আনত্মর্জাতিক বাণিজ্যমেলা by রাশেদ রাবি্ব
প্রতিবছরের মতো এ বছরও শুরম্ন হয়েছে বাণিজ্যমেলা। তবে স্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে এবারের বাণিজ্যমেলার প্রেতি কিছুটা আলাদা। কেননা, অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে সারাবিশ্ব যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের বসে থাকা বা থেমে থাকার কোন অবকাশ নেই। এেেত্র এবারের বাণিজ্যমেলা আমাদের দেশের তৈরি পণ্য বহির্বিশ্বকে আকৃষ্ট করার অন্যতম উপায় হতে পারে।
মেলায় পণ্য ও প্রযুক্তি আদান প্রদানের মাধ্যমে তৈরি হতে পারে নতুন বাজার। উন্মোচিত হতে পারে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।দেশের বাণিজ্যিক প্রসারেই ১৯৯৫ সাল থেকে শুরম্ন হয়ে প্রতিবছরই বাণিজ্যমেলার আয়োজন করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন বু্যরো। কিন্তু বাণিজ্যমেলায় একটি বিষয় বেশ লণীয় যে, আনত্মর্জাতিক বাজারকে আকৃষ্ট করার চেয়ে দেশীয় ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রয়ে সবাই বেশি আগ্রহী। শুধু তাই নয়, সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায় মেলার বেশিরভাগ (দুই-তৃতীয়াংশ) স্টলই সাধারণ মানসম্পন্ন পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয়ের জন্য স্টল বরাদ্দ নিয়েছে। তাদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানায়, আনত্মর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য নয়, শুধুমাত্র পণ্য বিক্রির জন্যই তারা মেলায় অংশগ্রহণ করছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রফতানি উন্নয়ন বু্যরো আয়োজিত মেলার নাম আনত্মর্জাতিক বাণিজ্যমেলা হলেও এখানে দেশী ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রির চলছে ধুম। একটি প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন নিয়ে নানা পণ্য সাজিয়ে বসেছে উইমেন চেম্বার। যদিও রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে তারা জড়িত তথাপি কথা বলে জানা যায়, তারা আনত্মর্জাতিক যোগাযোগ বা বাণিজ্যের প্রসার নয়, শুধু হসত্মশিল্প বিক্রির জন্য তারা অংশগ্রহণ করছে। ঠিক একইভাবে লৰণীয়, দু'টি প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়নে দু'টি দেশের বিভিন্ন পণ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে। কিন্তু এর বেশিরভাগই সাধারণ মানের অর্নামেন্ট। এ ছাড়া চা-কফি এমনকি চটপটি-ফুচকার বক্স রয়েছে যত্রতত্র।
তবে এগুলো মেলার ভেতরের চিত্র হলেও আমদানি-রফতানি উন্নয়ন বু্যরো মনে করছে, বাণিজ্যমেলায় এবার আশানুরূপ ট্রেড হতে পারে। অবশ্য এ বিষয়ে বিজিএমইএ'র সভাপতির মতামত কিছুটা ভিন্ন। তিনি মতপ্রকাশ করেন যে, এ মেলায় রফতানি বাড়ানোর তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয় না। তাই আনত্মর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা শিল্পগুলোর অংশগ্রহণ এখানে তেমন চোখে পড়ে না।
এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা ১০। বাংলাদেশ ছাড়াও এবারের মেলায় অংশগ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, চীন, তুরস্ক, ভারত, মালয়েশিয়া, পাকিসত্মান, ইরান, দৰিণ কোরিয়া। স্টল ও প্যাভিলিয়নের মোট সংখ্যা ৪৬৬। মোট আবেদন জমা পড়েছিল ৭৬৪টি। বেশিরভাগ স্টল বা প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়নের কিয়দংশ ছাড়া প্রায় সবই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ।
শুরম্ন থেকেই বাণিজ্যমেলায় জনসাধারণের বিপুল অংশগ্রহণ লৰ্য করা যায়। এবারের মেলায়ও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। দেশের বাইরে থেকেও মাঝেমধ্যে ক্রেতা, দর্শনাথর্ীরা আসেন তবে তাঁদের সংখ্যা একেবারেই কম। মেলায় যে সকল পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য আনা হয় তার বেশিরভাগই রফতানি পণ্য নয় এবং সকল পণ্যের রফতানির চাহিদা বা সম্ভাবনাও কম।
এবারের মেলায় কোন থিম কান্ট্রিও রাখা হয়নি। যেটা আগে কয়েকবার করা হয়েছিল। থিম কান্ট্রি রাখা হলে সে দেশের সঙ্গে আনত্মঃবাণিজ্য সম্পর্কের উন্নতি হয়ে থাকে। আমাদের বণিক সমিতি এবং সরকারের উচিত দেশীয় পণ্য বিশেষ করে কাঁচামাল থেকে চূড়ানত্ম পণ্য পর্যনত্ম আমাদের দেশীয় সকল পণ্য আনত্মর্জাতিকভাবে প্রদর্শন ও বাজারজাতকরণে উদ্যোগী হওয়া।
আমাদের এ বিষয়ে আরও স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিত যে, আনত্মর্জাতিক বাণিজ্যমেলা এবং স্থানীয় মেলা এক বিষয় নয়। আনত্মর্জাতিক বাণিজ্যমেলার চরিত্র আনত্মর্জাতিক হওয়া অত্যাবশ্যক। অন্যথায় যে উদ্দেশ্যে বাণিজ্যমেলার আয়োজন করা হয়, সেই উদ্দেশ্যে পেঁৗছানো কঠিন হয়ে যাবে।
No comments