শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতির এ টু জেড- রাহুল শর্মা
মিথি বরাবরই পড়াশোনায় ভাল। কিন্তু সমস্যা শুরম্ন হলো ক্লাস নাইনে উঠার পর। কেমন উড়ো উড়ো ভাব। মনোযোগ কম। অস্থিরতা। কোন দিকেই আগ্রহ নেই। প্রভাব পড়ল নির্বাচনী পরীক্ষায়।
খারাপ ফল করায় টনক নড়ল মিথির। বন্ধুদের পরামর্শ, নোট সংগ্রহ, কোচিং, প্রাইভেট সবমিলিয়ে একটাই চিনত্মা পরীক্ষায় কোনরকমে উৎরে যাওয়া।মিথির বন্ধু তানজিল। ওর সমস্যা অন্যরকম। প্রতিটি পরীক্ষায় তার প্রস্তুতি থাকে ভাল। কিন্তু পরীক্ষার দিন যতই এগিয়ে আসে তত ওর মাঝে কাজ করে পরীক্ষা ভীতি। হলে গিয়ে জানা বিষয়ও অজানা হয়ে যায়। এবারও কি তেমন হবে? আশানুরূপ হবে না পরীৰার ফল? পরীৰা ভীতি তানজিলকে নানারকম দুশ্চিনত্মায় অস্থির করে রাখে। তাই ভাল প্রস্তুতি সত্ত্বেও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তানজিলকে পিছিয়ে দেয়।
এগুলো গল্প নয়। তোমাদের অভিজ্ঞতা থেকেই নেয়া। সঠিক পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনার অভাবে মেধা ও অনুশীলনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অনেকেই কাঙ্ৰিত ফল অর্জন করতে পারে না।
পরীক্ষার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে সময় একেবারেই কম। এরই মধ্যে সব বিষয় দ্রম্নত শেষ করতে হবে। শুধু বিষয় রপ্ত করাই নয়, ভাল ফলের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের আরও কিছু বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হয়, যা ভাল ফলের জন্য সহায়ক। এ রকমই কিছু দিকনির্দেশনা_
পরীক্ষার প্রস্তুতি
পরীক্ষা শুরম্ন হওয়ার খুব বেশি দেরি নেই। এই সময়টাতে মানসিক, শারীরিকভাবে সুস্থ থেকে একটু রম্নটিনমাফিক পড়াশোনা কর, রেজাল্ট আশানুরূপ হবেই।
সঠিক পরিকল্পনা : পরীক্ষা প্রস্তুতির প্রথমেই দরকার পরিকল্পনা। সঠিক পরিকল্পনা এবং তার বাসত্মবায়ন ভাল ফলাফল নিয়ে আসে। পেছনের নষ্ট হওয়া সময়ের কথা মাথা থেকে ফেলে দিতে প্রথমেই। তার চেয়ে যেটুকু সময় হাতে আছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহারে মনোযোগী হতে হবে।
ইতিবাচক পরিকল্পনা : নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরীৰায় খারাপ ফলাফল আনতে পারে। এ জন্য মনের এলোমেলো চিনত্মা দ্রম্নত ঝেড়ে ফেলতে হবে। সার্বিক প্রস্তুতি যদি তোমাদের মনঃপূত না হয়েও থাকে তারপরও দুশ্চিনত্মা করার কিছু নেই। তোমার ভা-ারে যা আছে তাকেই ঠিকমতো কাজে লাগাও। অবশ্যই তুমি সফল হবে।
মনকে চাপমুক্ত রাখ : পড়াশোনার চাপে যদি ধরাশায়ী হও তাহলে তো চলবে না। মনকে সবসময় ফুরফুরে রাখতে হবে।
টাইম ম্যানেজমেন্ট
পরীক্ষার জন্য স্পেশাল প্রস্তুতির তালিকায় একেবারে প্রথমে আসবে এই ব্যাপারটি। টাইম ম্যানেজমেন্টকে বলা যেতে পারে ভিত, যার ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে থাকবে গোটা এঙ্াম ম্যানেজমেন্ট। টাইম ম্যানেজমেন্ট বলতে শুধু ক'টা সময় ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসবে, তা ঠিক করা নয়। সারাদিনের সময়ের হিসাব হবে ঘণ্টা ধরে। যেমন, সকাল সাতটা থেকে নয়টা পর্যনত্ম নতুন পড়া তৈরি করবে বা দুপুর তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যনত্ম পুরনো পড়া ঝালিয়ে নেবে ইত্যাদি। সপ্তাহের সাত দিনের রম্নটিন তৈরি করতে হবে এভাবেই। তবে এটা করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন ব্যাপারটা একঘেয়ে না হয়। চেষ্টা করবে পড়ার মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে। এক সপ্তাহের রম্নটিন করা হয়ে গেলে পরের সপ্তাহে এটা একটু পাল্টে নাও। গত সপ্তাহের সোমবারে যা পড়েছিলে, এই সপ্তাহে তা আসুক বৃহস্পতিবারে।
বিষয় নিয়ে ভাবনা
এটা অবশ্য যার যার নিজের ভাবনার ব্যাপার। আগে নিজে ঠিক কর কোন বিষয়টা তুমি এখনও আয়ত্ত করতে পারনি, বেশি জোর দাও সেই বিষয়ের ওপর। যেগুলো ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে সেগুলো নিয়মিত ঝালিয়ে নিতে হবে। যদি দেখ, বরাদ্দ সময়ের আগেই কোন পড়া শেষ হয়ে গেল, তা হলে উঠে না পড়ে অল্প তৈরি হওয়া অন্য কোন প্রশ্ন ঝালিয়ে নাও একবার। মোট কথা, ফাঁক পেলেই সময়ের সদ্ব্যবহার করবে। যাদের পড়ার বিষয়ের মধ্যে অাঁকার একটা গুরম্নত্বপূর্ণ জায়গা আছে, দুুপুর বেলাটা তা সে জন্য রাখতে পার। খুব ভাল হয় যদি পড়ার পাশাপাশি সময় ধরে উত্তর লেখার অভ্যাস করা যায়।
পরীক্ষার আগের রাতে করণীয়
পরীক্ষার আগের রাতটি প্রায় সকল পরীক্ষাথর্ীর জন্যই গুরম্নত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষার আগের রাতে যতটা না পড়াশোনা নিয়ে ব্যসত্ম থাকে তার চেয়ে বেশি ব্যসত্ম থাকে পরীক্ষা সংক্রানত্ম টেনশন নিয়ে। এই সময়ে একদম টেনশন করা যাবে না। যা পড়েছ তাই যথেষ্ট এটা মনে রাখবে। যেগুলো রিভিশন করতে পারনি, সেগুলো নতুন করে পড়ার চেষ্টা না করাই ভাল। না হলে জানা বিষষগুলো ভুলে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় কমপক্ষে সাত ঘণ্টা ঘুমের দরকার। পরীক্ষার হলের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাতেই গুছিয়ে ফেলবে।
পরীক্ষার দিনের পরামর্শ
পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার আগে প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, কলম, পেন্সিল, জ্যামিতি বঙ্, শার্পনার, ইরেজার ও ক্যালকুলেটর ইত্যাদি মনে করে নিয়ে নেবে।
পরীক্ষা কেন্দ্রে গমন : পরীক্ষা হবার এক ঘণ্টা আগে ঘর থেকে বের হতে হবে, অবশ্য বাড়ি থেকে কেন্দ্রের দূরত্ব, ট্রাফিক জ্যাম ও যানবাহনের পাওয়া না পাওয়ার ওপর সময়ের হেরফের হওয়ার ব্যাপারটি নির্ভর করে।
পরীক্ষার খাতা পাওয়ার পর : পরীক্ষার খাতা পাওয়ার পর নির্ভর্ুলভাবে রোল, রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ অন্যান্য বিষয় পূরণ করতে হবে। কোন ভুল হলে সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষককে জানাতে হবে। এ ছাড়া অতিরিক্ত খাতা নিলে তার নম্বর ঠিকভাবে লিখতে হবে।
পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্ত : পরীক্ষা শেষ হবার ১৫ মিনিট পূর্বেই একটি সতর্ক ঘণ্টা বাজে। এ সময়ের মধ্যেই লেখা শেষ করতে হবে এবং খাতাটি প্রথম থেকে পড়া শুরম্ন কর এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন কর।
পরীক্ষা স্পেশাল ডায়েট
শুনতে অবাক লাগলেও পরীক্ষা প্রস্তুতির এটাও একটা গুরম্নত্বপূর্ণ অংশ। তবে পরীক্ষার স্পেশাল ডায়েট মানেই ঝাল, আলু সেদ্ধ ভাত বা বাবা-মা'র কথা শুনে বিশুদ্ধ ফলাহার নয়, আবার বাড়ির নিষেধ মেনে বিকালে বন্ধুদের সঙ্গে চুপিচুপি গিয়ে চটপটি খাওয়াও নয়। সাধারণ সময়ে তুমি যে ডায়েটে অভ্যসত্ম, সেটা বজায় রাখলেই যথেষ্ট। পরীক্ষার সময়ে পরিশ্রম বেশি হয় বলে খিদেটা একটু বেশিই পায়। লাঞ্চ বা ডিনারের সময় পেট ভরে না খেয়ে বারেবারে খাওয়াই ভাল। রান্নায় তেল-মসলা একটু কম হলেই ভাল। তাহলে শরীর খারাপ হওয়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। পড়তে বসলে আলসেমি এলে বা ঘুম ঘুম পেলে চা-কফি-দুধ ইত্যাদি যে কোন গরম পানীয় খাবে। এ্যানার্জি বাড়াতে দিনে অনত্মত একটা মিষ্টি খাওয়ার চেষ্টা কর।
বিশেষ সতর্কতা
পরীক্ষার সাল : প্রথমে এসএসসি পরীক্ষা লেখার পাশে বঙ্রে ভেতরে পরীক্ষার সাল ২০১০ লিখবে।
বোর্ড : এবার বোর্ড লেখা বঙ্রে মধ্যে যে বোর্ড থেকে তুমি পরীক্ষা দেবে, সে বৃত্তটি ভরাট করবে।
পরীক্ষা : এখন পরীক্ষা বঙ্ েলেখা রয়েছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার নাম। তুমি এসএসসি পরীক্ষার ঘরে বৃত্ত ভরাট করবে।
রোল নম্বর : এরপর দেখবে রোল নম্বর-এর ঘরটি। প্রথমে ফাঁকা ঘরে তোমার রোল নম্বরটি লিখবে এবং পরে বল পয়েন্ট দিয়ে বৃত্ত ভরাট করবে।
বিষয় কোড : এবার বিষয় কোডের ঘরে বিষয় কোডটি লেখ।
অতিরিক্ত খাতার নম্বর : অতিরিক্ত উত্তরপত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ক্রমিক নম্বর উত্তরপত্রের ওএমআর ফরমের নির্দিষ্ট স্থানে লিখবে এবং ক্রমিক নম্বরের পাশের ছোট বৃত্তাকার ঘরটি ভরাট করে দেবে।
ছবি আরিফ আহমেদ
No comments