৩ লাখ টন টন চাল কিনবে সরকার, চার দেশে চিঠি by মিজান চৌধুরী
আনত্মর্জাতিক বাজারে চালের মূল্য কমছে। টানা কয়েক সপ্তাহ উর্ধমুখী থাকার পর তা এখন নিম্নমুখী রয়েছে। এদিকে দীর্ঘদিন পর রাষ্ট্রীয়ভাবে চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ।
তিন লাখ মেট্রিক টন চাল কিনতে চারটি রাষ্ট্রের কাছে চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বেসরকারীভাবে বন্ধ থাকলেও সরকারীভাবে চাল আমদানির প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সরকার প্রাথমিকভাবে তিন লাখ মেট্রিক টন চাল আনার প্রক্রিয়া শুরম্ন করেছে। থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের কাছে রাষ্ট্রীয়ভাবে চাল আমদানির আগ্রহের কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। ওইসব দেশে চালের মূল্য জানতে চাওয়া হয়েছে। এ চাল আমদানি করা হবে সরকার টু সরকারের মাধ্যমে। ইতোমধ্যে এক লাখ মেট্রিক টন চাল বাংলাদেশে রফতানির আগ্রহের কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছে মিয়ানমার। প্রতি মেট্রিক টন চাল ৩৪০ মার্কিন ডলারে রফতানি করতে পারবে মিয়ানমার। তবে প্রসত্মাবে উলেস্নখ করা হয়েছে ওই চালের মধ্যে ২৫ শতাংশ ভাঙ্গা থাকবে। মিয়ানমার সীমানত্ম পথে ওই চাল বাংলাদেশে পেঁৗছে দিবে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, চারটি রাষ্ট্রের কাছ থেকে চিঠির উত্তর পাওয়ার পর মূল্য নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। সর্বনিম্ন প্রসত্মাব যে রাষ্ট্রের কাছ পাওয়া যাবে সে দেশ থেকে চাল কেনা হবে। তবে ইতোমধ্যে মিয়ানমার তাদের প্রসত্মাব দিয়েছে। অন্যান্য দেশ থেকে প্রসত্মাব এখনও আসেনি।সূত্র মতে, সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও চালের বাজার সহনশীল রাখার প্রস্তুতি হিসাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। চালের আনত্মর্জাতিক বাজার বেড়ে যাওয়া ও অভ্যনত্মরীণ উৎপাদন ভাল হওয়ার কারণে বেসরকারীভাবে দীর্ঘদিন চাল আমদানি বন্ধ আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর এই ছয় মাসে বেসরকারীভাবে কোন চাল আমদানি হয়নি। তবে জানুয়ারি মাসে ১৫ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য হচ্ছে ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে বেসরকারীভাবে ৪ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়। যার আর্থিক মূল্য হচ্ছে ৯ কোটি ৮ লাখ মার্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় দাঁড়ায় ৬৮৬ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তার মতে, বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভের অবস্থা ভাল রয়েছে। ফলে রাষ্ট্রীয়ভাবে চাল আমদানি করা হলে পাহাড় সমান রির্জাভের কিছু ব্যবহার হবে। কারণ চাল আমদানির কারণেই অতীতে দুর্বল রির্জাভের উপর বেশি চাপ সৃষ্টি হয়।
এদিকে আনত্মর্জাতিক বাজারে চালের উর্ধমুখী প্রবণতা থেমেছে। ডিসেম্বরে থাইল্যান্ডের বাজারে এক মেট্রিক টন চাল বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৬শ' মার্কিন ডলার। এক মাসে কমে জানুয়ারিতে ৫৭৫ ডলারে নেমে আসে। এক মাসের ব্যবধানে থ্যাইল্যান্ডের বাজারে টন প্রতি ৭৫ ডলার কমেছে। পাকিসত্মানের বাজারে কমেছে ২৫ টন প্রতি ২৫ মার্কিন ডলার। পাকিসত্মানে প্রতি মেট্রিক টন চালের মূল্য হচ্ছে ৪৭৫ ডলার। ভিয়েতনামে চালের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৭৫ ডলারে। আমেরিকান বাজারে প্রতি মেট্রিক টনে ৫ ডলার হ্রাস পেয়ে ৫৭০ ডলার নেমেছে। দাম না কমলেও চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে উরম্নগুয়ে ও আর্জেন্টিনাতে। আর্জেন্টিনায় ৬শ' ডলার ও উরম্নগুয়েতে চাল প্রতিমেট্রিক টন হচ্ছে ৬১০ ডলার। এফএএস অনলাইন সূত্রে জানা গেছে, ৮ থেকে ১৪ জানুয়ারি এই এক সপ্তাহে বিশ্ববাজারে ৫৫ হাজার ১শ' মেট্রিক টন রফতানির জন্য চাল বিক্রি হয়েছে। এটা গত সপ্তাহের চেয়ে ৭১ শতাংশ কম। এবং গত এক মাসের তুলনায় ৪৮ শতাংশ কম। মূল্য কমতে শুরম্ন করার আনত্মর্জাতিক বাজারে বিক্রিও কমছে।
আনত্মর্জাতিক বাজারে মূল্য কমলেও অভ্যনত্মরীণ বাজারে আর কমছে না। আনত্মর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে অভ্যনত্মরীণ বাজারে সব ধরনের চালের মূল্য বাড়ানো হয়। সূত্র মতে, সরকার চালের বাজার সহনশীল রাখতেই এবার আমদানিতে নেমেছে। বর্তমান সরকারের হাতে ১১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য শস্য মজুদ রয়েছে।
No comments