সংবর্ধনা-সবুজ দেশ গড়ার অঙ্গীকার

মাদারীপুরে গতকাল মঙ্গলবার কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের হাতে গাছের চারা তুলে দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। এ সময় তাঁরা সবুজ দেশ গড়ার অঙ্গীকার করেন। এ ছাড়া শরীয়তপুর ও মেহেরপুরে মাদক ও দুর্নীতিকে ‘না’ এবং দেশ বদলে দেওয়ার অঙ্গীকার করে মেধাবীরা।


প্রথম আলোর আয়োজনে ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) লিমিটেডের সহযোগিতায় গতকাল ওই তিন জেলায় এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের প্রচার-সহযোগী মাছরাঙা টেলিভিশন, এবিসি রেডিও ও প্রথম আলো ডট কম। ঢাকার বাইরে প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
মেহেরপুর: সকাল ১০টায় মেহেরপুর কমিউনিটি সেন্টারে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতেই বন্ধুসভার সদস্য পূজা, অন্তি, মোহনা ও অমৃতা নৃত্য পরিবেশন করে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। পরে শিক্ষার্থীরা মাদককে ‘না’, এসিড-সন্ত্রাস, বাল্যবিবাহ, যৌতুক বন্ধসহ সব অন্যায়ের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার শপথ নেয়।
কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমান কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি মনুষ্যত্ব অর্জন করে আত্মিকভাবে শিক্ষিত হও।’ মেহেরপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ বলেন, ‘প্রাইভেট ও কোচিং শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার একাগ্রতা নষ্ট করছে।’ এ সময় শিক্ষার্থীরা কোচিং ও প্রাইভেট বর্জনের অঙ্গীকার করে। মেহেরপুরের সিভিল সার্জন আবদুস শহীদ বলেন, ‘তোমাদের নিজেদের পরিচয়ে পরিচিত হতে হবে। এ জন্য শৃঙ্খলা ও কঠোর পরিশ্রম প্রয়োজন।’
অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক ফিরোজ জামান চৌধুরী, শালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাশ্বত, মেহেরপুর পৌর কলেজের অধ্যক্ষ একরামুল আযীম, গোভীপুর আলিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক রমজান আলী এবং মেহেরপুর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক আসহাদুল ইসলাম ও সোহরাব হোসেন বক্তব্য দেন। নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানায় কৃতী শিক্ষার্থী মেজবাউল ইসলাম ও আনিকা ইসলাম।
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্য সুমনা রহমান ও এখলাসুর রহমান। প্রথম আলোর মেহেরপুর প্রতিনিধি তুহিন আরন্যর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মেহেরপুর বন্ধুসভার সভাপতি আবুল বাশার।
মাদারীপুর: সকাল ১০টায় মাদারীপুর মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথম আলো মাদারীপুর বন্ধুসভার সদস্যদের পরিকল্পনায় কৃতী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের গাছের চারা দিয়ে স্বাগত জানানোর বিষয়টি সবাইকে অভিভূত করে।
কৃতী শিক্ষার্থী ইফফাত আরার কণ্ঠে ‘আমি বাংলার গান গাই’ গানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। আরেক কৃতী ফাতেমা আক্তার বলে, ‘সবুজ পৃথিবী গড়তে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। আমাদের পৃথিবী আমাদেরই গড়তে হবে।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি আশীষ-উর-রহমান। মাদারীপুরের চিকিৎসক ও গবেষক আবদুল বারি বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করতে হবে। কারণ, আজকের এই মেধাবীরাই আগামী দিনে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে।’ মাদারীপুর শিল্পকলা একাডেমীর সদস্যসচিব সৈয়দ ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর পূর্ণোদ্যমে লেখাপড়া করতে হবে। কারণ, সামনের পরীক্ষাগুলোতে ভালো করতে পারলেই কেবল নিজেকে দেশের জন্য উপযুক্ত করে তৈরি করতে পারবে।’ মাদারীপুর ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহাদেব চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘সাফল্যের এই ধারা অব্যাহত রাখতে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’
মাদারীপুরে জিপিএ-৫ পাওয়া ১৪৬ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে ক্রেস্ট ও সনদ দেওয়া হয়। জেলার সর্বাধিক জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের হাতে শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।
পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন শিল্পী পলাশ। কবিতা আবৃত্তি করেন বন্ধুসভার সহসভাপতি কুমার লাভলু, সাধারণ সম্পাদক ইমরান ও সদস্য রুমি খান। নৃত্য পরিবেশন করেন নীপা ও মুক্তা।
অনুষ্ঠান পরিচালনার সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন প্রথম আলোর মাদারীপুর প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম খান ও বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক আঞ্জুমান আরা।
শরীয়তপুর: জেলার সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সকাল সাড়ে ১০টায় বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর কৃতী শিক্ষার্থীদের মাদকবিরোধী শপথ পাঠ করান পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও বন্ধুসভার উপদেষ্টা জালাল উদ্দিন আহম্মেদ। বন্ধুসভার বন্ধুরা মাদকবিরোধী নাটক স্বপ্নবাজ মঞ্চস্থ করেন।
শরীয়তপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আলী হোসেন মিয়া বলেন, ‘দুর্নীতি ও মাদক সমাজকে অক্টোপাশের মতো আটকে রেখেছে। এ অবস্থা থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে বাঁচাতে তোমাদের এগিয়ে আসতে হবে।’
মুক্তিযোদ্ধা ও কবি মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম আলো সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে কল্যাণকর কাজ করছে। আমরা সাধ্যমতো তাদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।’
এ ছাড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক আলী আকবর মিয়া, বন্ধুসভার সভাপতি রতন কুমার চৌধুরী, অভিভাবক আবুল বাশার, কৃতী শিক্ষার্থী উম্মে হাফছা ও মনছুর হেলাল বক্তব্য দেয়। এর আগে প্রথম আলোর শরীয়তপুর প্রতিনিধি সত্যজিৎ ঘোষ স্বাগত বক্তব্য দেন।
জেলার সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শরীয়তপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক আলী আকবর মিয়ার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন অতিথিরা।
শেষে মুক্তিযোদ্ধা ও কবি মফিজুল ইসলাম নিজের লেখা পরিবেশ ও জীবন নামের বই কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন।

No comments

Powered by Blogger.