মত ও মন্তব্য-অসীমান্তিক অমৃতপায়ী মেহেদি হাসান by হারুন হাবীব
মেহেদি হাসান নেই। দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৩ জুন ২০১২ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রবাদপ্রতিম এই সংগীতশিল্পী। করাচির আগা খান হাসপাতাল থেকে খবরটা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদয় দুমড়ানো যন্ত্রণার আঘাত সইতে হয়েছে তাঁর বিশ্বজোড়া কোটি কোটি ভক্তকে। এ ভক্তকুল যেমন পাকিস্তানে, তেমনি ভারতে এবং বাংলাদেশে।
শুধু তিন দেশ কেন- এ শিল্পীর ভক্তকুল ছড়িয়ে আছে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে। প্রিয়জন হারিয়ে সবাই শোকতাড়িত। উপমহাদেশের গজলসম্রাট, সংগীতের জাদুকর মেহেদি হাসান পৃথিবীতে নেই- এ যেন অবিশ্বাস্য! কিন্তু মেহেদি হাসান নেই- এ যেমন সত্য, তেমনি সত্য তাঁর সৃষ্টি আছে, যা মন্ত্রমুঙ্ময়।
৮৪ বছরের দীর্ঘ জীবনে সংগীতের জাদুতে উপমহাদেশকে মুগ্ধ রাখেন মেহেদি হাসান। তাঁর সংগীত রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক বিভাজন অস্বীকার করে সত্য ও সুন্দরে আবৃত নতুন পৃথিবীর মুখ দেখিয়েছে মানুষকে। মানবতাবাদী সুফি দর্শনের পথে, সত্য দার্শনিকতার পথে মানুষকে ধাবিত করেছে। যতটুকু জানি, প্রায় এক যুগ ধরে ফুসফুসের সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। ভুগছিলেন মূত্রনালির সমস্যায়ও। এর পরও তাঁর সংগীত সাধনা থেমে থাকেনি। জাগতিক বিশ্বের খরতাপেও শান্তির বাণী সিঞ্চন করেছেন এই শিল্পী- যা তাঁর শ্রেষ্ঠ অমরত্ব।
মেহেদি হাসান ১৯২৭ সালে রাজস্থানে জন্মেছিলেন। সংগীতপ্রেমী এক পরিবারে জন্ম নেওয়ায় পরিবারেই সংগীতের তালিম নেন। জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ও কাটে তাঁর জন্মভূমি ভারতেই। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পরিবারসহ চলে যেতে হয় নবগঠিত পাকিস্তানে। ইতিহাসের আঘাত এই শিল্পীকে জীবনভর কষ্ট দিয়েছে। দেশ ভাগের ক্ষত কোনো দিন তাঁর কাটেনি। প্রতিনিয়ত যন্ত্রণাবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁর সংগীতে যন্ত্রণার সে ক্ষতচিহ্ন আছে। পাকিস্তানে যাওয়ার পর নিদারুণ দরিদ্রতা গ্রাস করতে থাকে মেহেদি হাসানকে। একজন মোটর মেকানিক হিসেবে চাকরি নিতে হয়। এতেই জীবিকা নির্বাহ চলতে থাকে কোনোমতে।
কিন্তু ঈশ্বর প্রদত্ত কণ্ঠ তাঁকে দ্রুত পরিচিতি দান করতে থাকে। আর সবার মতো না হয়ে মেহেদি হাসান দ্রুত স্বাতন্ত্র্যের দাবিদার হয়ে ওঠেন। পাকিস্তানের মাটিতেও তাঁর গলায় রাজস্থানি পল্লীগীতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এরই ফাঁকে ঠুমরির তালিমও চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি।
১৯৫৭ সালে পাকিস্তান রেডিওতে গান গাওয়ার প্রথম সুযোগ লাভের পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মেহেদি হাসানকে। দ্রুত তাঁর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পরিণত হন জীবন্ত কিংবদন্তিতে। 'আব কি বিচরে', 'ম্যায় হোস ম্যায় থা তো ফির', 'জিন্দেগি ম্যায় তো সাভি'সহ বহু গজল তাঁকে এনে দেয় 'সম্রাটের' যশ।
বাংলাদেশেও সংগীতপ্রেমীদের মধ্যে মেহেদি হাসানের ভক্ত-অনুরাগীর সংখ্যা হিসাব কষে দেখার নয়। বাংলায় তাঁর গাওয়া 'ঢাকো যতো না নয়ন দুহাতে', 'হারানো দিনের কথা', 'তুমি যে আমার' গানগুলো চিরদিন মনে রাখবে এ দেশের মানুষ।
চলচ্চিত্রেরও বহু গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। উর্দুর পাশাপাশি গেয়েছেন ফার্সি ভাষায়ও। উর্দু কবিতার প্রতি তাঁর ছিল গভীর প্রেম। পাকিস্তান সরকারের তমঘা-ই-ইমতিয়াজ ও হিলাল-ই-ইমতিয়াজ খেতাব ছাড়াও নেপাল সরকারের কাছ থেকে গোরখা দক্ষিণাসহ বহু খেতাব পেয়েছেন মেহেদি হাসান। সংগীতে অবদানের জন্য পেয়েছেন বহু সম্মাননা ও পুরস্কার। কিন্তু সব সম্মান ছাপিয়ে ওঠে কোটি হৃদয়ের ভালোবাসা।
ধ্রুপদী, ঠুমরি থেকে গজলে ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। পাকিস্তানে চলচ্চিত্র শিল্পকে কয়েক যুগ ধরে বাঁচিয়ে রেখেছেন মেহেদি হাসান। দুই যুগেরও বেশি তিনি ছিলেন মুকুটহীন সম্রাট। চলচ্চিত্রের তাঁর জনপ্রিয় গানগুলো মানুষকে মোহিত করেছে। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁকে পাকিস্তানে ঘর বাঁধতে হয়েছিল। কিন্তু তাঁর জন্মস্থান তাঁকে সারা জীবন কাছে টানে। কখনো দূরে যেতে দেয়নি। চিরায়ত হিন্দুস্থানি ধ্রুপদী তাঁকে আঁকড়ে থেকেছে আজীবন।
আজ এই অমর শিল্পী নেই; কিন্তু তাঁর সংগীত যুগ যুগ ধরে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে। ভারত ও পাকিস্তান রাজনৈতিক কারণে ভাগ হয়ে গেছে। লড়াই-সংঘাতের অন্ত নেই তাদের। কিন্তু মেহেদি হাসানের সংগীত দুই দেশকে একত্র করেছে। তাঁর সংগীত সীমান্ত মানেনি। ঐন্দ্রজালিক সে সংগীত মানুষকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে, মানবতা ও শান্তির বাণী প্রচার করেছে। মানবতার পথে একজন শিল্পীর এই তো শ্রেষ্ঠ উপহার।
আমি মেহেদি হাসানের ভক্তকুলের একজন। অনেক অমর বাংলা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন বলেই নয়, এ দেশের হাজারো সংগীতপ্রেমীর মতো আমিও তাঁর ধ্রুপদী, ঠুমরি ও উর্দু গজলের একনিষ্ঠ প্রেমিক। রাজস্থানের যে লুনা গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন, সে গ্রাম আজও মেহেদি হাসানকে স্মরণ করে। আমৃত্যু তাঁর গ্রামকে তিনিও অনুভব করেছেন হৃদয় দিয়ে। মির্জা গালিব, ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, মির তাকি মির, হাফিজ হোসিয়াপুরী ও রাজ রিমিজির গানে সুর দিয়ে মেহেদি হাসান সংগীত জগৎকে নতুন মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন। তাঁর উর্দু উচ্চারণ নিয়ে কথা ওঠেনি কোথাও- না পাকিস্তানে না ভারতে। ভারতের একটি ক্ষুদ্র অংশ এই পাকিস্তানি শিল্পীকে নিয়ে বিতর্ক তোলার চেষ্টা করেও সফল হয়নি। ভারতের বেশির ভাগ মানুষ মেহেদি হাসানকে গ্রহণ করেছিল হৃদয় থেকে। তাঁর মৃত্যুতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের শোকবাণী পড়লেই হৃদয়ের সে আকুলতা অনুভব করা যায়।
মনে পড়ে, বিখ্যাত উর্দু কবি গুলজার ও নন্দিত চলচ্চিত্রকার মহেশ ভাট ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মেহেদি হাসানবিরোধীদের বিরুদ্ধে। গুলজারের ভাষায়, সূর্যকে যেমন ভাগ করা যায় না, বাতাসের চলার পথকে যেমন পরিবর্তন করা যাবে না, মেহেদি হাসানের মতো শিল্পীকে কোনো নির্দিষ্ট দেশের গণ্ডিতে ফেলে বিভক্ত করা সম্ভব নয়। যেমন বিভক্ত করা যাবে না ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, লতা মুঙ্গেশকর কিংবা মেহেদি হাসানকে। এককালের ভারতের, পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের হওয়া সত্ত্বেও মেহেদি হাসান সে কারণেই আমাদের।
শিল্পীর জাতপাত নেই, নেই কোনো নির্দিষ্ট গণ্ডি। সাহিত্য, সংগীত, শিল্পকলা অসীমান্তিক- একে গণ্ডির মধ্যে আনা বড় মূর্খতা। এই মাত্র কয়েক বছর আগে ভারতের লতা মুঙ্গেশকর এবং পাকিস্তানের মেহেদি হাসান যৌথভাবে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন। অ্যালবামটির একটি গান- 'তেরা মিলানা ...' এতটাই জনপ্রিয়, এতটাই হৃদয়ছোঁয়া যে কে তা ভুলতে পারে?
মেহেদি হাসানের সংগীত অমরত্বের বাণী ছড়িয়েছে; সে বাণী তাঁর ভক্তকুলকে সিক্ত করবে যুগের পর যুগ। আমি তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।
লেখক : কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক
৮৪ বছরের দীর্ঘ জীবনে সংগীতের জাদুতে উপমহাদেশকে মুগ্ধ রাখেন মেহেদি হাসান। তাঁর সংগীত রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক বিভাজন অস্বীকার করে সত্য ও সুন্দরে আবৃত নতুন পৃথিবীর মুখ দেখিয়েছে মানুষকে। মানবতাবাদী সুফি দর্শনের পথে, সত্য দার্শনিকতার পথে মানুষকে ধাবিত করেছে। যতটুকু জানি, প্রায় এক যুগ ধরে ফুসফুসের সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। ভুগছিলেন মূত্রনালির সমস্যায়ও। এর পরও তাঁর সংগীত সাধনা থেমে থাকেনি। জাগতিক বিশ্বের খরতাপেও শান্তির বাণী সিঞ্চন করেছেন এই শিল্পী- যা তাঁর শ্রেষ্ঠ অমরত্ব।
মেহেদি হাসান ১৯২৭ সালে রাজস্থানে জন্মেছিলেন। সংগীতপ্রেমী এক পরিবারে জন্ম নেওয়ায় পরিবারেই সংগীতের তালিম নেন। জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ও কাটে তাঁর জন্মভূমি ভারতেই। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পরিবারসহ চলে যেতে হয় নবগঠিত পাকিস্তানে। ইতিহাসের আঘাত এই শিল্পীকে জীবনভর কষ্ট দিয়েছে। দেশ ভাগের ক্ষত কোনো দিন তাঁর কাটেনি। প্রতিনিয়ত যন্ত্রণাবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁর সংগীতে যন্ত্রণার সে ক্ষতচিহ্ন আছে। পাকিস্তানে যাওয়ার পর নিদারুণ দরিদ্রতা গ্রাস করতে থাকে মেহেদি হাসানকে। একজন মোটর মেকানিক হিসেবে চাকরি নিতে হয়। এতেই জীবিকা নির্বাহ চলতে থাকে কোনোমতে।
কিন্তু ঈশ্বর প্রদত্ত কণ্ঠ তাঁকে দ্রুত পরিচিতি দান করতে থাকে। আর সবার মতো না হয়ে মেহেদি হাসান দ্রুত স্বাতন্ত্র্যের দাবিদার হয়ে ওঠেন। পাকিস্তানের মাটিতেও তাঁর গলায় রাজস্থানি পল্লীগীতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এরই ফাঁকে ঠুমরির তালিমও চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি।
১৯৫৭ সালে পাকিস্তান রেডিওতে গান গাওয়ার প্রথম সুযোগ লাভের পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মেহেদি হাসানকে। দ্রুত তাঁর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পরিণত হন জীবন্ত কিংবদন্তিতে। 'আব কি বিচরে', 'ম্যায় হোস ম্যায় থা তো ফির', 'জিন্দেগি ম্যায় তো সাভি'সহ বহু গজল তাঁকে এনে দেয় 'সম্রাটের' যশ।
বাংলাদেশেও সংগীতপ্রেমীদের মধ্যে মেহেদি হাসানের ভক্ত-অনুরাগীর সংখ্যা হিসাব কষে দেখার নয়। বাংলায় তাঁর গাওয়া 'ঢাকো যতো না নয়ন দুহাতে', 'হারানো দিনের কথা', 'তুমি যে আমার' গানগুলো চিরদিন মনে রাখবে এ দেশের মানুষ।
চলচ্চিত্রেরও বহু গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। উর্দুর পাশাপাশি গেয়েছেন ফার্সি ভাষায়ও। উর্দু কবিতার প্রতি তাঁর ছিল গভীর প্রেম। পাকিস্তান সরকারের তমঘা-ই-ইমতিয়াজ ও হিলাল-ই-ইমতিয়াজ খেতাব ছাড়াও নেপাল সরকারের কাছ থেকে গোরখা দক্ষিণাসহ বহু খেতাব পেয়েছেন মেহেদি হাসান। সংগীতে অবদানের জন্য পেয়েছেন বহু সম্মাননা ও পুরস্কার। কিন্তু সব সম্মান ছাপিয়ে ওঠে কোটি হৃদয়ের ভালোবাসা।
ধ্রুপদী, ঠুমরি থেকে গজলে ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। পাকিস্তানে চলচ্চিত্র শিল্পকে কয়েক যুগ ধরে বাঁচিয়ে রেখেছেন মেহেদি হাসান। দুই যুগেরও বেশি তিনি ছিলেন মুকুটহীন সম্রাট। চলচ্চিত্রের তাঁর জনপ্রিয় গানগুলো মানুষকে মোহিত করেছে। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁকে পাকিস্তানে ঘর বাঁধতে হয়েছিল। কিন্তু তাঁর জন্মস্থান তাঁকে সারা জীবন কাছে টানে। কখনো দূরে যেতে দেয়নি। চিরায়ত হিন্দুস্থানি ধ্রুপদী তাঁকে আঁকড়ে থেকেছে আজীবন।
আজ এই অমর শিল্পী নেই; কিন্তু তাঁর সংগীত যুগ যুগ ধরে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে। ভারত ও পাকিস্তান রাজনৈতিক কারণে ভাগ হয়ে গেছে। লড়াই-সংঘাতের অন্ত নেই তাদের। কিন্তু মেহেদি হাসানের সংগীত দুই দেশকে একত্র করেছে। তাঁর সংগীত সীমান্ত মানেনি। ঐন্দ্রজালিক সে সংগীত মানুষকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে, মানবতা ও শান্তির বাণী প্রচার করেছে। মানবতার পথে একজন শিল্পীর এই তো শ্রেষ্ঠ উপহার।
আমি মেহেদি হাসানের ভক্তকুলের একজন। অনেক অমর বাংলা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন বলেই নয়, এ দেশের হাজারো সংগীতপ্রেমীর মতো আমিও তাঁর ধ্রুপদী, ঠুমরি ও উর্দু গজলের একনিষ্ঠ প্রেমিক। রাজস্থানের যে লুনা গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন, সে গ্রাম আজও মেহেদি হাসানকে স্মরণ করে। আমৃত্যু তাঁর গ্রামকে তিনিও অনুভব করেছেন হৃদয় দিয়ে। মির্জা গালিব, ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, মির তাকি মির, হাফিজ হোসিয়াপুরী ও রাজ রিমিজির গানে সুর দিয়ে মেহেদি হাসান সংগীত জগৎকে নতুন মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন। তাঁর উর্দু উচ্চারণ নিয়ে কথা ওঠেনি কোথাও- না পাকিস্তানে না ভারতে। ভারতের একটি ক্ষুদ্র অংশ এই পাকিস্তানি শিল্পীকে নিয়ে বিতর্ক তোলার চেষ্টা করেও সফল হয়নি। ভারতের বেশির ভাগ মানুষ মেহেদি হাসানকে গ্রহণ করেছিল হৃদয় থেকে। তাঁর মৃত্যুতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের শোকবাণী পড়লেই হৃদয়ের সে আকুলতা অনুভব করা যায়।
মনে পড়ে, বিখ্যাত উর্দু কবি গুলজার ও নন্দিত চলচ্চিত্রকার মহেশ ভাট ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মেহেদি হাসানবিরোধীদের বিরুদ্ধে। গুলজারের ভাষায়, সূর্যকে যেমন ভাগ করা যায় না, বাতাসের চলার পথকে যেমন পরিবর্তন করা যাবে না, মেহেদি হাসানের মতো শিল্পীকে কোনো নির্দিষ্ট দেশের গণ্ডিতে ফেলে বিভক্ত করা সম্ভব নয়। যেমন বিভক্ত করা যাবে না ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, লতা মুঙ্গেশকর কিংবা মেহেদি হাসানকে। এককালের ভারতের, পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের হওয়া সত্ত্বেও মেহেদি হাসান সে কারণেই আমাদের।
শিল্পীর জাতপাত নেই, নেই কোনো নির্দিষ্ট গণ্ডি। সাহিত্য, সংগীত, শিল্পকলা অসীমান্তিক- একে গণ্ডির মধ্যে আনা বড় মূর্খতা। এই মাত্র কয়েক বছর আগে ভারতের লতা মুঙ্গেশকর এবং পাকিস্তানের মেহেদি হাসান যৌথভাবে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন। অ্যালবামটির একটি গান- 'তেরা মিলানা ...' এতটাই জনপ্রিয়, এতটাই হৃদয়ছোঁয়া যে কে তা ভুলতে পারে?
মেহেদি হাসানের সংগীত অমরত্বের বাণী ছড়িয়েছে; সে বাণী তাঁর ভক্তকুলকে সিক্ত করবে যুগের পর যুগ। আমি তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।
লেখক : কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক
No comments