বিজ্ঞান কণিকা- তুষান ইব্রাহিম- নির্ঘুম থাকার বিপদ
দীর্ঘদিনের ঘুমের ঘাটতি সহজে পূরণ হয় না। এক সপ্তাহ নিঘর্ুম কাটানোর কথাই ধরা যাক। এক নতুন সমীৰায় জানা গেছে, দীর্ঘদিন নির্ঘুম কাটালে দেহের অভ্যনত্মরে এক ধরনের 'সিস্নপ ডেট' বা 'ঘুম ঋণ' পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যা সময়ে সময়ে স্বল্পস্থায়ী তন্দ্রায় পূরণ হয় না।
এভাবে দীর্ঘদিনের ঘুমের ঘাটতি মানুষের ব্যক্তিগত পারফরমেন্সের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিষয়টি রাতের বেলা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। কারণ রাতের বেলা দেহের ঘুম জাগা প্রাকৃতিক চক্র আপনাকে আর অতিরিক্ত শক্তি যোগাবে না। যে ব্যক্তি সারারাত জেগে থাকে সেই জানে স্বল্প মেয়াদে নির্ঘুম থাকার যাতনা কত। প্রকৃতপৰে কয়েকটি সমীৰায় জানা গেছে, ২৪ ঘণ্টা নির্ঘুম থাকলে কোন ব্যক্তির পারফরমেন্স একজন মাতালের পর্যায়ে নেমে আসে। তাহলে সহজেই অনুমেয়, কোন ব্যক্তি পুরো এক সপ্তাহ না ঘুমালে তার অবস্থা কি দাঁড়ায়। কোন ব্যক্তি প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত প্রয়োজনীয় ঘুম থেকে বঞ্চিত হলে তিনি সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে ঐ ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করে থাকেন। তবে এতে তার ঘুর্মের ঘাটতি পূরণ হবে কিনা তা নির্ভর করে তার পরবতর্ী প্রাত্যহিক কর্মসূচীর ওপর। তিনি যদি আবার দীর্ঘ সময়ে ঘুম থেকে বঞ্চিত হতে থাকেন তাহলে তার দৈনন্দিন পারফরমেন্সে নিশ্চিত অবনতি ঘটবে।সমীৰায় আরও জানা গেছে যে, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের ঘাটতি মসত্মিষ্কের ওপর দু'টি ভিন্ন উপায়ে প্রভাব ফেলে। ঘুমের ঘাটতি সংক্রানত্ম এই সমীৰা পরিচালিত হয়েছে ব্রিগহ্যামের ও ড্যানিয়েল কোহেন এবং বস্টনের ওমেন্স হসপিটালের পৰ থেকে।
স্বজাতি খাদক মাকড়শা
স্বজাতি খাদক নারী মাকড়শারা খাদ্য হিসাবে পুরম্নষ মাকড়শাকে পছন্দ করে না। যৌন মিলনের পর নারী মাকড়শা তার পুরম্নষ সঙ্গীকে সহসা খেয়ে ফেলে না। কারণ মেয়ে মাকড়শা যৌনসঙ্গী হিসাবে তাকে বাছাই করলেও তার পুরম্নষটির দেহ তার কাছে সুস্বাদু মনে হয় না। তাই মেয়ে মাকড়শা একমাত্র পেটের ৰুধা মিটাতেই তার পুরম্নষ সঙ্গীকে খেয়ে ফেলবে, অন্যথায় নয়। বিজ্ঞানীরা এই তথ্য জানিয়েছেন। এ থেকে বোঝা গেল, মাকড়শাদের মধ্যে কেবলমাত্র ৰুধাই একমাত্র চালিকাশক্তি নয় যার কারইে তারা যৌন মিলনের পর তাদের পুরম্নস সঙ্গীটিকে খেয়ে ফেলবে। যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের গবেষণায় এই মজার তথ্যটি পাওয়া গেছে। জার্নাল ওইকোলজিয়ায় খবরটি প্রকাশিত হয়। স্বজাতি খাদক অভ্যাস প্রাণী জগতে অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু মাকড়শাদের ৰেত্রে এই বিশেষ রম্নচির বিষয়টি সত্যিকারের ভাবনার বিষয়। এটি ব্যাখ্যা করতে কয়েকটি তত্ত্বের অবতারণা করা হয়েছে। তবু বিষয়টির রহস্য এখনও পুরোপুরি উদঘাটিত হয়নি। অবশ্য, সবচেয়ে পঠিত ধারণা হচ্ছে এরকম : একই প্রজাতির এক সদস্য তার খাদ্য হিসাবে সম্পূর্ণ যথার্থ। কেননা ঐ স্বজাতির দেহে সকল পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে। অবশ্য স্বজাতি খাদক হওয়ার উপযোগিতা সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী অভিমত রয়েছে।
ওহাইওর হ্যামিলটনে মায়ামি ইউনিভার্সিটির ড. শন ওয়টিল্ডার ও প্রফেসর এ্যান রিপস্ট্রা পরীৰা নিরীৰা চালিয়ে জেনেছেন পুরম্নষ উলফ শ্রেণীর মাকড়শার দেহ নারী মাকড়শার জন্য কতটুকু পুষ্টিকর। প্রতি তিনবার যৌন মিলনের পর কমপৰে একবার নারী উলফ শ্রেণীর মাকড়শা তার পুরম্নষ সঙ্গীকে খেয়ে ফেলবে।
বার্ধক্য রোধের উপায়
দীর্ঘকালীন শারীরিক কার্যক্রম দেহকোষের ওপর বার্ধক্যরোধী প্রভাব ফেলে। এক জার্মান সমীৰায় এ কথা জানা গেছে। গবেষকরা ক্রোমোজমের ওপর প্রতিরোধমূলক টেলোমারেসের ওপর আলোকপাত করেছেন। এই ক্যাপ দেহকোষের ডিএনএ-কে দৃঢ় রাখে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টেলোমারেসের সংখ্যা কমতে থাকে। গবেষকরা দেখতে পান দীর্ঘকালীন প্রশিৰণের ইতিহাস রয়েছে এমন এ্যাথলেটদের রোগ প্রতিরোধমূলক কোষে টেলোমারেস অপেৰাকৃত কম দ্রম্নত কমছে।
সারল্যান্ড ইউনিভার্সিটি পরিচালিত এই সমীৰা 'সাকর্ুলেশন' সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। টেলোমারেস হচ্ছে অপেৰাকৃত স্বল্পসংখ্যক বিশেষায়িত ডিএনএ যা আমাদের সকল ক্রোমোজমের প্রানত্মভাগে বসে। এদেরকে জুতার ফিতার মাথায় থাকা পস্নাস্টিকের টিপের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। জুতার ফিতা যাতে খুলে না যায় সে জন্য এটা ব্যবহৃত হয়।
প্রতিবার একটি কোষ বিভাজিত হলে এর টেলোমারেস কমে যায় এবং কোষটি অধিকতর মৃতু্যপ্রবণ হয়। গবেষকরা দু'দল পেশাদার এ্যাথলেট এবং স্বাস্থ্যবান অধূমপায়ী কিন্তু নিয়মিত ব্যায়াম করে না এমন দু'দল লোকের রক্তের নমুনা থেকে টেলোমারেসের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করে। পেশাদার এ্যাথলেটদের একটি দলে ছিল জার্মান জাতীয় ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডে এ্যাথলেটিক্স টিমের সদস্যবৃন্দ যাদের গড় বয়স ২০ বছর। দ্বিতীয়, গ্রম্নপ ছিল মধ্যবয়সী। এরা তাদের যৌবনকাল থেকে সপ্তাহে নিয়মিত গড়ে ৮০ কিলোমিটার দৌড়ান।
গবেষকগণ দেখতে পান, পেশাদার এ্যাথলেটদের শারীরিক ব্যায়ামের কারণে টেলোমেরেজ (ঃবষড়সবৎধংব) নামে একটি এনজাইম ক্রিয়াশীল থাকে যা টেলোমারেস (ঞবষড়সবৎবং) স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে। এটি লিউকোসাইটেস টেলোমারেস (ঃবষড়সবৎবং) এর কমে যাওয়া হ্রাস করে। লিউকো সাইটেক হচ্ছে এক ধরনের শ্বেত রক্ত কণিকা যা সংক্রমক ও রোগ প্রতিরোধে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যে সব এ্যাথলেট নিয়মিতভাবে কয়েক দশক ধরে প্রশিৰণ নিয়েছেন তাদের মধ্যে বার্ধক্য রোধে সবচেয়ে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। প্রধান গবেষক ড. উলরিগ লফস এ সম্পর্কে বলেন, এটা হচ্ছে শারীরিক ব্যায়ামের বার্ধক্যরোধ প্রভাব সৃষ্টির প্রত্যৰ প্রমাণ। এর আগেও বার্ধক্য রোধ সম্পর্কে অনেক গবেষণা হয়েছে কিন্তু আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। দেখা যাক, এবার বিজ্ঞানীদের নতুন এ তত্ত্ব কতটুকু ফলপ্রসূ হয়।
No comments