বাণিজ্যমেলায় মানুষের ঢল কনকনে ঠাণ্ডায়ও থেমে থাকেনি
কনকনে শীতের হিমেল হাওয়া বইলেও থেমে থাকেনি ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় মানুষের ঢল। দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের কোলাহল মেলাজুড়ে ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার মেলা প্রাঙ্গণে তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতীরাই বেশি ছিল। মেলায় অংশ নেয়া ব্যবসায়ী ও আয়োজকরা আশা করছেন আজ শুক্রবার ও কাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ব্যাপক লোকসমাগম হবে।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় তেমন না থাকলেও দুপুরের পর থেকে লোকসমাগম বাড়ে। বিকেলে শীতের তীব্রতা বাড়লেও মেলা প্রাঙ্গণ ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। তবে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মেলায় দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি। বিকেলে লাইনে দাঁড়িয়ে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের প্রবেশের অপেক্ষাও ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্রেতারা ক্লান্তিহীন ছুটে চলেছেন এক স্টল থেকে অন্য স্টলে। এক প্যাভিলিয়ন থেকে আরেক প্যাভিলিয়নে। খোঁজ করছেন পছন্দের জিনিসটির। অনেকে আবার কেনাকাটা নয়, এসেছেন শুধুই সময় কাটাতে। তবে দর্শনার্থী শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন স্পটে ছবি তুলতে। বিশেষ করে নান্দনিক সব প্যাভিলিয়ন আকর্ষণ করছে এসব ক্রেতাদের। তারা কিছুটা সময় প্যাভিলিয়নের সামনে দাঁড়িয়ে দেখছেন এর কারুকাজ। গেট ইজারাদারদের দেয়া তথ্য মতে, রাজধানীতে গত দুদিন তীব্র শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও এক লাখের উপরে ক্রেতা-দর্শনার্থী মেলায় এসেছেন। একাধিক স্টল-প্যাভিলিয়নের কর্মকর্তারা জানান, শীতের তীব্রতা কিছুটা বেশি হওয়ায় কাক্সিক্ষত ক্রেতা-দর্শনার্থী মেলায় আসছেন না। তবে কয়েকদিনের মধ্যে মেলা জমজমাট হয়ে উঠবে এমন আশা প্রকাশ করে তাঁরা বলছেন, আজ শুক্রবার ও কাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ব্যাপক লোকসমাগম হবে। অবশ্য এখন পর্যন্ত মেলায় ক্রেতার তুলনায় দর্শনার্থীদের সংখ্যাই বেশি বলে জানান তারা।রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকা থেকে মেলায় এসেছিলেন নুসরাত জাহান। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, শীতের মধ্যে মেলায় ঘোরার মজাই আলাদা। গতবারের তুলনায় পণ্যের মূল্য কিছুটা বেশি বলে তিনি জানান। তবে দেশী পণ্য অনেক আকর্ষণীয়, তাই মেলার শেষভাগে এসে কেনাকাটা করা হবে। রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে একসঙ্গে মেলায় এসেছেন দুই বান্ধবী সেতু ও স্মৃতি। মেলা থেকে অনেক প্রসাধনী কিনেছেন তাঁরা। সেতু জানান, এবারে প্রথম এসেছি মেলায়। তেমন কিছু কেনাকাটা করার মন ছিল না। কিন্তু মেলায় এসে নিজেকে সামলাতে পারলাম না। অনেক প্রসাধনী কিনলাম। কারণ এসব পণ্য বাইরের দোকানে সচরাচর একসঙ্গে পাওয়া যায় না। একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জসিম উদ্দিন জানান, ক্লাস শেষ করেই চলে এলাম মেলায়, বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে বেড়াতে। তবে শীত বেশি হওয়ায় একটু সমস্যা হচ্ছে।
এদিন মেলা ঘুরে দেখা গেছে, শুধু মেয়েদের সাজসজ্জার জন্য প্রসাধনী পণ্য নিয়ে মেলায় এসেছে প্রায় ২০টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন। এসব স্টল ও প্যাভিলিয়নে মেলার বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো-ছিটানো। এসব স্টল ও প্যাভিলিয়নের মধ্যে রয়েছে ইউনিলিভার, ডে নাইট, থাই গ্যালারি, টেকনোলজি ফ্যাশন প্রোডাক্টস, পাকিস্তানী প্যাভিলিয়ন, ইরানী প্যাভিলিয়ন, ফ্যামিলি মার্ট, মায়ের দোয়া ইত্যাদি। এসব স্টল ও প্যাভিলিয়নে মেয়েদের সাজসজ্জার নানা বাহারি পণ্য বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্যমেলা ঘুরে দেখা গেছে, ইউনিলিভার প্যাভিলিয়ন ঘিরে সারাদিনই ছিল তরুণ-তরুণীদের জটলা। তবে তরুণীর সংখ্যাই বেশি। শুধু তরুণী নয়, সব বয়সের পুরুষ-মহিলা ভিড় করেছেন এসব প্যাভিলিয়নে। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও পণ্য ক্রয় করছেন। বাণিজ্যমেলায় এদেশের ক্রেতাদের জন্য বিভিন্ন রকমের আতর ও পারফিউম নিয়ে এসেছে আল হারামাইন পারফিউমস। মেলায় অংশ নেয়া একটি স্টলের মালিক জানান, এবার মেলায় মেয়েদের প্রসাধনী ভাল বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবছরের মতো এবারও নানা ধরনের ছাড় দিয়ে গ্রাহক আকর্ষণের চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। মেলা উপলক্ষে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের ঘোষণা পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, গত পহেলা জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা-২০১৩। মাসব্যাপী এ মেলা শেষ হবে ৩১ জানুয়ারি। মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকছে। মেলায় প্রবেশমূল্য প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। পাঁচ বছরের কম বয়সীদের জন্য ১০ টাকা।
No comments