বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্রে ৪৪ ধারা বদল, ইসিতে জমা- চেয়ারপার্সনের ৰমতা বৃদ্ধি, দ-িতরা সদস্য হতে পারবেন
গঠনতন্ত্রে ৪৪ ধারা পরিবর্তন করে নির্বাচন কমিশনে স্থায়ী গঠনতন্ত্র জমা দিয়েছে বিএনপি। সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দ-প্রাপ্ত ব্যক্তিদের নির্বাহী কমিটির সদস্য হওয়ার সুযোগ থাকছে।
আগের কমিটিতে ফৌজদারি বিধিতে দ-িত ব্যক্তিরা সদস্য হওয়ার অযোগ্য ছিল, কাউন্সিলের আগে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এই ধারাটি বিলুপ্ত করেছে বিএনপি। এই ধারাটি বিলুপ্ত করায় দ-প্রাপ্তরা সদস্য হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী দ-িত ব্যক্তি, দেউলিয়া, উন্মাদ এবং সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ ও কুখ্যাত ব্যক্তি নির্বাহী কমিটির সদস্য হতে পারবে না। বিএনপির মতে সমাজবিরোধী ও গণবিরোধীদের নির্বাহী কমিটির সদস্য হওয়ার সুযোগ থাকছে না। এমনকি আগের গঠনতন্ত্রে কাউন্সিলের মেয়াদ ছিল দুই বছর। এখন করা হয়েছে তিন বছর।গঠনতন্ত্রের দুটি ধারা সংশোধন ও একটি ধারা সংযোজন করে চেয়ারপার্সনের ৰমতা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি দলের নির্বাহী কমিটির ৰমতা হ্রাস করা হয়েছে। গঠনতন্ত্রের ৮ (ক) ধারায় নতুন চেয়ারপার্সন দায়িত্ব না নেয়া পর্যনত্ম বর্তমান চেয়ারপার্সন স্বপদে থেকে তাঁর দায়িত্ব পালন করে যেতে পারবেন। চেয়ারপার্সন স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন হিসেবে নির্বাচিত হবেন। বিশেষ করে স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির পদ কিংবা কোন সদস্য শূন্য হলে সেৰেত্রে চেয়ারপার্সন একক ৰমতা বলে শূূন্যপদ পূরণ করতে পারবেন। আগে কোন সিদ্ধানত্ম নেয়ার প্রয়োজন হলে স্থায়ী কমিটির সভায় অনুমোদন করিয়ে নিতে হতো। বর্তমানে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকের প্রয়োজন হবে না। চেয়ারপার্সনের একক ৰমতা থাকলেও দলের কাউন্সিলররা চেয়ারপার্সনকে অপসারণ করতে পারবেন। সেৰেত্রে সর্বময় দলীয়ভাবে ৰমতার অধিকারী হচ্ছেন কাউন্সিলরগণ।
গঠনতন্ত্রের ৬ (১১) (খ) ধারা সংশোধন করে বলা হয়েছে নির্বাহী কমিটি দলের কোন নেতা কিংবা সদস্যের বিরম্নদ্ধে শাসত্মিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে না, শুধুমাত্র সুপারিশ করতে পারবে। আগে নির্বাহী কমিটির সরাসরি কোন কর্মকর্তা কিংবা সদস্যের বিরম্নদ্ধে শাসত্মিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ৰমতা ছিল। এখন ধারা পরিবর্তন করে কোন সদস্যের বিরম্নদ্ধে শাসত্মিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনবোধ মনে করলে ওই ব্যক্তির বিরম্নদ্ধে কেবল সুপারিশ করতে পারবে। তবে নির্বাহী কমিটির সুপারিশ করার বিধান করা হলেও অভিযুক্ত ব্যক্তি ৰমা চেয়ে চেয়ারপার্সনের কাছে আপীল করার সুযোগ রাখা হয়েছে। গঠনতন্ত্র সংশোধন করে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, কৃষক দল ও শ্রমিক দলকে সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে রাখা হয়েছে। এজন্য ছাত্রদল, কৃষক দল ও শ্রমিক দল তাদের নিজস্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলবে। বিএনপির প্রতি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টর্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে (ড্যাব) সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে রাখা হয়েছে।
বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ (ক) ধারায় ছিল ফৌজদারি আইনে দ-প্রাপ্তরা বিএনপির সদস্য হতে পারবেন না। সংশোধিত গঠনতন্ত্র থেকে এই ধারাটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিএনপির অনেক নেতাকর্মী বিশেষ আদালতের রায়ে দ-প্রাপ্ত হয়েছে। এই ধারার কারণে বিভ্রানত্মির সৃষ্টি হতে পারে। গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দলীয় দ-প্রাপ্তদের প্রতি অনুকম্পার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্যদিকে দল নিবন্ধনের আইনী বাধ্যবাধকতার কারণে সহযোগী সংগঠনের ধারায় ছাত্রদল, শ্রমিকদল তাদের নিজের ধারা অনুযায়ী চলবে। প্রবাসী সংগঠন সংক্রানত্ম ধারাটি পরিবর্তন করে একে প্রবাসে সংগঠন বলে উলেস্নখ করা হয়েছে। প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশী যারা বিএনপির নীতি, আদর্শ বিশ্বাস করেন তারা যে দেশে স্থায়ী কিংবা অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন তারা সে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সংগঠন পরিচালনা করতে পারবেন। তবে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠন হিসেবে থাকতে পারবে না। তৃণমূল থেকে প্রার্থী চূড়ানত্ম করার ৰেত্রে সংশিস্নষ্ট নির্বাচনী এলাকার ওযার্ড, ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা অথবা জেলা কমিটি চূড়ানত্ম প্রার্থী মনোনীত করবে। সেৰেত্রে চূড়ানত্ম প্রার্থী মনোনীত করার সর্বময় ৰমতা দেয়া হয়েছে দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের ওপর।
দীর্ঘ ১৬ বছর পর ৮ ডিসেম্বর বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলের আগে সারাদেশের জেলা-উপজেলা ও থানা পর্যায়ের নেতারা দলীয় হাইকমান্ডের কাছে গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন ধারা পরিবর্তনের জন্য প্রসত্মাব পাঠিয়েছেন। পাঠানো প্রসত্মাব নিয়ে দীর্ঘ এক মাস ধরে চেয়ারপার্সন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। অর্ধশতাধিক প্রসত্মাব নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করেন চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র নেতারা। ৪৪টি ধারা পরিবর্তন করে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়। কাউন্সিল অধিবেশনে সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুমোদিত হয়।
নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধানত্ম অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর কাউন্সিলে অনুমোদিত গঠনতন্ত্র জমা দেয়ার শেষ দিন আজ রবিবার। কিন্তু কাউন্সিলে অনুমোদিত সংশোধনকৃত গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনের কাছে বৃহস্পতিবার জমা দিয়েছে বিএনপি। গত বছরের ২৪ জুলাই কাউন্সিল সম্পন্ন করে ২৫ জুলাই নির্বাচন কমিশনে গঠনতন্ত্র জমা দেয় ৰমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ওই সময় বিএনপি নির্বাচন কমিশনের কাছে ছয় মাস সময় চেয়ে আবেদন করে এবং একটি খসড়া গঠনতন্ত্র জমা দেয়। বিএনপির আবেদনের পর নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ২০১০ সালের ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে গঠনতন্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধানত্ম মতে আজকের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো কাউন্সিলের অনুমোদনকৃত গঠনতন্ত্র জমা দিতে ব্যর্থ হলে দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা।
উলেস্নখ্য, নবম সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত ৩৯ রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩৭টি দল গঠনতন্ত্র জমা দেয়। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও ফ্রীডম পার্টি গঠনতন্ত্র জমা দেয়নি। বাসদের ইতোমধ্যে কাউন্সিল সম্পন্ন করেছে। তাদের রবিবার চূড়ানত্ম গঠনতন্ত্র জমা দেয়ার কথা। তবে ফ্রিডম পার্টির প থেকে জানানো হয়েছে, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে' যথাসময়ে তাদের প েসংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেয়া সম্ভব হবে না।
No comments