মরনফাঁদে কচ্ছপ by মোঃ গোলাম রাব্বী
কক্সবাজার, ইনানী, মহেশখালী, শুটকীমহল ও সোনাদিয়া দ্বীপসহ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র সৈকতে প্রতিদিন বেশ কিছু সামুদ্রিক কচ্ছপ মৃত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে। এ সব কচ্ছপের অধিকাংশই ঙষরাব জরফষবু ঞঁৎঃষব (খবঢ়রফড়পযবষুং ড়ষরাধপবধ)। মৃত কচ্ছপ এর অধিকাংশই মা কচ্ছপ। এই সকল মা কচ্ছপগুলোর ওজন প্রায় ৪০-৫৫ কেজি।
মূলত অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রজননকাল। এই সময় মা কচ্ছপগুলো ডিম পাড়ার জন্য গভীর সমুদ্র থেকে সৈকতের দিকে আসে এবং সৈকতের বালিতে ডিম পেড়ে আবার সমুদ্রে ফিরে যায়। কিন্তু প্রজননের এই সময়ে সমুদ্রের জেলেদের মাছ ধরার জালে আটকা পড়ছে কচ্ছপগুলো এবং আটকাপড়া কচ্ছপগুলো মেরে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিচ্ছে কিছু জেলে। এর কারন যাচাই করতে গিয়ে জানা যায়, অধিকাংশ জেলে মনে করেন জালে আটকাপড়া কচ্ছপ জীবিত ছেড়ে দিলে নাকি তাদের অমঙ্গল হবে। এই কুসংস্কারের ফলসরুপ নির্বিচারে মারা পড়ছে অসংখ্য মা কচ্ছপ।মূলত ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে এদের অবস্থান। তবে এদের প্রধান বাসস্থান হল বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপ, সুন্দরবন এবং অন্যান্য বঙ্গপসাগরে অবস্থিত দ্বীপসমূহে। এ প্রজাতির কচ্ছপ ঈওঞঊঝ অঢ়ঢ়বহফরী ও এ অর্ন্তভূক্ত এবং আই ইউ সি এন ২০০০ এর মতে বাংলাদেশে এটি বিপদাপন্ন। এই প্রাণীটি বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর তফছিল ১ এর আওতায় রক্ষিত । বাংলাদেশ বন বিভাগ ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে জরীপ শুরু করেছে এবং সামুদ্রিক কচ্ছপ হত্যা বন্ধে ঐসব এলাকার জেলে ও সাধারন মানুষদের নিয়ে বেশ কিছু গণসচেতনতা মূলক কার্যক্রম শুরু করেছে। তাছাড়া অবৈধভাবে পাচার ও বিক্রির সময় প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ বন বিভাগ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রচুর পরিমাণ দেশী কচ্ছপ আটক করছে। সামান্য পরিমাণ মুনাফার জন্য কিছু অসাধু লোক প্রকৃতি থেকে বিপদাপন্ন প্রজাতির এই সব কচ্ছপ সংগ্রহ করছে। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর মাধ্যমে এই ধরণের অবৈধ কাজের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে জরিমানাসহ কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।
উল্লেখ্য সারা বিশ্বে যেখানে মাত্র ৩১৩ প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে তারমধ্যে শুধু আমাদের দেশেই আছে ২৮ প্রজাতির কচ্ছপ। জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বহন করে। অর্থনৈতিকভাবেও কচ্ছপের গুরুত্বও অনেক। এদের ডিম সাধারণ মানুষ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর খাওয়ার উপযোগী এবং এদের মাংসে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে। ঙষরাব জরফষবু ঞঁৎঃষব এর শরীরের মোট ওজনের প্রায় এক চতুর্থাংশই মাংস।
সচেতনতার অভাবে আমরা ইতিমধ্যেই অনেকগুলো প্রজাতির বন্যপ্রাণী প্রকৃতি থেকে হারিয়ে ফেলেছি। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে সব প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য গণসচেতনতা ও আইনের সঠিক প্রয়োগ জরুরী।
No comments