মেলায় যাওয়া হলো না উইলসের ৰুদে হামিমের- ঘাতক বাস কেড়ে নিল প্রাণ
আব্বু-আম্মুর সঙ্গে মেলায় যাওয়া হলো না উইলস লিটল ফ্লাওয়ার উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৰুদে শিৰার্থী ছোট্ট হামিমের। কেনা হলো না শখের খেলনা। মেলায় গিয়ে অনেক মজা করার কথা ছিল। মনের আনন্দে ক ঘোরাঘুরি করার কথা ছিল তার।
কিছুই হলো না। আব্বুর হাতে ভাতও খাওয়া হলো না। সবই এখন স্মৃতি। সারাদিন বাসায় চঞ্চল প্রৃৃকৃতির হামিম সবার সঙ্গে দুষ্টুমি করত। এ জন্য সবার কাছেই হামিম ছিল প্রিয়। আশপাশের লোকজনের কাছে হামিম ছিল খুবই আদরের। আব্বুর কাছে বায়না ধরেছিল মেলায় যাবে। ব্যবসায়িক কাজের ব্যসত্মতায় তা আর হয়ে ওঠেনি। এ জন্য হামিমের মন খারাপ ছিল। তাই বার বার আব্বু-আম্মুকে বলে বেড়াত আব্বু আমরা কখন মেলায় যাব। মঙ্গলবার রাতে খাবার টেবিলে হামিমের পিতা মুতালিব শেখ ও মা সনিয়া শেখ মিলে সিদ্ধানত্ম নিয়েছে আগামীকাল শুক্রবার বাণিজ্য মেলায় সবাই মিলে ঘুরতে যাবে। শুক্রবার মেলায় যাচ্ছে এমন খবরে হামিমের খুশি যেন আর ধরতে চাইছিল না। বলগা হরিণের মতো বাড়ি মাত করে রাখত। তার মাত্র একদিন আগে ঘাতক বাস কেড়ে নিল হামিমকে। এভাবেই মর্গের পাশে মাটিতে বসে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিলেন হামিমের বাবা মুতালিব শেখ ও আত্মীয়স্বজন। হামিমের বাবার সারা গায়ে মাটি লেগে আছে। দেখে মনে হলো পাগলপ্রায়, দৃষ্টি তাঁর শূন্যে। এখন আর কাঁদতে পারছেন না। একমাত্র সনত্মানকে হারিয়ে কেঁদে কেঁদে চোখের পানি পর্যনত্ম শুকিয়ে গেছে। গলা বসে গেছে। তাঁর মুখে একটিই কথা হায়! আমার কি হলো!বুধবার বেলা সোয়া ১১টায় রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে ঘাতক বাস কেড়ে নেয় উইলস লিটল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কেজি ওয়ানের ৰুদে শিৰার্থী হামিম শেখের (৬) প্রাণ। হামিমের স্মরণে আজ উইলস লিটল ফ্লাওয়ার উচ্চ বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। নিহতের পরিবার জানায়, মুতালিবের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার ষোলঘর গ্রামে। দীর্ঘদিন ঢাকাতেই ছোটখাটো ব্যবসা করেন। ২০০২ সালে মুতালিব ও ঢাকার মেয়ে সনিয়ার বিয়ে হয়। এর পর থেকে স্বামী-স্ত্রী বংশাল থানাধীন লুৎফর রহমান লেনের ১০৮ নম্বর বাড়িতে বসবাস করছেন। ২০০৪ সালে তাঁদের একমাত্র সনত্মান হামিমের জন্ম হয়। ইতোমধ্যে পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা আসে। একটি শার্ট তৈরির কারাখানা গ েতোলেন। শখ করে পিতা ছেলের নামে ফ্যাক্টরির নাম রাখেন হামিম শার্ট ফ্যাক্টরি।
হামিমের পিতা মুতালিব জানান, প্রতিদিনের মতো হামিমকে স্কুলে পেঁৗছে দিতে সকাল সকাল হামিমকে ঘুম থেকে উঠানো হয়। ঘুম থেকে উঠে স্কুল ড্রেস পরে হামিম ঘুম জড়ানো চোখে ঝিমুচ্ছিল। এ সময় হামিম তার আব্বুর বুকের ওপরে পড়ে ঘুমিয়ে যায়। পরে সকাল সোয়া ৭টায় মায়ের ডাকে হামিম রিঙ্াযোগে বিদ্যালয়ে যায়। মর্নিং শিফট শেষে বেলা ১১টায় হামিমের স্কুল ছুটি হয়। হামিমকে নিয়ে তার মা কাকরাইল মোড় দিয়ে রাসত্মা পার হচ্ছিলেন। এ সময় মিরপুর থেকে মতিঝিলগামী মধুমতি পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ভ-১৪-১৩৪৭ নম্বরের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মা-ছেলের সজোরে ধাক্কা লাগে। ধাক্কা লেগে তাঁরা ছিটকে রাসত্মার পাশে পড়ে যায়। হামিমের মাথায় প্রচ- আঘাত লেগে প্রচুর রক্তৰরণ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই হামিমের মৃতু্য হয়। পরে আহত অবস্থায় দ্রম্নত হামিমের মাকে প্রথমে ইসলামিয়া ও পরে জাতীয় চৰু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। হামিমের মায়ের বাম চোখে প্রচ- আঘাত লেগেছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বাসচাপায় উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের শিৰার্থীর মৃতু্যর খবর মুহূর্তে বিদ্যালয়ে পেঁৗছে। এ সময় শত শত শিৰার্থী রাসত্মা অবরোধ করে। উত্তেজিত শিৰার্থীরা বেশ কয়েকটি যানবাহনে ভাংচুর চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রম্নত ঘটনাস্থলে পেঁৗছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। পুলিশ বাসসহ চালক শামসুদ্দিনকে আটক করেছে। নিহতের পিতা সড়ক দুর্ঘটনার খবর শুনে দৌড়ে স্কুলে পেঁৗছেন। রাসত্মায় কতবার যে তিনি হোঁচট খেয়ে রাসত্মায় পড়ে গেছেন তার হিসেব নেই। যখন স্কুলের সামনে পেঁৗছলেন ততৰণে সব শেষ।
অঝোরে হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে একমাত্র সনত্মান হারা পিতা মুতালিব বলছিলেন, হামিমকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী সনিয়া সকাল ৭টায় রিঙ্াযোগে বাড়ি থেকে বের হন। বের হওয়ার আগে সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠায় স্কুল ড্রেস পরে হামিম ঘুম ঘুম চোখে ঢুলছিল। হঠাৎ করে হামিম খাটের কোণে বসে ঘুমাচ্ছিল। এক সময় সোজা আমার বুকের ওপর শুয়ে ঘুমিয়ে গেল। রাতেই আমরা সিদ্ধানত্ম নিয়েছি হামিমসহ বাড়ির সবাই বাণিজ্য মেলায় বেড়াতে যাব। তা আর হলো না। বাণিজ্য মেলায় আর কোন দিন যাওয়া হবে কি না তাও জানি না। হামিমের স্কুল ব্যাগ, বই খাতাপত্রসহ ব্যবহারের সব জিনিসই পড়ে আছে। শুধু নেই হামিম। আর কোন দিন আসবেও না। হামিমের ব্যবহার্য জিনিসপত্র ৰণে ৰণে হামিম হয়ে ফিরে আসবে। আর তার সঙ্গে ফিরে আসবে একরাশ অতীত স্মৃতি; যা শোকের মাত্রা প্রতিৰণেই বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ। সবাই স্কুলে যাবে মায়ের হাত ধরে। কিন্তু হামিমের আর কোন দিন মায়ের হাত ধরে দুষ্টুমি করতে করতে স্কুলে যাওয়া হবে না। সময় যাবে হামিমের সহপাঠীরা বড় হবে। হামিমের চলে যাওয়ার স্মৃতিও ঝাপসা হয়ে যাবে। তার পরেও হয়ত কোন আসরে মনে পড়বে শিশুবেলার এ সাথীকে। কিন্তু এ রাজধানীর গাড়ি সেদিনও কি এমনি বেপরোয়াভাবে চলবে? কেড়ে নেবে এমনি শিশু হামিমদের। আর অশ্রম্নসজল চোখে এ খবর লিখতে হবে সেদিনের কোন সংবাদপত্রের রিপোর্টারকে!
No comments