লাঠি নিয়ে ভাবনা by জামান সরদার
যদিও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ধর্মপ্রচার' কবিতায় আছে 'লাগাও লাঠি/ কোমরে কাপড় আঁটি'; যদিও তার জন্মের সার্ধশতবার্ষিকী নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ এখন মগ্ন; এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, সোমবার নয়াপল্টনে বিএনপির দুই অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই লাঠালাঠিতে মেতে উঠেছিলেন।
সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে সবাই নিশ্চয়ই জানেন, মঞ্চের সামনে বসার জায়গা নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বাকবিতণ্ডা এক পর্যায়ে তুমুল লাঠালাঠিতে পরিণত হয়। গোটা নয়াপল্টন এলাকা হয়ে ওঠে রণক্ষেত্র। শেষ পর্যন্ত পুলিশকে লাঠিচার্জ করে সে লাঠালাঠি থামাতে হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে। মধ্যবর্তী নির্বাচন কেন? বর্তমান সরকার ঠিকমতো দেশ চালাতে পারছে না, সবক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
বিএনপি সম্ভবত মনে করছে, মধ্যবর্তী নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় আসবে। আর ক্ষমতা মানেই তো হালুয়া-রুটি। ফলে মঞ্চের সামনে গিয়ে কে কত বেশি স্লোগান দিতে পারে, কে কত বেশি কর্মীর জমায়েত দেখাতে পারে তার প্রতিযোগিতা লেগে যাওয়াটা স্বাভাবিক। যে কারণে কেবল ঢাকায় নয়, একই দাবিতে ডাকা সমাবেশে চট্টগ্রামেও দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। বরিশালেও সমাবেশ থেকে ফেরার পথে এক নেতাকে কুপিয়ে আহত করেছে প্রতিপক্ষ। এসব লাঠালাঠি আসলে রাজনীতির হিসাব-নিকাশ। কিন্তু সাধারণ মানুষের কী? এটা ঠিক, নয়াপল্টনের লাঠালাঠির সময় যান চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। কিন্তু তার বিনিময়ে যে প্রকৃত লাঠালাঠি (লাঠিখেলা নয়) দেখা গেল, তা-ইবা কম কিসে?
বস্তুত, বাংলা নববর্ষ উদযাপন কিংবা অন্যান্য মেলা ও উৎসবে প্রায়ই লাঠিখেলা দেখা যায়। এখন খেলায় পরিণত হলেও লাঠির এ কারুকাজ বাংলার ঐতিহ্য। এবং খেলা হিসেবে নয়, আত্মরক্ষা, শিকার ও যুদ্ধের জন্য বঙ্গীয় বদ্বীপের মানুষ প্রাচীনকাল থেকে লাঠির এ ধরনের ব্যবহার করে আসছে। জমিদারদের লাঠিয়াল বাহিনীও থাকত। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের সঙ্গে সঙ্গে লাঠিয়াল বাহিনীও বিলুপ্ত হতে শুরু করে। তবে চরাঞ্চলে কিংবা প্রত্যন্ত এলাকায় এখনও লাঠিয়াল রয়েছে। প্রভাবশালীরা তাদের দিয়ে প্রতিপক্ষ কিংবা অবাধ্যকে শায়েস্তা করে থাকে। আর নাগরিক জীবনে তা নিছক খেলা-ই। বিএনপির দুই অঙ্গ সংগঠনের কারণে একদিন না হয় আমরা খেলার বদলে লাঠির প্রকৃত ব্যবহার দেখলাম!
বিএনপি সম্ভবত মনে করছে, মধ্যবর্তী নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় আসবে। আর ক্ষমতা মানেই তো হালুয়া-রুটি। ফলে মঞ্চের সামনে গিয়ে কে কত বেশি স্লোগান দিতে পারে, কে কত বেশি কর্মীর জমায়েত দেখাতে পারে তার প্রতিযোগিতা লেগে যাওয়াটা স্বাভাবিক। যে কারণে কেবল ঢাকায় নয়, একই দাবিতে ডাকা সমাবেশে চট্টগ্রামেও দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। বরিশালেও সমাবেশ থেকে ফেরার পথে এক নেতাকে কুপিয়ে আহত করেছে প্রতিপক্ষ। এসব লাঠালাঠি আসলে রাজনীতির হিসাব-নিকাশ। কিন্তু সাধারণ মানুষের কী? এটা ঠিক, নয়াপল্টনের লাঠালাঠির সময় যান চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। কিন্তু তার বিনিময়ে যে প্রকৃত লাঠালাঠি (লাঠিখেলা নয়) দেখা গেল, তা-ইবা কম কিসে?
বস্তুত, বাংলা নববর্ষ উদযাপন কিংবা অন্যান্য মেলা ও উৎসবে প্রায়ই লাঠিখেলা দেখা যায়। এখন খেলায় পরিণত হলেও লাঠির এ কারুকাজ বাংলার ঐতিহ্য। এবং খেলা হিসেবে নয়, আত্মরক্ষা, শিকার ও যুদ্ধের জন্য বঙ্গীয় বদ্বীপের মানুষ প্রাচীনকাল থেকে লাঠির এ ধরনের ব্যবহার করে আসছে। জমিদারদের লাঠিয়াল বাহিনীও থাকত। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের সঙ্গে সঙ্গে লাঠিয়াল বাহিনীও বিলুপ্ত হতে শুরু করে। তবে চরাঞ্চলে কিংবা প্রত্যন্ত এলাকায় এখনও লাঠিয়াল রয়েছে। প্রভাবশালীরা তাদের দিয়ে প্রতিপক্ষ কিংবা অবাধ্যকে শায়েস্তা করে থাকে। আর নাগরিক জীবনে তা নিছক খেলা-ই। বিএনপির দুই অঙ্গ সংগঠনের কারণে একদিন না হয় আমরা খেলার বদলে লাঠির প্রকৃত ব্যবহার দেখলাম!
No comments