একটি লাশ চাই এবং তা ঢাবি থেকেই প্রস্তুতি শেষ by মামুন-অর-রশিদ
রিয়াদুলকরিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উত্তপ্ত করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। আগামী তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে ক্যাম্পাসে প্রাণহানিকর সংঘর্ষের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠন। আগামীকাল মঙ্গলবারই বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
লালবাগ এলাকার সাবেক এক এমপি'র ছোট ভাই 'র' আদ্যৰর নামধারী ক্যাম্পাসকে অশানত্ম করে তুলতে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত অবধি নগরীর পেশাদার খুনীদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। বৈঠক থেকে খুনীদের বিসত্মারিত দিক নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এখন তাদের অপেৰা সময় এবং সুযোগের। কোন কারণে ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে উঠলেই পেশাদার ঘাতকচক্র ক্যাম্পাসে প্রবেশ করবে এবং 'অপারেশন' করেই ক্যাম্পাস ছেড়ে যাবে। তবে গোয়েন্দাদের কঠোর নজরদারির কারণে হিমশিম খাচ্ছে ভাড়াটে বাহিনী। সংশিস্নষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অবশ্য সরকারের একাধিক গোয়েন্দাসূত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপৰকে আগামী এক মাসের মধ্যে এমন পরিকল্পিত সংঘর্ষের আভাস দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে জনকণ্ঠকে বলা হয়েছে, সকল ষড়যন্ত্র-অপতৎপরতা কর্তৃপৰ মোকাবেলা করবে। যে কোন মূল্যে ছাত্রছাত্রী শিৰক-কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকরকরণ, জঙ্গীদের বিরম্নদ্ধে সরকারের কঠোর তৎপরতা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে সরকারের দৃঢ় অবস্থান এবং সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সাফল্যের বিরম্নদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অশানত্ম করে তোলার পাঁয়তারা করছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মৌলবাদী সংগঠন শিবিরও। সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, আড়ালে থেকে মূল পরিকল্পনা করছে শিবির। তাদের উদ্দেশ্য ক্যাম্পাস অশানত্ম করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিলম্বিত করা।
কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী একটি বিশেষ মহলের অদৃশ্য সাঙ্কেতিক নির্দেশনায় লালবাগ এলাকায় এ ব্যাপারে একাধিক বৈঠকে মিলিত হয়েছে '৭৫-এর খুনীদের দোসর ও তাদের সমর্থক চক্র। ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু সংগঠনের বিদ্রোহী গ্রম্নপের হাতে ক্যাম্পাসে আহত হওয়ার পর টুকুর সমর্থকরাই ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্রে আরও গতি সঞ্চারিত করছে '৭৫-এর খুনীচক্র। সরকার বিরোধী মহল এবং '৭৫-এর খুনীচক্র ও তাদের দোসররা যে ষড়যন্ত্র করছে সে ব্যাপারে দেশবাসীও স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছে। গত সপ্তাহে চট্টগ্রামে শিবিরের আসত্মানা থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারও জনগণকে বিশেষ সঙ্কেত দিচ্ছে।
গত সোমবার ছাত্রদলের বিদ্রোহীদের সঙ্গে টুকু আলিমের সংঘর্ষের পর ছাত্রদল চেয়েছে সম্পূর্ণ দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের ওপর চাপাতে। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়ে এখন তারা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। তারা যে কোন মূল্যে সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে ৰেপাতে চায়। সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, মূলত এ কারণেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের ৭ সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কিছু নেতা কর্মীর বিরম্নদ্ধে ছাত্রদল মামলা করেছে। যাতে করে ছাত্রলীগ সরাসরি ছাত্রদলের বিরম্নদ্ধে অবস্থান নেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় যদি ছাত্রলীগ সরাসরি তাদের বিরম্নদ্ধে অবস্থান নেয় বা তাদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাহলেই তাদের কৌশল বাসত্মবায়ন অনেক সহজ হয়ে যাবে। সূত্রের দাবি এজন্য ছাত্রলীগ নেতাদের ছাত্রদলের বিরম্নদ্ধে ৰেপিয়ে তুলতে ছাত্রলীগের ভিতরই এজেন্ট নিয়োগ করা হয়েছে।
এদিকে আগামীকাল মঙ্গলবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সমর্থক গ্রম্নপ ক্যাম্পাসে আসার কথা রয়েছে। বিদ্রোহী গ্রম্নপের যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তারা ছাত্রদলের কমিটি গ্রম্নপকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। যে কারণে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। আর পেশাদার ভাড়াটিয়া খুনী চক্র এই অনাকাঙ্ৰিত পরিস্থিতির সুযোগে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নেয়া লাশ ফেলার এ্যাসাইনমেন্ট বাসত্মবায়ন করতে পারে। ছাত্রদলের অছাত্রদের কমিটি গ্রম্নপ এবং নিয়মিত ছাত্রদের বিদ্রোহী গ্রম্নপের সমর্থনের ব্যাপারে ছাত্রলীগেও একটি সমীকরণ রয়েছে। সেই সমীকরণ কাজ করলেই ক্যাম্পাসে লাশ ফেলার পরিকল্পনা বাসত্মবায়নের সুযোগ পাবে ষড়যন্ত্রকারীরা।
বৃহস্পতি ও শুক্রবারে লালবাগের বৈঠকে অস্ত্র বিস্ফোরক এবং অর্থের যোগান দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য সংগ্রহ করেছে। বিপুল পরিমাণ অস্ত্রও সংগ্রহ করেছে। প্রশিৰিত ক্যাডারদের নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে পুষছে লালবাগের একটি বিশেষ পরিবার। সাভার থেকে আসা ক্যাডারদের একটি গ্রম্নপ, নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা পেশাদার খুনীদের একটি গ্রম্নপ, ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও সানারপাড় থেকে আশা চারটি গ্রম্নপের কমপৰে ২৫/৩০ জনের একটি বাহিনীকে চারটি গ্রম্নপে ভাগ করে ক্যাম্পাসে অপারেশনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এদের অধিকাংশই ভাড়াটে খুনী। তাদের সঙ্গে একটি মৌলবাদী সংগঠনের প্রশিৰিত ক্যাডাররাও ক্যাম্পাসে ঢোকার পরিকল্পনা করছে। এই মহূর্তে অল্প বয়সী এই যুবকরা ভাগ করে দেয়া এলাকায় প্রতিদিন রেকি করছে। সন্ধ্যার আগে এবং সন্ধ্যার কিছু সময় পর এরা ক্যাম্পাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় ঘোরাঘুরি করছে। অপারেশনের পর নিরাপদে বের হয়ে যাওয়ার পথ নির্ধারণ, অপারেশনের পর তাদের দ্রম্নত তুলে নেয়ার মতো যানবাহনের অবস্থান, আক্রমণের লৰ্যবস্তু এবং কোনক্রমেই যাতে টার্গেট মিস না হয় সেই লৰ্যে পেশাদার খুনীরা রেকি করছে।
আবার সেই পুরনো ধারার রাজনীতি। লাশের রাজনীতি! যে কোন মূল্যে তারা লাশ চায়। একটি লাশই তাদের আন্দোলন জমিয়ে দিতে পারে। এলৰ্যে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। এখন শুধু অপেৰা একটি উত্তেজনাকর মুহূর্তের। দেশের শীর্ষ স্থানীয় বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই এখন তাদের টার্গেট। লালবাগের বৈঠকে উপস্থিত ছিল এমন একটি সূত্র জনকণ্ঠের এই প্রতিবেদককে বলেছেন, শুধু সময় আর সুযোগের অপেৰা। এমন ঘটনা ঘটবে যা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। তারা এখন শুধু একটা লাশ চায়। সরকার বিরোধী মহলের হাই কমান্ডেরও নাকি এতে সায় রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লাশ ফেলতে পারলেই তারা রাজনীতির মাঠ গরম করতে পারবেন এবং আন্দোলনের কর্মসূচী দিতে পারবেন-এই বিশ্বাস থেকেই তারা লাশ ফেলার আয়োজন করছে। পেশাদার খুনীদের বাইরে এই কাজে মৌলবাদী জঙ্গী ঘাতকদের ব্যবহার করা হবে বলে সংশিস্নষ্ট সূত্র দাবি করেছে। পলাশী মোড় সংলগ্ন ক্যাম্পাসে প্রবেশ গেট, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুখের গেট দিয়ে দু'টি গ্রম্নপ প্রবেশের পরিকল্পনা রয়েছে। আর দু'টি গ্রম্নপের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর এলাকায় এবং অপরটি কলাভবন এলাকায় অবস্থান করবে। ১৯ থেকে ২২ বছর বয়সী যুবকরাই এতে অস্ত্র চালানোর কথা রয়েছে। ইদানীং ক্যাম্পাস এলাকায় অচেনা লোকদের সন্দেহজনক আনাগোনাও বেড়েছে বলে গোয়েন্দাসূত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ৰমতায় আসার পর গত এক বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শানত্মিপূর্ণ ছিল। ৰমতাসীন জোটের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বিরম্নদ্ধে সারাদেশে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ নানা অনাকাঙ্ৰিত ঘটনার অভিযোগ উঠলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিরম্নদ্ধে এরকম কোন অভিযোগ ওঠেনি। ক্যাম্পাসে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখতে ছাত্রলীগের এই অবস্থান সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। সরকারবিরোধী মহলের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিপৰের সহঅবস্থানমূলক সম্পর্ক ছিল। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অভ্যনত্মরীণ কোন্দলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ছাত্রদল সভাপতি টুকুকে বাঁচাতে গিয়ে রক্তাক্ত হন, শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম টুকুকে রৰা করতে গিয়ে বিদ্রোহী গ্রম্নপের হাতে আহত হয়েছেন। এতসব ঘটনার পর বিএনপির হাইকমান্ড ছাত্রদলের অভ্যনত্মরীণ বিরোধ অস্বীকার করে হামলার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা করছে। এমনকি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ক্যাম্পাসে অভ্যনত্মরীণ কোন্দলে সংঘর্ষের ঘটনায় শাহবাগ থানায় যে মামলা দায়ের করেছে তাতে আসামি করা হয়েছে ১৪ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে। এভাবেই তারা ক্যাম্পাসে প্রাণহানিকর সংঘর্ষ ঘটিয়ে সে সবের দায় বর্তমান প্রশাসন এবং ছাত্রলীগের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব বিশেষ পারিতোষিকের বিনিময়ে টুকুকে সহায়তা করছে বলেও ক্যাম্পাসে কথা উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সক্রিয় গোয়েন্দাসূত্রগুলো কর্তৃপৰকে এমন অনাকাঙ্ৰিত সংঘর্ষের পূর্বাভাস দিয়েছে। তারা প্রতিদিনই সন্দেহভাজনদের গতিবিধি লৰ্য করছেন। ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে সংশিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সকল ষড়যন্ত্র গোয়েন্দারা আগেই জেনে ফেলছে। কোনভাবেই গোয়েন্দা নজরদারি এড়াতে পারছে না ষড়যন্ত্রকারীরা। যে কারণে ষড়যন্ত্রকারীরা হিমশিম খাচ্ছে। ক্যাম্পাসে অস্ত্র আগে থেকে এনে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সেৰেত্রে তারা ৰমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের দু'এক নেতাকে মোটা অঙ্কের পারিতোষিক দিয়ে হলেও আগে থেকেই অস্ত্র নিয়ে আসার পাঁয়তারা করছে। সেদিন ছাত্রদলের সংঘর্ষের সময় যে অস্ত্র তাৎৰণিকভাবে বের করা হয়েছে- সে ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপৰ গঠিত তদনত্ম কমিটি তথ্যানুসন্ধান করছে। তবে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে ক্যাম্পাসে গড়ে ওঠা প্রায় ১২ টি টিনের ঝুপড়ি দোকান এই অস্ত্র আগে থেকে সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে কিনা-সেই প্রশ্নেরও অনুসন্ধান চলছে। এই দোকানগুলো ক্যাম্পাসে মাদক ব্যবসাসহ নানারকম অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ নতুন নয়। আর জোট আমলে বরাদ্দ পাওয়ার কারণেই তারা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যে কোন মিশনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন সেটিই স্বাভাবিক বলে মনে করছে সচেতন নাগরিক সমাজ।
জোট আমলের বড়-বড় টেন্ডারের নিয়ন্ত্রক, অছাত্র সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ছাত্রদলের সভাপতি হওয়ার পরই ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আগমন বেড়ে যায়। এমনকি পেশাদার খুনীদের একটি গ্রম্নপ তার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং সর্বৰণিক সহচর হিসাবে তার সঙ্গে থাকত। অভ্যনত্মরীণ দ্বন্দ্বে টুকু আহত হওয়ার পর টুকুর সমর্থকরা ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার এই ষড়যন্ত্রে নামে। '৭১-এর ঘাতক ও '৭৫-এর খুনীচক্র এই ষড়যন্ত্র নানা কৌশলে বিভিন্ন রকম সমর্থন দিয়ে ত্বরান্বিত করছে।
No comments