২৪ ঘণ্টার মধ্যে নাম প্রকাশ করুন
কালোটাকা উদ্ধার নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তীব্র ভর্ৎসনা করলেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট নির্দেশ দেন, বিদেশি ব্যাংকগুলোতে যত ভারতীয়র হিসাব রয়েছে এবং যে তথ্য বিদেশি ব্যাংকগুলো ভারত সরকারকে জমা দিয়েছে, সেই সব নাম ও তথ্য মুখবন্ধ খামে আজ বুধবারের মধ্যে জমা দিতে হবে। কালোটাকা বিদেশে গচ্ছিত রাখার অভিযোগ রয়েছে এমন সাত ভারতীয় এবং একটি প্রতিষ্ঠানের নাম গত সোমবার কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানায়। ওই তালিকা প্রকাশ করার পর দেশটির একটি বেসরকারি সংগঠন (এনজিও) বলছে, ওই কালোটাকার মালিকদের একজন দেশটির ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং বিরোধী দল কংগ্রেস উভয়কেই অর্থ দিয়েছিলেন। কালোটাকা বিদেশে গচ্ছিত রেখেছেন বলে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম এ পর্যন্ত প্রকাশ পেয়েছে তাঁরা হলেন, ডাবর ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর সাবেক পরিচালক প্রদীপ বর্মণ,
গুজরাটের রাজকোট জেলার স্বর্ণ ব্যবসায়ী পঙ্কজ চিমনলাল লোধিয়া এবং গোয়ার খনি ব্যবসায়ী রাধা টিমলো। তিনজনই তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই তালিকায় টিমলো পরিবারের আরও চারজনের নাম রয়েছে। তাঁরা হলেন চেতন এস টিমলো, রোহান এস টিমলো, আন্না এস টিমলো, মল্লিকা আর টিমলো। প্রতিষ্ঠান হিসেবে নাম রয়েছে টিমলো প্রাইভেট লিমিটেডের। ওই তথ্য প্রকাশের পাশাপাশি কয়েকজন রাজনীতিকের নাম সরকারি সূত্রে উঠে আসে। কিন্তু বেছে বেছে এভাবে তথ্য প্রকাশের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্ট গতকাল সরব হন। সরকারের এই প্রবণতা রুখতেই তাঁরা নির্দেশ দেন কালোটাকা-সংক্রান্ত সরকারের কাছে থাকা সব তথ্য বুধবারের মধ্যেই জমা দিতে। এই নির্দেশ দেওয়ার আগে তীব্র ভর্ৎসনা করে বিচারপতিরা জানতে চান, কালোটাকার আমানতকারীদের রক্ষায় সরকার সচেষ্ট কেন? কেন বেছে বেছে নাম প্রকাশ করা হচ্ছে?
বিচারপতি আরও বলেন, কালোটাকা দেশে ফেরানোর বিষয়টি সরকারের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না। তা করলে আমাদের জীবদ্দশায় সেই টাকা ফেরানো যাবে না।’ এদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অ্যাসোসিয়েশন অব ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর) গত সোমবার জানায়, ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত খনি ব্যবসায়ী রাধা এস টিমলো বিজেপিকে এক কোটি ১৮ লাখ টাকা এবং কংগ্রেসকে ৬৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। ভারতের নির্বাচন কমিশনে দুই দলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই হিসাব তুলে ধরা হয়। এডিআরের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জগদীশ চোক্কার বলেন, সাত বছরে রাধা টিমলো বিজেপিকে নয়বার এবং কংগ্রেসকে তিনবার অর্থ দেন। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর বোধোদয় হওয়া উচিত। তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে তাদের আরও সাবধানি হওয়া উচিত।’ সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের ফলে কালোটাকা মামলা শেষ পর্যন্ত কোন দিকে বাঁক নেবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। এই জল্পনার একটি কারণ যদি হয় ১২ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে যাবতীয় তথ্য জানানোর নির্দেশ, অন্য কারণ তবে তীব্র কটাক্ষ। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট বেশ কিছু মামলায় বিচার বিভাগ এবং নির্বাচনী সংস্কারের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের মনোভাব কী রকম, তা বোঝা যাচ্ছে প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তুর মনোভাবে। সরকারি কৌঁসুলির উদ্দেশে গতকাল তিনি বলেন, ‘আপনাদের আর কিছু করতে হবে না। শুধু হিসাব মালিকদের নাম আমাদের জানিয়ে দিন। যা করার আমরাই করব।’ কালোটাকার বিরুদ্ধে ভারতে সরকারি অভিযান নতুন নয়। ২০০৯ সালে মনমোহন সিং সরকারের আমলে প্রথম এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখনকার অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় সংসদে জানিয়েছিলেন, বিদেশি ব্যাংকগুলো ভারতীয় মালিকদের নাম জানালেও দ্বৈত কর নীতির কারণে তাঁদের নাম প্রকাশ সম্ভবপর নয়। কংগ্রেস আমলের সেই নীতির তীব্র সমালোচনাই শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়ায় বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। ক্ষমতায় এলে ১০০ দিনের মধ্যে কালোটাকার মালিকদের নামধাম প্রকাশ করা হবে বলে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে ক্ষমতায় এসে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সুপ্রিম কোর্টকে সেই যুক্তিই দেন, যে যুক্তি দিয়েছিল কংগ্রেস সরকার। এর পরই শুরু হয় অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। ২০০৯ সালে কালোটাকার হিসাব চেয়ে যিনি মামলা করেছিলেন, সেই প্রবীণ রাম জেঠমালানিও বিজেপি সরকারের সমালোচনা করেন।
No comments