শীত আরও তীব্র, রেকর্ড ছুঁই-ছুঁই
স্মরণকালের ইতিহাসে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড ছুঁতে আর সামান্য বাকি। গতকাল বৃহস্পতিবার সৈয়দপুরে তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছিল। গত বুধবারের চেয়ে তাপমাত্রা আরও দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গিয়ে তা সর্বনিম্ন রেকর্ডের কাছাকাছি পৌঁছায়। ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে সংরক্ষিত তথ্য বলছে, গত বুধবারের মতো গতকালও দেশের কমপক্ষে আটটি এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছিল। পর পর দুই দিন দেশের বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে এত কম তাপমাত্রা এবারই প্রথম। তাই এসব এলাকাসহ সারা দেশে শীতের কাঁপন আরও বেড়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত তো বটেই; রোগ, মৃত্যু ও ফসলের ক্ষতিতে তা মারাত্মক রূপ নিয়েছে। গতকালও শীতজনিত রোগে সারা দেশে কমপক্ষে ২০ জন মারা যায়। ঘন কুয়াশার কারণে ফেরি, নৌযান ও মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হয়।গ্রাম-শহরের দরিদ্র মানুষ, বস্তিবাসী বা ফুটপাতে যারা ঘুমায়, তীব্র শীতে তারাই সবচেয়ে বেশি কাবু। তবে শীতের তীব্রতা থেকে গ্রামের কিছুটা অবস্থাপন্ন মানুষও রেহাই পাচ্ছে না। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা শীতের কারণে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থায় রয়েছেন।
রাজধানীতে গতকাল সকাল গড়াতেই কিছুটা রোদের দেখা মিললেও শীতের তীব্রতা প্রায় একই ছিল। গতকাল ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬ ডিগ্র্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন তাপমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গতকাল শীতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘন কুয়াশা। সকাল নয়টা পর্যন্ত কুয়াশা এতটাই ঘন ছিল যে সূর্যের দেখা মিলতে বেলা ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, আজও সারা দেশে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু এলাকা ছাড়া দেশের বেশির ভাগ অংশে মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে। ঘণ্টায় বাতাসের বেগ হতে পারে ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার। তবে সকাল ১০-১১টা নাগাদ সূর্যের দেখা মিলতে পারে।
আগামীকাল থেকে শীতের তীব্রতা কিছুটা কমে আসতে পারে বলে মনে করছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহ আলম। তাঁর মতে, আজ শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতা একই রকম থেকে আগামীকাল থেকে তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে থাকবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে তাপমাত্রা বেড়ে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে শীতের তীব্রতা কমে আসতে পারে।
গত তিন দিনের শৈত্যপ্রবাহের কারণে বোরো, আলু ও সরিষাচাষিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। সাধারণত ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বোরো চাষের জন্য উপযোগী। আর আলু চাষের জন্য ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা। সরিষাগাছ ৫ থেকে ৭ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। তিন দিন ধরে দেশের কয়েকটি এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে যাওয়ায় এই তিনটি ফসলেরই ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ৪৭ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো, চার লাখ হেক্টর জমিতে আলু এবং প্রায় পাঁচ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে ইতিমধ্যে এই তিনটি ফসলেরই ৭ থেকে ৮ শতাংশ ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
No comments