়েশা বিবিকে খোঁজার জন্য হন্যে হয়ে তল্লাশি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে ধৃত ব্যক্তিকে শিলিগুড়ি থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
নেপাল সীমান্তে ধৃত জঙ্গিকে নিয়ে ধোঁয়াশা: গত রোববার পশ্চিমবঙ্গের নেপাল সীমান্ত থেকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এসটিএফ-এর গোয়েন্দারা বর্ধমানের শিমুলিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষক ইউসুফ শেখের মতো দেখতে এক ব্যক্তিতে গ্রেপ্তার করে এনআইএ’র গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দিয়েছে। গোয়েন্দারা ধৃত ব্যক্তিই ইউসুফ শেখ বলে মোটামুটি নিশ্চিত হলেও ধৃত ব্যক্তি তা অস্বীকার করায় তার পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। গোয়েন্দারা তাই ইউসুফের স্ত্রী আয়েশা বিবিকে খোঁজার জন্য হন্যে হয়ে তল্লাশি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে ধৃত ব্যক্তিকে শিলিগুড়ি থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
No comments