বন মন্ত্রণালয় জানাল ৬৯ প্রভাবশালীর দখলে সরকারী জমি
মামলার কারণে যমুনা গ্রম্নপসহ ৬৯ প্রভাবশালীর দখল থেকে বন বিভাগের জমি উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সরকারী এসব জমি উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। রবিবার বন এবং পরিবেশ সচিব ড. মিহির কানত্মি মজুমদার মন্ত্রণালয়ে এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গত বৃহস্পতিবার সংসদে গাজীপুরে ৬৯ প্রভাবশালী ভূমি দসু্যর নামের তালিকা প্রকাশ করেন। যার মধ্যে যমুনা গ্রম্নপের চেয়ারম্যান নুরম্নল ইসলাম বাবুলের নামও উলেস্নখ করা হয়। প্রতিমন্ত্রী ওই সময় সংসদকে জানান যমুনা গ্রম্নপ কালিয়াকৈরের সফিপুর মৌজায় ৪ দশমিক ৫৩ একর সরকারী জমি দখল করে রেখেছে। প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের পরের দিনই যমুনা গ্রম্নপের মালিকানাধীন দৈনিক যুগানত্মর পত্রিকা 'যমুনার চ্যালেঞ্জ_ প্রমাণ করতে না পারলে বন প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি' শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশ করে। রবিবার যুগানত্মরে প্রকাশিত এ সংবাদের প্রতিবাদ জানাতেই পরিবেশ মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলন চলাকালে পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদ তাঁর কার্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও এতে বক্তব্য রাখেন বন এবং পরিবেশ সচিব মিহির কানত্মি মজুমদার।সংবাদ সম্মেলনে ৬৯ জন দখলদারের নাম বলা হলেও সচিব কেবলমাত্র যমুনা গ্রম্নপের দখলি জমির বিষয়ে সরকারের কাছে থাকা যাবতীয় তথ্য সাংবাদিকদের সরবরাহ করেন। যমুনার দখলদারিত্বের বিরম্নদ্ধে বন বিভাগ মামলা করলেও মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রত্যাহার করে নিয়েছে এতে গাজীপুর আদালতে চলমান অন্য একটি মামলাও খারিজ হয়ে গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মামলা কেন প্রত্যাহার করল এবং তখন পরিবেশ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আপত্তি তোলেনি কেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব কিছু বলতে পারেননি।
সচিব বলেন, আমরা কাউকে চ্যালেঞ্জ করতে চাই না। আমরা শুধু সঠিক তথ্য তুলে ধরতে চাই। পরিবেশ সচিব এক পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যে বলেন, যমুনা গ্রম্নপের জমি দখল নিয়ে এখনও আদালতে দুটি মামলা চলছে। বন বিভাগের জমি যমুনার দখলেই রয়েছে। তবে আদালতে মামলা চলার কারণে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে জমি দখল করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
যমুনা গ্রম্নপের চেয়ারম্যান নুরম্নল ইসলাম বাবুলের করা ১৯৯৮ সালের একটি আবেদন পত্রের ফটোকপিও সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সরবরাহ করা হয়। এতে দেখা যায় যমুনার একটি প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের জন্য ১২ দশমিক ৫ কাঠা জমি ব্যবহার বা ক্রয়ের অনুমতির জন্য তারা বন এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছে। সচিব জানান, আবেদনটির কোন ধরনের সুরাহা হওয়ার আগেই যমুনা জায়গা দখল করে নেয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকা বন বিভাগের প্রায় ১১ হাজার ৬৩৯ একর জমি অবৈধ দখলে আছে। দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য স্থানীয় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত ভূমি উদ্ধার কমিটির কাজ করছে। তবে কিছু জমি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড হওয়ার পাশাপাশি মামলা চলার কারণে বেহাত হওয়া জমি উদ্ধার করা যাচ্ছে না।
এক প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, ৬৯ দখলদার প্রায় ৯০ একর জমি দখল করে রেখেছে। এরা সকলেই প্রভাবশালী এবং সবার বিরম্নদ্ধেই মামলা পাল্টা মামলা চলমান রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের তালিকায় দখলদারদের মধ্যে কোকোলা ফুড প্রডাক্টস লিঃ সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৩৫ একর জমি দখল করে রেখেছে। এ ছাড়া সারাদেশে বন বিভাগের প্রায় আড়াই লাখ একর জমি বেদখল রয়েছে। আর অবৈধ দখলদারের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজারের উপরে। এসব জমি উদ্ধার করার জন্য প্রচলিত আইনী ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক বনায়ন সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।
No comments